By Wapp zahir abbas
~**সিয়াম পূন কর রাত পর্যন্ত।
বাকারা আয়াত ১৮৭ ।**~
# আমরা আকাশ পরিস্কার থাকতে ইফতার করে থাকি ।
# সন্ধ্যার নিকটে বা সন্ধ্যায়(৩৭:১৩৮)ও ইফতার কথা বলা হয় নাই ।
# আল্লাহ সরাসরি বলে দিলেন রাত পর্যন্ত ।
রাত কখন হয়:-
৯২:১
শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে,
৭৯:২৯
তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন
84:16
فَلَا أُقْسِمُ بِالشَّفَقِ
আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লাল আভার
84:17
وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ
এবং রাত্রির, এবং তাতে যার সমাবেশ ঘটে
86:1
وَالسَّمَاءِ وَالطَّارِقِ
শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে আগমনকারীর।
86:2
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الطَّارِقُ
আপনি জানেন, যে রাত্রিতে আসে সেটা কি?
86:3
النَّجْمُ الثَّاقِبُ
সেটা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
এখন সঠিক ভাবে বুঝা গেল যে যখন আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন
হবে তখনই রাত হয় ।
*প্রচলিত মাগরিব আযানের ৩০-৩৫ মিনিট পর রাত হয় ।*
👉Needs to be depth study of Ayats
☝For discussions only
⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇
Brief Explanation 👇🏻
♦ ইফতার কখন?♦
.
বিছমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম
======================
.
ছিয়াম বা রোজা কতক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ করতে হবে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত? নাকি রাত পর্যন্ত? ইফতারের সময় কখন থেকে শুরু হয়?
সন্ধায়? নাকি রাতের আগমন ঘটলে? রাত কখন থেকে শুরু হয়? রাত কখন শেষ হয়? রাত কাকে বলে? এ বিষয়ে কুরআন কি বলে?
======================
.
যুগ যুগ ধরে মানুষ সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার করলেও বর্তমানে ইফতার নিয়েও ফেসবুকসহ নানান মানুষের মুখে নানান রকম কথা শোনা যায়। কেউ বলে সূর্যাস্তের পরেই ইফতার করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলে রাত না হওয়া পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করতে হবে। আবার বেশিরভাগ মানুষ বলে যে, সূর্য ডোবার সাথে সাথেই রাত আরম্ভ হয়ে যায়। তাই আমারও প্রশ্ন জাগে যে, কতক্ষন পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করতে হবে? সূর্যাস্ত পর্যন্ত? সন্ধা পর্যন্ত? না কি রাত না হওয়া পর্যন্ত? এ বিষয়ে আল্লাহ ক্বুরআনে কি বলেন? এই বিষয়টি বোঝার জন্য আমি ক্বুরআনের অনেকগুলো অনুবাদ পড়েছি। ত্রিশ পারা ক্বুরআনের মধ্যে মাত্র একটি আয়াতেই আল্লাহ ইফতার তথা ছিয়াম পূর্ণ করার কথা বলেছেন। আর তা হলো- আল্লাহ বলেনঃ-…”অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত”…। ছূরা বাক্বারা আয়াত ১৮৭।
.
[২:১৮৭] (আল্লাহ বলেন)…”অ’কুলূ অশ রবূ হাত্তা- ইয়াতা বাইয়্যানা লাকুমুল খইতুল আব’ইয়াদু মিনাল খইতিল আছ’অদি মিনাল ফাজরি, ছুঁম্মা আতিঁম মুচ্ছিয়া-মা ইলাল লাইল”…অর্থঃ- আর পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে (ফজরের) ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর ছিয়াম পূর্ণ করো নিশাগম পর্যন্ত বা রাত পর্যন্ত বা রাত না হওয়া পর্যন্ত। ২ নং ছূরা বাক্বারা আয়াত নং ১৮৭।
.
আলোচনাঃ নিশাগম পর্যন্ত অর্থাৎ রাতের আগমন পর্যন্ত, নিশি অর্থ রাত। ছিয়াম পূর্ণ করার ব্যপারে ক্বুরআনের প্রতিটি অনুবাদেই “রাত” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। ক্বুরআনের কোনো অনুবাদেই সন্ধা বা সূর্যাস্ত বলা হয়নি। কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ সরাসরি “ইলাল লাইল” শব্দ উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ রাত পর্যন্ত, লাইল অর্থ রাত। এই আয়াতের ভিত্তিতে ছিয়াম বা রোজা পূর্ণ করতে হবে রাত না হওয়া পর্যন্ত। এ কথাগুলো আমি বলিনি, কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ নিজেই তাঁর ক্বুরআনে বলে দিয়েছে। আল্লাহ সরাসরি “লাইল” তথা রাতের কথাই বলেছেন। এখন জানার বিষয় হলো রাত কখন থেকে শুরু হয় এবং রাত কখন শেষ হয়? তাহলে আল্লাহর কথা অনুযায়ী এ দুটি বিষয় ক্বুরআন থেকে বোঝতে পারলে এটির সমাধান পাওয়া যাবে ইনশা-আল্লাহ।
.
আমরা জানি যে, সাধারনত ৪ টি দিক রয়েছে, যথা পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিন। এখানেই শেষ নয়, এই ৪ টি দিকের ৪ টি কর্ণারে আরও ৪ টি দিক রয়েছে, যথা ঈশাণ, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, এখানেও শেষ নয় আরও দুটি দিক রয়েছে যথা উর্দ্ধ, অধঃ। তদ্রুপ রাত এবং দিনই শেষ নয়। রাত এবং দিনের মধবর্তি স্থানে আলো-আঁধারের সংমিশ্রণে আরও দুটি সময় রয়েছে যথা ফজর এবং সাফাক্ব অর্থাৎ প্রভাত এবং সন্ধ্যা। ফজরের আজান থেকেই রাত শেষ হয়ে যায় এবং সেই সময় তারকাগুলোও অস্ত যায়। ফজরের আজান থেকে রাত শেষ হয়ে সূর্যদয়ের আগ পর্যন্ত আলো-আঁধারের সংমিশ্রনের সময়কে বলা হয় ফজর/ভোর বা ছুবহে ছাদেক। তদ্রুপ সূযাস্ত থেকে পুরোপুরি অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত আলো-আঁধারের সংমিশ্রনের সময়কে বলা হয় গুধুলী, সন্ধ্যা বা সাফাক্ব। বিজ্ঞানের ভাষায় এ দুটি সময়কে বলা হয় “twilight” “টুইলাইট”। বিজ্ঞান মতে এ দুটি সময়ের পরিমান ৭২ মিনিট, তবে কারও মতে এসময়ের পরিমান ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিট। আরও গবেষনা করলে এ সময় দুটির সঠিক পরিমান বলা যাবে। এদুটি সময় দিনেরই অংশ।
.
অধিকাংশ মানুষ ধরে নেয় যে, সূর্য ডোবার সাথে সাথেই দিন শেষ রাত শুরু। এবং আরবি বা হিজরী সাল গণনায় সূর্যাস্ত থেকেই তার পরের দিন ধরা হয়। যার কারণে মানুষ সূর্য ডোবার সাথে সাথেই ইফতার করে। অথচ তখনও দিনের আলো পরিষ্কারভাবে দেখা যায় এবং রাতও শুরু হয় না।
.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের ধরে নেয়া এই ভাবনাচিন্তা কতটুকু সঠিক? আসলেই কি সূর্যাস্ত থেকে রাত শুরু হয়? নাকি “সাফাক্ব” বা সন্ধার পরে রাত শুরু হয়? এখন জানার বিষয় হলো রাত কখন থেকে শুরু হয়?।
.
যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন আছমান জমিন, চন্দ্র-সূর্য, এবং যিনি দিন-রাত সৃষ্টি করেছেন তিনিই কেবল বলে দিবেন যে, কখন থেকে রাত শুরু হয় এবং কখন থেকে দিন শুরু হয়। আল্লাহ তাঁর ক্বুরআনে ফজর, ছুবহে (ছাদেক), সকাল-সন্ধা, সাফাক্ব, রাত, দিন, ও দশদিকেরও বর্ণনা দিয়েছেন। আমরা ক্বুরআন থেকে জেনে নেবো যে, কখন থেকে রাত শুরু হয়।
.
রাত ও ছুবাহঃ
[৭৪:৩৩-৩৪] (আল্লাহ বলেন) শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়। শপথ ছুবহে (ছাদেকের) প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়। ৭৪ নং ছূরা মুদ্দাচ্ছির আয়াত ৩৩-৩৪।
.
আলোচনাঃ আল্লাহ শপথ করলেন রাতের, তারপর শপথ করলেন ছুবাহ বা প্রভাতের। আল্লাহর কথা অনুযায়ী বোঝা গেলো যে, প্রথমে রাত, তার পর ছুবাহ বা প্রভাত।
.
রাত ও ছুবাহঃ
[৮১:১৭-১৮] (আল্লাহ বলেন) শপথ নিশাবসানের। (শপথ) ছুবহে (ছাদেকের বা প্রভাত আগমন কালের। ৮১ নং ছূরা তাকবীর আয়াত ১৭-১৮।
.
আলোচনাঃ এই আয়াতেও আল্লাহ প্রথমে শপথ করলেন রাতের, তারপর ছুবাহ বা প্রভাতের। এই দুটি ছূরার চারটি আয়াতে আল্লাহ প্রথমে রাতের কথা বলে তারপর বলেছেন ছুবহে (ছাদেকের কথা অর্থাৎ প্রভাতের কথা। তাহলে এখানে আগে রাত, তার পরে প্রভাত। এখানে আমরা দুটি সময় পেলাম, যা রাত ও ছুবাহ। ঠিক তদ্রুপ সন্ধ্যা আবার রাত। যেমনঃ-
.
সাফাক্ব, রাত ও নক্ষত্রঃ
[৮৪:১৬-১৭] (আল্লাহ বলেন) আমি শপথ করি “সাফাক্বের”, বা সন্ধ্যার, এবং রাত্রির, এবং তাতে যার সমাবেশ ঘটে তার। ৮৪ নং ছূরা ইনশিক্বক আয়াত ১৬-১৭।
.
আলোচনাঃ আল্লাহ শপথ করলেন সন্ধ্যার ও রাতের। এই আয়াতের লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো আল্লাহ আগে “সাফাক্ব” বা সন্ধ্যার কথা বলেছেন, তারপরে বলেছেন রাতের কথা। তাহলে আল্লাহর কথা অনুযায়ী বোঝা গেলো যে, আগে সন্ধ্যা হয় তারপরে হয় রাত। আবার লক্ষ্য করুন! আল্লাহ প্রথমে বললেন সন্ধ্যা, তারপর বললেন রাত, আল্লাহর কথা অনুযায়ী বোঝা গেলো যে, প্রথমে সন্ধ্যা হয়, তার পরে হয় রাত। তাহলে রাতের আগে সন্ধ্যা আছে। তাহলে সন্ধ্যা কখনো রাত নয়। এবং আল্লাহ এ কথাও বলেছেন যে, রাতে “নক্ষত্র” বা “তারকার” সমাগম ঘটবে। সন্ধায় একটি “শুক তারা” বা “সন্ধ্যা তারা” থাকবে, কিন্তু বহু “তারার” সমাগম ঘটবে না। রাত হলেই বহু “তারার” সমাগম ঘটবে। অর্থাৎ আকাশে বহু সংখ্যক “নক্ষত্র” বা “তারকা” দেখা দিলে তখন থেকেই রাত শুরু হবে। যতক্ষন আকাশে “তারকা” উঠবে না ততক্ষন রাত হবে না। তাহলে আমরা আমাদে ছিয়াম পূর্ণ করবো রাতের আগমন ঘটলে।
.
আল্লাহর কথায় ইহাই প্রমান হয় যে, প্রথমে সন্ধ্যা হয়, তারপর হয় রাত। কাজেই সূর্য ডোবার সাথে সাথে রাত হয় না। এখন কেউ যদি সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার করে তাহলে সে সন্ধ্যায় ইফতার করলো, সে রাত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো না। কারণ, আল্লাহ ক্বুরআনে সন্ধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন এবং রাতেরও বর্ণনা দিয়েছেন। সুর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার হলে আল্লাহ বলতেন যে, অতঃপর ছিয়াম পূর্ণ করো সাফাক্ব পর্যন্ত বা সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু আল্লাহ সাফাক্বের কথা বলেছেন কি? বা সন্ধ্যার কথা বলেছেন কি? বা সূর্য অস্তমিত হওয়ার কথা বলেছেন কি? আল্লাহ তো সরাসরি রাতের কথাই বলেছেন। তাহলে মানুষ কোন যুক্তিতে সন্ধ্যায় ইফতার করে? মানুষ না জেনে শুধু ভুল করে আর মিথ্যাই বলে যায়। আর সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করে প্রতিটি মানুষের ছিয়াম তথা রোজা নষ্টই করে। কাজেই, আল্লাহর কথা অনুযায়ী সন্ধ্যার পরে যখন রাত আরম্ভ হবে ঠিক ততক্ষন পর্যন্ত ছিয়াম পূর্ণ করতে হবে, অর্থাৎ রাত শুরু হলেই ইফতার করতে হবে।
.
দিনের দুই প্রান্তে দুটি ছালাত রয়েছে। ঐ ছালাত দুটির আগে ও পরে সেহেরী ও ইফতার অর্থাৎ পানাহার করা যায়। যেমন, ফজরের ছালাতের সময় হওয়ার আগে ছেহেরী শেষ করতে হয়, তদ্রুপ দিনের শেষ প্রান্তে একটি ছালাত রয়েছে। ঐ ছালাত শেষ করে একটু অন্ধকার হলেই অর্থাৎ রাত শুরুর দিকেই ইফতার করতে হয়। আর সেজন্যই আল্লাহ বলেছেন যে, ছিয়াম পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। আরও লক্ষ্য করুন!-
.
রাত ও নক্ষত্রঃ
[৮৬:১-৩] (আল্লাহ বলেন) শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে যা আবির্ভূত হয় তার; তুমি কী জানো রাত্রিতে যা আর্বিভূত হয় তা কী? তা উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৮৬ নং ছূরা তারিক্ব আয়াত ১-৩।
.
আলোচনাঃ আল্লাহ বলেছেন রাত্রিতে উজ্জ্বল নক্ষত্র অর্থাৎ তারকা উঠবে বা তারকা দেখা যাবে। কাজেই সূর্য ডোবার সাথে সাথেই সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো দেখা যায় না বিধায় সে সময়টা কখনোই রাত নয়। সন্ধ্যায় উজ্জল “তারকার” মেলা দেখা যায় না। যখন অসংখ্য “তারকা” দেখা যাবে তখন থেকে রাত শুরু হবে। কাজেই রাত না হওয়া পর্যন্ত ছিয়াম পুর্ণ করতে হবে। ছিয়াম বা রোজার সাথে সূর্য উঠা বা সূর্য ডোবার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই সূর্য উঠার অনেক আগে থেকেই ছিয়াম বা রোজা শুরু করতে হয়। এই কথাটা পুনরায় লক্ষ্য করুন! ছিয়াম বা রোজার সাথে সূর্য উঠা বা সূর্য ডোবার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই সূর্য উঠার অনেক আগে থেকেই ছিয়াম বা রোজা শুরু করতে হয়। অর্থাৎ রাত থাকতেই ছেহেরি শেষ করতে হয়। তাহলে রোজা শুরু হয় রাত থেকেই। ঠিক একইভাবে রাতের অন্ধকার না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
.
ছুবাহঃ
[৬:৯৬] (আল্লাহ বলেন) তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন…। ৬ নং ছূরা আন’আম আয়াত ৯৬।
.
আলোচনাঃ অর্থাৎ সূর্য উঠার আগে যে আলোয় পৃথিবী আলোকিত হয় তাই প্রভাতের রশ্মি। অর্থাৎ তা দিনেরই অংশ। এরকম একটি সময় সূর্য ডোবার পরেও দেখা যায় যার নাম সাফাক্ব বা সন্ধ্যা।
.
দিন আলোকিতঃ
[৯২:২] (আল্লাহ বলেন) শপথ দিনের, যখন সে আলোকিত হয়। ৯২ নং ছূরা লাইল আয়াত ২।
.
আলোচনাঃ প্রশ্ন জাগে, দিন কখন থেকে বা কোন সময় থেকে আলোকিত হয়? সূর্য উঠলেই কি দিন আলোকিত হয়? নাকি সূর্য উঠার আগেই দিন আলোকিত হয়? উত্তর হবে সূর্য উঠার আগেই দিন আলোকিত হয়ে যায় তাই সূর্য উঠার আগের সে সময়টাও দিন। সাফাক্ব বা সন্ধ্যা এবং ছুবাহ বা প্রভাতের সময় কিছুক্ষন পরিষ্কার আলো দেখা যায় বিধায় তা কখনো রাত নয়, তা দিনেরই অংশ।
.
রাত অন্ধকারঃ
[৭৯:২৯] (আল্লহ বলেন) (তিনি) রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। ৭৯ নং ছূরা নাযিয়াত আয়াত ২৯।
.
আলোচনাঃ এখানেও প্রমান হয় যে, যখন রাত হবে তখন সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাবে। কাজেই সন্ধ্যার সময় সবকিছু অন্ধকার হয় না বিধায় তা রাত নয়, তা দিন। কাজেই, ইফতার দিনে নয়, ইফতার রাতে। কারণ, আল্লাহ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন বলেছেন।
.
আলোচনাঃ কেউ যদি বলে যে, সূর্যের উপস্থিতি তথা সূর্য উঠলেই দিন শুরু হয়, আর সূর্য ডোবলে রাত শুরু হয়, তাহলে তার কাছে আমার প্রশ্ন থাকেবে যে, আপনি ফজরের নামাজ এবং মাগরিবের নামাজ কি রাতে পড়েন, না কি দিনে পড়েন? কারণ, আল্লাহ বলেছেন যে, “দিনের দুই কিনারায় নামাজ ঠিক রাখবে” ১১ নং ছুরা হুদ আয়াত ১১৪। এই আয়াতে “নাহার” অর্থ দিন এবং “ত’র’ফা” অর্থ প্রান্ত বা কিনারা দুটি শব্দ রয়েছে, যার অর্থ দিনের কিনারায়। এই আয়াতের ভিত্তিতে আপনি কি সূর্য উঠার পরে দিন শুরু হলে দিনের কিনারায় ফজরের নামাজ পড়েন? নাকি রাতের অন্ধকার শেষ হয়ে যখন ফজরের আজান থেকে দিনের শুরু হয় তখন ফজরের নামাজ পড়েন, কোনটি? তদ্রুপ সূর্যাস্ত থেকে যদি রাত শুরু হয়, তাহলে (প্রচলিত) মাগরিবের নামাজ কেনো রাতে পড়েন? কারণ, বলা হয়েছে “দিনের দুই কিনারায় নামাজ ঠিক রাখবে”-১১:১১৪। আপনার কথা অনুযায়ী দিনের শেষ কিনারায় সূর্য ডোবার আগে কেনো মাগরিবের নামাজ পড়েন না? ফজর পড়েন রাতে এবং মাগরিবও পড়েন রাতে। তাহলে দিবসের দুই প্রান্তে বা দুই কিনারায় পড়লেন কই? আসল বিষয় হলো সূর্য ডোবার পরেও কিছুক্ষন আলো থাকে। তদ্রুপ সূর্য উঠার আগেই পৃথিবী আলোকিত হয়ে যায়। সন্ধ্যা এবং প্রভাত এ দুটি সময় দিনেরই অংশ, কারণ, এ দুটি সময়ও পরিষ্কার দেখা যায় তাই এ দুটি সময় দিনেরই অংশ, এবং আল্লাহর কথা মতো সকলেই দিনের অংশের মধ্যেই তথা দুই কিনারায় দুটি ছালাত আদায় করে।
.
আলোচনাঃ সূর্য উঠার ২০/২৫/৩০ মিনিট আগের অবস্থা লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, ছুবহে ছাদেক অর্থাৎ দিনের আলো শুরু হয়ে গেছে কিন্তু সূর্য উঠেনি। দিন শুরু হয় ফজরের আজান থেকেই, অর্থাৎ ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত তারকা থাকে তাই সেটা রাত। তদ্রুপ সুর্য ডোবার পরেও কিছুক্ষন দিন থাকে। যতক্ষন আলো থাকবে ততক্ষন দিন। যখন পুরোপুরি আলো চলে যাবে ঠিক তখন থেকেই রাত শুরু হবে।
.
(সূর্য না উঠা সত্ত্বেও যেমন দিন শুরু হয়, তদ্রুপ সূর্য ডোবার পরেও কিছুক্ষন আলো থাকে বিধায় তা দিনের অংশ)।
.
রাতে বিশ্রাম এবং দিনে দর্শনঃ
[১০:৬৭] (আল্লাহ বলেন) তিনি তোমাদের জন্য তৈরী করেছেন রাত, যাতে করে তোমরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পারো, আর দিন দিয়েছেন দর্শন করার জন্য…। ১০ নং ছূরা ইঊনুছ আয়াত ৬৭।
.
আলোচনাঃ লক্ষ্য করুন, দিনে দর্শন হয়। কোনো লাইটিং ব্যবস্থা ব্যতীত সূর্য উঠার আগে কিছু সময় এবং সূর্য ডোবার পরেও কিছু সময় মানুষ মানুষকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পায়, যাকে আল্লাহ দর্শন বলেছেন। তাহলে তা কখনো রাত নয়, সে সময়টা দিনেরই অংশ। এই আয়াতে আল্লাহ প্রথমে বলেছেন রাতে প্রশান্তি লাভ করা যায়। লক্ষ্য করুন! সূর্য ডোবার সাথে সাথে মানুষ প্রশান্তি তথা বিশ্রাম বা ঘুম যায় না, রাতে ঘুম যায়। কাজেই সূর্য ডোবার সাথে সাথেই রাত হয় না।
.
দিন সরে গেলে অন্ধকারঃ
[৩৬:৩৭] (আল্লাহ বলেন) ‘তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে রাত, তা থেকে আমি দিনকে সরিয়ে নেই, ফলে তখনই তারা অন্ধকারে ডুবে যায়। ছূরা ইয়াছীন আয়াত ৩৭।
.
আলোচনাঃ লক্ষ্য করুন! আল্লাহ সূর্যের কথা বলেননি। কারণ, সূর্য সরে গেলেও বা সূর্য ডুবে গেলেও কিছুক্ষন দিনের আলো থাকে। তাই আল্লাহ বললেন যে, দিনকে সরিয়ে নিলেই মানুষ অন্ধকারে ডুবে যায়। অর্থাৎ আলো সরে গেলেই মানুষ অন্ধকারে ডুবে যায়। কিন্তু সাফাক্বের সময় বা সন্ধ্যার সময় এবং ছুবহে ছাদেকের সময় মানুষ অন্ধকারে ডুবে থাকে না। এ দুটি সময় কিছুক্ষন আলো থাকে বিধায় তা দিনেরই অংশ। কাজেই ইফতার দিনে নয়, ইফতার রাতে।
.
আলোচনাঃ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ যদি বলতেন যে, “রাত থেকে আমি সূর্যকে সরিয়ে নেই, ফলে তখনই তারা অন্ধকারে ডুবে যায়”। তাহলে সাধারণ মানুষ ও নাস্তিকগণ প্রশ্ন করতো যে, সূর্য সরে যাওয়ার সাথে সাথে তো আমরা অন্ধকারে ডুবি না, বা অন্ধকারাচ্ছন্নও হই না, অন্ধকার তো হয় আরও অনেক পরে। তাহলে স্রষ্টা কি ভুল বললো? (নাউযুবিল্লাহ) তারা আরও বলার সুযোগ পেতো যে, স্রষ্টা এটা সঠিক বলেননি, তারা আরও বলতো যে, এটা স্রষ্টার অসামঞ্জস্য কথা। কিন্তু সৃষ্টির কাছে স্রষ্টা প্রশ্নের সন্মুখীন হবেন এমন কথা স্রষ্টা কখনোই বলবেন না। এখন কেউ যদি বলে যে, সূর্য অস্ত গেলেই রাত হয়, তবে সে স্রষ্টার বিপরীত কথা বললো। কাজেই আল্লাহ এমন অসামঞ্জস্য কথা কোথাও বলেননি।
.
দিন দেখার জন্যঃ
[১৭:১২] (আল্লাহ বলেন) আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিস্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছি…। ১৭ নং ছূরা বনি-ইসরাঈল আয়াত ১২।
.
আলোচনাঃ এই আয়াতেও আল্লাহ সূর্যের কথা বলেননি। বলেছেন আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। আল্লাহ রাতকে নিস্প্রভ বলেছেন, অর্থাৎ রাতে দিনের আলো থাকে না, তাই নিস্প্রভ। কিন্তু সূর্য ডোবার সাথে সাথে নিস্প্রভ অর্থাৎ দিনের আলো নিস্প্রভ হয় না, এবং দিন দেখার জন্য। কাজেই সন্ধার সময়ও কিছু সময় মানুষ মানুষকে দেখতে পায় তাই সন্ধার পরেই রাত হবে, সূর্য ডোবার সাথে সাথেই রাত হয় না। কাজেই সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার নয়, ইফতার রাতে।
.
রাতে বিশ্রাম দিন আলোকময়ঃ
[২৭:৮৬] (আল্লাহ বলেন) তারা কি দেখে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিনকে করেছি আলোকময়…। ২৭ নং ছূরা নামল আয়াত ৮৬।
.
আলোচনাঃ এখানেও আল্লাহ দিনের আলোর কথা বলেছেন। যতক্ষন আলো থাকবে ততক্ষন দিন থাকবে। সূর্য ডোবার পরেও কিছুক্ষন আলো থাকে, যাতে মানুষ অনেক দুরেও পরিষ্কার দেখতে পায়। কাজেই সূর্য ডোবার সাথে সাথেই রাত হয় না।
.
রাতে বিশ্রাম দিন দেখার জন্যঃ
[৪০:৬১] (আল্লাহ বলেন) তিনিই আল্লাহ যিনি রাত সৃষ্টি করেছেন তোমাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছেন দেখার জন্য…। ৪০ নং ছূরা মু’মীন আয়াত ৬১।
.
আলোচনাঃ এখানেও দিন দেখার জন্য। সূর্য ডোবার পরেও কিছুক্ষন দেখা যায়। তাই তা রাত নয়, তা দিন।
.
[৩:২৭] (আল্লাহ আমাদেরকে বলতে বলেন) বলো, তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করাও…। ৩ নং ছূরা আল ইমরান আয়াত ২৭।
.
আলোচনাঃ এখানেও লক্ষ্য করার বিষয় হলো আল্লাহ দিনকে রাতের ভিতর প্রবেশ করান। কিন্তু সূর্যকে দিনের ভিতর বা রাতের ভিতর প্রবেশ করানোর কথা আল্লাহ বলেননি। কারণ, সূর্য এক নিয়মে বিরামহীনভাবে চলে। আর রাত ও দিনের এখতেলাফ হয়, অর্থাৎ রাত ও দিনের পরিবর্তন হয়। “অখতিলা ফিল লাইলি অঁন্নাহারী”- ২:১৬৪।
.
অন্ধকার ও আলোঃ
[৬:১] (আল্লাহ বলেন) সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব করেছেন। ছূরা আন’আম আয়াত ১।
.
আলোচনাঃ অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। কিন্তু সূর্য উঠার আগে এবং সূর্য ডোবার পরেও কিছুক্ষন সব কিছু দেখা যায়, তাই সূর্য ডোবার সাথে সাথেই অন্ধকার হয় না তাই সূর্য ডোবার সাথে সাথে রাত হয় না।
.
রাত আচ্ছন্ন দিন আলোকিতঃ
[৯২:১-২] (আল্লাহ বলেন) শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে, শপথ দিনের, যখন সে আলোকিত হয় । ৯২ নং ছূরা লাইল আয়াত ১-২।
.
আলোচনাঃ এই আয়াতে রাত আচ্ছন্ন অর্থাৎ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করার কথা বোঝনো হয়েছে, এবং দিনকে আলোকিত বলা হয়েছে। দিনের আলো না থাকলেই রাত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়, সূর্য দ্বারা নয়, কারণ, প্রভাত এবং সন্ধ্যায় সূর্য না থাকলেও সূর্যের প্রভাবে কিছুক্ষন আলো থাকে। কাজেই যতক্ষন আলো থাকে ততক্ষন দিন)।
.
কিছুদিন পূর্বে ফেসবুকে লক্ষ্য করলাম যে, এক শ্রেণীর মানুষ মা’রেফুল কুরআনের ৯১ নং ছূরা শামছের ৩ ও ৪ নং আয়াতের ভুল অনুবাদকৃত ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সূর্যের অনুপস্থিতিকেই রাত বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে এবং মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা নিজেরা যেমন পথভ্রষ্ট তেমনি তারা অন্যকেও পথভ্রষ্ট করতে চায় এবং তারা ক্বুরআন থেকে কোনো সমাধানই নিতে চায় না। তাদের সমাধান মানব রচিত কেতাবে। তারা তাদের মূল হাতিয়ার হিসাবে মা’রেফুল ক্বুরআনের ভুল অনুবাদটাই বেছে নিয়েছে। আরবির দিকে তারা খেয়াল করে না, এমনকি অন্যন্য অনুবাদও তারা দেখে না।
.
মহিউদ্দীন খান এর অনুবাদকৃত মা’রেফুল ক্বুরআনের ভুল অনুবাদ লক্ষ্য করুন!
.
[৯১:৩-৪] শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে। শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। ৯১ নং ছূরা আশ শামছ আয়াত ৩-৪।
.
আলোচনাঃ উক্ত আয়াত দুটির আরবিতে “সূর্য” শব্দ নেই। ভাবার্থেও পাওয়া যায় না। কারণ, এর আগের আয়াতেই “নাহার” অর্থাৎ দিনের কথা বলা হয়েছে। রাত কখনোই সূর্যকে ঢাকতে পারে না। কারণ, সুর্যকে ঢেকে দিলে তো আমেরিকাসহ পুরো পৃথিবীই অন্ধকার হয়ে যাবে। বরং, সূর্য আমাদের চোখের আড়াল হওয়ার কারণেই অন্ধকার বা রাত শুরু হয়। তাই এই আয়াতের সঠিক অর্থ হবে যথা- শপথ দিবসের যখন সে প্রখরভাবে প্রকাশ করে। (শপথ) রাত্রির যখন সে উহাকে (দিনকে) আচ্ছাদিত করে। এই আয়াতের আরও কয়েকটি অনুবাদ দেখলেই আমার কথার সত্যতা প্রমান হবে। ৯১ নং ছূরা আশ শামছের ৪ নং আয়াতের আরও কয়েকটি অনুবাদ লক্ষ্য করুন, যথা-
.
ডাঃ জহুরুল হক এর অনুবাদঃ
[৯১:৪] রাতের কথা (ভাবো) যখন সে তাকে আচ্ছাদিত করে। ছুরা শামছ আয়াত ৪।
.
(এই আয়াতের বাংলা অনুবাদে “সূর্য” শব্দটি নেই)
.
ভাই গিরীশচন্দ্র সেন এর অনুবাদঃ
[৯১:৪] রজনীর (শপথ) যখন তাহাকে আচ্ছাদন করে। ছুরা শামছ আয়াত ৪।
.
(এই আয়াতের বাংলা অনুবাদেও সূর্য শব্দ নেই)।
.
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ক্বুরআনুল কারিমের অনুবাদঃ
[৯১:৪] শপথ রজনীর, যখন সে উহাকে আচ্ছাদিত করে। ছূরা শামছ আয়াত ৪।
.
(এখানেও “সূর্য” শব্দটি নেই। রজনী তাকে আচ্ছাদিত করে অর্থাৎ রজনী দিনকে আচ্ছাদিত করে। অর্থাৎ রজনী দিনকে আচ্ছন্ন করে বা ঢেকে দেয়)।
.
আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ এর সহজ সরল বাংলা অনুবাদঃ
[৯১:৪] শপথ রাতের যখন সে তাকে ঢেকে দেয়। ছুরা শামছ আয়াত ৪।
.
(এখানেও “সূর্য” শব্দটি নেই)।
.
পাকিস্তান ভিত্তিক উর্দো ক্বুরআনের অনুবাদঃ
[৯১:৩-৪] (ক্বছম) আওর দিনকি যব ও উছকো রৌশনি করদে। আওর রাতকি (ক্বছম) জব উছী ছুপালে। ছুরা শামছ আয়াত ৩-৪।
.
(রাত দিনকে “ছুপালে” অর্থাৎ ঢেকে দেয়। এখানেও রাত এবং দিনের কথা বলা হয়েছে, সূর্যের কথা বলা হয়নি)
.
(আল ক্বুরআন ইন্টারনেট থেকে)
[৯১:৪] রাত, যখন তা সবকিছুকে আঁধারে ঢেকে দেয়। ছুরা শামছ আয়াত ৪।
.
(এখানেও তাই। রাত সবকিছুকে আচ্ছাদিত করে অর্থাৎ আলোকে ঢেকে দেয়। The night when it covers him over. কাজেই, আল্লাহ এখানে বলেননি যে, “রাত সূর্যকে আচ্ছাদিত করে)।
.
আলোচনাঃ কেউ কেউ এই আয়াতের মিথ্যা অর্থ করে আল্লাহর অন্যন্য আয়াতগুলোকে বাতিল করতে চায় এবং আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বানাতে চায়, নাউযুবিল্লাহ। তারা নিজেরাই মিথ্যাবাদী, তাই তারা ক্বুরআনের অর্থই বোঝে না। তারা ছুরা শামছের ৪ নং আয়াতের দলিল দিয়ে জোর গলায় বলে যে, সূর্য ডোবার সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে। তারা ক্বুরআনের উপরোক্ত আয়াতগুলো চোখ দিয়ে দেখে না। এবার লক্ষ্য করুন! ছূরা শামছের ৪ নং আয়াত এর মতো আরও একটি আয়াত-)।
.
[১৩:৩] তিনিই ভু-মণ্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্য নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে। ছূরা র’দ আয়াত ৩।
.
আলোচনাঃ এই আয়াতেও “ইউগ শিল লাইলাঁন নাহা-রা” অর্থ …”তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন”…। এই আয়াত এবং ছূরা শামছ এর ৪ নং আয়াত প্রায় একই রকম। এ দুটি আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, “তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন”। এখানেও সূর্যের কথা নেই। আসলে মিথ্যাবাদীদেরকে ক্বুরআন থেকে প্রমান দেখানো সত্ত্বেও মিথ্যাবাদীরা বলবে বিচার মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার। মিথ্যাবাদীদের জন্য জলন্ত প্রমান ছূরা ঝুমারের ৫ নং আয়াত। যথা-
.
[৩৯:৫] (আল্লাহ বলেন)…”ইউ’কাব্বিরুল লাইলা আলান নাহারি, অ’ইউ কাব্বিরুন নাহারা আ’লাল লাইলি”… অর্থ, তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন…। ৩৯ নং ছূরা ঝুমার আয়াত ৫।
.
আলোচনাঃ এখানে “সূর্য” দ্বারা আচ্ছাদিত করার কথা আল্লাহ বলেননি। এখানেও সরাসরি বলা হয়েছে যে, “লাইলা আলান নাহারি” এবং “নাহারা আ’লাল লাইলি”। এখানে “লাইল” এবং “নাহার” অর্থাৎ “রাত” এবং “দিন” এর কথা বলা হয়েছে। দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করার কথা বলা হয়েছে। এখানে “সূর্য” শব্দই নাই। কাজেই ছূরা শামছের ৪ নং আয়াতেও “সূর্য” শব্দটি নেই।
.
শপথ রাত্রির যখন সে আচ্ছাদিত করে,-৯১:৪। কিন্তু সন্ধ্যার সময় তো রাত আচ্ছাদিত হয় না। তা হবে যখন অন্ধকার হবে তখন। সন্ধ্যার সময় মানুষের চোখ থেকে সূর্য অদৃশ্য হলেও সূর্যের প্রভাব পুরোপুরি শেষ না হওয়াতে চতুর্দিকে আলো থাকে বিধায় তা দিনের অংশ এবং তার নাম সাফাক্ব। যেমন ছুবহে ছাদেক থেকে রাত শেষ হয় কিন্তু তখনও সুর্য উঠে না, কিন্তু সূর্যের প্রভাবে আলোকিত হয়ে যায়। আল্লাহ এখানে বলেননি যে, সূর্য অস্ত গেলে/ডুবে গেলে রাত হয়। আল্লাহ এমন নয় যে, সন্ধ্যাকে রাত বলবেন। কারণ, আল্লাহ ক্বুরআনে বহুস্থানে সন্ধ্যার বিবরণ দিয়েছেন। কাজেই যখন আচ্ছাদিত হয় অর্থাৎ দিনের আলো চলে যাওয়ার পর রাত ঢাঁকা পরে যায় ঠিক তখনই রাত হয়। তা সাফাক্বের পর বা সন্ধ্যার পর।
.
মূল কথা, যেরকম একটি অন্ধকার সময় ছেহেরি খাওয়া শেষ করা হয়, ঠিক তেমনই একটি অন্ধকার সময় না হওয়া পর্যন্ত ছিয়াম পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা আল্লাহর ক্বুরআনের বিধান। তাই আল্লাহ বলেন “ছুম্মা আতিম্মুছ ছিয়ামা ইলাল লাইল” অর্থাৎ ছিয়াম পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত/নিশাগম পর্যন্ত/নিশির আগমন পর্যন্ত/রাত না হওয়া পর্যন্ত। ২ নং ছূরা বাক্বারা আয়াত ১৮৭। আল্লাহ এখানে “আতিম্মুছ ছিয়ামা ইলাল মাগরিব, ইলাল গুরুবিশ শামছ বা দুলুকিশ শামছ তথা সূর্যাস্ত পর্যন্ত বলেননি। সূর্যাস্তের পর ঈষৎ অন্ধকার হলে ও আকাশে বহু সংখ্যক তারকা দেখা দিলে রাত হয়। তারকা অস্ত গেলে ফজর এবং দিন শুরু হয়। আল্লাহর বাণী যার ইচ্ছা হয় সে মানবে, না হয় পূর্ব যুগের মতো অস্বীকার করেই যাবে।
.
আসুন, আমরা সকল মতভেদ, ভেদাভেদ ভুলে, কোনো দলের অন্তর্ভূক্ত না হয়ে, মানুষের কথায় কান না দিয়ে, নিজের প্রভিত্তির অনুস্মরণ না করে আল্লাহর বিধান ক্বুরআন থেকে সমাধান খোজার চেষ্টা করি। সঠিক তথ্য না জানার কারণে পূর্ব থেকে যে ভুল আমরা করে আসছি ক্বুরআন থেকে তার সমাধান নিয়ে সঠিকভাবে আমরা আমাদের ছিয়াম বা রোজা পূর্ণ করে আল্লাহ ভিতি, পরহেজগারী, বা মুত্তাক্বি হওয়ার চেষ্টা করি। কাজেই, আমাদের এতো কষ্টের ছিয়াম বা রোজা আল্লাহর ক্বুরআনের নির্দেশ অনুসারে হচ্ছে কিনা সেদিকে আমরা খেয়াল রেখে আল্লাহর প্রতিটি হুকুম আহকাম সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করি। এবং রাত না হওয়া পর্যন্ত ছিয়াম পূর্ণ করি। ক্বুরআন যা বলবে তাই সত্য হবে। কারণ, ক্বুরআন সন্দেহমুক্ত ও নির্ভুল কিতাব-২:২।
===================