♦তাশাহুদের বৈঠকে আমরা কি পাঠ করছি আবেগ নয় আল্লাহর দেয়া বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করার অনুরোধ রইলো।
★ কথিত তাশাহুদ।
اَلتَّحِيَّاتُ للهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ।
উচ্চারণ:- আত-তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি অস্বস্বালা-ওয়া-তু অত্বত্বাইয়্যিবা-তু, আসসালা-মু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু অরাহ্মাতুল্লা-হি অবারাকা-তুহ্, আসসালা-মু আলাইনা অ আলা ইবা-দিল্লা-হিস্ব স্বা-লিহীন, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ্।
অর্থ: “আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত (দোয়া ও অভিবাদন), সালাওয়াত (সালাতসমূহ/অনুগ্রহ প্রার্থনা), তাইয়িবাত (পবিত্রতা)। হে নবী, আপনার উপর সালাম (শান্তি) এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত (দয়া) ও বরকত (সমৃদ্ধি) হোক। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর সালাম (শান্তি) হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রসূল”।
★তাহিয়্যাত শব্দের মূল শব্দ হচ্ছে حي যার অর্থ জীবিত। অর্থাৎ জীবিত মানুষের জন্য দোয়া ও অভিবাদন কে তাহিয়্যাত বলে । আমরা যে জীবিত মানুষকে সালাম জানাই তা মূলত সালামের মাধ্যমে একে অপরকে অভিবাদন জানাই দোয়া হিসাবে। পবিত্র কুরআনে তাহিয়্যাত শব্দটি মোট ছয়টি আয়াতে এসেছে এবং এই ছয়টি আয়াতেই জীবিত মানুষকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে আল্লাহ্ কে নয়। দেখুন নিচের আয়াত গুলিতে কি বলা হয়েছে —
وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
আর যখন তোমাদেরকে কোন অভিবাদন জানানো হয় তখন (তার জবাবে) তোমরা তার চেয়ে আরো ভাল অভিবাদন জানাবে কিংবা (অন্ততপক্ষে) একই অভিবাদন ফিরিয়ে দেবে। আল্লাহ তো সবকিছুরই হিসাব গ্রহণকারী। (আন নিসা ৪:৮৬)
فَاِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ مُبٰرَكَةً طَيِّبَةً ؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللّٰهُ لَكُمُ الْاٰيٰتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
তবে যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন (ঘরে অবস্থানকারী) তোমাদের লোকদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ সালাম দেবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর বিধানসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (আন-নূর ২৪:৬১)
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلٰمًا ۙ
এমন লোকদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদানে (জান্নাতে) কক্ষ দেওয়া হবে এবং সেখানে তাদেরকে অভিবাদন ও সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। (আল-ফুরকান ২৫:৭৫)
دَعْوٰىهُمْ فِيْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلٰمٌ ۚ وَاٰخِرُ دَعْوٰىهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ
সেখানে তাদের দোয়া হবে, “হে আল্লাহ! তুমি মহিয়ান”; সেখানে তাদের (পারস্পরিক) অভিবাদন হবে, “সালাম (শান্তি)” এবং তাদের দোয়া শেষ হবে এই বলে যে, সকল প্রশংসা আল্লার, যিনি নিখিল জগতের প্রভু।(ইউনুস ১০:১০)
وَاُدْخِلَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ ؕ تَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلٰمٌ
আর যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।(ইবরাহীম ১৪:২৩)
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهٗ سَلٰمٌ ۖۚ وَاَعَدَّ لَهُمْ اَجْرًا كَرِيْمًا
যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে: ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান।(আল-আহযাব ৩৩:৪৪)
♦ উপরের আয়াত গুলির আলোকে এটা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট যে তাহিয়্যাত (৪:৮৬) বলতে আল্লাহ্ জীবিত মানুষকে সালাম জানানোকে বুঝিয়েছেন অর্থাৎ পরস্পরকে দোয়ার মাধ্যমে অভিবাদন জানানো কে বুঝিয়েছেন। تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَٰمٌۚ “তাহিয়্যাতুহুম ফীহা ছালামুন” (১০:১০, ১৪:২৩)। মানুষের জন্যই তাহিয়্যাত,আল্লাহর জন্য হামদ। تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাহিয়্যাত (সালাম ও অভিবাদন) (২৪:৬১), কিন্তু আল্লাহকে তাহিয়্যাত নয়। লক্ষ্য করুন সূরা আস- সাফফাতের ১৮১ নাম্বার আয়াতে রাসূলদের ক্ষেত্রে অর্থাৎ মানুষের ক্ষেত্রে সালাম শব্দ ব্যহার করা হয়েছে। এর পরের আয়াতে আল্লাহ্ জন্য হামদ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
وَسَلَٰمٌ عَلَى ٱلْمُرْسَلِينَ
আর রাসূলদের প্রতি সালাম।
وَٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
আর সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য।(আস- সাফফাত ৩৭:১৮১-৮২)
★ কেউ কেউ আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত বলার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে গিয়ে বলেন যে, আল কুরআনে আল্লাহকে কর্জে হাসানাহ বা উত্তম ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ আল্লাহকে ঋণ দেয়া যায় না। তেমনি আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত বলতে দোষ কোথায়? কুরআনের আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, কর্জে হাসানাহর ক্ষেত্রে আসলে আল্লাহ ঋণ গ্রহণ করেন একটি রূপক অর্থে এবং তা হলো রসূলের মাধ্যমেই তা সংগৃহীত ও বণ্টিত হয়, মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত অর্থনৈতিক বণ্টন ব্যবস্থার বাস্তবায়নের জন্য। কুরআনের কোথাও রূপক অর্থেও আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত শব্দটি ব্যবহার হয়নি। সুতরাং তাহিয়্যাতের প্রসঙ্গে কুরআন থেকে যে সূত্র পাওয়া যায় সেটাই এক্ষেত্রে চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হবে, আর তা হলো তাহিয়্যাত হচ্ছে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন, যা মানুষের জন্য প্রযোজ্য আল্লাহর জন্য নয়, আল্লাহর জন্য হচ্ছে হামদ যা আল্লাহ্ কুরআনের শুরুতেই বলে দিয়েছেন।
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ
‘আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।(হামদ ১:২)
♦ এবার আসুন প্রচলিত হাদিসের মাধ্যমে আমরা তাশাহুদ নামে কি পাঠ করছি সেটা দেখি।
اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ
আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি
অর্থ: আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত (অর্থাৎ আল্লাহর জন্য সালাম (দোয়া) ও অভিবাদন)
♦ চিন্তা করুন যে আল্লাহ্ তাহিয়্যাত শব্দ দিয়ে মানুষের জন্য দোয়া ও অভিবাদন নির্ধারন করেছেন (৪:৮৬) সেই তাহিয়্যাত কি আল্লাহ্ তাঁর জন্য নির্ধারন করতে পারেন? আল্লাহ্ কি মানুষের দোয়ার মুখাপেক্ষী? মা’আ-যাল্লাহ্। এর মাধ্যমে মানুষের জন্য তাহিয়্যাতে আল্লাহ্কে শরিক করা হয়েছে যা সুস্পষ্ট শিরক।
♦ প্রচলিত এই তাশাহুদের আরেকটি আপত্তির দিক হলো, এতে রসূলকে সম্বোধন করে বলা হয়, “ইয়া আইয়ুহান্নাবিয়্যু” (হে নবী)। অথচ আমরা এখন তা বলতে পারি না, কারণ রসূল আমাদের মধ্যে উপস্থিত নেই, জীবিত নেই। মৃত ব্যক্তিকে সম্বোধন করে কোনো কথা বলা যেতে পারে না।আল্লাহর রাসূল কি এমন তাশাহুদ শিক্ষা দিতে পারে যে তাশাহুদের শব্দ সাহাবিরা নিজেই পরিবর্তন করতে পারে? অথবা জীবিত থাকা অবস্হায় পড়লে শুদ্ধ হবে আর মৃত অবস্হায় পড়লে অসুদ্ধ হবে? এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য রাসূল কেন বলে গেলেন না যে আমি জীবিত অবস্হায় তোমরা এই শব্দ এই ভাবে পড়বে আর আমার মৃত্যুর পর এই শব্দ এই ভাবে পড়বে অথবা মৃত্যুর পরও এই ভাবে পড়লে সমস্যা নাই ? এই না বলে যাওয়াটা কি ত্রুটি নয়? এই না বলে যাওয়ার করনেইতো রাসূলের মৃত্যুর পর তাশাহুদ নিয়ে সাহাবীদের মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে, তা নয় কি? আল্লাহ্ কি রাসূলের কথিত হাদিসের মাধ্যমে এমন বিধান দিতে পারে, পরে রাসূলের মৃত্যুর পর সাহাবীরা দুই দলে বিভক্ত হবে? একদল শব্দ পরিবর্তন করে পড়বে এটা কি বিশ্বাস যোগ্য? দেখুন তথাকথিত মুহাদ্দিসরা তাদের বইতে কি লিখে রেখেছেন?
তাশাহহুদ সম্পর্কিত সকল ছহীহ মরফূ হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-কে সম্বোধন সূচক ‘আইয়ুহান্নাবী’ শব্দ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ কতিপয় ছাহাবী ‘আইয়ুহান্নাবী’-এর পরিবর্তে ‘আলান্নাবী’ বলতে থাকেন। ইবনু মাসউদ বলেনঃ আমরা উক্ত শব্দে অর্থাৎ أَيُّهَا النَّبِيُّ হে নাবী! সম্বোধন সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তাশাহহুদ পাঠ করতাম যখন তিনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলেন, কিন্তু যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমরা أَيُّهَا النَّبِيُّ এর পরিবর্তে على النبى এর অর্থাৎ নাবীর উপর বলতাম। অথচ সকল ছাহাবী, তাবেঈন, মুহাদ্দেছীন, ফুক্বাহা পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ পড়েছেন। এই মতভেদের কারণ হ’ল এই যে, রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলা গেলেও তাঁর মৃত্যুর পরে তো আর তাঁকে ঐভাবে সম্বোধন করা যায় না। কেননা সরাসরি এরূপ গায়েবী সম্বোধন কেবল আল্লাহকেই করা যায়। মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এভাবে সম্বোধন করলে তাঁকে আল্লাহ সাব্যস্ত করা হয়ে যায়। সেকারণ কিছু সংখ্যক ছাহাবী ‘আলান্নাবী’ অর্থাৎ ‘নবীর উপরে’ বলতে থাকেন।
পক্ষান্তরে অন্য সকল ছাহাবী পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতে থাকেন। ত্বীবী (মৃ: ৭৪৩ হিঃ) বলেন, এটা এজন্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁদেরকে উক্ত শব্দেই ‘তাশাহহুদ’ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তার কোন অংশ তাঁর মৃত্যুর পরে পরিবর্তন করতে বলে যাননি। অতএব ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত শব্দ পরিবর্তনে রাজী হননি। ছাহেবে মির‘আত বলেন, জীবিত-মৃত কিংবা উপস্থিতি-অনুপস্থিতির বিষয়টি ধর্তব্য নয়। কেননা স্বীয় জীবদ্দশায়ও তিনি বহু সময় ছাহাবীদের থেকে দূরে সফরে বা জিহাদের ময়দানে থাকতেন। তবুও তারা তাশাহহুদে নবীকে উক্ত সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতেন। তারা তাঁর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে উক্ত সম্বোধনে কোন হেরফের করতেন না। তাছাড়া বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ বিষয়াবলীর (من خصائصه) অন্তর্ভুক্ত। এটা স্রেফ তাশাহহুদের মধ্যেই পড়া যাবে, অন্য সময় নয়।
উল্লেখ্য যে, এই সম্বোধনের মধ্যে কবর পূজারীদের জন্য কোন সুযোগ নেই। তারা এই হাদীছের দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বত্র হাযির-নাযির প্রমাণ করতে চায় ও মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য তাঁকে ‘অসীলা’ হিসাবে গ্রহণ করতে চায়। এটা পরিষ্কারভাবে ‘শিরকে আকবর’ বা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (তথ্য সূত্র ছালাতুর রাসূল সাঃ, আসাদুল্লাহ্ গালিব, রাসূল সাঃ এর সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি, নাছির উদ্দিন আলবানী)
♦কথিত দুরূদে ইবরাহীম।
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ:- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্মত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্মত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
♦ প্রথম কথা হচ্ছে কথিত তাশাহুদ ও দুরূদ কুরআনে নেই আছে হাদিসে। প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ কুরআন পাঠ করে সালাত আদায় করতে বলেছেন ফলে রাসূল কি করে কুরআনের বিরুদ্ধে গিয়ে সালাতে এই তাশাহুদ ও দুরূদ পড়তে বলবে? দেখুন নিচের আয়াত গুলিতে কি বলা হচ্ছে —-
إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتْ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ كِتَٰبًا مَّوْقُوتًا
নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে কিতাব (পাঠ)*।(আন-নিসা ৪:১০৩)
- রাসূলের সময় কুরআন ছাড়া আর কোন বই ছিলনা। ফলে এই আয়াত প্রমান করে যে রাসূল সালাতে সব কিছু কুরআন থেকে পাঠ করতেন।
أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيْلِ وَقُرْءَانَ ٱلْفَجْرِۖ إِنَّ قُرْءَانَ ٱلْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং ফজরে (অধিক) কুরআন পাঠ করবে। ফজরের কুরআন পাঠ অনুধাবনে সহায়ক।
وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِۦ
আর রাত্রির কিছু অংশে তা (কুরআন) দিয়ে তাহাজ্জুদ (সালাত) পড়।(ইসরা ১৭:৭৮-৭৯)
اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡكَ مِنَ الۡكِتٰبِ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡكَرِ ؕ وَلَذِكۡرُ اللّٰهِ اَكۡبَرُ ؕ وَاللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
তোমার কাছে যে কিতাব (কোরআন) নাযিল করা হয়েছে তা থেকে পাঠ করে সালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই নামায অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণই সবচেয়ে বড়। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা জানেন।(আল-আনকাবূত ২৯:৪৫)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللّٰهِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ ۙ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।(ফাতির ৩৫:২৯)
★ সালাতে কথিত দুরূদে ইবরাহীমে নবী নাকি এই ভাবে দোয়া করতেন “হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্মত বর্ষণ কর” এই ভাবে নিজের নাম নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা কি বিনয়ের মধ্যে পরে? অথচ আল্লাহ্ বিনয়ের সাথে সালাতে দাঁড়াতে বলেছেন (২:২৩৮) ফলে আল্লাহ্ কি বিনয় বহির্ভূত এই ভাবে নবীকে নিজের নাম নিয়ে দোয়ার নির্দেশ দিতে পারে? কুরআনে কি এর কোন দৃষ্টান্ত আছে? নবী বাদ দিন কোন সাধারন মানুষ কি নিজের নাম নিয়ে আল্লাহর কাছে এই ভাবে দোয়া করে? কুরআনের অসংখ্য আয়াতে নবীরা নিজের জন্য দোয়া করতেন ‘আমাকে’ শব্দ দিয়ে যা আকুতি ও বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এমন কি স্বয়ং আল্লাহ্ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সালামুন আলাল মুরছালিন) কে এই ভাবে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।
وَقُل رَّبِّ أَدْخِلْنِى مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِى مُخْرَجَ صِدْقٍ وَٱجْعَل لِّى مِن لَّدُنكَ سُلْطَٰنًا نَّصِيرًا
বল(মুহাম্মদ), হে আমার রব! আমাকে দাখিল কর সত্যরূপে এবং আমাকে বের কর সত্যরূপে এবং দান কর আমাকে নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য।(আল-ইসরা ১৭:৮০)
فَتَقَبَّلَہَا رَبُّہَا بِقَبُوۡلٍ حَسَنٍ وَّ اَنۡۢبَتَہَا نَبَاتًا حَسَنًا ۙ وَّ کَفَّلَہَا زَکَرِیَّا ۚؕ کُلَّمَا دَخَلَ عَلَیۡہَا زَکَرِیَّا الۡمِحۡرَابَ ۙ وَجَدَ عِنۡدَہَا رِزۡقًا ۚ قَالَ یٰمَرۡیَمُ اَنّٰی لَکِ ہٰذَا ؕ قَالَتۡ ہُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَرۡزُقُ مَنۡ یَّشَآءُ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ﴿۳۷﴾
অতঃপর তার রব তাকে(মারিয়াম কে) উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়্যার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়্যা তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, ‘হে মারইয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি’? সে বলত, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন’।
ہُنَالِکَ دَعَا زَکَرِیَّا رَبَّہٗ ۚ قَالَ رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ ﴿۳۸﴾
সেখানে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।(আলে-ইমরান ৩:৩৭-৩৮)
وَزَكَرِيَّآ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُۥ رَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ
আর স্মরণ কর যাকারিয়্যার কথা, যখন সে তার রবকে আহবান করে বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী’।
فَٱسْتَجَبْنَا لَهُۥ وَوَهَبْنَا لَهُۥ يَحْيَىٰ وَأَصْلَحْنَا لَهُۥ زَوْجَهُۥٓۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًاۖ وَكَانُوا۟ لَنَا خَٰشِعِينَ
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী।(আল-আম্বিয়া ২১:৮৯-৯০)
***আল্লাহ্ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সালামুন আলাল মুরছালিন) কে সালামুন আলা ইবরাহীমের আদর্শ অনুসরণ করতে বলেছেন। দেখুন সালামুন আলা ইবরাহীম কি ভাবে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন —
رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।(আল-বাকারাহ ২:১২৮)
★ এবার দেখুন কথিত মানব রচিত হাদিসে কি বলা হচ্ছে? এই দুরূদ যে মানুষের তৈরি রাসূলের নয় তা সুস্পষ্ট।
তাশাহহুদের পর নবী মুবাশ্শির (সাঃ) নিজের উপর দরুদ পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ৫/৩৭৪, হাকেম, মুস্তাদরাক)(তথ্য সূত্র স্বলাতে মুবাশশির, আব্দুল হামিদ ফাইযী)
★ এরপর কথিত দুরূদে বলা হচ্ছে “তুমি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ”। সালামুন আলা ইবরাহীম এর পিতা ছিল মুশরিক। প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ কি তার উপরও বরকত নাজিল করেছিলেন? আবার বলা হচ্ছে “হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর”। ইতিহাস বলে আবু লাহাব ও আবু তালিব ছিল রাসূলের আপন চাচা এবং তারা উভয় মুশরিক অবস্থায় মারা যায়। তার মানে তথিত দুরূদের মাধ্যমে আমরা আবু লাহাব ও আবু তালিব উভয় এর উপরও আল্লাহর বরকত বর্ষণের দোয়া করছি, তা নয়কি? অথচ কুরআনের ১১১ নাম্বার সূরার নাম করনই করা হয়েছে ‘লাহাব’। এই সূরা একনম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, تَبَّتْ يَدَآ أَبِى لَهَبٍ وَتَبَّ( আবূ লাহাবের হাত দু‘টো ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক সে নিজে)। ফলে এটি যে সুস্পষ্ট কুরআন বিরোধী কুফরী দুরূদ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
★ সালামুন আলা ইবরাহীম তাঁর বংশধরের মধ্য থেকে মক্কাতে একজন রাসূল পাঠানোর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিল।আল্লাহ্ তার প্রার্থনা কবুল করেছিল। ফলে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সালামুন আলাল মুরছালিন) ছিল সালামুন আলা ইবরাহীম এর বংশধর। ফলে আল্লাহর পক্ষে কথিত দুরূদের মাধ্যমে কি ভাবে বলা সম্ভব যে মুহাম্মদের বংশের উপর বরকত বর্ষনের দোয়া কর? অথচ তিনি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সালামুন আলাল মুরছালিন) কে পাঠিয়েছেন সালামুন আলা ইবরাহীম এর বংশধরের মধ্য থেকে। ফলে রাসূলের বংশধরের প্রসঙ্গ আসা কি অবান্তর নয়?এটা কি কুরআন বিরোধী নয়? সুতরাং এই দুরূদ যে অবান্তর লাহওয়াল হাদিস দিয়ে বানানো হয়েছে তা দিবালোকের মতো পরিস্কার।
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَٰهِۦمُ ٱلْقَوَاعِدَ مِنَ ٱلْبَيْتِ وَإِسْمَٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিত্গুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’।
رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
رَبَّنَا وَٱبْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ
‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।
كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا۟ تَعْلَمُونَ
যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।(আল-বাকারাহ ২:১২৭-১২৯,১৫১)
★ ইবাদত অর্থাৎ আদেশ নিষেধ পালন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর। সালাত হচ্ছে একটি ইবাদত যা আল্লাহ্ শুধু তাঁর স্মরণার্থে কায়েম করতে বলেছেন। ফলে কুরআন বহির্ভুত কোন নির্দেশের আলোকে সালাতে কোন মানুষের নাম নিয়ে তাকে স্মরন করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করার পাশাপাশি ঐ মানুষকে স্মরন করা যা সুস্পষ্ট শিরক। অপর দিকে কথিত দুরূদে আল্লাহ্ কি তথাকথিত হাদিসের মাধ্যমে শুধুমাত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সালামুন আলাল মুরছালিন) এর জন্য মুমিনদের প্রতি দোয়ার নির্দেশ দিতে পারে? এতে কি রাসূলদের মধ্যে প্রার্থক্য সূচিত হয় না? অথচ আল্লাহ্ মুমিনদেরকে রাসূলদের মধ্যে প্রার্থক্য করতে নিষেধ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে যে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে মুমিনদেরকে রাসূলদের মধ্যে প্রার্থক্য সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন, সে আল্লাহ্ কি শুধু মাত্র একজন রাসূলের জন্য মুমিনদেরকে প্রার্থক্য সৃষ্টিকারী দোয়ার নির্দেশ দিতে পারে? তথাকথিত মুহাদ্দিস সাহেবরা প্রচলিত হাদিসকে বলছেন ওহী, প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ কি পরস্পর বিরোধী ওহী নাযিল করতে পারেন (৪:৮২)?
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنۡ یُّؤۡتِیَهُ اللّٰهُ الۡكِتٰبَ وَالۡحُكۡمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ یَقُوۡلَ لِلنَّاسِ كُوۡنُوۡا عِبَادًا لِّیۡ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلٰكِنۡ كُوۡنُوۡا رَبّٰنِیّٖنَ بِمَا كُنۡتُمۡ تُعَلِّمُوۡنَ الۡكِتٰبَ وَبِمَا كُنۡتُمۡ تَدۡرُسُوۡنَ ۙ
কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার উপাসক হয়ে যাও’। বরং সে বলবে, ‘তোমরা রববানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’।(আলি ‘ইমরান ৩:৭৯)*
*যদি তাই হয় তবে কিতাব বহির্ভুত নির্দেশ হিসাবে নবী কি করে বলতে পারে যে সালাতে আমার জন্য দুরূদ পাঠ করো? এটা কি নবীর নির্দেশ নয়? এই নির্দেশতো নবীর নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রয়োজনের তাগিতে সাময়িক কোন নির্দেশ নয়, এই নির্দেশতো মুসলিমরা ইবাদত হিসাবে স্হায়ী নির্দেশ হিসাবে পালন করে। ইবাদত হিসাবে স্হায়ী ভাবে কোন মানুষের নির্দেশ পালন করাকি তার ইবাদত করা নয়? অথচ আল্লাহ্ বলেছেন ‘তোমরা রববানী হও’ অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী হও। কারন নির্দেশ দাতা একমাত্র আল্লাহ্ (১২:৪০) আল্লাহর বিধিবদ্ধ নির্দেশ (৪২:১৩) আছে কুরআনে আর কোথাও নেই। ফলে কুরআন বহির্ভুত এই সমস্ত বিধান কে বিধিবদ্ধ বিধান হিসাবে পালন করা সম্পূর্ণ কুফরী।কারন বিধিবদ্ধ কিতাব হচ্ছে কুরআন। এর সাথে অন্য কিতাবের বিধানকে বিধিবদ্ধ কিতাবের বিধান হিসাবে মানার অর্থ হচ্ছে কুরআনের সাথে শরিক করা।
إذا صلى أحدكم فليبدأ بتحميد ربه جل وعز والثناء عليه ثم يصلي وفي رواية: ليصل) على النبي صلى الله عليه وسلم ثم يدعو بما شاء
তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করলে প্ৰথমে যেন আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ছালাত পাঠ করে। অতঃপর যা ইচ্ছা দু’আ করবে।(আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ। তথ্য সূত্র ‘সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি’ নাছির উদ্দিন আলবানী)
اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكۡرِیۡ
আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।(ত্ব-হা ২০:১৪)
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَنُسُكِیۡ وَمَحۡیَایَ وَمَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ
বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’।(আল-আন‘আম ৬:১৬২)
***আল্লাহ্ রাসূলগণের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ্ মানুষকে নবীনদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন,যার কারনে মুমিনরা নবীনদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতোনা।
تِلْكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ ٱللَّهُۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَٰتٍۚ وَءَاتَيْنَا عِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ٱلْبَيِّنَٰتِ وَأَيَّدْنَٰهُ بِرُوحِ ٱلْقُدُسِۗ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقْتَتَلَ ٱلَّذِينَ مِنۢ بَعْدِهِم مِّنۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ ٱلْبَيِّنَٰتُ وَلَٰكِنِ ٱخْتَلَفُوا۟ فَمِنْهُم مَّنْ ءَامَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَۚ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقْتَتَلُوا۟ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারো কারো মর্যাদা উঁচু করেছেন। আর আমি ঈসা ইবনে মারয়ামকে দিয়েছি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এবং আমি তাকে শক্তিশালী করেছি রূহুল কুদুস এর মাধ্যমে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের পরবর্তীরা লড়াই করত না, তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পর। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে, আর তাদের কেউ কুফরী করেছে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তারা লড়াই করত না। কিন্তু আল্লাহ যা চান, তা করেন।(আল-বাকারাহ ২:২৫৩)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَرُسُلِهٖ وَلَمْ يُفَرِّقُوْا بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ اُولٰٓئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيْهِمْ اُجُوْرَهُمْ ؕ وَكَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করেনি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আন নিসা ৪:১৫২)
قُلْ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤي اِبْرٰهِيْمَ وَاِسْمٰعِيْلَ وَاِسْحٰقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰي وَعِيْسٰي وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ ۪ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ ۫ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর, আর যা নাযিল হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর। আর যা দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী’। (আলে-ইমরান ৩:৮৪)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَرُسُلِهٖ وَيُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّفَرِّقُوْا بَيْنَ اللّٰهِ وَرُسُلِهٖ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّنَكْفُرُ بِبَعْضٍ ۙ وَّيُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَّخِذُوْا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا ۙ
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায় ।
اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكٰفِرُوْنَ حَقًّا ۚ وَاَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব।(আন নিসা ৪:১৫০-১৫১)
♦ আল্লাহর পক্ষে পরস্পর বিরোধী ওহী নাযিল করা সম্ভব নয়, তার প্রমান নিচের আয়াতটি। কারন কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন ওহী নেই। ফলে আল্লাহর পক্ষে কুরআন বিরোধী ওহী হাদিসের মাধ্যমে নাযিল করার প্রশ্নই আসেনা। ফলে কথিত দুরূদে ইবরাহীম যে মানব সৃষ্ট তা সুস্পষ্ট।
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلْقُرْءَانَۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُوا۟ فِيهِ ٱخْتِلَٰفًا كَثِيرًا
তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।(আন-নিসা ৪:৮২)
Source fb: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid02wTFMix55pNu3E1wz9NY4jgB33v7UrNwzZAauJBr7b1a8XX6hUfWuadirjaSDXAnvl&id=100003737428249