Meaning of Salat fb bn

সালাত শব্দের 100% সঠিক বিশ্লেষণ (তথ্যসূত্র , Lughat- ul- Quran, Dictionary of Quran. Volume 1,2,3,4): “সালাত” শব্দটির আদি মূল (Prime Root) হচ্ছে “সল” (সোয়াদ-লাম), আর ত্রিআক্ষরিক মূল (Triliteral Root) হচ্ছে “সল্লি” (সোয়াদ-লাম-লাম)/(صَلِّ) যার অর্থ “অনুসরণ করা/Follow, সংলগ্ন থাকা/Adhere, সংযুক্ত করা/Link/
Connect/Attach, সম্পর্কিত কারা/Relate, নিজের মতে মত করানো/Persuade, দেখভাল করা/আলোচনা করা/Deal, সাক্ষাৎ করা/Meet, নিকটে এগিয়ে যাওয়া/Approach, সহায়তা করা/Support. যত বড় Word Engineering করেন না কেন, যত নতুন নতুন শব্দের প্রয়োজন হোক না কেন, মূলের (Root) এই অর্থের সাথেই আপনাকে সংলগ্ন থাকতে হবে।

উদাহরণসহ একটু বুঝিয়ে বলি। যেমন, “রিবা” শব্দের আদিমূল (Proto Root) (র-বা) এর অর্থ “শ্বাসরোধ/শ্বাসকষ্ট/Strangulation/Asthma”, “অতিমূল্যায়ন/Overcharging”. এখন, Medical Science এর অগ্রগতির ফলে Bronchial Asthma কে একটু আলাদাভাবে চিহ্নিত করার দরকার হলো। তো সেটিকে বলা হলো, “আর-রাবু”। মূল (Root) “রিবা” অর্থ “শ্বাসরোধ বা শ্বাসকষ্ট” থাকার কারণে এই নতুন শব্দ উৎপন্ন করা হয়েছে “মূল (Root)” এর সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে। আরবি ভাষায়, মূল অর্থ থেকে সরে গিয়ে ইচ্ছামত “নতুন শব্দ” গঠন করা যায় না। কারণ আরবী Semitic Language, আর এই Language এর Natural Feature হচ্ছে, এর সমস্ত শব্দ, তার মূল (Root) থেকেই উৎসারিত।

এবার আসল কথায় আসি। “মুসল্লী” হচ্ছে সালাত সম্পাদনকারী/Salaat Performer. এখানে, Create থেকে যেমন Creator শব্দটি উৎপন্ন হয়,, ঠিক তেমনি সলা থেকে মুসল্লী (Follow-Follower). “মুসল্লী” হচ্ছে রেসের সেই ঘোড়া, যে ঘোড়া, সাবিক/মুযাল্লী/Champion ঘোড়ার পদচিহ্ন (Footsteps/signs) কে অনুসরণ করে (Follow). তো মানুষ রূপ মুসল্লীর Lead এ আছেন আল্লাহ। অতএব, আল্লাহর Footsteps/Signs/আয়াত, যা প্রকৃতিতে (ফি’লী হাদীস হিসেবে), আর কোরআনে (ক্বওলী ও তাক্বরীরি হাদীস হিসেবে) বিদ্যমান, তাকে অনুসরণ করতে হবে।

74/42-43 নম্বর আয়াতে, মুসল্লী তারা, যারা আল্লাহ যেমন রিযিকদাতা, ঠিক তেমনি আল্লাহর পদচিহ্ন অনুসরণ করে (within his ability) অভাবীকে আহার দান করেন।

70/34-35 নম্বর আয়াতে, মুসল্লী তারা, যারা আল্লাহ যেমন সমস্ত সম্পদের মালিক, ঠিক তেমনি আল্লাহর পদচিহ্ন অনুসরণ করে (within his ability) মালিক হওয়া সত্ত্বেও সে সম্পদে অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, অর্থাৎ অন্যের অধিকার আছে বলে মনে করে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে।

প্রত্যেকটি আয়াতের আগে-পিছে পড়লে বিষয়টি Clear হবে। “মুসল্লী” শব্দটাকে ভালোভাবে না বোঝা পর্যন্ত “সালাত” জিনিসটাকে বুঝা যাবে না, কারণ মুসল্লী হচ্ছে আসল “সালাত সম্পাদনকারী” (Actual Salaat Performer)।
আরব বিশ্বে ব্যবহারিক জীবনে এখনো পর্যন্ত “সালাত” শব্দের আদিমূল (Prime Root) “সল” (পেশ/যের/যবর বিহীন সোয়াদ-লাম) দ্বারা তৈরি প্রথম শব্দ “সল” (সোয়াদ-যবর-লাম), যার অর্থ দরোজার কব্জা (Door Hinge), যেটা দরোজার Movement কে “অনুসরণ করে”, দরোজার সাথে দরোজার ফ্রেম এর “সংযোগ/সংযুক্তি/সাক্ষাৎ (Link/Attachment/Meet) ঘটায়”, “সম্পর্ক তৈরি করে” (make Relationship), দরোজা ও দরোজার ফ্রেমকে সহায়তা করে (Support), দরোজা ও দরোজার ফ্রেম এর সাথে সংলগ্ন থাকে (Adhere).

সুতরাং কোরআনের কোন আয়াত, তার পূর্বের ও পরের আয়াতগুলো দ্বারা সৃষ্ট যে “প্রেক্ষাপটে রচিত” (অর্থাৎ মুতাশাবিহাত 3:7), সেই প্রেক্ষাপটে বলে দেওয়া আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুসরণের “কর্তব্য” (Duty) এর সাথে “সংলগ্নতা/সংযুক্তি/সম্পর্ক/যোগাযোগ” তৈরি করাই সালাত। বলে রাখা ভালো, সলাতের পরোক্ষ অর্থ “কর্তব্য” (পেক্ষাপট অনুযায়ী), যা কোরআনের প্রত্যেকটা আয়াত এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সালাত মানে কুরআনের নিরবিচ্ছিন্ন অনুসরণ Close Following Quran .

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহর হুকুম আহকাম বা নির্দেশনাবলীকে (Orders) এক শব্দে ‘সালাত’ বলা হয়। অন্যান্য সকল নবী রাসুলদের সময়ও সালাত প্রচলিত ছিল।

সুরা হুদে দেখুন সালাতের সংজ্ঞা:(১১:৮৪-৯৫) আর আমি মাদইয়ান বাসীদের কাছে তাদের ভাই শুআইবকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়,তোামরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, আর মাপে ও ওজনে কম দিও না, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে কল্যাণের মধ্যে দেখছি, কিন্তু আমি তোমাদের উপর আশংকা করছি এক সর্বগ্রাসী দিনের শাস্তি। হে আমার সম্প্রদায় তোমরা ন্যায়সঙ্গত ভাবে মাপো ও ওজন করে দিও, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিও না এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও তবে আল্লাহ অনুমোদিত যা বাকী থাকবে তা তোমাদের জন্য উত্তম। আর আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই। তারা বলল, হে শু’আইব! তোমার সালাত (বিধি-বিধান সমূহ/দায়িত্ব-কর্তব্য সমূহ) কি তোমাকে নির্দেশ দেয়, আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে অথবা আমরা আমাদের ধন-সম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও? তুমি তো বেশ সহিষ্ণু ও ভালো। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তাঁর কাছ থেকে আমাকে উৎকৃষ্ট রিযিক দান করে থাকেন (তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব?) আর আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি আমি নিজে তার বিপরীত করতে ইচ্ছে করি না। আমি তো আমার সাধ্যমত সংস্কারই করতে চাই আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে, আমি তারই উপর নির্ভর করি এবং তারই অভিমুখী। আর হে আমার সম্প্রদায়,আমার সাথে বিরোধ যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যার ফলে তোমাদের উপর তার অনুরূপ বিপদ আপতিত হবে যা আপতিত হয়েছিল নূহের সম্প্রদায়ের উপর অথবা হুদের সম্প্রদায়ের উপর কিংবা সালেহের সম্প্রদায়ের উপর, আর লূতের সম্প্রদায় তো তোমাদের থেকে দূরে নয়। তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তার দিকে ফিরে আস, আমার রব তো পরম দয়ালু, অতি স্নেহময়। তারা বলল, হে শুআইব তুমি যা বল তার অনেক কথা আমরা বুঝি না এবং আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বলই দেখছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতাম, আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমাদের কাছে কি আমার স্বজনবর্গ আল্লাহর চেয়ে বেশী শক্তিশালী? আর তোমরা তাকে সম্পূর্ণ পিছনে ফেলে রেখেছ। তোমরা যা কর আমার রব নিশ্চয় তা পরিবেষ্টন করে আছেন। আর হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমিও আমার কাজ করছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং কে মিথ্যাবাদী। আর তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি। আর যখন আমাদের নির্দেশ আসল তখন আমি শুআইব ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম। আর যারা সীমালংঘন করেছিল বিকট চীৎকার তাদেরকে আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় পড়ে রইল, যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। জেনে রাখ! ধ্বংসই ছিল মাদইয়ানবাসীর পরিণাম, যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল সামূদ সম্প্রদায়।(১১:৮৪-৯৫) তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে পাঠ করে শুনাও এবং সালাত (বিধি-বিধান সমূহ/দায়িত্ব-কর্তব্য সমূহ) বাস্তবায়ন কর। নিশ্চয় সালাত (বিধি-বিধান সমূহ/দায়িত্ব¡-কর্তব্য সমূহ) অশ্লীল, অনৈতিক ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর যিকির (নির্দেশনাই) তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর। (২৯:৪৫) আর তোমার রবের কিতাব থেকে তোমার নিকট যে ওহী করা হয়, তুমি তা পাঠ করে শুনাও। তার বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং তিনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল তুমি পাবে না।(১৮:২৭) এভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এক জাতির প্রতি, যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে, তাদের নিকট পাঠ করার জন্য, যা আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি।(১৩:৩০) আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি কুরআন পাঠ করে শোনাইতে। অতঃপর যে ব্যক্তি সৎ পথ অনুসরণ করে, সে তা অনুসরণ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং কেহ ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করলে তুমি বলও, আমিতো শুধু সর্তককারীদের মধ্যে একজন।(২৭:৯২)আল কুরআনে বর্নিত প্রতিটা আদেশ নির্দেশনাই হচ্ছে সালাত ৷বিশ্বাসীগণ সর্বদাই সালাতে (আল্লাহর আদেশ নির্দেশ পালনে) দন্ডাায়মান থাকে (৭০:২৪)

সুরা হুদে দেখা যায়: এখানে আল্লাহর নবী শুয়াইব মাদায়েনের অধিবাসীদেরকে আল্লাহর সামাজিক হুকুম-নিয়ম-বিধান জানিয়ে দিচ্ছিলেন। জবাবে, তারা বলেছিল-হে শুয়াইব! তোমার ‘সালাত’ কি তোমাকে এই নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পূর্বপুরুষ যার ইবাদত করতো- আমরা তা ছেড়ে দেই? অথবা, আমাদের ধন-সম্পদ দিয়ে যা ইচ্ছা তাই না-করি? নিশ্চয়ই তুমি ধৈর্যশীল সৎ মানুষ। (১১:৮৭)

এই কয়েকটি আয়াতে দেখা যাচ্ছে- নবী ও রসুল শোয়াইব তাঁর জাতির লোকদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম-নিয়ম-রীতি জানাচ্ছেন। আর সেসব নিয়ম-কানুন-হুকুম-গুলোকে তাঁর জাতির লোকজন একশব্দে ‘সালাত’ বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। আর সেই ‘সালাত’ শব্দটি আল্লাহপাক কুর’আনে উল্লেখ করে জানিয়ে দিলেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন ‘সালাত’ কি?

সালাহ” অর্থ আল্লাহর বিধি-বিধান, আদেশ-নিষেধ। আকিমুস সালাহ” অর্থ আল্লাহর সেই বিধি-বিধান, আদেশ, নিষেধকে ব্যক্তি থেকে বৈশ্বিক সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা।”যাকাহ” অর্থ পরিশুদ্ধতা অর্জন। আকিমুস সালাহ ওয়া আতুজ যাকাহ” অর্থ আল্লাহর বিধি-বিধান, আদেশ, নিষেধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিশুদ্ধতা অর্জন করা। মুসল্লী” অর্থ যিনি আল্লাহর বিধি-বিধান, আদেশ, নিষেধ প্রতিষ্ঠাকারী। জান্নাতীগণ অপরাধীগণকে জিজ্ঞাসা করবেন- কিসে তোমাদের ‘সাকার’ এ নিক্ষেপ করলো? তারা বলবে- আমরা মুসল্লী বা আল্লাহর বিধি-বিধান, আদেশ, নিষেধের অনুগামী ছিলাম না! আমরা অভাবীদের দান করতাম না! যারা অহেতুক আলোচনা করতো তাদের আলোচনায় যোগ দিতাম! আমরা কর্মফল দিবসে অস্বীকার করেছি, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত, ফলে সুপারিশকারীদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না।(৭৪:৪০-৪৮) কাজেই,সবাই সাবধান হই! বেঁচে থাকতেই মৃত্যু অবধি আল্লাহর বিধি-বিধান, আদেশ, নিষেধ পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে পরিশুদ্ধতা অর্জন-ই জাহান্নাম থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আল কুরআন অনুসারে মুসল্লীনদের পরিচয় অর্থাৎ মুসল্লীনদের বৈশিষ্ট্যগুলো জানার জন্য দেখে নিতে পারেন। (৭৪:৪২-৪৬)(১০৭:১-৭)(৭০:১৭-৩৫)(২৩:১-১১)(২৫:৬৩-৭৩)

Sourse fb https://bit.ly/3Ht99fW

Leave a comment