Bn Ramadan article by Syed Wali

Writer: Syed Wali.

স্বাগতম রামাজান

রামাজান সিয়াম সাধনার মাস। এই রামাজান শুরু হয়েছে । এই রামাজান মাসেই ইসলাম ধর্মালম্বিদের ধর্মগ্রন্থ বা পথ-নির্দেশ নাজিল শুরু হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সিয়াম সাধনা কেন এবং এই সাধনার মাধ্যমে সাধনাকারী কি অর্জন করতে পারে তা মাত্র কয়েকটি বাক্যে শেষ করেছেন।
আল্লাহ বলেন: “তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হল যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার”।
অর্থাৎ সিয়াম পালনের মাধ্যমে মুত্তাকী হওয়ার সাধনা জোরদার করার রমজান মাস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাধনার মাস।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে মানুষকে জানিয়েছেন, কেবলমাত্র মুত্তাকীদের জন্য বেহশত বা পরবর্তী পৃথিবীর আনন্দ অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ কেন কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এ সম্পর্কে বহু আয়াতে বলেছেন। তার মধ্যে দু-একটি:
২.২-৫: ইহা সেই কিতাব; ইহাতে কোন সন্দেহ নাই, মুত্তাকীদের জন্য ইহা পথ-নির্দেশ, যাহারা অদৃশ্যে ইমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করিয়াছি তাহা হইতে ব্যয় করে, এবং তোমার প্রতি যাহা নাযিল হইয়াছে ও তোমার পূর্বে যাহা নাযিল হইয়াছে তাহাতে যাহারা ইমান আনে ও আখিরাতে যাহারা নিশ্চিত বিশ্বাসী, তাহারাই তাহাদের প্রতিপালক-নির্দেশিত পথে রহিয়াছে এবং তাহারাই সফলকাম।
২. ২১: হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করিয়াছেন যাহাতে তোমরা মুত্তাকী হইতে পার।
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন যাতে তাদেও মধ্যে একদল মুত্তাকী হওয়ার সাধনায় সফল হতে পারে এবং পরবর্তী পৃথিবীর উত্তারাধিকারিত্ব লাভ করে।
রমজানের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ মানুষকে মুত্তাকী হওয়ার সুযোগ করে দেন। এ সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ বলেন:
২.১৮৩: হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হইল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হইয়াছিল, যাহাতে তোমরা মুত্তাকী হইতে পার-
২. ১৮৭: সিয়ামের রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হইয়াছে। তাহারা তোমাদেও পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাহাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করিতেছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি অবিচার ক্ষমাশীল হইয়াছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাহাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লহ্ যাহা তোমাদর জ্য নির্ধারণ করিয়াছেন তাহা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণরেখা হইতে ঊষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ই’তিকাফরত অবস্থায় তাহাদের সঙ্গে সংগত হইও না। এইগুলি আল্লাহ্র সীমারেখা। সুতরাং এইগুলির নিকটবর্তী হইও না। এইভাবে আল্লাহ্ তাঁহার বিধানবলী মানব জাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন,
এই মুত্তাকী কারা বা কি কি গুণাগুণ থাকলে একজন মানুষ বা আল্লাহর বান্দা মুত্তাকী হিসাব্ েআল্লাহর কাছে পরিগণিত হবেন এ সম্পর্কে বহু আয়াতের মধ্যে কয়েকটি:
২.১৭৭: পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পুণ্য নাই; কিন্তু পুণ্য আছে কেহ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণে ঈমান আনয়ন করিলে এবং আল্লাহ্প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থিগণকে এবং দাসমুকিত্র জন্য অর্থ দান করিলে, সালাত কায়েম করিলে ও যাকাত পদান করিলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়া তাহা পূর্ণ করিলে, অথর্- সংকটে দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করিলে। ইহারাই তাহারা যাহারা সত্যপরায়ণ এব ইহারাই মুত্তাকী।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আরো বহু আয়াত আছে। তবে কুরআন থেকে এই আয়াতগুলোও দেখে নিতে পারেন: ২ঃ ৩, ৪, ৫, ২১, ১০৩, ১৭৭; ৩: ৭৬, ১৩৩-১৩৬।
নিশ্চয়ই মুত্তাকী হওয়ার সাধনার মাস এই রামাদান। সুতরাং একজন মুত্তাকীর গুণাগুণ অর্জন করার জন্য রমাজানে এই সাধনা শুরু বা যিনি ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু করছেনে তার জন্য এই রমাজান মাস এই গুণাবলিকে নিজের মধ্যে আরো স্থিতিশীল করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহারও।
আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করি নিশ্চয়ই আমরা প্রায় সকলেই এইসব গুণাবলি সম্ভবত ধারণ করি সেগুলোর চর্চ্চা করি। আল্লাহ বলেন মুত্তাকীকের অন্যতম প্রধান গুণ তারা অঙ্গিকার রক্ষা করে। এই অঙ্গিকার রক্ষার উপর আল্লাহ বহু আয়াতে বার বার তাগাদা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে বহু আয়াতের মধ্যে ৩ঃ ৭৬ এবং ১৫ঃ ৯০-৯৫ আয়াত এই রমজানে কুরআন পাঠ করে দেখে নিতে পারেন।
আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেন অঙ্গিকার ভঙ্গ তা আল্লাহর সাথে হোক বা মানুষের সাথে হোক তারা নিশ্চিত শাস্তিপ্রাপ্ত।
আমরা হয়ত সকলেই আমাদের অঙ্গিকার রক্ষায় হুশিয়ার। তারপরও এবারের এই রমজানে আমরা অন্তত এই একটি বিষয়ে আমারা নিজেরা কে করছি সে বিষয়ে গভীরভারে চিন্তা করি- এভাবে এবারের সিয়াম সাধনার সাথে আমরা আরো দৃঢ়ভাবে অঙ্গিকার রক্ষার চর্চ্চা জোরদার করার সাধনায় লিপ্ত হতে পারি।

সেই সাথে যারা অঙ্গিকার ভঙ্গ করে তাদের সঙ্গ বর্জন করি।

আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পবিত্র মাসে মাধ্যমে মুত্তাকী হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিন।
আমীন।
( আমার এ লেখাটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সপ্তাহিক প্রবাস পত্রিকার প্রকাশিত)