নিচের বিধানগুলো কার তৈরি?

Anamul Hoque bd

নিচের বিধানগুলো কার তৈরি? এগুলো কুরআনের কোন কোন আয়াতের ব্যাখা জানতে চাই??
নবী কি কুরআন না মেনে নিজের মত বিধান প্রতিষ্টা করেছেন?
250 বছর পর বুখারীরা এগুলো সংগ্রহ করলো? আজব!!!
১. ঈদ-ই মিলাদুন্নবী
২.সকল মিলাদ।
৩.শব-ই বরাত ও তার হালুয়া/রু‌টি ভোজন।।
৪. শব-ই মিরাজের সালাত বা সাওম বা এ উপলক্ষে কোন ইবাদাত।
৫. কুর’আন খানি/ফা‌তেহা খা‌নি।
৬. মৃত ব্যাক্তির জন্য- কুর’আন পড়া।
কুলখানি, চল্লিশা, দু’আর আয়োজন, সওয়াব বখশে দেয়া।
৭. জোরে জোরে চিল্লিয়ে জিকির করা।
৮. হাল্কায়ে জিকির,ইসকের জিকির লাফালাফি,নাচানাচি জিকির।
৯. পীর-মুরীদি মানা।
১০.মুখে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পড়া।
১১. ঢিলা কুলুখ নিতে গিয়ে ৪০ কদম হাঁটা, কাঁশি দেয়া উঠা বসা
করা,লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে হাটাহাটি ইত্যাদি।
১২. ফাজায়েলে আমল,ফাজায়েলে
সাদাকাত,ফাজায়েলে হজ্জ ইত্যাদি কিতাব তালিম করা বা পড়া।
১৩. জায়নামাজ এবং মৃত ব্যাক্তির জন্য দুআ পড়া।
১৪. সালাতের পদ্ধতি তৈরি করে সেগুলা পালন করা ৷
১৫.কবরে হাত তুলে সবাই একএে মৃত ব্যাক্তির জন্য দূ’আ করা।
১৬.খতমে ইউনুস,তাহলীল, খতমে কালিমা, বানানো দরুদ পড়া, এবং যত প্রকার তাজবীহ খতম আছে তাজবীহ দানা গননা করা।
১৭.১৩০ ফরজ মানা।
১৮. ইলমে তাসাউফ বা সুফীবাদ মানা।
১৯. জন্মদিন, মৃত্যুদিবস, পালন করা।
২০. অপরের কাছে তাওবা পড়া।
২১. অজুতে নকল নিয়ম তৈরি করা।
২২.আল্লাহকে “খোদা” বলা।
২৩. অতিরিক্ত এলেম বা তাওয়াজ্জুহ মানা।
২৪. বার্ষিক মাহফিলের আয়োজন করে রাতভর ওয়াজ করা সম্মিলিত মুনাজাত করা ।
২৫.অন্ধভাবে মাজহাব মানা।
২৬. ওরস পালন করা। কবর পাকা, কবর সাজানো, লাইটিং করা।
২৭. এমন দু’য়া বা দুরুদ পড়া যা কুরআনে নাই। এবং
দুরুদে হাজারী, দুরুদে লক্ষী, দুরুদে তাজ, ওজীফা,
দুরুদে জালালী, দুরু‌দে তুনাজ্জিনা, ইত্যা‌দি শিক্ষা দেয়া।
২৮. মালাকুল মাউতকে আজরাঈল বলে ডাকা।
২৯. ওয়াজে মিথ্যা বানোয়াট(নফল হি‌সে‌বে) হাসির গল্প বলে মানুষকে হাসানো
৩০.“যাকাতকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া ৷
৩১. ৭০ হাজারবার কালিমা খতম করা।
৩২.শিয়া, সুন্নি নামে দলাদলি করা।
৩৩. দলের আমীরের হাতে বায়াত করা।
৩৪. দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত রাজনীতি করা।
৩৫. দ্বীনের হেফাজতের নামে হরতাল অবরোধ মারামারি করা জিহাদ, এ শিক্ষা দেয়া।
৩৬. সালামুন আলাইকুম এর পরিবর্তে বিকৃত আসসালামুন আলাইকুম বলা ৷
৩৭. কুরআন ছেড়ে হাদিস মানা ৷
৩৮. মৃত ব্যাক্তির কাজা নামাজের কাফফারা দেয়া বা আদায় করা।
৩৯. কুর’আনকে সবসময় চুমু খাওয়া
৪০. কুর’আন নীচে পড়ে
গেলে লবণ কাফফারা দেয়া,সালাম করা, কপালে লাগানো ইত্যাদি।
৪১. দুই হাতে মোসাফা করা, মোসাফা শেষে বুকে হাত লাগানো।
৪২.কারোর গায়ে পা লাগলে গাঁ ছুঁয়ে সালাম করা।
৪৩.ইছালেহ সোয়াব নামে ওয়াজ ও দোয়া করা
৪৪. আল্লাহ পাকের হাত নেই, পা নেই, চোখ নেই, চেহারা নেই, ইত্যাদি আলোচনা ৷
৪৫. রাসুল গায়েব জানতেন বলা।
৪৬. রাসুল জীবিত বলা।
৪৭. রাসুল(সাঃ)নুরের সৃস্টি।
এগুলো কুরআনের কোন কোন আয়াতের ব্যাখা জানতে চাই??

Source comments:-

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3736839023005922&id=100000395832341

Quran and Bukhari Hadiths bn

Collected…

বোখারীর হাদিস সংগ্রহ ,হাদিসের সংখ্যা, সংকলন এবং অঙ্ক কষে হিসেব মিলেনা মর্মে আলোচনাঃ=
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦ অনেকেই সিহা সিত্তার মধ্যে ইসমাইল বোখারীর সংগৃহীত এবং সংকলিত হাদিস গ্রন্থটিকে বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ হিসেবে উল্লেখ করেন। আবার অনেকেই এই হাদিস গ্রন্থটিকে মহাগ্রন্থ কুরআনের পর দ্বিতীয় কুরআন হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকেন। এমন কি বোখারীর হাদিস অস্বীকারকারিদের কে কাফের, নাস্তিক এবং মূর্তাদ বলে ফতোয়া দেওয়া হয়। প্রকৃত পক্ষ্যে মানব রচিত বিধান মান্যকারিরাই হাক্কানী কাফির। ২ঃ৭৯/১৭৬ মতে যারা নিজেরা কিতাব রচনা করে বিনিময় নেয়, ৪ঃ১৫০-১৫২ আয়াত মতে আল্লাহ ও রাসুলের মধ্যে ফারাক করে নিজেরা নিজেদের রচিত বিধান যেমন বুখারী, তিরমিজি, ফাজায়েল আমল, কিয়াস, ফেকাহ, নেয়ামুল কুরআন, মকসুদুল মুমিমিন, বেহেস্তের জেওর, ফতোয়া ইত্যাদি গ্রন্থ হতে এবং কুরআন হতে কিছু বিধান নিয়ে মধ্যম পন্থা তৈরি করে তারা হাক্কানি কাফির ৪ঃ১৫০-১৫২/ ১০ঃ১৫। বিশেষ করে বেখারী ও মুসলিমের সংগৃহীত হাদিসগুলির ওপরই ইসলামী আকায়েদ, মাসলা, মাসায়েল ও আইনের ভিত্তি রচিত হয়েছে।
এবার চলুন, আমরা বোখারীর হাদিস সংগ্রহ, সংকলন প্রসঙ্গে সামান্য আলোচনার সুত্রপাত করি। বোখারী হাদিস সংগ্রহের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হাদিস, ১. নির্ভরযোগ্য রাবীগণ ( বর্ননাকারি) একে অন্য হতে, ২. নির্বিরোধে, ৩. অবিচ্ছান্ন সুত্রে বর্ননা করেছেন এবং সে হাদিসের সনদ, ৪. শেষ ব্যক্তিরা, ৫. প্রসিদ্ধ সাহাবী হন এবং প্রত্যেক স্তরে অন্তত, ৬. তিনজন উক্তরুপ নির্ভরযোগ্য রাবী পাওয়া যায়, অথবা কোন স্তরে একজন রাবীর অভাব অন্যকোনো বিশেষ অবস্থার বিবেচনায়, ছ.যদি সে অভাবের ক্ষতিপূরণ হয়, তবেই সে হাদিস বিশুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।নিম্নে এই পয়েন্ট গুলি আলোচনা করা হল।

১. নির্ভরযোগ্যঃ= তীক্ষ্ণ, প্রবল, স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ,জ্ঞানী, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী হলে তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলে।
২. নির্বিরোধঃ= যারা হাদিস বর্নণা করেন তাদের মধ্যে হাদিসের মর্ম,বা শব্দ যোজনা, বা অন্যকোনো বিষয়ে মতভেদ না হলে তাকে নির্বিরোধ বলা হয়।
৩. অবিচ্ছন্ন সনদ বা সুত্রঃ= বর্ণনাকারীদের মধ্যে এমন কোন দোষ নেই যাতে একজনের কাছ থেকে অন্যজনের শোনার কোন বাধা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন মনে করি, “ক”এবং “খ”, “প” এবং “ফ” থেকে হাদিস শুনেছেন। কিন্তু এ চার জনের জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায় যে, “ক” এব “খ” এর জন্মের আগেই “প” এবং “ফ” মারা গেছেন কিংবা তাদের মধ্যে দেখাশুনার কোনো সম্ভবনা ছিলনা।
অতএব, এ ক্ষেত্রে সনদ বা সুত্র ছিন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বোখারী ও মুসলিমের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বোখারীর মতে “ক” এবং “খ” এর সাথে “প” এবং “ফ” এর দেখা হয়েছে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে আর মুসলিমের মতে “ক” এবং “খ” এর সাথে “প”এবং “ফ” এর দেখা হবার যথেষ্ট সুযোগ ছিল, কিন্তু দেখা যে হয় নাই তার সুস্পষ্ট কোন প্রমান নেই এভাবে তারা হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ বলে বিবেচনা করতেন।

৪. শেষ ব্যক্তিরা বলতে সে -সমস্ত সাহাবিদের বুঝানো হয়েছে, যারা নিজে কানে বা চোখে আঁ হজরত সাঃ থেকে তা শুনেছেন বা দেখেছেন।

৫.. প্রসিদ্ধ সাহাবী বলতে যে সে সাহাবী হলে চলবেনা। যিনি দীর্ঘকাল আঁ হজরত সাঃ এর সাহচার্যে থেকেছেন, তাঁকে অনুসরন করেছেন এবং সত্যবাদী, মেধাবী বলে বিখ্যাত এমন সাহাবী হতে হবে।

৬. তিনজন নির্ভরযোগ্য রাবী বলতে বুঝানো হয়েছে = যেমন ধরুন, “ক” এবং “খ” বলেন তারা “প” এবং “ফ” থেকে শুনেছেন, আবার “ক”এবং “খ” বলেন তারা “ত” এবং “থ” থেকে শুনেছেন। এখানে “ক” এবং “খ” একস্তর, “প”এবং “ফ” একস্তর এবং “ত” এবং “থ” আর একস্তর। প্রত্যেক স্তরে অন্তত ২ জন নির্ভরযোগ্য রাবী রয়েছেন। কিন্তু “ক এবং “খ” যদি বলেন তারা “প” এর নিকট হতে শুনেছেন আর “প” যদি বলেন তিনি “ত” এবং “থ” এর নিকট থেকে শুনেছেন তাহলে এ স্তরে মাত্র একজন রাবী “প” কে পাওয়া যাচ্ছে। “প” একজন রাবী হওয়ায় যদিও এখানে হাদিসের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে, তথাপি “প” যদি বিশেষ গুণে গুনাণ্বিত হন অর্থাৎ মহাজ্ঞানী, অপূর্বধীসম্পন্ন, নির্মল চরিত্র, ধর্মপ্রান ও চিরোসত্যবাদী বলে বিখ্যাত হন তাহলে তার বর্ণনা দুই ব্যক্তির সমতুল্য বলে গৃহীত হবে।

বোখারী বলেন, “আমি কোন দুঃশ্চরিত্রের মারফত প্রাপ্ত হাদিস গ্রহণ করি নাই। তিনি আরো বলেন, এইরুপ
( উপরোক্ত বর্ণনা মতে) যাচাই- বাছাই করে যে হাদিস টিকতো তা গ্রন্থে সন্নিবেশিত করার পূর্বে আমি ওজু ও গোসল করে নির্মল মনে পবিত্র শরীরে এস্তেখারা বা আল্লাহর ধ্যানে বসতাম। এস্তেখারাতে হাদিসের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত উপলব্ধির পরই কেবল তা আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে যথাস্থানে লিপিবদ্ধ করেছি। সর্বশুদ্ধ ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ হাদিস হতে যাচাই – বাছাই করে মাত্র ৭২৯৭ টি হাদিস এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি। এটা হতে পুনঃ পুনঃ উল্লেখিত হাদিস বাদ দিলে ২৭০১ টি হাদিস থাকে ( সংখ্যা নিয়ে অবশ্য মতভেদ রয়েছে) । অবশ্য আমি যে হাদিস গুলি ছেড়ে দিয়েছি তাতে সবই যে কৃত্রিম বা অশুদ্ধ এমন নহে, এর ভেতরও অনেক সহি হাদিস রয়েছে। সুত্রঃ= ইসলাম সোপান, ইব্রাহীম খাঁ, আহসান উল্লাহ বাংলা একাডেমি পৃ.৯৬–৯৮।

ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামীক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ উল্লেখ করে ” অতপর তিনি হাদিস অনুসন্ধানে মিশর গমন করেন। পরবর্তি ১৬ বছর তিনি উক্ত কাজে ব্যাপৃত থাকেন। এই ১৬ বছরের মধ্যে ১১ বছর তিনি এশিয়ায় পর্যটন করেন এবং ৫ বছর বসরায় অতিবাহিত করেন। কারো কারো মতে ৬০–৭০ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করতে তার ১৬ বছর সময় লেগেছিল। আবার কারো কারো মতে মতে এস্তেখারার মাধ্যমে হাদিসের সত্যতা নিশ্চিত উপলব্ধির পর তা যথাস্থানে লিপিবদ্ধ করে সংকলন করতে তার সময় লেগেছিল ১৬ বছর।
এইবার আসুন, থলের কালো বিড়াল বের করি এবং আমরা উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কিছু আলোচনার অবতারণা করি। যদি ধরে নিই যে, হাদিস সংগ্রহ করতে তার সময় লেগেছিল ১৬ বছর, তাহলে এইবার আমরা একটু হিসাব কষে দেখি যে, প্রতিটি হাদিস সংগ্রহ করতে তার কতটুকুন সময় লেগেছিল? ১৬ বছর * ৩৬৫ দিন = ৫৮৪০ দিন।( * এই তারকা চিহ্নটি গুন চিহ্নের প্রতীক) ২৪ ঘন্টার ১ দিন হলে সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ১২ ঘন্টা কর্মদিবস হিসেবে এবং বাঁকি ১২ ঘন্টা ( রাত্রীকালিন সময়) বিশ্রাম বা অন্যান্য ব্যক্তিগত কার্যদি সম্পাদনের সময় হিসেব ধরে নিয়ে হিসেব করলে যা দাঁড়ায়= ৫৮৪০দিন * ১২ঘন্টা = ৭০০৮০ ঘন্টা= ৭০০৮০ঘন্টা * ৬০ মিনিট = ৪২০৪৮০০মিনিট * ৬০= ২৫২২৮৮০০০ সেকেনন্ড। এই সময়টুকুতে যদি ৭০ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করে থাকেন তাহলে প্রতিটি হাদিস সংগ্রহ করতে তার সময় লেগেছিল =
২৫২২৮৮০০০সেকেন্ড ÷ ৭০,০০০০০টি হাদিস = ৩৬ সেকেন্ড প্রায়।

যদি ধরে নিই যে , ৭০ লক্ষ হাদিস এস্তেখারার মাধ্যমে সত্যতা নিশ্চিত উপলব্ধি হবার পর তা যথাস্থানে সংকলন করতে তার সময় লেগেছিল ১৬ বছর। তাহলেও আমরা হিসেব কষে দেখতে পাইযে, ( উপরোক্ত হিসেব মোতাবেক অর্থাৎ১২ ঘন্টা কর্ম ও ১২ ঘন্টা বিশ্রাম, ব্যক্তিগত কার্যাদি সম্পাদনের সময়) প্রতিটি হাদিস এস্তেখারার মাধ্যমে সত্যতা যাচাইয়ের পর লিপিবদ্ধ করতে তার সময় লেগেছিল ঐ ৩৬ সেকেন্ড প্রায় ।
আবার যদি ধরে নিই যে, তিনি সারা জীবনভর তা সংগ্রহ করেছেন তবে সংকলন করতে সময় লেগেছিল ১৬ বছর, তাতেও হিসেব করে দেখা যায় যে, তার হায়াতে জিন্দেগানী ছিল ১৯৪ হিজরি –২৫৬ হিজরি সন পর্যন্ত( ১৩ দিন কম) প্রায় ৬২ বছর। তা থেকে যদি তিনি ১৬ বছর সংকলনের কাজে ব্যয় করেন তাহলে থাকে ৬২–১৬= ৪৬ বছর। বিভিন্ন তথ্যে দেখা যায় যে, তিনি ১৬ বছর বয়সে হাদিস সংগ্রহের কাজে ব্রত হন। তাহলে থাকে ৪৬ –১৬ = ৩০ বছর। ১২ ঘন্টা কর্মদিবস হিসেবে ( পুর্বে উল্লেখিত হিসেব মোতাবেক) ধরে নিলে প্রতিটি হাদিস সংগ্রহে তার সময় লেগেছিল = ৩০– ১৫= ১৫ বছর * ৩৬৫ দিন = ৫৪৭৫ দিন। ৫৪৭৫দিন * ২৪ ঘন্টা = ১৩১৪০০ ঘন্টা * ৬০মিনিট = ৭৮৮৪০০০ মিনিট ÷ ৭০০০০০০টি হাদিস = ১. ১২ মিনিট তথা ১মিনিট ১২ সেকেন্ডের মধ্যে তাকে প্রতিটি হাদিস সংগ্রহ করতে দূর- দূরান্তে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তাও আবার বর্তমান কনকর্ড বিমানে নয়, মোটরসাইকেল, বাস, প্রাইভেটকার নয়। বরং সেই কালের বাহন = উঁট, ঘোড়া, গাধা, খচ্ছর, নোকা কিংবা পদব্রজে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি কোন দুঃশ্চরিত্রের হাদিস সংগ্রহ করেননি এবং উল্লেখিত কঠোর নীতিমালা অনুসরন ও যাচাই- বাছাই করে।
প্রিয় বিজ্ঞ পাঠক, বিবেকের কাঠগড়ায়, মনের স্বচ্ছ আয়নায় একটু চিন্তা করে দেখুন, তা কীভাবে সম্ভব! আমি আর কত বলবো! সভ্য সহস্রাব্দে পদার্পন করার পরও আমাদের কে এরুপ গোঁজামিলের, অসামঞ্জস্য, অবিশ্বাস্য, অবাস্তব কথার তকমা জোর করে বিশ্বাস করানো হচ্ছে। আর এই তথাকথিত বোখারী শরীফে প্রিয় নবীজি সাঃ এর চরিত্রের অপমান, অবমূল্যায়ন, এবং অবাস্তব, অসম্ভব, অবৈজ্ঞানিক, অনৈতিক, অনেক আজগুবি কথা, কাজ, ও নির্দেশ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, যা পড়ে শত্রুরা মহানবী সাঃ এর চরিত্রে দোষ খুঁজছে এবং ইসলাম কে একটি অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, গাঁজাখোরী,সন্ত্রাসী দর্শন, ধর্ম বলে প্রমান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

এমতবস্থায় নবীজি সাঃ এর হাদিস বলে যে হাদিস গুলা আমরা পেয়েছি তা মুহাদ্দিসের দ্বারা যতই যাচাই-বাছাই করে পেশ করা হউক না কেন, নবীজি সাঃ এর নির্দেশ মোতাবেক তা মহাগ্রন্থ কুরআনের আলোকে বিচার বিশ্লেষন করে গ্রহন করা ব্যতীত আমাদের কাছে বিকল্প কোন উপায় থাকেনা। শুধু ” কালা ” ” কালা ” বলেই বর্ণিত হাদিস নবীজি সাঃ এর হাদিস বলে গ্রহণ করা যাবেনা। মহাগ্রন্থ কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যহীন বা কুরআনের সাথে মতনৈক্য হয় এমন হাদিস যতই সিহাসিত্তায় থাকুক না কেন উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থে তা অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় এক সময় বিশ্বব্যব্যপী নেতৃত্বদানকারি এই মুসলিম জাতিটি কখনো কুরআনের প্রকৃত অনুসারি তথা আহলে কুরআন হতে পারবেনা।উল্লেখ্য যে বোখারী শরীফ নামের হাদিস গ্রন্থ কে দ্বিতীয় কৃরআন হিসেবে যারা জানে, মানে সেই হাদিস গ্রন্থ সংকলের প্রেক্ষাপট যদি এমন আজগুবি ভিত্তিহীন হয়ে যায় তবে অন্যান্য হাদিস গ্রন্থগুলির কি হ-জ-ব-র-ল অবস্থা তা সহজেই অনুমান করা যায়। বর্তমানে প্রায় ৪ শতাধিক হাদিস গ্রন্থ বাজারে রয়েছে। এগুলির সব বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রনোদিত নবীজি সাঃ এর ঘোর শত্রুদের দ্বারা রচিত।

তাছাড়া ধান সার দিয়ে চিঁটা আবর্জনা পৃথক করার সময় ধানের মধে যেমন চিঁটা এবং চিঁটার মধ্যে যেমন ধান মিশ্রীত হওয়ার সমুহ আশংকা থাকে তেমনি বোখারী শরীফের ৬০–৭০ লক্ষ হাদিসের মধ্য হতে ৭২৯৭ টি হাদিস যাচাই- বাছাই করতে গিয়ে যে, জাল হাদিসের মধ্যে সহি হাদিস কিংবা সহি হাদিসের মধ্যে জাল হাদিসের সংমিশ্রণ বা অনুপ্রবেশ ঘটেনি তার মাপকাঠি বা নিশ্চয়তা কী? আবার অনেকে বলেন হাদিস গ্রন্থ নাকি কুরআনের ব্যাখ্যা, হাদিস ছাড়া কুরআন বুঝা যাবেনা। কিন্তু না, তাদের বুঝ ঠিক নয়।আমরা সবাই জানি কুরআনে ১১৪ টা সূরা রয়েছে, ইমাম বুখারী কিন্তু সকল সূরার সকল আয়াতের ব্যখ্যা দেন নি। ২৮ টি সুরার ব্যাখ্যা সম্বলিত কোন হাদীস সহি বুখারীতে নেই।

২ নং সূরা বাক্কারাহতে ২৮৬ টি আয়াত রয়েছে, বুখারীতে মাত্র ৫০ টির মতো আয়াতের ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীস পাওয়া যায়। এর অর্থ দাড়ায় ২০% আয়াতের ব্যাখ্যা রয়েছে, বাকি ৮০% এর ব্যাখ্যা নেই। বিধায় মনের আয়নায় প্রশ্ন জাগে তাহলে কেমনে বোখারী কুরআনের ব্যাখ্যাকারী গ্রন্থ হয়?
এখন দেখা যাক ব্যাখ্যার ধরন। ১০৮ নং সূরা আল-কাওসারে ৩টি আয়াত রয়েছে। একটি মাত্র শব্দের ব্যাখ্যার মধ্য দিয়েই পুরা সুরার ব্যাখ্যা সম্পন্ন করাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। বুখারী বলেছেন – ‘কাওসার’ জান্নাতের একটি নদী।
বুখারী সম্ভবত ভালো আরবি জানতেন না তার একটা উদাহরন। কারন ‘কাওসার’ মানে পর্যাপ্ত পরিমানে ভালো কিছু। ‘কাথির’ মানে অনেক, পর্যাপ্ত।

এছাড়া কুরআন নিজেই নিজের ব্যাখ্যাকারি, বর্ণনাকারি, বর্ননা কারি, বিবৃতকারি, প্রত্যায়ন কারি, সত্যায়ন কারি, ফায়সালাকারি, সমাধানকারি,সহজ – সরল গ্রন্থঃ ৪ঃ১০৫/ ৬ঃ৩৮/ ৬৫/৮৯/১০৫/ ১১৪/ ১১৯/১২৬/৭ঃ৫২/৫৮/৯ঃ১১/১০ঃ৩৭/৬১/১১ঃ৬/১২ঃ১,১১১/১৩ঃ১/ ১৬ঃ৪৪/৫৮/৮৯/ ১৭ঃ৯/ ৮১/৪১/ ৮৯//১৮ঃ১-২/৫৪/১৯ঃ৯৭/২২ঃ৭২/২৪ঃ১৮,৪৬,৫৮, ৫৯, ৬১/২৫ঃ৩৩/ ২২ঃ৭২/২৭ঃ৭৫-৮৯/ ৩৪ঃ৩/৩৯ঃ২৭/ ৩৮ঃ২৯/৫৪ঃ১৭/২২/৩২/৮৬ঃ১৩।

এবং কুরআন নিজেই হাদিস গ্রন্থ। কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত গুলিতে হাদিসের কথা উল্লেখ রয়েছে।
১. কুরআন নিজেই আহসানাল হাদিস বা উত্তম বানি ৩৯ঃ২৩। ২. কুরআনে লাউয়াল হাদিসের কথা বা অসার বানির কথা উল্লেখ রয়েছে ৩১ঃ৬।কুরআন নিজেই রাসুলের হাদিস বা বানি ৬৯ঃ৪০/ ৮১ঃ১৯। কুরআন আল্লাহর বানি তার পক্ষে সমর্থিত আয়াত ৬৯ঃ৪২-৪৪/২৯ঃ৪৬-৪৯।।আরো দেখুন কুরআন রাসুলের / আল্লাহর হাদিস বা বানি তথা নিস্নের আয়াত গুলিতে হাদিস শব্দ দেখতে পাবেনঃ= ৪ঃ৪২/৪ঃ৭৮/৪ঃ৮৭/৪ঃ১৪০/৪৭ঃ৮/৬ঃ৬৮/৭ঃ১৮৫/১২ঃ১১১/১৮ঃ৬/২০ঃ৯/৩১ঃ৬/৩৩ঃ৫৩/৩৯ঃ২৩/৪৫ঃ৬/৫১ঃ২৪/৫২ঃ৩৪/৫৩ঃ৫৯/৫৬ঃ৮১/৬৬ঃ৩/৬৮ঃ৪৪/৬৮ঃ৫০/৭৮ঃ১৫/৭৯ঃ১৫/৮৫ঃ১৭/৮৮ঃ১।

বিধায় যেহেতু কুরআন পুর্নাংগ জীবন বিধান ৫ঃ৩ সেহেতু কুরআনের বাইরে মানব রচিত কোন হাদিস, ফতোয়া গ্রহনের সুযোগ নেই। কারন ফতোয়া দেয়ার মালিক তো আল্লাহ ৪ঃ১২৭/১৭৬।

মোঃ নজরুল ইসলাম। ০৫–০৮–২০২০ খ্রীঃ।

কিয়ামতের আলামত নেই – আবির্ভূত হবে আচমকা

By Any Sayed Khan fbfd

কিয়ামতের আলামত নেই – আবির্ভূত হবে আচমকা

সায়াতুন বা কিয়ামত সম্পর্কিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর
সায়াতুন বা কিয়ামতের ঘন্টা সম্পর্কে মানুষ শেষনবীকে বহু প্রশ্ন করত – কিয়ামত কখন ঘটবে। এই বিষয় নিয়ে কুরআনে বহু আলোচনা হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই উত্তর জানিয়ে দেয়া হয়েছে কিয়ামত সম্পর্কিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই আছে।
وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ * قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ
তারা বলেঃ এই প্রতিশ্রুতি কবে হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? বলো, এর জ্ঞান আল্লাহ তা’য়ালার কাছেই আছে। আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী। -৬৭:২৫-২৬
فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ * قَالَ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ وَأُبَلِّغُكُمْ مَا أُرْسِلْتُ بِهِ وَلَكِنِّي أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ
তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দাও, তা নিয়ে আস। সে বলল, এ জ্ঞান তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আমি যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছি, তা তোমাদের কাছে পৌঁছাই। কিন্তু আমি দেখছি তোমরা এক মুর্খ সম্প্রদায়। -৪৬:২২-২৩
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। -৩১:৩৪
إِلَيْهِ يُرَدُّ عِلْمُ السَّاعَةِ وَمَا تَخْرُجُ مِنْ ثَمَرَاتٍ مِنْ أَكْمَامِهَا وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِ
কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোন ফল আবরণমুক্ত হয় না। এবং কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। -৪১:৪৭
وَتَبَارَكَ الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَعِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
বরকতময় তিনিই, নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু যার। তাঁরই কাছে আছে কিয়ামতের জ্ঞান এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। -৪৩:৮৫
বস্তুত অন্যান্য বহু বিষয় নিয়েই মানুষ নবীকে প্রশ্ন করত আর সেগুলোর উত্তর বলে দিয়ে আল্লাহ নবীকে বলতেন তুমি এটা তাদের বলে জানিয়ে দাও। অতঃপর সেসব প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ নিজেই কুরআনে জানিয়ে দিয়েছেন।
কেবলমাত্র এই একটি প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ বলেছেন, তুমি বলো এই জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ ভিন্ন আমার কাছে নেই। অতএব, াআল্লাহ যে প্রশ্নের উত্তরে নবীকে কোন কিছু জানান নাই, সে সম্পর্কে নবীও আমাদের তাঁর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কিছু বলবেন তা আমরা আশা করতে পারি না।
কিয়ামতের দিনক্ষণ জেনে নবীর কী কাজ?
কিয়ামতের বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থা ও দায়িত্ব ভুলে যাওয়া আদম সন্তানদের কৌতুহল ও অতি উৎসাহ এত বেশী ছিল যে, রাসূলকে পর্যন্ত পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, তুমি কি করে কিয়ামতে সম্পর্কে জানবে। আরও বলেন, তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করছে যেন তুমিই এ বিষয়ে আগ্রহী এবং সবিশেষ অবগত – they question you as if you have researched it deeply।
يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنِ السَّاعَةِ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا
মানুষ তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। তুমি কি করে জানবে যে সম্ভবতঃ কিয়ামত নিকটেই। -৩৩:৬৩
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
তোমাকে জিজ্ঞেস করে, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দাও, এর খবর তো আমার রব্বে কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। তোমাকে তারা জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন তুমি তার অনুসন্ধানে লেগে আছো। বলে দাও, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। -৭:১৮৭
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا * فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا * إِلَى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, কিয়ামত (সায়াতুন) কখন হবে? এর বর্ণনার সাথে তোমার কি সম্পর্ক? এর চরম জ্ঞান তোমার রব্বের কাছে আছে। -৭৯:৪২-৪৩
শেষনবীর কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ে জানাশোনা ছিল না কেননা আল্লাহ তাঁকে তা দান করেন নি; এর পরম জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই গচ্ছিত আছে।
কিয়ামতের আগমন হবে আচমকা: বাগতাতা
মানুষের ধারণার বাইরে কিয়ামত হাজির হয়ে যাবে যখন তারা তা মেলাতেই পারবে না; তারা হতবুদ্ধি হয়ে যাবে তার সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত আগমনে। এটাকেই বলা হয়েচে বাগতাতান বা একেবারেই আচমকা আগমন। আল্লাহ নিজে বলছেন যখন কিয়ামত আসবে তখন তাদের এর আকস্মিক আগমন সম্পর্কে কোন খবরই থাকবে না (১২:১০৭, ২৬:২০২, ২৯:৫৩, ৪৩:৬৬)।
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّهِ حَتَّى إِذَا جَاءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوا يَا حَسْرَتَنَا عَلَى مَا فَرَّطْنَا فِيهَا وَهُمْ يَحْمِلُونَ أَوْزَارَهُمْ عَلَى ظُهُورِهِمْ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ
নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে যাবে, তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে আমরা কতই না ক্রটি করেছি। তারা স্বীয় বোঝা স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ, তারা যে বোঝা বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা। -৬:৩১
لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً
যখন তা তোমাদের উপর অজান্তেই এসে যাবে। -৭:১৮৭
أَفَأَمِنُوا أَنْ تَأْتِيَهُمْ غَاشِيَةٌ مِنْ عَذَابِ اللَّهِ أَوْ تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
তারা কি নির্ভীক হয়ে গেছে এ বিষয়ে যে, আল্লাহর আযাবের কোন বিপদ তাদেরকে আবৃত করে ফেলবে অথবা তাদের কাছে হঠাৎ কিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা টেরও পাবে না? -১২:১০৭
وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ * لَوْ يَعْلَمُ الَّذِينَ كَفَرُوا حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَنْ وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَنْ ظُهُورِهِمْ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ * بَلْ تَأْتِيهِمْ بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ
এবং তারা বলেঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে এই ওয়াদা কবে পুর্ণ হবে? যদি কাফেররা ঐ সময়টি জানত, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পৃষ্ঠদেশ থেকে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না। বরং তা আসবে তাদের উপর অতর্কিত ভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। -২১:৩৮-৪০
وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي مِرْيَةٍ مِنْهُ حَتَّى تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيمٍ
কাফেররা সর্বদাই সন্দেহ পোষন করবে যে পর্যন্ত না তাদের কাছে আকস্মিকভাবে কিয়ামত এসে পড়ে অথবা এসে পড়ে তাদের কাছে এমন দিবসের শাস্তি যা থেকে রক্ষার উপায় নেই। -২২:৫৫
لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ * فَيَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ * فَيَقُولُوا هَلْ نَحْنُ مُنْظَرُونَ
তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে না, যে পর্যন্ত প্রত্যক্ষ না করে মর্মন্তুদ আযাব। অতঃপর তা আকস্মিকভাবে তাদের কাছে এসে পড়বে, তারা তা বুঝতেও পারবে না। তখন তারা বলবে, আমরা কি অবকাশ পাব না? -২৬:২০১-২০৩
لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ * فَيَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ * فَيَقُولُوا هَلْ نَحْنُ مُنْظَرُونَ
তারা তোমাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি আযাবের সময় নির্ধারিত না থাকত, তবে আযাব তাদের উপর এসে যেত। নিশ্চয়ই আকস্মিকভাবে তাদের কাছে আযাব এসে যাবে, তাদের খবরও থাকবে না। -২৯:৫৩
وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসার পূর্বে। -৩৯:৫৫
هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
তারা কেবল কিয়ামতেরই অপেক্ষা করছে যে, আকস্মিকভাবে তাদের কাছে এসে যাবে এবং তারা খবরও রাখবে না। -৪৩:৬৬
فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً
তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কিয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। -৪৭:১৮
কিয়ামতের তথাকথিত আলামত দিয়ে যদি কেউ কিয়ামতের আগমনকে সুনির্দিষ্ট করতে পারত তবে কিয়ামতের মুখোমুখি হয়ে কেউ একথা বলত না যে, হায় আফসোস! এ সন্বন্ধে আমরা কতইনা অবহেলা করেছি! অথবা তখন তারা বলবে, আমরা কি অবকাশ পাব না?
লামহিল বাছারঃ কিয়ামতের আগমনের সত্যটিকে আরও নিগুঢ় করে উপস্থাপন করা হয়েছে একটি মাত্র শব্দগুচ্ছ দিয়ে যেন আমরা সকলে সবসময় তার আগমন সম্পর্কে সদা প্রস্তুত থাকি – এটা না যে অমুক অমুক শর্ত বা আলামত আছে যা এখনও আসে নাই অতএব আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে। না, আমাদের হাতে মোটেই সময় নেই, যে কোন সময় কিয়ামত এসে যেতে পারে আমাদের জীবদ্দশাতেই। আমরা যেন কুরআনী এই মহাসত্য ভুলে যা খুশি তাই করতে পারি বা লাগামহীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে আল্লাহর সতর্কবাণী ভুলে যেতে পারি, তাই আমাদের সামনে শয়তানী শক্তি বহু ‘আলামত’ দাঁড় করিয়েছি যে সম্পর্কে আল্লাহ কোন দলিল নাযিল করেন নি।
কিয়ামতের আবির্ভাবের দ্রুততা কেমন তার তুলনা আল্লাহ করেছেন ‘কা-লামহিল বাছার’ দিয়ে, যেন তা চোখের এক পলকের মতো।
وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِأَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিয়ামতের ব্যাপারটি তো এমন, যেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান। -১৬:৭৭
প্রচলিত ‘হাদিস’ কী বলে?
শেষনবীকে মালাইকা জিবরাঈল যখন প্রশ্ন করলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? তিনি উত্তর দিলেনঃ এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশী অবগত নয়। সুতরাং নবী কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জানতেন না, জিবরাইলও নয়। এমনকি কিয়মাত সংঘটনকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন মালাইকাও নয়।
‘হাদিস’-এর এই ভাষ্য উপরে বর্ণিত কুরআনী সকল বিবৃতিসমূহের সাথে কোন সংঘর্ষ ব্যতীত সুন্দরভাবে মিলে যায়, যেখানে কুরআনে রাসূলকে নিবৃত্ত করা হয়েছে; আর একই ভাবে রাসূলও নিজে থেকে কিয়ামত সম্পর্কিত কোন প্রশ্নে নিজের থেকে কোন রঙ চড়াতে যান নাই।
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়; বরং এই যাবতীয় কুরআনী নিখাদ সত্য ও একই বিষয়ে ‘হাদিসের’ সমর্থনসূচক বিবৃতির পরও মিথ্যাবাদীরা আল্লাহর রাসূলের নামে কিয়ামত সম্পর্কিত এমন সব কথামালা চালু করেছে যা দ্বারা মুসলিম জনমানসে কুরআনে উদ্ধৃত সত্যকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দেয়া হয়েছে; আর হরহামেশা কুরআনী সত্যের উল্টো সেসব মিথ্যাচারই মানুষকে শোনানো হয়।
বাংলায় ব্যবহৃত শর্ত মূলত আরবী শব্দ “শির, রা, তোয়া” থেকে উদ্ভূত; এর বহুবচন (দুইয়ের অধিক) আশরাতুন বা শর্তসমূহ। এই শর্তসমূহকেই ‘আলামাতে কুবরা’ আর ‘আলামতে ছুগরা’ নাম দিয়ে কিয়ামতের আবির্ভাব সম্পর্কে প্রায় ৪ ডজন মিথ্যাচারের ঝাপি তৈরি করা হয়েছে। এর অনেক বর্ণনাই পূর্ববর্তী খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের সাহিত্য থেকে মুসলিম ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং পরে সেগুলোকে রাসূলের বাণী নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেসব শর্ত সেখানে আছে তার অনেকগুলো সবখানে সর্বকালেই মোটামুটি ঘটেছে বা ঘটে থাকে।
মিথ্যাতত্ত্বের পেছনের মনস্তত্ত্ব
কিয়ামতের সংবাদ কেউ সুনির্দিষ্ট করে জানেনা এবং তার হঠাৎ আগমন করবে – কুরআনী এই সত্যকে মুছে দিতেই ডজন ডজন আজগুবী ও ভিত্তিহীন কথার আমদানি করা হয়েছে।
যখন কুরআন বলে কিয়ামত যে কোন সময় চলে আসতে পারে – তার জন্য একজন মু’মিনের প্রস্তুতি আর তাকে এটা শোনানো যে, এই এই ঘটনা ঘটলে কিয়ামত হবে – তার প্রস্ততি সমান নয়। তথাকথিত আলামত ঘোষণা দিয়ে কিয়ামতের আবির্ভাব তত্ত্ব বলার মাধ্যমে শয়তানের শাগরদেরা মানুষকে কিয়ামতে যে কোন সময় আবির্ভূত হবার মহাসত্য থেকেই দূর করে দেয়। যেন মানুষ আলামত গুনে গুনে কিয়ামতের পাকড়াও থেকে বাচার পথ খুঁজতে পারে।
কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত থেকে তো এই সত্যও প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, সেই কিয়ামত এমনকি রাসূলের জীবদ্দশায় সংঘটনের সম্ভাবনাও রহিত ছিল না।
وَإِنْ مَا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ * أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
আর তোমাকে যদি আমরা দেখাই ওদের যা ওয়াদা করেছি তা থেকে কিছুটা, অথবা তোমার মৃত্যু ঘটিয়ে দিই, – সর্বাবস্থায়ই তোমার উপরে হচ্ছে পৌঁছে দেওয়া, আর আমাদের উপরে হচ্ছে হিসাব গ্রহণ। ওরা কি দেখে না যে আমরা এই দেশটাকে নিয়ে চলেছি, একে সংকুচিত করছি তার চৌহদ্দি থেকে? আল্লাহ্ রায় দান করেন, তাঁর হুকুম প্রতিহত হবার নয়। আর তিনি হিসেব-নিকেশে তৎপর। -১৩:৪০-৪১ তাদের দেশকে নয় পৃথিবীকে
কিয়ামতের কোন ভবিষ্যত আলামত নেই; তার আগমন হবে হঠাৎ – হঠাৎ মানে হঠাৎ বা আচমকা, যা কেউ কোন ধারণাই করতে পারবে না – না কোন নিদর্শন দিয়ে বা না কোন কথিত আলামত দিয়ে। প্রচলিত যেসব আলামতের কথা বলা হয় (তার বিস্তারিত আলোচনা একেবারেই নিষ্প্রয়োজনীয়) তার অনেকগুলোই অতীতের প্রায় সব যুগেই বিদ্যমান ছিল- কিন্তু কিয়ামত হয় নি।
কিয়ামতের আলামতের গল্প তৈরিই করা হয়েছে মানুষকে কুরআনী সত্য থেকে বিভ্রান্ত ও ধর্ম-ব্যবসার কপট উদ্দেশ্য নিয়ে।
কিয়ামতের শর্তসমূহ
মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত ‘কিয়ামত পূর্ববর্তী আলামত’ সম্পূর্ণ মনগড়া; বরং আল্লাহ তা’য়ালা বলেন কিয়ামতের আলামত বা শর্ত ইতিমধ্যেই এসে গেছে – Its signs have already appeared। আয়াতে শর্তের বহুবচন আশরাতুন ব্যবহার করা হয়েছে; অর্থাৎ দুইয়ের অধিক শর্ত বিদ্যামন আছে।
فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ
তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কিয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুতঃ কিয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কিয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে? -৪৭:১৮
কিয়ামতের শর্ত সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক আয়াত
রেসালাতের ধারাবাহিকতায় শেষনবীর আগমন কিয়ামতের অন্যতম শর্ত
هَذَا نَذِيرٌ مِنَ النُّذُرِ الْأُولَى * أَزِفَتِ الْآَزِفَةُ * لَيْسَ لَهَا مِنْ دُونِ اللَّهِ كَاشِفَةٌ * أَفَمِنْ هَذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ * وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ * وَأَنْتُمْ سَامِدُونَ * فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا
অতীতের সতর্ককারীদের মধ্যে সে-ও (মুহাম্মদ) একজন সতর্ককারী। কিয়ামত নিকটে এসে গেছে। আল্লাহ ব্যতীত কেউ একে প্রকাশ করতে সক্ষম নয়। তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ? এবং হাসছ-ক্রন্দন করছ না? তোমরা ক্রীড়া-কৌতুক করছ, অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর এবাদত কর। -৫৩:৫৬-৬২
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।-৩৩:৪০
اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ * مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنْ رَبِّهِمْ مُحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ
মানুষের কাছে তাদের হিসেব-নিকেশ আসন্ন, তথাপি তারা বেখেয়ালিতে ফিরে যাচ্ছে। -২১:১
أَتَى أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
আল্লাহ্‌র হুকুম এসেই গেছে, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। সমস্ত মহিমা তাঁরই, আর তারা যা অংশী করে তিনি তার বহু ঊর্ধ্বে। -১৬:১
পৃথিবীকে সংকুচিত করা বা গুটিয়ে আনা কিয়ামতের শর্ত
وَإِنْ مَا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ * أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
আমরা তাদের সাথে যে ওয়াদা করেছি, তার কোন একটি যদি তোমাকে দেখিয়ে দেই কিংবা তোমাকে উঠিয়ে নেই, তাতে কি তোমার দায়িত্ব তো পৌছে দেয়া এবং আমার দায়িত্ব হিসাব নেয়া। তারা কি দেখে না যে, আমরা তাদের পৃথিবীকে চতুর্দিক থেকে সমানে সঙ্কুচিত করে আসছি? আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন। -১৩:৪০-৪১
أَفَلَا يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ
তারা কি দেখে না যে, আমরা তাদের পৃথিবীকে চতুর্দিক থেকে হ্রাস করে আনছি। এরপরও কি তারা বিজয়ী হবে? -২১:৪৪
চন্দ্র (কামার) বিদীর্ণ হওয়া কিয়ামতের একটি শর্ত
اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ (1) وَإِنْ يَرَوْا آَيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُسْتَمِرٌّ * وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ وَكُلُّ أَمْرٍ مُسْتَقِرٌّ
কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু। তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরীকৃত হয়। -৫৪:১-৩
সূরা মুহাম্মদে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, – “কিয়ামতের লক্ষণসমূহ তো আসিয়াই পড়িয়াছে” (ইফা) যা কুরআনে বিবৃত করা হয়েছে। আবার রাসূল মুহাম্মদকে নিবৃত্ত করা হয়েছে যে, এ সম্পর্কে যে যতই প্রশ্নই করুক না কেন তুমি বলে দাও এ সম্পর্কে আমি কোন জ্ঞান রাখি না; একমাত্র আল্লাহই তার দিনক্ষণ অবগত। মানুষের পুনঃপুনঃ প্রশ্নের মোকাবেলায় আল্লাহর পক্ষ থেকে এতদূর পর্যন্ত পাল্টা প্রশ্ন করা হয়েছে যে, কিয়ামতের আলোচনার সাথে রাসূলের কী সম্পর্ক।
যার সোজাসাপ্টা মানে রাসূলের কাছে কিয়ামত কখন ঘটবে সে সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই; আবার কিয়ামতের শর্তসমূহ এসে গেছে বলা হয়েছে। এরপরেও রাসূল আগ বাড়িয়ে কিয়ামতের তথাকথিত “আলামত বা শর্ত” ঘোষণা করতে সাহসী হবেন – কোন কুরআন পাঠকারী মু’মিন-মুসলিম তা বিশ্বাস করতে পারে না।
কিয়ামতের সময় সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে কুরআনের এই সুস্পষ্ট আয়াত এবং তার শিক্ষা ও সীমারেখাকে পিছনে ফেলে শেষনবীর নামে নিত্যদিন কিয়ামতের আলামত বর্ণনা জনতাকে বিভ্রান্ত করা হয় যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর জুলুম আর মিথ্যচার। এটা খোদার উপর খোদকারী; আল্লাহর উপর দিয়ে রাসূলের নাম ভাঙিয়ে বাহাদুরি। আর তা শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর ঘোষিত আয়াতকে তামাশার (হুঝুওয়া) বস্তুতে পরিণত করা।
وَلَا تَتَّخِذُوا آَيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا
আর আল্লাহর প্রত্যাদেশকে হাস্যকর তামাশার বিষয়ে পরিণত করো না। -২:২৩১
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। -৩১:৬
আর যেন সে এগুলোকে ঠাট্টাবিদ্রূপ আকারে গ্রহণ করে।
وَإِذَا عَلِمَ مِنْ آَيَاتِنَا شَيْئًا اتَّخَذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ
যখন সে আমার কোন আয়াত অবগত হয়, তখন তাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।-৪৫:৯
ذَلِكُمْ بِأَنَّكُمُ اتَّخَذْتُمْ آَيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا وَغَرَّتْكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فَالْيَوْمَ لَا يُخْرَجُونَ مِنْهَا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ
এটা এজন্যে যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না এবং তাদের কাছে তওবা চাওয়া হবে না। -৪৫:৩৫
কুরআন আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ আসমানী বাণী – সেই আল্লাহ এবং তাঁর বাণী কুরআনের পর আর কার কোন মিথ্যা ‘হাদিসে’ আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে? রাসূলের নামে উদ্ভাবিত সকল মিথ্যাচার ও নানা দাবীদাওয়া পরিহার করে আমরা কুরআনে প্রত্যাবর্তন করি।
[“ইসলাম ও নকল ইসলাম” শীর্ষক বই থেকে গৃহীত।]


Taubah bn

তওবার/তাওবার শর্ত…..
@@ তওবা কবুলের শর্ত, সংশোধিত হয়ে সৎকাজ করা।

সৎকাজের অবকাশ ও সক্ষমতা থাকা পর্যন্ত তাওবা কবুল হয়। সৎকাজের অবকাশ ও সক্ষমতা শেষ হলে তওবা কবুল হয় না।

فَمَن تَابَ مِنۢ بَعْدِ ظُلْمِهِۦ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অতঃপর যে তার অন্যায়ের পর তাওবা করবে এবং নিজকে সংশোধন করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(আল-মা’ইদাহ ৫:৩৯)

وَإِنِّى لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحًا ثُمَّ ٱهْتَدَىٰ
এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তাওবাহ’ করে, ঈমান আনে, সৎ কাজ করে ও সৎ পথে অবিচল থাকে।(তাহা ২০:৮২)
“”” তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর এরপরে তওবা(দোষ স্বীকার) করে নেয় এবং সংশোধীত হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়। [ সুরা আন’য়াম ৬:৫৪ ]'””
رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِى نُفُوسِكُمْۚ إِن تَكُونُوا۟ صَٰلِحِينَ فَإِنَّهُۥ كَانَ لِلْأَوَّٰبِينَ غَفُورًا
তোমাদের রাব্ব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভাল জানেন; তোমরা যদি সৎ কর্মপরায়ণ হও তাহলে তিনি তাদের (আল্লাহ অভিমুখীদের) প্রতি ক্ষমাশীল।(বানু ইসরাঈল ১৭:২৫)

“” আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। [ সুরা নিসা ৪:১৮ ]

……

আল্লাহ রব্বুল আলামীন আলকোরআনে তাওবার বহু আয়াত নাযিল করেছেন। যেমনঃ৪ঃ১৭,১৮,১১০,১৩৭/৬ঃ৫৪/২ঃ১৬০/ ইত্যাদি আরো অনেক। কাজেই আল্লাহর নাযিলকৃত কোরআনের আয়াত দিয়ে পোস্ট করলে আরো বেশি সাওয়াব হতনা?