কুরআন ভিত্তিক সালাতঃ ১ম আলোচনা।
সালাত শব্দটি সল্লা থেকে উদ্ভুত যার অর্থ হলো সম্পর্ক, বন্ধন, সংযোগ – অর্থাৎ যা একটিকে অন্য কিছুর সাথে সংযোগ করে এবং নি:সন্দেহে সালাত বান্দা ও স্রষ্টার মধ্যে বন্ধনের একটি পদ্ধতি।
সালাত শব্দের বিশ্লেষণ
বাংলায় যেমন শব্দ মূল রয়েছে তেমনি আরবীর প্রায় সব শব্দের তিনটি অক্ষরের মূল রয়েছে যা থেকে বিভিন্ন শব্দের জন্ম। সালাত শব্দের মূল সোয়াদ, লাম এবং ওয়াও অক্ষর তিনটি দিয়ে। এই তিন অক্ষরের মাধ্যমে কুরআনে ৯৯ বার সালাত ও তার সমার্থক শব্দগুলো এসেছে। সাল্লা (১২ বার), সালাত (৮৩ বার), মুসাল্লান (১ বার) এবং মুসাল্লিন (৩ বার)।
সালাত শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হলেও, আরবী ভাষায় এটি সাধারন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিকভাবে এর অর্থ হলো সংযোগ বা যোগাযোগ (Communication)। যেমন: ইতি-আস-সালাত শব্দের অর্থ – যোগাযোগ / সংযোগ / সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়।
কোরানের পরিভাষায় মানুষের প্রসঙ্গে সালাত হলো স্রষ্টার সাথে যোগাযোগ। এর কাছাকাছি ইংরেজী অনুবাদ হতে পারে: Communication / Communion. ক্যামব্রিজ ডিকশনারী অনুসারে কমিউনিয়ন অর্থ: a close relationship with someone in which feelings and thoughts are exchanged. অন্যদিকে Communication অর্থ হলো the process by which messages or information is sent from one place or person to another, or the message itself.
সালাতের শব্দের আরও কুরআন ভিত্তিক বিশ্লেষন করলে অর্থ দাড়ায়।
দোয়া করা, কারো দিকে মুখ করা, অগ্রসর হওয়া, ক্ষমা প্রার্থনা করা,দয়া করা, দরুদ পাঠ করা, রহমত, তাসবীহ করা,পৌছে যাওয়া ইত্যাদি।
বলে রাখা ভালো উল্লেখিত কোরআনের আয়াত গুলি বিশ্লেষণে আমরা বলতে পারি যে, ইউসাল্লি মূসাল্লি,তাসাল্লি,ইউসাল্লু, ইত্যাদি শব্দের পরে আলা’ শব্দটি এলে তা দু’য়াকরা, কল্যাণ কামনা করা, অনুগ্রহ প্রার্থনা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়।কারন সালাত শুধু আল্লাহর জন্য।6:162
সালাতের অর্থ ব্যাপক।তাই আল্লাহ মুমিন দের বৈশিষ্ট্য দিতে গিয়ে বলেন–
আল-মা’আরিজ 70:23
যারা তাদের সালাতে সার্বক্ষণিক নিষ্ঠাবান।
তাই কুরআন অনুযায়ী শুধু প্র্যাকটিক্যেল সালাত 4:102/5:6/3:39এর বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলব অর্থাৎ যা রবের সংযোগে দাড়ান।২ঃ২৩৮
তাই আল্লাহ বলেন।
আশ-শু‘আরা 26:218
যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও (সালাতের জন্য)।
আশ-শু‘আরা 26:219
এবং দেখেন সাজদাহকারীদের সাথে তোমার গতিবিধি।
শারিরীক এবং মন ও মননে রবের প্রতি নতজাুনু(সাজদা,রুকু) ও আত্নসমর্পন স্বীকার করাই সালাতের মৌলিক বিষয়।
সালাতের উদ্দেশ্যঃ–
1.শক্তিশালী বিশ্বাস অর্জন।
{আল-হিজ্র 15:98
সুতরাং তুমি তোমার রবের প্রশংসা দ্বারা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।
আল-হিজ্র 15:99
আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত কর।}
2.শয়তান ও মন্দ থেকে বেচে থাকা।
{আল-আনকাবূত 29:45
তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব আবৃত্তি কর এবং সালাত প্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা জানেন।}
3.লাভজনক বিনিয়োগ।
{ফাতির 35:29
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে তাদের এমন ব্যবসায়ের যার ক্ষয় নেই
ফাতির 35:30
এ জন্য যে, আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশি দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।
}
4.রবের স্মরনের মাধ্যমে,সংযোগ স্থাপন।29:45
{তাহা 20:14
আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
ফাতির 35:30
এ জন্য যে, আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশি দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।}
…..
Pt. -2.
কুরআন ভিত্তিক সালাতঃ ২য় আলোচনা
সালাতের পূর্ব প্রস্তুতি এবং যে যে কারনে সালাতে যাওয়া নিষিদ্ধ।
সালতের পূর্বে গাসিল(ওযু) করতে হবে।
আল-মা’ইদাহ ৫:৬
হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশে দন্ডায়মান হও তখন (সালাতের পূর্বে) তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলিকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসাহ কর এবং পা’গুলিকে টাখনু পর্যন্ত । যদি তোমরা অপরিষ্কার হও তাহলে পরিষ্কার হয়ে নাও। কিন্তু যদি রোগগ্রস্ত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ পায়খানা হতে ফিরে আস কিংবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ কর (স্ত্রী-সহবাস কর), অতঃপর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও, তখন তোমরা তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ কর, আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা আনয়ন করতে চাননা, বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে ও তোমাদের উপর স্বীয় নি‘আমাত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
১.আপনি যদি সাইকোলজিকাল ভাবে সামর্থবান না হন যখন নিজের বলা বাক্য যদি নিজে বুঝতে সামর্থ নন সে ক্ষেত্রে সালাতে যাওয়া যাবে না।
২. অপরিষ্কার অবস্থায়।
এবং অপরিষ্কার একেবারে অতিক্রম কারী হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে গোসল না করে সালাতে যাওয়া যাবে না।
আর অতিক্রমকারী না হলে গাসিল (ওযু)রয়েছে।
আন নিসা ৪:৪৩
হে মু’মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেওনা, যখন নিজের উচ্চারিত বাক্যের অর্থ নিজেই বুঝতে সক্ষম নও –
এবং না অপরিষ্কার অবস্থায় কিন্তু অতিক্রমকারী হলে অন্যকথা যতক্ষণ না তোমরা গোসল করো। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। এবং যদি তোমরা পীড়িত হও, কিংবা প্রবাসে অবস্থান কর অথবা তোমাদের মধ্যে কেহ পায়খানা হতে প্রত্যাগত হয় কিংবা রমণী স্পর্শ করে এবং পানি না পাওয়া যায় তাহলে বিশুদ্ধ মাটির অম্বেষণ কর, তদ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ মুছে ফেল; নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
সালাতের মসল্লা(স্থান) পরিষ্কার রাখতে হবে।
আল-বাকারাহ ২:১২৫
এবং যখন আমি কা‘বা গৃহকে মানব জাতির জন্য সুরক্ষিত স্থান ও পুণ্যধাম করেছিলাম, এবং মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের জায়গা নির্ধারণ করেছিলাম; এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ই’তিকাফকারী এবং রুকু ও সাজদাহকারীদের জন্য পরিষ্কার রেখ।
শালীন সুন্দর পোশাক পরতে হবে।
আল-আ‘রাফ ৭:৩১
হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ কর, আর খাও এবং পান কর। তবে অপব্যয় ও অমিতাচার করবেনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবাসেননা।
পোশাক সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে।
আল-মুদ্দাসসির ৭৮ঃ৪
তোমার পরিচ্ছদ পরিস্কার রাখ।
আল-মুদ্দাসসির ৭৪:৫
অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো।
সালাতে মুমিনদের আহবান করতে হবে।
আল-জুমু‘আহ ৬২:৯
হে মু’মিনগণ! জুমু’আর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর; এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলদ্ধি কর।
আল-মা’ইদাহ ৫:৫৮
আর যখন তোমরা সালাতের (আযান দ্বারা) আহবান কর তখন তারা ওর সাথে উপহাস করে; এর কারণ এই যে, তারা এরূপ লোক যারা মোটেই জ্ঞান রাখেনা।
তার উপায়ও আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন।
“আকিমু সালাত”
“আকিমু সালাত”
ইবরাহীম ১৪:৩১
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মু’মিন তাদেরকে বল সালাত কায়েম কর এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে, সেই দিন আসার পূর্বে যেদিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবেনা।
নিজের ঘর বা কুরআনভিত্তিক মাসজিদকে সালাতের মুসল্লা(স্থান) বানাতে পারেন এই দুটি উদাহরনই পাওয়া যায় কুরআনে।
ইউনুস ১০:৮৭
আর আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি অহী পাঠালামঃ তোমরা উভয়ে তোমাদের এই লোকদের জন্য মিসরে বাসস্থান বহাল রাখ, আর (সালাতের সময়) তোমরা সবাই নিজেদের সেই গৃহগুলিকে সালাত আদায় করার স্থান রূপে গণ্য কর এবং সালাত কায়েম কর, আর মু’মিনদেরকে শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।
আত-তাওবাহ ৯:১০৭
আর কেহ কেহ এমন আছে যারা এ উদ্দেশে মাসজিদ নির্মাণ করেছে যেন তারা (ইসলামের) ক্ষতি সাধন করে এবং কুফরী কথাবার্তা বলে, আর মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, আর ঐ ব্যক্তির অবস্থানের ব্যবস্থা করে যে এর পূর্ব হতেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধী, আর তারা শপথ করে বলবে, মঙ্গল ভিন্ন আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য নেই; আর আল্লাহ সাক্ষী আছেন যে, তারা সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী।
আত-তাওবাহ ৯:১০৮
(হে মুহাম্মাদ!) তুমি কখনও ওতে (সালাতের জন্য) দাঁড়াবেনা; অবশ্য যে মাসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে তা এর উপযোগী যে, তুমি তাতে (সালাতের জন্য) দাঁড়াবে; ওতে এমন সব লোক রয়েছে যারা উত্তম রূপে পবিত্র হওয়াকে পছন্দ করে, আর আল্লাহ উত্তম রূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদেরকে পছন্দ করে।