নবী নিজেই কুরআন লিপিবদ্ধ করেন ৷

নবী নিজেই কুরআন লিপিবদ্ধ করেন ৷

নবীর জন্মের বহু আগ থেকে লিখন পদ্ধতি চালু হয়,
কুরআনের আগে বা পরে তিনি অন্য কোন কিতাব নিজ হাতে লেখেনি, শুধু কুরআনই লিখেছেন ৷ এর আগে বা পরে কোন গ্রন্থ্য নয়!
প্রমানগুলো ভালকরে লক্ষ করুন…….

① প্রথম প্রমান__

সূরা আল আনকাবূত (العنكبوت), আয়াত: ৪৮
ইতিপূর্বে (কুরআনের আগে) আপনি কোন কিতাব পড়তেন না এবং স্বহস্তে লিখতেনও না, যদি এমনটি হতো, তাহলে মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করতে পারতো।

② দ্বিতীয় প্রমান_

সূরা আল আনকাবূত (العنكبوت),আয়াত:৪৫
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং সালাত প্রতিষ্টা করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর ৷

★ কাগজে লিপিবদ্ধ করার আগে নবীজিকে কোন কিতাব থেকে তেলাওয়াত করতে বলেছেন???

☞ লেখা বা লিখিত ব্যাপারটা নবীর পুর্ব থেকে প্রচলন ছিল! এবং আল্লাহ লেখার ব্যাপারে বলেছেন ৷

③ তৃতীয় প্রমান দেখুন…..
২:২৮২ আয়াতে ঋনগ্রহিতা, দাতার ঋন লিখে রাখার নির্দেশ!!
সুরা আরাফ,৭ নাম্বার আয়াতে তাওরাত ও ইঞ্জিল গ্রন্থের লিখিত রুপের কথা বলা হয়ে ৷ লিখিত না হলে সেগুলো ছিল কিভাবে?

আরও প্রমানের জন্য আয়াতগুলো মন দিয়ে পড়ুন ৷ আয়াতে লিখন পদ্ধতির ব্যাবহার পরিস্কার_

ⓐ সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ১০৯
বলুনঃ আমার পালনকর্তার কথা, লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।

ⓑ সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ১০৪
সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।

ⓒ সূরা আল হাজ্জ্ব (الحجّ), আয়াত: ৭০
তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।

Fb

Quran vs Hadith

🟩🟩দেশের ৬ জন বিজ্ঞ আলেমদের কাছে আমার প্রশ্ন, “বর্তমানে যেসব সহীহ হাদীসের কিতাব পাওয়া যাচ্ছে সব কি আল্লাহর কাছ থেকে নাজিল হয়েছে? আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল কি তা অনুমোদন করেছেন?”

✅✅আমার উত্তর: না (রেফারেন্স:- সমগ্র কুরআনে এমন একটি আয়াতও নেই যেখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অনুমোদন করেছেন, বরং নিষেধ করেছেন, ইসলামের উৎস হিসেবে কুরআনের বাইরে সহীহ হাদীসের কোনো অজানা বই অনুসরন করতে , রেফারেন্স: = (2:79 ,3:78,5:3,7:3)

🟩কুরআন আল্লাহর দেওয়া সর্বশেষ গ্রন্থ এবং কুরআন বাদে কিছুই অনুসরন করা যাবে না আল্লাহ বা রসুল সঃ এর অনুগত্য করতে।দলিল 5:3 & 7:3

সূরা ৫. আল-মায়েদা আয়াত নং ৩
অনুবাদঃআজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।

সূরা ৭. আল-আ’রাফআয়াত নং ৩
অনুবাদঃ তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। -(আল-বায়ান)

🟩প্রত্যেক নবিকে সঠিক বিচারের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে যাকে বলা হয় হিকমাহ!দলিল 4:54

সূরা ৪. আন-নিসা আয়াত নং ৫৪
অনুবাদঃ বরং তারা কি লোকদেরকে হিংসা করে, আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে? তাহলে তো আমি ইবরাহীমের বংশধরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি বিশাল রাজত্ব। -(আল-বায়ান)

🟩কুরআনের খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করার জন্য আল্লাহ কোন বই দেননি!দলিল 10:37

সূরা ১০. ইউনুস আয়াত নং ৩৭
অনুবাদঃ এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। -(আল-বায়ান)

🟩কেউ যদি কুরআনের বাইরে আল্লাহর নামে কিছু চালিয়ে যায় তবে তা মিথ্য।দলিল 3:78-79 এবং 2:79,

সূরা ৩. আলে-ইমরান আয়াত নং ৭৮-৭৯
অনুবাদঃ তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা নিজদের জিহবা দ্বারা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেটা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ সেটি কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে। –
কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার বান্দা হয়ে যাও’। বরং সে বলবে, ‘তোমরা রববানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’। -(আল-বায়ান)

সূরা ২. আল-বাকারা আয়াত নং ৭৯
অনুবাদঃ সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস। -(আল-বায়ান)

🟩কুরআনকে অন্য কোন গ্রন্থের সাথে মিশিয়ে একত্রে গ্রহণ করা যাবে না এবং কোন দলকে অনুসরণ করা যাবে না।দলিল 3:71, 3:100

সূরা ৩. আলে-ইমরান আয়াত নং ৭১
অনুবাদঃ হে কিতাবীরা, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান? -(আল-বায়ান)

সূরা ৩. আলে-ইমরান আয়াত নং ১০০
অনুবাদঃ হে মুমিনগণ, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তোমরা যদি তাদের একটি দলের আনুগত্য কর, তারা তোমাদের ঈমানের পর তোমাদেরকে কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে। -(আল-বায়ান)

🟩আলেম সমাজ তাদের অঙ্গীকার ভুলে গেছে সম্ভবত। দলিল 3:187

সূরা ৩. আলে-ইমরান আয়াত নং ১৮৭
অনুবাদঃ আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, ‘অবশ্যই তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না’। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে ফেলে দেয় এবং তা বিক্রি করে তুচ্ছ মূল্যে। অতএব তারা যা ক্রয় করে, তা কতইনা মন্দ! -(আল-বায়ান)

🟩কুরআন বুঝার পর কুরআন দিয়ে বিচার করে তাওরাত, জাবুর ও ইঞ্জিলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা যায়।দলিল 4:47

সূরা ৪. আন-নিসা আয়াত নং ৪৭
অনুবাদঃ হে কিতাবপ্রাপ্তগণ, তোমরা ঈমান আন, তার প্রতি যা আমি নাযিল করেছি তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে। আমি চেহারাসমূহকে বিকৃত করে তা তাদের পিঠের দিকে ফিরিয়ে দেয়া অথবা তাদেরকে লা‘নত করার পূর্বে যেমনিভাবে লা‘নত করেছি আসহাবুস্ সাবতকে* । আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে। -(আল-বায়ান)

সূরা ৪. আন-নিসা আয়াত নং ১৩৬
অনুবাদঃ হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে। -(আল-বায়ান)

🟩যদি কেউ কুরআন অনুসরণ না করে শুধু কালেমা পাঠ করে এবং সাক্ষ্য দেয় যে তিনি রাসুল (সাঃ) এর উম্মত, তাহলে তিনি জান্নাত পাবেন এমন গ্যারান্টি নিশ্চিতভাবে মিথ্যা, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে আমাদেরকে জান্নাত দেওয়া হবে না।দলিল 4:123

সূরা ৪. আন-নিসা আয়াত নং ১২৩
অনুবাদঃ না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। -(আল-বায়ান)

Saim Shahariar Saim Shahariar

Fb

About Namaz and Salat

প্রচলিত নামাজের ষ্ট্রাকচার নিয়ে কিছু প্রশ্ন সত্যিই চিন্তা জাগানিয়া:

(I) প্রচলিত ওজু কি আল্লাহর বিধান না মানুষ্য তৈরী? আল্লাহ বলেছেন মোমিন/বিশ্বাসীরাই পবিত্র, ৫:৬, ৪:৪৩ তো সার্বক্ষনিক পরিচ্ছন্নতার আয়াত।
(II) কিবলা কি আল্লাহর দেয়া? পূর্ব পশ্চীমমূখি হওয়াতে তো কোন পূন্য নেই ২:১৭৭ পূর্ব পশ্চিম ও সব দিকইতো আল্লাহর ২:১১৫। আল্লাহর অবস্থান তো সকল পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলী পরিবেষ্টন করে আছে ২:২৫৫।
(III) ইমামের পিছনে এক্তাদা কি আল্লাহ নির্দেশিত? আল্লাহ আমাদের হৃদয়ের কথা শুনেন ও জানেন, ইমাম আমার হয়ে আল্লাহর সাথে ভায়া মিডিয়া হয়ে আমার মনের কথা বলবেন? আল্লাহর কাছে চাওয়া পাওয়া সবই তো সঙ্গোপনে ৭:৫৫।
(IV) তাকবিরে তাহরিমা তো কোরআনের কোন শব্দ না। আল্লাহুআকবার superlative degree অথচ আল্লাহর তুলনা শুধূই তিনি নিজে। আল্লাহুআকবার কথাটা কি কোরআনে কোথাও আছে? এর অর্থ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বা আল্লাহ সবচেয়ে বড়। সর্বশ্রেষ্ঠ মানে কাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ? অন্য গডদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ? সবচেয়ে বড় মানে অন্য সকল গডদের চেয়ে বড়? শব্দে তুলনা রয়েছে অথচ আল্লাহর কোন তুলনা চলে না। আল্লাহর তুলনা তিনি নিজেই। সূরা ইখলাস আয়াত
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴿٤﴾
৪. তাঁর তুলনা শুধু তিনিই)।
(V) আল্লাহর দেয়া দিক নিদের্শনা আল্লাহকে শোনানো কি ঠিক? নামাজে আল্লাহকে বলি ‘তোমাকে দিয়েছি কাউসার….’ আল্লাহকে শব্দ করে বা ফিস ফিস করে শুনাই ‘তুমি কি দেখ নাই আমি হস্তিবাহিনীকে কি করেছি?…’।
(VI) তাশাহুদ – হে নবী সম্মোধন করে প্রতি বৈঠকে সালাম দেই, নবীকি জীবিত? আর সাক্ষ্যও দেই, আল্লাহ কি আমার সাক্ষ্য চেয়েছেন? আমি সাক্ষ্য দেয়ার কে? সাক্ষী তো দিতে হয় অবলোকনের পরে। আমি কি অবলোকন করেছি?
(VII) সালাম ফেরানোতে আমরা ফেরেশতাদের সালাম দিয়ে নামাজ শেষ করি অথচ তারা আজ্ঞাবহ মাত্র তারা জান্নাতিদের সালাম দিবে সালামুন আলাইকুম বলে।(সুরা রাদ ১৩-২৪)
(VIII) একজন চিন্তকের মনোভাব উল্লেখ করছি: মাত্র ৭ টা পয়েন্ট? রুকু – সিজদা? রুকুর পরে সিজদা? না সিজদার পর রুকু? রুকু ১টা, সিজদা ২ টা কেন? এরকম তো হাজার হাজার প্রশ্ন আমার মনে? নামাজই যদি বেহেশ্তের চাবি হয় তাহলে তার ডিটেইল বর্ণনা নেই কেন? আমার নামাজ কেন হুজুরের পিছনে? হুজুর কী আমার জন্য জবাবদিহি করবেন? না করলে আমি তার পিছনে কেন?
…. উফ…. এরকম লিখতে গেলে রাত ভোর হয়ে যাবে… তবু জিজ্ঞাসা শেষ হবে না।
… আমি দিশেহারা …
… এজন্য আমি একমাত্র আল্লাহরই সাহায্য চাই ..

Allah Subhanahu Wa Ta’ala said:

وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌ ۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡئُولًا

“আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই। কান, চোখ আর অন্তর- এগুলোর সকল বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
(QS. Al-Isra’ 17: Verse 36)

✔️Salat ok Murad

আল কুরআনে সালাত অর্থ কি?
সালাত বলতে কি বুঝায়?
মুরাদ বিন আমজাদ
০+০+০+০+০
অনেকদিন যাবত অনলাইনে অফলাইনে আমাকে সালাত সম্পর্কে কুরআন কি বলে সে সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল। আমি তাদের কোন জবাব দেইনি। আজকে যে আলোচনা করছি সেটা আমার কোরআন থেকে গবেষণা মাত্র। আমার গবেষণা চূড়ান্ত নয়। আমার ভুল হলে কোরআন থেকে দেখিয়ে দিলে সংশোধন করব ইনশাল্লাহ![উল্লেখ্য যে, এই লেখা দ্বারা আমি কোন আনুষ্ঠানিক সালাতকে অস্বীকার করছি না না বুঝে বাজে মন্তব্য করা থেকে দূরে থাকলে ভালো হয়।]

সর্বপ্রথম একথা বুঝে নিন যে সালাত অর্থ কি এটা ডিকশনারি থেকে জানা যাবে না। আল কুরআন থেকে জানতে হবে যেমন,build a house “একটি ঘর তৈরি কর” এখন এই ঘর তৈরি করার বিষয় আপনাকে ডিকশনারিতে পাবেন না বা থাকবে না الصلاة একটি ইসিম বা নাম। এটা প্রত্যেক ভাষায় সালাত নামেই বলতে হবে।
সালাত বুঝার জন্য কোন ডিকশনারির দরকার নাই। প্রত্যেক জবানে সালাত কে সলাতই বলতে হবে। সালাত দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন আল্লাহ তা কোরআন থেকে জানতে হবে। আসুন আমরা জেনে নিই আল্লাহ পাক সালাত দ্বারা কি বুঝিয়েছেন।
62:9

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓا إِذَا نُودِىَ لِلصَّلٰوةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلٰى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের/ স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।
উক্ত আয়াতে সালাতের জন্য আহ্বান করে বলা হয়েছে জিকিরের দিকে ধাবিত হও। বুঝা গেল সালাত মূলত জিকির। বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হয়ে যায় দৃড় বিশ্বাস জন্মায় আয়াত নিম্নোক্ত আয়াতটি।
20:14
إِنَّنِىٓ أَنَا اللَّهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَاعْبُدْنِى وَأَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِىٓ
‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’।
বুঝা যাচ্ছে জিকিরুল্লাহই/ আল্লাহর স্মরণই সালাত। যদি উপর্যুক্ত আয়াত আপনার বিবেক না মানে তাহলে পরবর্তী আয়ত স্পষ্ট হয়ে গেল যে,জিকুরিল্লাহই সালাত।

এখন দেখার দরকার যে জিকিরুল্লাহ কি? আসুন দেখি জিকির দ্বারা কি বুঝায় বা তার উদ্দেশ্য কি?
জিকির দ্বারা উদ্দেশ্য আল কুরআন ।
65:10
قَدْ أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكُمْ ذِكْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন একটি উপদেশ তথা কুরআন।

আরো দেখুন,
41:41

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَآءَهُمْ ۖ وَإِنَّهُۥ لَكِتٰبٌ عَزِيزٌ

নিশ্চয় যারা بِالذِّكْرِ উপদেশ [কুরআন] আসার পরও তা অস্বীকার করে [ তাদেরকে অবশ্যই এর পরিণাম ভোগ করতে হবে]। আর এটি নিশ্চয় এক সম্মানিত গ্রন্থ।
অনুরূপ আরো দেখুন:
21:50

وَهٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ أَنزَلْنٰهُ ۚ أَفَأَنتُمْ لَهُۥ مُنكِرُونَ

আর এটা বরকতময় ذِكْرٌ উপদেশ, কুরআন যা আমি নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?

37:3
فَالتّٰلِيٰتِ ذِكْرًا

আর ذِكْرًا উপদেশ গ্রন্থ (আসমানী কিতাব) তিলাওয়াতকারীদের;

কুরআনকে জিকির বলা হয়েছে এটা যদি না মানেন তো কোরআনের মধ্যে জিকির আছে এটা অস্বীকার করবেন কি করে দেখুন:
38:1

صٓ ۚ وَالْقُرْءَانِ ذِى الذِّكْرِ

সোয়াদ; কসম উপদেশপূর্ণ কুরআনের।
একথা ঠিক যে জিকির শব্দের অর্থ শুধু কুরআন তা নয় জিকির শব্দের অর্থ উপদেশ আবার নসিহাত অথবা স্মরণ হতে পারে। তবে সালাত যে জিকিরের কথা বলে সেটা হল কোরআন। কারণ কোরআনের একটি গুণবাচক নাম জিকির।
এ বিষয়ে আরো আয়াত দেখে নিতে পারেন সেখানে জিকের মানে কোরআনে কি বলা হয়েছে দেখুন:
36:69

وَمَا عَلَّمْنٰهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنۢبَغِى لَهُۥٓ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ وَقُرْءَانٌ مُّبِينٌ

আমি রাসূলকে কাব্য শিখাইনি এবং এটি তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ ও স্পষ্ট কুরআন মাত্র।
36:11
إِنَّمَا تُنذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِىَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ ۖ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَأَجْرٍ كَرِيمٍ

তুমি তো কেবল তাকেই সতর্ক করবে যে الذِّكْرَ উপদেশ(কুরআন) মেনে চলে এবং না দেখেও পরম করুণাময় আল্লাহকে ভয় করে। অতএব তাকে তুমি ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ দাও।
3:58
ذٰلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الْءَايٰتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيم
উপদেশ(কুরআন) মেনে চলে এবং না দেখেও পরম করুণাময় আল্লাহকে ভয় করে। অতএব তাকে তুমি ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ দাও।

ذٰلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الْءَايٰتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ

এটি আমি তোমার উপর তিলাওয়াত করছি, আয়াতসমূহ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ(কুরআন) থেকে।
54:25
أَءُلْقِىَ الذِّكْرُ عَلَيْهِ مِنۢ بَيْنِنَا بَلْ هُوَ كَذَّابٌ أَشِرٌ
‘আমাদের মধ্য থেকে কি তার ওপরই উপদেশবাণী পাঠানো হয়েছে ? বরং সে চরম মিথ্যাবাদী অহঙ্কারী’।
68:51
وَإِن يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصٰرِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُۥ لَمَجْنُونٌ

আর কাফিররা যখন উপদেশবাণী শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, ‘এ তো এক পাগল’।
68:52
وَمَا هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعٰلَمِينَ
আর এ কুরআন তো সৃষ্টিকুলের জন্য শুধুই উপদেশবাণী(কুরআন)।
43:5
أَفَنَضْرِبُ عَنكُمُ الذِّكْرَ صَفْحًا أَن كُنتُمْ قَوْمًا مُّسْرِفِينَ
তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি, এ কারণে কি আমি তোমাদের কাছ থেকে এ উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব?

জিকিরের একটি অর্থ হলো স্মরণিকা অর্থাৎ কোরআন স্মরণ করে কোরআনের জিকিরের মাধ্যমে সালাত প্রতিষ্ঠা করা তার মানে কোরআন বুঝে বুঝে তদঅনুযায়ী আমল করাই সালাত।
চলবে ইনশাল্লাহ……….!

Quranic Duas(মুরাদ বিন আমজাদ)

কবুলকৃত দোয়া সমূহ (কোরআন থেকে)🤲
🤲 রবের নিকট আত্নসমর্পণ
🤲 রব এর নিকট ক্ষমা/চাওয়ার দোয়া
🤲 মাতা-পিতার জন্য দোয়া
🤲 সন্তানদের জন্য দোয়া
🤲 পরিবারের জন্য দোয়া
🤲 জ্ঞান অর্জনের জন্য দোয়া
🤲 সাহস সঞ্চার করার দোয়া
🤲 রিজিকের বৃদ্ধির জন্য দোয়া
🤲 যানবাহনে আরোহন ও অবতারনের দোয়া
🤲 নেককারদের সাথে অন্তর্ভুক্তির দোয়া
🤲 কেহ মিথ্যাবাদী দোষারোপ করলে দোয়া
🤲 অত্যাচারী কাফের/দুশমনের বিরুদ্ধে দোয়া
🤲 জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়া
🤲 জাহান্নামি/কাফেরদের আর্তনাদ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।।।
🤲 রবের নিকট আত্নসমর্পণঃ
◾‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম’। (২ঃ১৩১)
◾‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। (৬ঃ১৬২)
◾নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (২ঃ১৫৬)
◾‘হে আমার রব, আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই’। আর হে আমার রব, আমার কাছে তাদের উপস্থিতি হতে আপনার কাছে পানাহ চাই।’(২৩ঃ৯৭-৯৮)
◾হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে। (৬০ঃ৪, ইব্রাহীম আঃ)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’। (২৮ঃ২৪, মূসা আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’। (২ঃ১২৭, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (২ঃ১২৮, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত’। (২ঃ১৩৬)
◾‘আমাদের রব! আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না’। (৬ঃ২৩)
◾‘নিশ্চয় আমি নিবিষ্ট করেছি আমার চেহারা একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’। (৬ঃ৭৯)
◾‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। (৩ঃ২০)
◾হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।’ (৭ঃ১২৬)
◾‘আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনার নিকট তাওবা করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম।’ (৭ঃ১৪৩)
◾হে আমার রব, আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হন’। (২০ঃ৮৪)
◾‘আমার রব, ক্ষমা করুন আমাকে ও আমার ভাইকে এবং আপনার রহমতে আমাদের প্রবেশ করান। আর আপনিই রহমকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (৭ঃ১৫১)
◾‘হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’। (১১ঃ৪৭)
◾‘অবশ্যই আমরা তো আমাদের রবের দিকেই ফিরে যাব।’(২৬ঃ৫০)
◾আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট’ (২৬ঃ১২৭)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নিজের প্রতি যুলম করেছি। আমি সুলাইমানের সাথে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম’। (২৭ঃ৪৪, রানী বিলকিস)
◾‘হে আমার রব, আপনি চাইলে ইতঃপূর্বে এদের ধ্বংস করতে পারতেন এবং আমাকেও। আমাদের মধ্যে নির্বোধরা যা করেছে তার কারণে কি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটাতো আপনার পরীক্ষা ছাড়া কিছু না। এর মাধ্যমে যাকে চান আপনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আপনি উত্তম ক্ষমাশীল। (৭ঃ১৫৫)
◾‘হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’। (১৯ঃ৪)
◾‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনিই আমাকে হিদায়াত দিয়েছেন।’ ‘আর যিনি আমাকে খাওয়ান এবং পান করান’। ‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন যিনি আমাকে আরোগ্য করেন’। ‘আর যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন তারপর আমাকে জীবিত করবেন’। ‘আর যিনি আশা করি, বিচার দিবসে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেবেন’। (২৬ঃ৭৮-৮২, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’। (২৬ঃ২১৬)
◾‘আমার কর্ম আমার, আর তোমাদের কর্ম তোমাদের। আমি যা আমল করি তোমরা তা থেকে মুক্ত এবং তোমরা যা আমল কর আমি তা থেকে মুক্ত’। (১০ঃ৪১)
◾হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি জানেন, যা আমরা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি, আর কোন কিছু আল্লাহর নিকট গোপন নেই, না যমীনে না আসমানে। (১৪ঃ৩৮)
◾তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না’। (১৮ঃ৩৮)
◾‘নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি আর তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি অবশ্যই তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর, (১১ঃ৫৪)
◾‘আমি অবশ্যই তাওয়াক্কুল করেছি আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর উপর, প্রতিটি বিচরণশীল প্রাণীরই তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন’। (১১ঃ৫৬)
◾আমি আমার সাধ্যমত সংশোধন চাই। আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমার কোন তওফীক নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাই’। (১১ঃ৮৮)
◾আল্লাহ সে সব থেকে অতিপবিত্র ও মহান, যা তারা আরোপ করে, (৩৭ঃ১৫৯)
◾তারা যা আরোপ করে, আসমানসমূহ ও যমীনের রব এবং আরশের রব তা থেকে পবিত্র-মহান। (৪৩ঃ৮২)
◾অতএব আল্লাহরই জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আসমানসমূহের রব, যমীনের রব ও সকল সৃষ্টির রব। (৪৫ঃ৩৬)
◾যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সবই আল্লাহর জন্য পবিত্রতা ঘোষণা করে। বাদশাহী তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৬৪ঃ১)
◾‘পবিত্র মহান আমার রব! (১৭ঃ৯৩)
◾‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। (১৭ঃ১০৮)
◾আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই। (১ঃ৫)
◾অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (৪১ঃ৩৩)
◾সৃষ্টিকুলের রবের নিকট আত্মসমর্পণ করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি’। (৪০ঃ৬৬)
◾‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, (৯ঃ৫৯)
◾‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! (৩ঃ১৭৩)
◾‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি। আর তিনিই মহাআরশের রব’। (৯ঃ১২৯)
◾সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ মহাপবিত্র, মহিমান্বিত’। (২৭ঃ৮)
◾আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব। (৭ঃ৫৪)
🤲 রব এর নিকট ক্ষমা/চাওয়ার দোয়াঃ
◾হে আমাদের রব! আমরা আপনারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। (২ঃ২৮৫)
◾হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। (২ঃ২৮৬)
◾হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। (২ঃ২৮৬)
◾হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। (২ঃ২৮৬)
◾হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (৩ঃ৮)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। (৩ঃ১৬)
◾‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। (৩ঃ২৬)
◾হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (২ঃ২০১)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। (৪০ঃ৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের পাপ ও আমাদের কর্মে আমাদের সীমালঙঘন ক্ষমা করুন এবং অবিচল রাখুন আমাদের পাসমূহকে, আর কাফির কওমের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন’। (৩ঃ১৪৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’। (৭ঃ২৩)
◾হে আসমানসমূহ ও যমীনের সষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন (১২ঃ১০১, ইউসুফ আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়ই দানশীল। (৩৮ঃ১০, সুলাইমান আঃ)
◾‘আর এর উপর আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না; আমার প্রতিদান কেবল সৃষ্টিকুলের রবের নিকট’। (২৬ঃ১২৭)
◾‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ । (২১ঃ৮৭, ইউনুস আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করুন, আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (২৩ঃ১০৯)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (২৩ঃ১১৮, মূসা আঃ)
◾‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। (৩৫ঃ৩৪)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। (৪০ঃ৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’ (৬৬ঃ৮)
◾‘আমরা আশা করি যে, আমাদের রব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন, কারণ আমরা মুমিনদের মধ্যে প্রথম।’ (২৬ঃ৫১)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফসের প্রতি যুলম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ‘হে আমার রব, আপনি যেহেতু আমার প্রতি নিআমত দান করেন, তাই আমি কখনো আর অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না। (২৮ঃ১৬-১৭, মূসা আঃ)
◾হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (৬০ঃ৪-৫, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (২ঃ১২৯, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। (২১ঃ৮৩, আয়্যুব আঃ)
◾‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। (১১৩ঃ১-৫)
◾‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রব, মানুষের অধিপতি, মানুষের ইলাহ-এর কাছে, কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে দ্রুত আত্মগোপন করে। যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। জিন ও মানুষ থেকে। (১১৪ঃ১-৬)
◾‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন যিনি আমাকে আরোগ্য করেন’। (২৬ঃ৮০)
◾আল্লাহর আশ্রয় চাই (মা’আযাল্লা-হ) (১২ঃ২৩,৭৯)
◾আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। আর তিনি সবচেয়ে বেশি দয়ালু’। (১২ঃ৯২)
◾ নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (১২ঃ৫৩)
◾নিশ্চয় আমার রব পরম দয়ালু, অতীব ভালবাসা পোষণকারী’। (১১ঃ৯০)
◾আমাদেরকে সরল পথ দেখান/পথের হিদায়াত দিন। (১ঃ৬)
🤲 মাতা-পিতার জন্য দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (১৭ঃ২৪)
◾আমার পিতাকে ক্ষমা করুন; (২৬ঃ৮৬-ঈব্রহীম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’। (১৪ঃ৪১)
◾‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (৭১ঃ২৮- নূহ আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ (৪০ঃ৮)
◾‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (২৭ঃ১৯- সোলাইমান আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’। (৪৬ঃ১৫)
🤲 সন্তানদের জন্য দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। (৩৭ঃ১০০- ইব্রাহীম আঃ)
◾‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। (৩ঃ৩৮, জাকারিয়া আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। (২৫ঃ৭৪)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দো‘আ কবূল করুন’। (১৪ঃ৪০- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন’। (১৪ঃ৩৫- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিয্ক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে’। (১৪ঃ৩৭- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ঈসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দো‘আ শ্রবণকারী’। (১৪ঃ৩৯- ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যবশতঃ আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’। (১৯ঃ৪)
◾‘হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ’। (৩ঃ৩৫- ইমরান আঃ এর স্ত্রী)
◾‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী’। (২১ঃ৮৯, জাকারিয়া আঃ)
◾আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’। ‘যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার রব, আপনি তাকে পছন্দনীয় বানিয়ে দিন’। (১৯ঃ৫-৬, জাকারিয়া আঃ)
🤲 পরিবারের জন্য দোয়াঃ
◾‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। (২৫ঃ৭৪)
◾‘হে আমার রব, তারা যা করছে, তা থেকে আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে তুমি রক্ষা কর’। (২৬ঃ১৬৯- লূত আঃ)
🤲 জ্ঞান অর্জনের জন্য দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন। (২০ঃ১১৪)
◾‘হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিয়ে দিন। (২৬ঃ৮৩, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন’‘এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন-যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’। ২০ঃ২৫-২৮)
◾‘আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি’। (২ঃ৬৭)
🤲 সাহস সঞ্চার করার দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান কর’। ১৭ঃ৮০, মুহাম্মদ সঃ)
◾‘হে আমার রব! আমার বক্ষ সম্প্রসারিত করে দিন, এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে, ‘আর আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার সজনদের মধ্য থেকে, ‘আমার ভাই হারুনকে; ‘তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন, ‘এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন। ‘যাতে আমরা আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি প্রচুর, ‘এবং আমরা আপনাকে স্মরণ করতে পারি বেশি পরিমাণ। ‘আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।’ (২০ঃ২৫-৩৫, মূসা আঃ)।
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকান্ড সঠিক করে দিন’। (১৮ঃ১০)
🤲 রিজিকের বৃদ্ধির জন্য দোয়াঃ
◾‘হে আল্লাহ্‌ আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠান; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্য হবে আনন্দোৎসব স্বরুপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন।আর আমাদের জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’ (৫ঃ১১৪, ঈসা আঃ)
◾’হে আমার রব ! এটাকে নিরাপদ শহর করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন’। (২ঃ১২৬, ইব্রাহিম আঃ)
◾হে আমাদের রব! আমি আমার বংশধরদের কিছু সংখ্যককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে, হে আমাদের রব! এ জন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের রিযকের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (১৪ঃ৩৭, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন’। (৩ঃ২৭)
🤲 যানবাহনে আরোহন ও অবতারনের দোয়াঃ
◾আল্লাহরই নামে এর গতি ও স্থিতি নিয়ে আরোহন করছি, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।’ (১১ঃ৪১, নূহ আঃ)
◾‘পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না’। (৪৩ঃ১৩)
◾‘তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে’। (১৫ঃ৪৬)
◾আল্লাহ উত্তম হেফাযতকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। (১২ঃ৬৪)
◾‘হে আমার রব! আমাকে নামিয়ে দিন কল্যাণকরভাবে; আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।’ (২৩ঃ২৯, নূহ আঃ)
🤲 নেককারদের সাথে অন্তর্ভুক্তির দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিয়ে দিন। এবং পরবর্তীদের মধ্যে আমার সুনাম-সুখ্যাতি অব্যাহত রাখুন’, ‘আর আপনি আমাকে সুখময় জান্নাতের ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত করুন’। (২৬ঃ৮৩-৮৫, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। (৫৯ঃ১০)
◾‘আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী হব। আমরা আল্লাহতে বিশ্বাস করেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। (৩ঃ৫২, ঈসা আঃ এর হাওয়ারীগন)
◾‘হে আমার রব! আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা এ রাসূলের অনুসরণ করেছি। কাজেই আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন। ’(৩ঃ৫৩, ঈসা আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা এক আহ্‌বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্‌বান করতে শুনেছি, ‘তোমরা তোমাদের রবের উপর ঈমান আন।’ কাজেই আমরা ঈমান এনেছি।
হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিন (৩ঃ১৯৩)
◾হে আসমানসমূহ ও যমীনের সষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন (১২ঃ১০১, ইউসুফ আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’। (১৪ঃ৪১)
◾‘হে আমার রব, আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (২৭ঃ১৯- সোলাইমান আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
◾‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। ২ঃ১২৮-১২৯, ইব্রাহিম আঃ)
◾সকল প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্তে। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। (২৭ঃ৫৯)
🤲 কেহ মিথ্যাবাদী দোষারোপ করলে দোয়াঃ
◾‘হে আমার রব! আমি আশংকা করছি যে, তারা আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, (২৬ঃ১২, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমার সম্প্রদায় তো আমার উপর মিথ্যারোপ করেছে। (২৬ঃ১১৭, নূহ আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন, কারণ তারা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে ২৩ঃ২৬/৩৯, নূহ আঃ)
◾‘হে আমার রব, আপনি ন্যায়সঙ্গতভাবে ফয়সালা করে দিন’। আর আমাদের রব তো পরম করুণাময়। তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে তিনিই একমাত্র সহায়স্থল। (২১ঃ১১২)
🤲 অত্যাচারী কাফের/দুশমনের বিরুদ্ধে দোয়াঃ
◾আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (২ঃ২৮৬)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কাফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’। (২ঃ২৫০, তালূত আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের পাপ ও আমাদের কর্মে আমাদের সীমালঙঘন ক্ষমা করুন এবং অবিচল রাখুন আমাদের পাসমূহকে, আর কাফির কওমের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন’। (৩ঃ১৪৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’ (৪ঃ৭৫)
◾‘হে আমার রব, আমি আমার ও আমার ভাই ছাড়া কারো উপরে অধিকার রাখি না। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন। (৫ঃ২৫, মূসা আঃ)
◾হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। (৭ঃ৮৯)
◾হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে যালিম কওমের ফিতনার পাত্র বানাবেন না’। (১০ঃ৮৫, মূসা আঃ)
◾হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চি‎হ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে’। (১০ঃ৮৮, মূসা আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা তো আশংকা করছি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা সীমালঙ্ঘন করবে’। (২০ঃ৪৫, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে যালিম সম্প্রদায়ভুক্ত করবেন না।’ (২৩ঃ৯৪, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে। (২৫ঃ৩০)
◾‘হে আমার রব, আপনি যালিম কওম থেকে আমাকে রক্ষা করুন’। (২৮ঃ২১, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন ফাসাদ সৃষ্টিকারী কওমের বিরুদ্ধে’। (২৯ঃ৩০, লূত আঃ)
◾হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে কাফিরদের উৎপীড়নের পাত্র বানাবেন না। (৬০ঃ৫, ইব্রাহিম আঃ)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না’। (৭ঃ৪৭)
◾‘হে আমার রব! যমীনের উপর কোন কাফিরকে অবশিষ্ট রাখবেন না’। (৭১ঃ২৬, নূহ আঃ)
◾‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (৭১ঃ২৮, নূহ আঃ)
◾তোমাদের প্রস্তরাঘাত থেকে আমি আমার রব ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (৪৪ঃ২০)
◾‘আমার সাথে আমার রব রয়েছেন। নিশ্চয় অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ দেবেন’। (২৬ঃ৬২, মূসা আঃ)
◾‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন ফাসাদ সৃষ্টিকারী কওমের বিরুদ্ধে’। (২৯ঃ৩০)
◾‘নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর’। (৫৪ঃ১০, নূহ আঃ)
◾ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। (৬১ঃ১৩)
🤲 জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়াঃ
◾হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (২ঃ২০১)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। (৩ঃ১৬)
◾‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’। (৩ঃ১৯১)
◾‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’। (৩ঃ১৯২)
◾‘হে আমাদের রব, আর আপনি আমাদেরকে তা প্রদান করুন যার ওয়াদা আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে। আর কিয়ামতের দিনে আপনি আমাদেরকে অপমান করবেন না। নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না’। (৩ঃ১৯৪)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। (৪০ঃ৭)
◾আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য।’ (৪০ঃ৯)
◾‘হে আমার রব, আপনার কাছে আমার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। (৬৬ঃ১১, ফেরাউনের স্ত্রী)
◾হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি মানুষকে সমবেত করবেন এমন একদিন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। (৩ঃ৯)
🤲 জাহান্নামি/কাফেরদের আর্তনাদঃ
◾‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এর আযাব হল অবিচ্ছিন্ন’। (২৫ঃ৬৫)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা দেখেছি ও শুনেছি, কাজেই আমাদেরকে পুনরায় পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী’। (৩২ঃ১২)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব’। (৩৫ঃ৩৭)
◾‘হে আমাদের রব, আমাদের থেকে আযাব দূর করুন; নিশ্চয় আমরা মুমিন হব।’ (৪৪ঃ১২)
◾‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠালেন না কেন? তাহলে আমরা আপনার আয়াতসমূহ অনুসরণ করতাম আর আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুর্ক্ত হতাম’। (২৮ঃ৪৭)
◾‘হে আমাদের রব, দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট’। ‘হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে বের করে দিন, তারপর যদি আমরা আবার তা করি তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম।’ (২৩ঃ১০৬-১০৭)
◾‘হে আমাদের রব, ওরা তো তারা যাদেরকে আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম। তাদেরকে আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম যেমন আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। আমরা আপনার কাছে দায় মুক্তি চাচ্ছি। তারা তো আমাদের ইবাদাত করত না’। (২৮ঃ৬৩)
◾‘হে আমাদের রব, যে আমাদের জন্য এ বিপদ এনেছে, জাহান্নামে তুমি তার আযাবকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দাও।’ (৩৮ঃ৬১)
◾‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল’। ‘হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লা‘নত করুন’। (৩৩ঃ৬৭-৬৮)
◾‘হে আমাদের রব, জিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। (৪১ঃ২৯)
◾‘হে আমার রব, যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তাই যমীনে আমি তাদের জন্য (পাপকে) শোভিত করব এবং নিশ্চয় তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব’। (১৫ঃ৩৯, ইবলিশ)
◾‘হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। ১৪ঃ৩৬)
◾‘হে আমাদের ‘রব’, আমি তাকে বিদ্রোহী করে তুলিনি, বরং সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রষ্টতার মধ্যে’। (৫০ঃ২৭)
◾‘হায়, আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম বরং আমরা ছিলাম যালিম’ । (২১ঃ৯৭)

আহসানুত তাফসির (কুরআন বিল কুরআন)মুরাদ বিন আমজাদ

আহসানুত তাফসির (কুরআন বিল কুরআন)
মুরাদ বিন আমজাদ
০০০০০০০০০০০০
(এখানে আমরা সংক্ষিপ্ত পরিসরে বুঝার জন্য নমুনা হিসেবে তুলে ধরলাম বিজ্ঞ পাঠক কুরআনের পথের পথযাত্রীরা জানাবেন কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে অবহিত করবেন “নিয়মা আজরুল আমিললীন।”
আল কুরআন পাঠের শুরুতে করণীয় বিষয়:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:

فَإِذَا قَرَأْتَ ٱلْقُرْءَانَ فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ
তুমি যখন কুরআন পড়তে চাইবে, তখন বিতাড়িত শয়তানের কবল থেকে(রক্ষা পাবার জন্যِ)আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে।(১৬:৯৮)
উক্ত আয়াতের নির্দেশনা অনুসারে কিভাবে শয়তান থেকে পানা চাইতে হবে সেটা আল্লাহ শিখিয়েছেন এভাবে:

رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَٰتِ ٱلشَّيَٰطِينِ
হে আমার প্রতিপালক , আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই’।(২৩:৯৭)

وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ
আর হে আমার প্রতিপালক , আমার কাছে তাদের উপস্থিতি হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’(২৩:৯৮)

أَعُوذُ بِٱللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْجَٰهِلِينَ
‘আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি’।(২:৬৭)
অতঃপর আল্লাহর নামে শুরু করার নির্দেশ:
ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ
পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।(৯৬:১)

ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ خَٰلِقُ كُلِّ شَىْءٍ فَٱعْبُدُوهُۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ وَكِيلٌ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক । তিনি ছাড়া কোন আইনদাতা নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর দাসত্ব কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর উকিল/ তত্ত্বাবধায়ক।(৬:১০২)
×÷×÷×÷×÷×÷×
سورة الفاتحة
১ নং সুরা ফাতিহা : ৭ আয়াত (বাক্য)
(১)بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
(শুরু করছি) বিশেষ করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামের সাথে।
(২) ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ

সকল প্রশংসা(১) বিশ্বজগতের(রব)(৩) প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।(*২)

(*১।)তাহমীদ তথা (আল্লাহর প্রশংসা) এ বিষয়ে আল কুরআন থেকে তাফসীর দেখুন, ৬/১,৪৫,৭/৪৩,১০/১০,১৪/৩৯,১৬/৭৫,১৭/১১১,১৮/১,২৩/২৮,২৭/১৫,৫৯,৯৩,২৮/১,৩৫,৩৭/১৮২,৩৯/২৯,৭৪,৪০/৬৫,৪৫/৩৬

(*২) الله আল্লাহ তাআলার পরিচয় বিষয় তাফসীর দেখুন, ২/২৫৫,৪/৮৭,১৩/২,১৪/৩২-৩৪,২০/৮,২৪/৩৫,৩০/১১,৪০,৪৮,৫৪,৩৭/১২৬,৩৯/৬৩-৬৩,২৩/৬১-৭৯,৪২/১৭,৬৫/১২
,========================
*(৩) রব্বুল আলামিন (বিশ্ব জগতের রব) বিষয় তাফসীর, ২/১৩১,৫/২৮,৬/৪৫,৭১,৭/৫৪,৬১,৬৭,১০৪,১২১,১০/১০,৩৭,২৬/১৬,২৩-২৮,৪৭-৪৮,৭৭-৮২,১০৯,১২৭,১৪৫,১৬৪,১৮০,১৯২,২৭/৮,৪৪,২৮/৩০,৩২/২,৩৭/১৮০-১৮২,৩৯/৭৫,৪০/৬৪-৬৬,৪১/৯,৪৩/৪৬,৪৫/৩৬,৫৬/৭৭-৮০,৫৯/১৬,৮১/২৯,৮৩/৪-৬।
(৩)ٱ‌‌لرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

বিশেষ করুণাময় অসীম দয়ালু।*(৪-৫)

*(৪) বিশেষ করুনাময় অসীম দয়ালু

এর তাফসীর দেখুন: ২:১৬৩,১৩/৩০,১৭:১৩০,১৯/১৮,২৬,৪৪-৪৫,৫৮,৬১,৬৯,৭৪,৭৭,৭৮,৮৫-৮৬,৯০-৯৬,২০/৫,১০৮-১০৯,২১/২৬,৩৬,১১২,২৫/২৬,২৭/২৯-৩০,৩৬/১১১৫,২৩,৫২,৪১/২,৪৩/১৭,১৯-২০,৩৩,৩৬,৪৫,৮১,৫০/৩৩-৩৪,৫৫/১,৫৯/২২,৬৭/৩,১৯,২৯,৩৭,৭৮/৩৮।

*(৫)শুধু الرحيم (আর রাহীম তথা অসীম দয়ালুর ) তাফসির জানতে দেখুন:আর-রহীম-পরম দয়ালু
°°°°°°°°°°°°°°°°°°

ফাতিহা ১:২ বাকারা ২:৩৭,৫৪,১২৮,১৪৩,১৬০,১৭৩,১৮২,১৯২,২১৮,২২৬ আল ইমরান ৩:৩১,৮৯,১২৯ নিসা ৪:২৫,২৯ মায়িদা ৫:৩,৩৮,৩৯,৭৪,৯৫ আনআম৬:৫৪,১৪৫,১৬৫ আরাফ ৭:১৫৩ আনফাল ৮:৬৯ তাওবা ৯:৫,২৭,৯১,৯৯,১০২,১০৪,১১৭,১১৮ইউনুস১০:১০৭,হুদ১১:৪১,৯০ ইউসুফ ১২:৫৩,৯৮ইবরহীম১৪:৩৬হিজর১৫:৪৯-৫০ নাহল ১৬:১৮,১১০,১১৯হজ্জ২২:৬৫নূর২৪:২০,২২,৩৩,৬২ফুরকান২৫:৬,৭৯শুয়ারা২৬:৯নামল২৭:১১,৩০কাসাস২৮:১৬রুম৩০:৫আহযাব ৩৩:৪৩,৭৩ সাবা ৩৪:২ ইয়াসিন ৩৬:৫,৫৮ জুমার ৩৯:৫৩ ফুসসিলাত ৪১:৩১-৩ শুরা ৪২:৫ দুখান ৪৪:৪১-৪২ আহকাফ ৪৬:৮ ফাতহ ৪৮:১৪ হুজরাত ৪৯:৫,১২,১৪ তুর ৫২:২৮ হাদিদ ৫৭:৯,২৮ মুজাদালা ৫৮:১২ হাশর ৫৯:১০,২২ তাগাবুন ৬৪:১৪ তাহরীম ৬৬:১ মুজ্জাম্মিল ৭৩:২০

(৪)مالك يَوْمِ ٱلدِّين
সকল ফায়সালার সময় তিনিই একমাত্র বিচারক।(৬) (ملك)মালিক এর তাফসির দেখুন:২:১০৭,৩/২৬,১৮৯,৭/১১১,৮২/১৭-১৯,১১৪/২,৩৫/১৩,৪০/২৯,১৯/৪। (৫) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ আমরা আপনারই দাসত্ব করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য চাই।(৭)
(*৭)কুরআনে আল্লাহ শেখানো সাহায্য প্রার্থনার দোয়াসমূহের আয়াতঃ
২৩/৯৭,৯৮, ৩/১৯১-১৯৪, ৭/২৩, ১৪৯, ৬৬/৮, ৬০/৫, ২৫/৬৫,৬৬, ৪৪/১২, ১১/৪৭, ২৮/১৬, ২৬/৫১, ২৮/৬৭, ২/৫৮,৭/১৬১, ৩৯/১৩,৬/১৫, ২/৫৪,৩৭, ২/২৮৬, ২৭/১০৯, ২৩/১১৮, ৭/১৫১, ২/২০১, ১৮/১০, ৭/১২৬, ২/২৫০, ৭/৮৯, ২১/১১২, ৭/৪৭, ১০/৮৫,৮৬, ২৮/১৭, ১৪/৩৮, ২৩/১০৬, ১০৭, ৪/৭৫, ৯/৫১, ৪২/১৯, ২;১২৭,১২৮, ৯/৫৯, ৩৫/৩৪, ১৪/৩৯, ৩/১৪৭,১৬,৮,৯, ৬০/৪, ২৫/৭৪, ৩৭/১০০, ৩/৩৮, ৭১/২৬, ২৭/১৯, ৪৬/১৫, ১৪/৪১, ১৭/২৪, ৭১/২৮, ৫৯/১০, ৪০/৭,৮,৯,১১, ১৭/৮০, ২৮/২৪, ১২/১০১, ২১/৮৭, ২৮/২১, ৭/৪৭, ১০/৮৫, ২৩/২৬,৩৯, ১৪/৪০,৪১, ৬/১৬২,১৬৩, ১৪/৩৯

দ্বিতীয় পর্ব সুরাতুল হামদ (কুরআন বিল কুরআন)
মুরাদ বিন আমজাদ
০০০০০০০০০০০

(৬) اهْدِنَا الصِّرٰطَ الْمُسْتَقِيم
আমাদেরকে সুদৃঢ় পথ দেখিয়ে দেন।(*৮)
সিরাতে মুস্তাকিম এর তাফসির:সিরাতে মুস্তাকীমصراط المستقيم
সমস্ত প্রসংশা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন । হাজারো মতবাদ , হাজারো পথ , ঝঞ্জা-বিক্ষুদ্ধ এই পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় যে জিনিসটি তা হচ্ছে সরল – সঠিক পথ । সেই সরল – সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন , এবং সরল -সঠিক পথের সন্ধান একমাত্র তার কাছেই চাইতে বলেছেন ।
اھدنا الصراط المستقيم
আপনি আমাদের দেখান সরল সঠিক পথ । (ফাতিহা ১/৬)এআয়াতটির তাফসির দেখাতে চাই একেবারে নির্ভুল ভাবে । কারণ দীনের নামে অসংখ্য বক্রপথের মাঝে সরল পথ পাওয়া আজ খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে । তাই আমি রায় রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা রেখে সরাসরি আল্লাহর কালাম থেকে তাফসির করছি । আল-কুরআনের ভূমিকাতে আমরা যখন মহান মালিকের ভাষায় তাঁর কাছে সরল সঠিক সুদৃঢ় পথ চাচ্ছি । উত্তরে তিঁনি আমাদের বলে দিচ্ছেন কিতাবের ভূমিকায় যখন সরল পথ চাচ্ছ তাহলে বাকারা থেকে নাস পর্যন্ত এর মধ্যে ঢুকে পড়ে জান আর মান আর এই অহীকৃত বিধিনিষেধ দৃঢ়ভাবে ধারণ করাই সরল পথ । যেমন তিঁনি বলেন :فا ستمسك بالذي أوحى إليك انك على صراط مستقیم সুতরাং তোমার প্রতি যাহা অহী করা হইয়াছে তাহা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। (তহলেই)তুমি সরল পথেই রহিয়াছ। ( যুখরুফ ৪৩/৪৩)মুলত ফাতিহার এক নম্বর আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহ তাআলাকে একমাত্র রব মেনে দৃঢ়তার সাথে সাথে তাঁকে ধারণ করে তাঁর ইবাদত অর্থাৎ রুবুবিয়া উলুহীয়া তাওহীদ পরিপূর্ণ মান্য করাই صراط مستقیم বা সরল পথ । যেমন, মহান আল্লাহ বলেন :أن اللہ ربی وربکم فاعبدوہ ھذا صراط مستقیم নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব, সুতরাং তোমরা তাহার ইবাদত করিবে। ইহাই সরল পথ । (আলা- ইমরান ৩/৫১ও১০১)আরো দেখুন; বনি ইসরাঈল ১৭/৯আনআমের ৬/১৫১-১৫৩,ও ৩৯, ১২৫,১২৬,১৬১থেকে১৬৩পর্যন্ত صراط مستقیم বা সরল পথের বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে । অতঃপর আল ইমরানের ৫১ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহ পাককে তাঁর আয়াতকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করাকেই সরল পথ বলা হয়েছে । মহান আল্লাহ বলেন :يأيها الناس. ….صراطا مستقيما হে মানব ! আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ আসিয়াছে এবং আমি তোমাদের প্রতি স্পষ্ট জ্যোতি অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি।যাহারা আল্লাহতে ঈমান আনে ও তাঁহাকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে তাহাদিগকে তিনি অবশ্যই তাঁহার দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করিবেন এবং তাহাদিগকে সরল পথে তাঁহার দিকে পরিচালিত করিবেন । (নিসা ৪/১৭৪ -১৭৫) অরআল্লাহ তাআলার দাখানো পথ যেদিকে তিনি আহবান করেন তাহল জান্নাতের সরল পথ ।(১০/২৫) অনুরূপ আল-কুরআনের আলোকিত পথই সরল পথ, (ইবরাহীম ১৪/১)ফাতিহার ১নম্বর আয়াত অর্থাৎ আল্লাহ্‌র রুবুবিয়াহ বা সার্বভৌমত্ব সিকার করে অন্য সব সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করাই সিরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথ। (মারইয়াম ১৯/৩৬) আর এ সরল পথে পরিচালিত করেন সয়ং আল্লাহ পাক মুমিনদের । (হাজ্জ ২২/৫৪)এই সরল পথেই পতিষ্ঠিত ছিলেন রাসূলে কারীম, যার সাক্ষী দিয়েছেন সয়ং আল্লাহ পাক ।(ইয়াসিন ৩৬/৪) আর এই সরল পথে থেকে সেদিকেই আহবান করেন রসূল ।(মুমিনুন ২৩/৭৩-৭4)আর ঐ আহবানে সাড়া দিয়ে সরল পথে তারাই চলতে পারেন যারা পরকালে বিশ্বাসি ।অন্যথায় সরল পথ থেকে বিচ্যুতি হয় । আর আল্লাহর নাযিলকৃত সুস্পষ্ট পথে সেই চলতে পারে যাকে আল্লাহ পাক চান । (নুর ২৪/৪৬)আর আল্লাহ তাদেরই চাইবেন যারা আল-কুরআনের পথে চলতে সচেষ্ট হবে। কারণ আল-কুরআনের জ্ঞানীরা জানে আল্লাহর রসূলের উপর নাযিলকৃত পথ হল সরল পথ ।(৩৪/৬) আর এই সরল পথ অনুসরণ করাই আল্লাহ পাকের ইবাদত বা দ্বাশত্তের পথ । এপথ বর্জন শয়তানের বক্রপথ । (৩৬/৬০-৬১) আল্লাহ পাক তাওফিক দাতা।

হিদায়ত প্রাপ্ত লোকদের আলামত।
এক. নাম্বার বিপদে ধৈর্যধারণ করা।( বাকারাহ ২:১৫৬-১৫৭)
দুই. শিরিক মুক্ত জীবন যাপন করা। (আনআম ৬:১৪১)
তিন. আল্লাহর ঘর মাসজিদ আবাদ করা। (তাওবা ৯:১৮)
চার. তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করা। (বাকারাহ২:২-৫)
💠তথ্যশুত্র, আহসুন তাফসীর, মুরাদ বিন আমজাদ।
📎নোটঃআমি যে তাফসীর লিখছি তার থেকে সামান্য অংশ নমুনা স্বরুপ তুলে ধরলাম।সকল দীনি ভাই -বোনদের নিকট দু’আ প্রার্থী যেন মহান আল্লাহ কবুল করে নেন।এবং সকল ধরনের প্রতিকূলতা দূর করে দেন। ( رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِ )হে আমাদের রব!আমাদের দু’আ কবুল করুন।
(৭)
صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ
তাদের রাস্তা, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন;৯ তাদের উপরে গজব হয়নি এবং তারা পথভ্রষ্টও নয়।(১০)
(*৯) অনুগ্রহপ্রাপ্ত তথা মহান আল্লাহর প্রিয়ভাজনদের পথ।

আমরা মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাই না এমন কাউকে পাওয়া যায় না। তাহলে দেখা দরকার কেমন করে তা সম্ভব? একজন লোক তার বন্ধুর কাছে বলছিল রাজার মেয়েকে আমি ভালো বাসি। শুনে বন্ধু বললো সেকি তোমাকে ভালো বাসে? উত্তরে সে বললো সেটাতো জানা নেই। বন্ধু ভালো বাসাতো একতরফা হয় না! অনুরূপ আমরা প্রায় সকলেই আল্লাহ তাআলাকে ভালো বাসার দাবিদার। কাজেকর্মে না হলেও অন্তত মৌখিকভাবে এমনটাই প্রকাশ করি। কিন্তু ভালোবাসা তো একতরফা হয় না। আমরা যারা মহান রবের ভালো বাসার দাবিদার তাদের জানা দরকার আল্লাহ তা’আলা কি আমাদেরকে ভলোবসেন?জি,বাসেন!তবে কীভাবে? কাদেরকে? দেখি আল্লাহ কাদেরকে ভালো বাসেন তিঁনি কি বলেন। কুরআন মাজিদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে কিছু গুনের অধিকারি লোকদের আল্লাহ তাআলা ভালো বাসেন তারা হলো : (১)তাওয়াবীন,(২)মুত্তাবীউন,(৩)মুত্তাকীন,(৪)মুহসিনীন,(৫)সাবেরীন,(৬)মুতাওকিলীন,(৭)মুকসিতিন,(৮)জাকেরীন,(৯)মুতাত্বহিরীন,(১০)আজিলাতুল মু’মিনীন।
উল্লিখিত বিষয়গুলো আমরা মহান রবের কালাম দ্বারা প্রমান করব ইনশাআল্লাহ। তবে এখানে একটা বিষয় বলে রাখা দরকার দীনি শিক্ষার নামে আজ আমরা যে সকল ডিগ্রি বা কোয়ালিটি যেমন,মওলানা, মৌলভী,মুফতি, মুহাদ্দিস, মক্কি,মাদানি,সুন্নি,ব্রেলভী,রেজভী,দেওবন্দী,কাসেমী, সালাফি, ইত্যাদি এর কোনটাই অর্জন করতে মহান আল্লাহ ও তাঁর রসূলের এর পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ দেন নি। অথচ এগুলো ডিগ্রি হাসিল করার জন্য আমরা অনেকেই মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা কেন জেন ভুলে গেছি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও তাঁর ভালোবাসার কথা! অথচ তাঁর ভালো বাসা ছাড়া কাংক্ষিত সেই জান্নাত পাওয়া সম্ভব না।তাহলে আসুন সেই ডিগ্রি আর কোয়ালিটি গুলো দলিলসহ জেনে নেই। এবং সেগুলো অর্জন করে মহান রবের প্রিয়জন হই। তাওবাঃ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন।(বাকহারা ২:২২২) তবে তওবা শুধু মুখে উচ্চারণের নাম নয় বরং তার জন্য কিছু শর্ত আছে।(২৫:৭০) ক.সম্পূর্ণভাবে গুনাহ থেকে বিমুক্ত হওয়া। খ.পূর্বকৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। গ.পুনরায় গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।ঘ.অন্যের হক আত্মসাতের গুনাহ হলে,সেটা ফেরত দেয়া।
(*১০)হ্যাঁ , আমরা আজ আলোচনা করব দ্বল্লিন অর্থাৎপথভ্রষ্ট কারা ? এ সম্পর্কে । আসুন আমরা এ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতগুলি একত্র করি এবং দেখি কারা পথভ্রষ্ট ?

(১) সত্যি বলতে কি আমাদের পিতা একেবারে বিভ্রান্ত (পথভ্রষ্ট) হয়ে গেছে ।১২সূরা ইউসূফ : আয়াত ৮

পর্যালোচনা : এখানে দেখা যাচ্ছে , একজন নবীর সন্তরাই তাদের পিতাকে (নাবীকে) বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট বলছে । অথচ নাবীরাই ছিলেম বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট জনগোষ্ঠীর পথপ্রদর্শক । তারা পথভ্রষ্ট হতেই পারেন না । তাহলে দেখতে হবে , পখভ্রষ্ট – কে বলছে , কাকে বলছে । এক সময়ের সিসাঢালা প্রাচীরের মত একতাবদ্ধ , অপরাজেয় জাতী মুসলিমরা আজ অসংখ্য দলে বিভক্ত । একদল অন্য সকল দলকে নির্দিধায় বিভ্রান্তির ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে । এদের সবার কথা মেনে নিলে সুপথ প্রাপ্ত আর কেউ থাকবে না । তাই সুপথ প্রাপ্ত কে , আর কে পথভ্রষ্ট তা নির্ণয় করা যাবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কথা দিয়েই । আল্লাহ তা”আলা যাকে পথভ্রষ্ট বলবেন একমাত্র সেই পথভ্রষ্ট , আমরা যতই তাকে সুপথপ্রাপ্ত বলিনা কেন । আবার আল্লাহ তায়ালা যাকে সুপথ প্রাপ্ত বলবেন , সেই একমাত্র সুপথপ্রাপ্ত আমরা যতই তাকে পথভ্রষ্ট বলিনা কেন । আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তোমার কাছে যারা সুপথ প্রাপ্ত তাদের মধ্যে শামিল কর ।
رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآء
(২)
قَالَ فَعَلْتُهَا إِذًا وَأَنَا مِنَ الضَّالِّينَ

মুসা (আঃ) জবাব দিলেন , আমি সে সময় এ কাজ করেছিলাম অজ্ঞতার মধ্যে (পথভ্রষ্ট) থাকা অবস্থায় । – সূরা শুআরা : আয়াত ২০

পর্যালোচনা : এখানেও দেখা যাচ্ছে , একজন নাবী , যারা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পথপ্রদর্শক ছিলেন , তিনি নিজেকেই পথভ্রষ্ট বলছেন । তাই এর ব্যাখ্যাও আগের আয়াতের মত হবে । তা হল , আসল পথভ্রষ্ট সে যাকে আল্লাহ তায়ালা পথভ্রষ্ট বলবেন । আসলে এখানে একটি বিশেষ ঘটণার জন্য মুসা (আঃ) নিজেকে পথভ্রষ্ট বলছেন । তার তা হল তার দ্বারা একজন কিবতী হত্যা । তিনি শুধু একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য তাকে একটি চড়/ঘুঁষি মেরেছিলেন । হযরত মূসা সেই কিবতীকে একজন ইসরাঈলীর উপর জুলুম করতে দেখে শুধুমাত্র একটি ঘুঁষি মেরেছিলেন। সবাই জানে, ঘুঁষিতে সাধারণত মানুষ মরে না। আর তিনি হত্যা করার উদ্দেশ্যেও ঘুঁষি মারেননি। ঘটনাক্রমে এতেই সে মরে গিয়েছিল। তাই সঠিক এ ছিল যে, এটি ইচ্ছাকৃত হত্যা ছিল না বরং ছিল ভুলক্রমে হত্যা। হত্যা নিশ্চয়ই হয়েছে কিন্তু ইচ্ছা করে হত্যা করার সংকল্প করে হত্যা করা হয়নি। হত্যা করার জন্য যেসব অস্ত্র বা উপায় কায়দা ব্যবহার করা হয় অথবা যেগুলোর সাহায্যে হত্যাকার্য সংঘটিত হতে পারে তেমন কোন অস্ত্র, উপায় বা কায়দাও ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু এই অজ্ঞতা , কোন কাজের পরিণতি সম্পর্কে না জানাও পথভ্রষ্টতার একটি কারণ । যা আমরা পরবর্তি আয়াত গুলিতে পাব ইনশা-আল্লাহ । আপনারা ভাববেন না আমি মুসা (আঃ) কে পথভ্রষ্ট বলছি (মায়ায আল্লাহ) । তিনি তো ছিলেন পথপ্রর্শক । আমি আগেই বলেছি , আসল পথভ্রষ্ট সে যাকে আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট বলবেন ।
(৩)
وَلا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ

প্রবৃত্তির কামনার আনুসরণ করো না । কারণ তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করবে । যারা আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী হয় আবশ্যই তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি । যেহেতু তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে । – সূরা ছোয়াদ : আয়াত ২৬
পর্যালোচনা : আয়াতের অর্থটি নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে পরিস্কার । আল্লাহ আনুগত্য করে না , ইসলামের বিধান মানে না । মন যা চায় , প্রবৃত্তি যা চায় তাই করে সে কখনও সুপথের উপরে থাকতে পারে না । তার প্রবৃত্তিই তাকে পথভ্রষ্ট করবে । হে আল্লাহ ! আমাদের নাফসকে তুমি তোমার দ্বীনের প্রতি অটল আবিচল রাখো ।

(৪) একই বিষয়ে আরো একটি আয়াত

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنَ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়া নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে ? আল্লাহ এ ধরণের যালেমদেরকে কখনো হিদায়াত দান করেন না । – সূরা কাসাস : আয়াত ৫০
(৫)
الَّذِينَ يَسْتَحِبُّونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الآخِرَةِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا أُولَئِكَ فِي ضَلالٍ بَعِيدٍ

যারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় , যারা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে রুখে দিচ্ছে এবং চাচ্ছে এ পথটি তাদের আকাংখা অনুযায়ী বাঁকা হয়ে যাক । পথভ্রষ্টতায় তারা অনেকদুর এগিয়ে গেছে । – সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৩

পর্যালোচনা: আজকের মুসলিম সমাজকে এই আয়াত নিয়ে একটু ভাবা দরকার । আমরা আজ কোন পথে চলছি , আমাদের লক্ষ্য কি দুনিয়া না আখেরাত ? আজ আমরা সবাই দুনিয়ার জন্য পাগল , হালাল-হারামের কোন পরওয়াই করছি না । অন্য কথায় যারা শুধুমাত্র দুনিয়ার স্বার্থ ও লাভের কথাই চিন্তা করে, আখেরাতের কোন পরোয়া করে না। যারা বৈষয়িক লাভ, স্বাদ ও আরাম-আয়েশের বিনিময়ে আখেরাতের ক্ষতি কিনে নিতে পারে কিন্তু আখেরাতের সাফল্য ও সমৃদ্ধির বিনিময়ে দুনিয়ার কোন ক্ষতি, কষ্ট ও বিপদ এমনকি কোন স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়াও বরদাশত করতে পারে না। যারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের পর্যালোচনা করে ধীরে ও সুস্থ মস্তিষ্কে দুনিয়াকে বেছে নিয়েছে এবং আখেরাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তার স্বার্থ যেসব ক্ষেত্রে দুনিয়ার স্বার্থের সাথে সংঘর্ষশীল হবে সেসব ক্ষেত্রে তাকে ত্যাগ করে যেতে থাকবে। এ সমস্ত লোকেরা নিজেকে ইসলামের কাছে সঁপে দিতে চায় না । বরং ইসলামকেই তাদের অনুগত বানাতে চায় । অর্থাৎ তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে থাকতে চায় না। বরং আল্লাহর দ্বীনকে নিজেদের ইচ্ছার অনুগত করে রাখতে চায়। নিজেদের প্রত্যেকটি ভাবনা-চিন্তা, মতবাদ ও ধারণা-অনুমানকে তারা নিজেদের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করে এবং এমন কোন বিশ্বাসকে নিজেদের চিন্তারাজ্যে অবস্থান করতে দেয় না যা তাদের ভাবনার সাথে খাপ খায় না। তারা চায় আল্লাহর দ্বীন তাদের অনুসৃত প্রত্যেকটি রীতি-নীতি, আচার-আচরণ ও অভ্যাসকে বৈধতার ছাড়পত্র দিক এবং তাদের কাছে এমন কোন পদ্ধতির অনুসরণের দাবী না জানাক যা তারা পছন্দ করে না। এরা নিজেদের প্রবৃত্তি ও শয়তানের অনুসরণে যেদিকে মুখ ফিরায়, আল্লাহর দ্বীনও যেন এদের গোলাম হয়ে ঠিক সেদিকেই মুখ ফিরায়। সে যেন কোথাও এদেরকে বাধা না দেয় বা সমালোচনা না করে এবং কোথাও এদেরকে নিজের পথের দিকে ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা না করে। আল্লাহ‌ তাদের কাছে এ ধরনের দ্বীন পাঠালেই তারা তা মানতে প্রস্তুত। আয়াতের মর্মানুযায়ী এ ধরণের লোকেরা পথভ্রষ্টার অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে । হে আল্লাহ ! আমরা এ ধরনের চিন্তাধারা থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই !
(৬)
مَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيحُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ لا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا عَلَى شَيْءٍ ذَلِكَ هُوَ الضَّلالُ الْبَعِيدُ

যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করলো তাদের কার্যক্রমের উপমা হচ্ছে এমন ছাইয়ের মত যাকে একটি ঝনঝাক্ষুদ্ধ দিনের প্রবল বাতাস উড়িয়ে দিয়েছে । তারা নিজেদের কৃতকর্মের কোনই ফল লাভ করতে পারবে না । এটিই চরম পথভ্রষ্টতা । ১৪ সূরা ইবরাহীম : আয়াত ১৮

পর্যালোচনা:যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, অবিশ্বস্ততা, অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারমূলক আচরণ, নাফরমানী ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করলো এবং নবীগণ যে আনুগত্য ও দাসত্বের পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ড এবং সারা জীবনের সমস্ত আমল শেষ পর্যন্ত এমনি অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন একটি ছাই-এর স্তুপ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় জমা হতে হতে তা এক সময় একটি বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র একদিনের ঘুর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেলো যে তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। তাদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প-কল-কারখানা, মহা প্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চারুকলা-ভাস্কর্য-স্থাপত্যের বিশাল ভাণ্ডার, এমনকি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যাবলী এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমন সব কাজ-কর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাই-এর স্তুপে পরিণত হবে। কিয়ামতের দিনের ঘুর্ণিঝড় এ ছাই-এর স্তুপকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং আখেরাতের জীবনে আল্লাহর মীযানে রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার জন্য তার একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না।
(৭)
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنِ اهْتَدَى فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَمَا أَنَا عَلَيْكُمْ بِوَكِيلٍ

বলে দাও , হে লোকেরা , তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে । এখন যারা সোজা পথ অবলম্বন করবে তাদের সোজা পথ অবলম্বন তাদের জন্যই কল্যাণকর হবে । এবং যারা ভুল পথ অবলম্বন করবে তাদের ভুল পথ অবলম্বন তাদের জন্যই অকল্যাণকর হবে । আর আমি তোমাদের উপর পাহারাদার হয়ে আসিনি । – সূরা ইউনুস : আয়াত ১০৮

পর্যালোচনা : আয়াতের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে পরিস্কার । মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রেরিত নাবী রাসূলদের মাধ্যমে সুপথ এবং ভ্রান্ত পথের বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছেন । তিনি নাবী রাসূলদের এজন্য পাঠাননি যে তিনি লোকদেরকে বাধ্য করবেন ইসলাম পালন করার জন্য । বরং তার দায়িত্ব ছিল সত্য পৌঁছিয়ে দেয়া । এখন যারা তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করবে তারাই হবে সুপথ প্রাপ্ত আর যারা তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করবে না তারাই হবে পথভ্রষ্ট । আল্লাহ পাক আমাদেরকে নাবী রাসূলদের দেখানো পথের উপর থাকার তাওফীক দান করুন ।
(৮)
لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ أَلا سَاءَ مَا يَزِرُونَ

কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝা পুরোপুরি উঠাবে আবার সাথে সাথে তাদের বোঝাও কিছু কিছু উঠাবে যাদেরকে তারা অজ্ঞতার কারণে পথভ্রষ্ট করছে । দেখো কেমন কঠিন দ্বায়িত্ব যা তারা নিজেদের মাথায় নিয়ে নিচ্ছে । – সূরা নাহল : আয়াত ২৫

পর্যালোচনা : ‍নিচের আয়াতের সাথে ।
(৯)
حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لأولاهُمْ رَبَّنَا هَؤُلاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لا تَعْلَمُونَ
وَقَالَتْ أُولاهُمْ لأخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَ

অবশেষে যখন সবাই সেখানে একত্রিত হয়ে যাবে তখন পরবর্তি প্রত্যেকটি দল পূর্ববর্তী দলের ব্যাপারে বলবে “ হে আমাদের রব ! এরাই আমাদের গোমরাহ করেছে কাজেই এদেরকে আগুনের দ্বিগুন শাস্তি দাও । জওয়াবে বলা হবে প্রত্যেকের জন্যই দ্বিগুন শাস্তিই রয়েছে কিন্তু তোমরা জানো না । প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলকে বলবে , যদি আমরা দোষী হয়ে থাকি তাহলে তোমরা কোন দিক দিয়ে আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ছিলে । এখন নিজেদের কৃতকর্মের ফলস্বরুপ আযাবের স্বাদ গ্রহন কর । – সূরা আল-আরাফ : আয়াত ৩৮-৩৯
পর্যালোচনা : আমরা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্ধ অনুসরণ করে চলেছি আমাদের পূর্ব পুরুষদের , সালাফদের, মাযহাবের , পীরদের তাদের এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা করা উচিত । কেয়ামতের দিনে যখন বিচার করবেন আল্লাহ তাআলা তখন আমরা কারো রেফারেন্স দিয়ে রেহাই পাব না । কারণ তারাও হয়তো ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের উত্তর পুরুষদের বিপদে পরিচালিত করেনি । অর্থাৎ সর্বাবস্থায় তোমাদের প্রত্যেকটি দল কোন না কোন দলের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী দল ছিল। কোন দলের পূর্ববর্তী দল উত্তরাধিকার হিসেবে যদি তার জন্য ভুল ও বিপথগামী চিন্তা ও কর্ম রেখে গিয়ে থাকে, তাহলে সে নিজেও তো তার পরবর্তীদের জন্য একই ধরনের উত্তরাধীকার রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। যদি একটি দলের পথভ্রষ্ট হবার কিছুটা দায়-দায়িত্ব তার পূর্ববর্তীদের ওপর বর্তায়, তাহলে তার পরবর্তীদের পথভ্রষ্ট হবার বেশ কিছু দায়-দায়িত্ব তার নিজের ওপরও বর্তায়। তাই বলা হয়েছে প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে। একটি শাস্তি হচ্ছে, নিজের ভুল পথ অবলম্বনের এবং অন্য শাস্তিটি অন্যদেরকে ভুল পথ দেখাবার। একটি শাস্তি নিজের অপরাধের এবং অন্য শাস্তিটি অন্যদের জন্য পূর্বাহ্নের অপরাধের উত্তরাধিকার রেখে আসার।
এ থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তি বা দল কোন ভুল চিন্তা বা কর্মনীতির ভিত্ রচনা করে সে কেবল নিজের ভুলের ও গোনাহের জন্য দায়ী হয় না বরং দুনিয়ায় যতগুলো লোক তার দ্বারা প্রভাবিত হয় তাদের সবার গোনাহের দায়িত্বের একটি অংশও তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকে। যতদিন তার এ গোনাহের প্রভাব বিস্তৃত হতে থাকে, ততদিন তার আমলনামায় গোনাহ লিখিত হতে থাকে। তাছাড়া এ থেকে একথাও জানা যায় যে, প্রত্যেক ব্যক্তির নেকী বা গোনাহের দায়-দায়িত্ব কেবল তার নিজের ওপরই বর্তায় না বরং অন্যান্য লোকদের জীবনে তার নেকী ও গোনাহের কি প্রভাব পড়ে সেজন্য ও তাকে জবাবদিহি করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যভিচারীর কথাই ধরা যাক। যাদের শিক্ষা ও অনুশীলনের দোষে, যাদের সাহচর্যের প্রভাবে, যাদের খারাপ দৃষ্টান্ত দেখে এবং যাদের উৎসাহ দানের ফলে ঐ ব্যক্তির মধ্যে যিনা করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়, তারা সবাই তার যিনাকারী হয়ে গড়ে উঠার ব্যাপারে অংশীদার। আবার ঐ লোকগুলোও পূর্ববর্তী যেসব লোকদের কাছে থেকেই কুদৃষ্টি, কুচিন্তা, কুসংকল্প ও কুকর্মের প্ররোচনা উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করে তাদের কাঁধে পর্যন্তও তার দায়-দায়িত্ব গিয়ে পৌঁছায়। এমন কি এ ধারা অগ্রসর হতে হতে সেই প্রথম ব্যক্তিতে গিয়ে ঠেকে যে সর্বপ্রথম ভ্রান্ত পথে যৌন লালসা চরিতার্থ করে মানব জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। এ যিনাকারীর আমলনামার এ অংশটি তার সমকালীনদের ও পূর্ববর্তী লোকদের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়া সে নিজেও নিজের যিনা ও ব্যভিচারের জন্য দায়ী। তাকে ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল, তাকে যে বিবেকবোধ দান করা হয়েছিল, আত্মসংযমের যে শক্তি তার মধ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল, সৎলোকদের কাছ থেকে সে ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের যে জ্ঞান লাভ করেছিল, তার সামনে সৎলোকদের যেসব দৃষ্টান্ত সমুজ্জ্বল ছিল, যৌন অসদাচারের অশুভ পরিণামের ব্যাপারে তার যেসব তথ্য জানা ছিল-সে সবের কোনটিকেও সে কাজে লাগায়নি। উপরন্তু সে নিজেকে কামনা বাসনার এমন একটি অন্ধ আবেগের হাতে সোপর্দ করে দিয়েছিল যে কোন প্রকারে নিজের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করাই ছিল যার অভিপ্রায়। তার আমলনামার এ অংশটি তার নিজের সাথে সম্পর্কিত। তারপর এ ব্যক্তি যে গোনাহ নিজে করেছে এবং যাকে স্বকীয় প্রচেষ্টায় লালন করে চলেছে, তাকে অন্য লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। কোথাও থেকে কোন যৌন রোগের জীবাণু নিজের মধ্যে বহন করে আনে, তারপর তাকে নিজের বংশধরদের মধ্যে এবং না জানি আরো যে কত শত বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে কত শত লোকদের জীবন ধ্বংস করে তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। কোথাও নিজের শুক্রবীজ রেখে আসে। যে শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব তারই বহন করা উচিত ছিল, তাকে অন্য একজনের উপার্জনের অবৈধ অংশীদার, তার সন্তানদের অধিকার থেকে জোরপূর্বক হিস্সা গ্রহণকারী এবং তার উত্তরাধিকারে অবৈধ শরীক বানিয়ে দেয়। এ অধিকার হরণের ধারা চলতে থাকে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বহুদূর পর্যন্ত। কোন কুমারী মেয়েকে ফুসলিয়ে ব্যভিচারের পথে টেনে আনে এবং তার মধ্যে এমন অসৎ গুণাবলী সৃষ্টি করে যা তার থেকে অন্যদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে না জানি আরো কত দূর, কত পরিবার ও কত বংশধরদের মধ্যে পৌঁছে যায় এবং কত পরিবারে বিকৃতি আনে। নিজের সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সমাজের অন্যান্য লোকদের সামনে সে নিজের চরিত্রের একটি কুদৃষ্টান্ত পেশ করে এবং অসংখ্য লোকের চরিত্র নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে এর প্রভাব চলতে থাকে দীর্ঘকালব্যাপী। ইনসাফের দাবী হচ্ছে, এ ব্যক্তি সমাজ দেহে যেসব বিকৃতি সৃষ্টি করলো সেগুলো তারই আমলনামায় লিখিত হওয়া উচিত এবং ততদিন পর্যন্ত লিখিত হওয়া উচিত যতদিন তার সরবরাহ করা অসৎ বৃত্তি ও অসৎকাজের ধারা দুনিয়ায় চলতে থাকে।

সৎকাজ ও পূর্ণকর্মের ব্যাপারটিও অনুরূপ। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আমরা নেকীর ও সৎকাজের যে উত্তরাধিকার লাভ করেছি তার প্রতিদান তাদের সবার পাওয়া উচিত, যারা সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে আমাদের যুগ পর্যন্ত ওগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করার ব্যাপারে অংশ নিয়েছেন। এ উত্তরাধিকার নিয়ে তাকে সযত্নে হেফাজত করার ও তার উন্নতি বিধানের জন্য আমরা যেসব প্রচেষ্টা চালাবো ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবো তার প্রতিদান আমাদেরও পাওয়া উচিত। তারপর নিজেদের সৎ প্রচেষ্টার যেসব চিহ্ন ও প্রভাব আমরা দুনিয়ায় রেখে যাবো সেগুলোও আমাদের সৎকাজের হিসেবের খাতায় ততদিন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লিখিত হওয়া উচিত যতদিন এ চিহ্ন ও প্রভাবগুলো দুনিয়ার বুকে অক্ষত থাকবে, মানব জাতির বংশধরদের মধ্যে এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকূল এর দ্বারা লাভবান হতে থাকবে।

প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তিই একথা স্বীকার করবেন যে, কুরআন মজীদ প্রতিদানের এই যে পদ্ধতি উপস্থাপন করেছে, একমাত্র এ পদ্ধতিতেই সঠিক ও পূর্ণ ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ সত্যটি ভালভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হলে যারা প্রতিদানের জন্য এ দুনিয়ায় বর্তমান জীবনকেই যথেষ্ট মনে করেছে এবং যারা মনে করেছে যে, জন্মান্তরের মাধ্যমে মানুষকে তার কাজের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া যেতে পারে তাদের সবার বিভ্রান্তিও সহজে দূর হয়ে যেতে পারে। আসলে এ উভয় দলই মানুষের কার্যকলাপ, তার প্রভাব, ফলাফল ও পরিণতির ব্যাপ্তি এবং ন্যায়সঙ্গত প্রতিদান ও তার দাবীসমূহ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি। একজন লোকের বয়স এখন ষাট বছর। সে তার এ ষাট বছরের জীবনে ভাল-মন্দ যা কিছু করেছে না জানি উপরের দিকে কত দূর পর্যন্ত তার পূর্ব-পুরুষরা এ কাজের সাথে জড়িত এবং তাদের ওপর এর দায়িত্ব বর্তায়। আর তাদেরকে এর পুরস্কার বা শাস্তি দান করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তারপর এ ব্যক্তি আজ যে ভাল বা মন্দ কাজ করেছে তার মৃত্যু সাথে সাথেই তা বন্ধ হয়ে যাবে না বরং তার প্রভাব চলতে থাকবে আগামী শত শত বছর পর্যন্ত। হাজার হাজার, লাখো লাখো, বরং কোটি কোটি মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে। এর প্রভাব চলা ও বিস্তৃত হওয়া পর্যন্ত তার আমলনামার পাতা খোলা থাকবে। এ অবস্থায় আজই এ দুনিয়ার জীবনে এ ব্যক্তিকে তার উপার্জনের সম্পূর্ণ ফসল প্রদান করা কেমন করে সম্ভব? কারণ তার উপার্জনের এক লাখ ভাগের এক ভাগও এখনো অর্জিত হয়নি। তাছাড়া এ দুনিয়ার সীমিত জীবন ও এর সীমিত সম্ভাবনা আদতে এমন কোন অবকাশই রাখেনি যার ফলে এখানে কোন ব্যক্তি তার উপার্জনের পূর্ণ ফসল লাভ করতে পারে। মনে করুন, কোন ব্যক্তি দুনিয়ায় এক মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং তার এ মারাত্মক অপকর্মের বিপুল বিষময় কুফল হাজার বছর পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যক্তির এ ধরনের অপরাধের কথা একবার কল্পনা করুন। এ দুনিয়ায় যত বড় ধরনের দৈহিক, নৈতিক, মানসিক অথবা বস্তুগত শাস্তি দেয়া সম্ভব, তার কোনটিও কি তার এ অপরাধের ন্যায়সঙ্গত পরিপূর্ণ শাস্তি হতে পারে? অনুরূপভাবে দুনিয়ার সবচাইতে বড় যে পুরস্কারের কথা কল্পনা করা যেতে পারে, তার কোনটিও কি এমন এক ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হতে পারে, যে সারা জীবন মানবজাতির কল্যাণার্থে কাজ করে গেছে এবং হাজার হাজার বছর পর্যন্ত অসংখ্য মানব সন্তান যার প্রচেষ্টার ফসল থেকে লাভবান হয়ে চলেছে? যে ব্যক্তি কর্ম ও প্রতিদানের বিষয়টিকে এ দৃষ্টিতে বিচার করবে সে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে যে, কর্মফলের জন্য আসলে আর একটি জগতের প্রয়োজন, যেখানে পূর্বের ও পরের সমগ্র মানব গোষ্ঠি একত্র হবে, সকল মানুষের আমলনামা বন্ধ হয়ে যাবে, হিসেব গ্রহণ করার জন্য একজন সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞানময় আল্লাহ‌ বিচারের আসনে বসবেন এবং কর্মের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য মানুষের কাছে সীমাহীন জীবন ও তার চারদিকে পুরস্কার ও শাস্তির অঢেল সম্ভাবনা বিরাজিত থাকবে।

আবার এই একই দিক সম্পর্কে চিন্তা করলে জন্মান্তরবাদীদের আর একটি মৌলিক ভ্রান্তির অপনোদনও হতে পারে। এ ভ্রান্তিটিই তাদের পুনর্জন্মের ধারণা সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। তারা এ সত্যটি উপলব্ধি করতে পারেনি যে, মাত্র একটি সংক্ষিপ্ত পঞ্চাশ বছরের জীবনের কর্মফল ভোগের জন্য তার চাইতে হাজার গুণ বেশী দীর্ঘ জীবনের প্রয়োজন হয়। অথচ পুনর্জন্মবাদের ধারণা মতে তার পরিবর্তে পঞ্চাশ বছরের জীবন শেষ হতেই দ্বিতীয় আর একটি দায়িত্বপূর্ণ জীবন, তারপর তৃতীয় জীবন এ দুনিয়াতেই শুরু হয়ে যায়। আবার এসব জীবনে পুনরায় শাস্তিযোগ্য বা পুরস্কারযোগ্য বহু কাজ করা হতে থাকে। এভাবে তো হিসেব চুকে যাওয়ার পরিবর্তে আরো বাড়তেই থাকবে এবং কোন দিন তা খতম হওয়া সম্ভব হবে না। জাহান্নামবাসীদের এ পারস্পরিক সংলাপ ও তর্ক-বিতর্ক কুরআন মজীদের আরো কয়েকটি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা সাবা’র ৪ রুকূ’তে বলা হয়েছেঃ হায়! তোমরা যদি সেই সময়টি দেখতে পেতে যখন এ জালেমরা নিজেদের রবের সামনে দাঁড়াবে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে থাকবে। যাদেরকে দুনিয়ায় দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা বড় ও শক্তিশালীর আসনে যারা বসেছিল তাদেরকে বলবেঃ তোমরা না থাকলে আমরা মু’মিন হতাম। বড় ও শক্তিশালীর আসনে যারা বসেছিল, তারা দুর্বল করে রাখা লোকদেরকে জবাব দেবেঃ তোমাদের কাছে যখন হেদায়াত এসেছিল তখন আমরা কি তা গ্রহণ করতে তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম? না, তা নয়, বরং তোমরা নিজেরাই অপরাধী ছিলে। এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা আবার কবে হেদায়াতের প্রত্যাশী ছিলে? আমরা যদি তোমাদেরকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়ে নিজেদের দাসে পরিণত করে থাকি, তাহলে তোমরা লোভী ছিলে বলেই তো আমাদের ফাঁদে পা দিয়েছিলে। যদি আমরা তোমাদেরকে কিনে নিয়ে থাকি, তাহলে তোমরা নিজেরাই তো বিকোবার জন্য তৈরী ছিলে, তবেই না আমরা কিনতে পেরেছিলাম। যদি আমরা তোমাদেরকে বস্তুবাদ, বৈষয়িক লালসা, জাতিপূজা এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন প্রকার গোমরাহী ও অসৎকাজে লিপ্ত করে থাকি, তাহলে তোমরা নিজেরাই তো আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দুনিয়ার পূজারী সেজেছিলে, তবেই না তোমরা আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বানকারীদেরকে ত্যাগ করে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। যদি আমরা তোমাদের ধর্মের আবরণে প্রতারিত করে থাকি, তাহলে যে জিনিসগুলো আমরা পেশ করছিলাম এবং তোমরা লুফে নিচ্ছিলে, সেগুলোর চাহিদা তো তোমাদের নিজেদের মধ্যেই ছিল। তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব প্রয়োজন পূরণকারী খুঁজে বেড়াচ্ছিলে, যারা তোমাদের কাছে কোন নৈতিক বিধানের আনুগত্যের দাবী না করেই কেবলমাত্র তোমাদের ইস্পিত কাজই করে যেতে থাকতো। আমরা সেই সব প্রয়োজন পুরণকারী তৈরী করে তোমাদেরকে দিয়েছিলাম। তোমরা আল্লাহর আদেশ নিষেধ থেকে বেপরোয়া হয়ে দুনিয়ার কুকুর হয়ে গিয়েছিলে এবং তোমাদের পাপ মোচনের জন্য এমন এক ধরনের সুপারিশকারী খুঁজে বেড়াচ্ছিলে যারা তোমাদের গোনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়ে নেবে। আমরা সেই সব সুপারিশকারী তৈরী করে তোমাদের কাছে সরবরাহ করেছিলাম। তোমরা নিরস ও স্বাদ-গন্ধহীন দ্বীনদারী, পরহেজগারী, কুরবানী এবং প্রচেষ্টা ও সাধনার পরিবর্তে নাজাত লাভের জন্য অন্য কোন পথের সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা চাচ্ছিলে এ পথে তোমাদের প্রবৃত্তি ও লালসা চরিতার্থ করতে, নানা প্রকার স্বাদ আহরণ করতে কোন বাধা না থাকে এবং প্রবৃত্তি ও লালসা যেন সব রকমের বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকে। আমরা এ ধরনের সুদৃশ্য ধর্ম উদ্ভাবন করে তোমাদের সামনে রেখেছিলাম। মোটকথা দায়-দায়িত্ব কেবল আমাদের একার নয়। তোমরাও এতে সমান অংশীদার। আমরা যদি গোমরাহী সরবরাহ করে থাকি, তাহলে তোমরা ছিলে তার খরিদ্দার।
(১০)
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الضَّالُّونَ

নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদের ঈমান আনার পর , তারপর তারা কুফরীতে আরও এগিয়ে গিয়েছে , তাদের তওবা কখনো গৃহীত হবে না ; আর তারাই পথভ্রষ্ট । – সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৯০

পর্যালোচনা: কেবল অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং কার্যত তার বিরোধিতা ও তার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। লোকদের আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করেছে এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বেড়িয়েছে। মনের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি করেছে ও কুমন্ত্রণা দিয়েছে এবং নবীর মিশন যাতে কোনক্রমে সফলতার সীমান্তে পৌঁছাতে না পারে সেজন্য সবরকমের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে।
(১১)

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلالا بَعِيدًا

আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি , যারা ধারনা করে যে , তারা ঈমান এনেছে তার প্রতি যা আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে , কিন্তু তারা ফায়সালা পেতে চায় তাগুতের কাছে অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তাকে অস্বীকার করতে ; আর শয়তান তো তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে অনেক দুরে নিয়ে যেতে চায় । – সূরা আন-নিসা : আয়াত ৬০

পর্যালোচনা: এখানে ‌‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসক (মৌলভী পুরোহিত দের বোঝানো হয়েছে যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে নিজেরা আইন তৈরি করেছে এবং ধর্মের বিধি-বিধান দিচ্ছে)বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী ফয়সালা করে এবং এমন বিচার ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর কিতাবকে চূড়ান্ত সনদ (Final Authority) হিসেবে স্বীকৃতিও দেয় না। কাজেই যে আদালত তাগুতের ভূমিকা পালন করছে, নিজের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তার কাছে উপস্থিত হওয়া যে একটি ঈমান বিরোধী কাজ এ ব্যাপারে এ আয়াতটির বক্তব্য একেবারে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর আল্লাহ‌ ও তাঁর কিতাবের ওপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবী অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে বৈধ আদালত হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকৃত জানানোই প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দু’টি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ‌ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফেকী। তথা পথভ্রষ্টতা মহান আল্লাহ আমাদেরকে সকল এ পথভ্রষ্টতা থেকে হেফাজত করুন

(সম্মানিত মুসলিম ভাই বোন! এভাবে তাফসির লেখার কাজ চলছে কামন হচ্ছে বা কামন হলে আরো সুন্দর হবে কমেন্ট করে জানালে উপকৃত হব ।)
=÷×=÷×=÷×=
সমাপ্ত