Sizdah-bn

সিজদা

আল্লাহর সত্য বাণী বোঝার জন্য কুরআনের আরবী শব্দগুলির সঠিক অর্থ গ্রহণ করে সমস্ত আয়াতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই । কিন্তু , আপনি যদি কুরআনে ব্যবহৃত শব্দের বানোয়াট অর্থ অনুসরণ করেন, যা প্রায় ১২০০ বছর আগে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক সময়ে উদ্ভাবিত হয়েছিল, তাহলে আপনি বিভ্রান্তিতে হারিয়ে যাবেন।

যখন আরব পৌত্তলিক এবং জরথুষ্ট্রিয়ান পার্সিয়ানরা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে পরিবর্তিত অর্থ অনুযায়ী কুরআনে ব্যবহৃত আরবি শব্দগুলিকে একই রকম ফার্সি শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছিল। এরপর থেকে কুরআনিক শব্দের ভুল অর্থ প্রকাশ ও মুখস্থ করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে , আমাদের আলেমগণ এবং সমগ্র মুসলিম জাতি কুরআনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে আল্লাহর বাণীর অর্থ পরিবর্তনকারী ইসলামের শত্রুদের যোগসাজশে তৈরি কুরআনের বিভ্রান্তিকর অনুবাদে আটকে আছে।

গত পর্বের লেখাগুলোতে ‘বাইত’ শব্দের সঠিক অর্থ ও কোরানে এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে দেখিয়েছি কিভাবে পৌত্তলিক পন্ডিতরা কোরানের এই আরবী শব্দের অর্থ বিকৃত করে পৌত্তলিক প্রথাকে ইসলামে অভিযোজিত করেছে । আজকে আমাদের বহুল পরিচিত ‘সিজদা’ শব্দের সঠিক অর্থ নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।

আল কোরআনের বাংলা অনুবাদে সিজদা শব্দের অনুবাদ করা হয়নি, বরং এর একটি পারিভাষিক সংজ্ঞা দিয়ে আমাদেরকে বুঝানো হয়েছে যে সিজদা মানে হাটু গেড়ে উপুর হয়ে কপাল ও নাক মাটিতে স্পর্শ করা। ইংরেজী অনুবাদে সিজদা অর্থ করা হয়েছে prostration, কেমব্রিজ ডিকশনারি অনুযায়ী যার অর্থ the act or position of lying with the face down and arms stretched out, especially as a sign of respect or worship.। আরবী সিজদা শব্দের এই সংজ্ঞা কি ঠিক আছে? আসুন দেখি আরবী সিজদা শব্দের সঠিক অর্থ কি?

সঠিক ব্যুৎপত্তি অনুসারে আরবি শব্দ “سجد” (SJD) এসেছে ক্লাসিক্যাল সিরিয়াক শব্দ ܣܓܶܕ‎ (SGED) থেকে, যার অর্থ: “বিন্যস্ত করা” এবং আরবীতে মূল অক্ষর س ج د হিসেবে আরও বিকশিত হয়েছে । কুরআনে ব্যবহৃত আরবি “سجد” শব্দটির সঠিক অর্থ নিম্নরূপ:

নিচে যেতে (To go down), বিশ্রামে থাকতে (to rest) , সমর্থন করা (to support), সম্মান করা (to houour), সমর্পন করা (to submit), রাজি করা (to persuade), গ্রহণ করা (to accept), কোন কিছুর দিকে ফিরে যেতে (to turn towards), ঝুঁকতে (to incline), নম্র হতে (to become humble), আজ্ঞাবহ হওয়া (to become obedient) বা কারো আনুগত্য করা (obeying someone).

আবু আল-কাসিম মাহমুদ ইবনে উমর আল-জামাখশারী তার সুপরিচিত আরবি অভিধান “আসাস”, ইবনে-বারী ও আল-জাওহারী প্রাচীন আরবি অভিধান “সিহাহ”, সাইয়্যেদ মুর্তদা আজ-জেবসেদী তার কিংবদন্তি আরবি অভিধান “তাজ উল আরুস”, আবু তাহির মাজিদ আদ-দীন মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আল-ফাইরুজাবাদী তার জনপ্রিয় আরবি অভিধান “কামুস” এবং আল ফায়ুমি তার বিখ্যাত আরবি অভিধান “মিসবাহ”-এ উল্লেখ করেছেন যে “سَجَدَ” ” অর্থ: নম্র/বিনয়ী হওয়া (became lowly), বিনয়ী (humble) বা অনুগত (submissive), যেটি আরবি শব্দ “خَضَعَ”-এর প্রতিশব্দ যার অর্থ: সহ্য করা/ অধীন হওয়া (undergo), বশীভূত হওয়া (succumb) আত্মসমর্পণ করা (surrender) (استسلم), বশীভূত করা (subdue), অধীনস্থ হওয়া (subordinate), নিজের হাতে নিক্ষেপ করা (throw in one’s hand), সহ্য করা (endure)(تحمل), দাঁড়ানো (stand), প্রয়োগ করা (enforce), সমর্থন করা (support) (put up with), আনুগত্য করা (obey) (أطاع), মেনে চলা (comply), নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া (conform)।

ইবনে-মুকাররম কিংবদন্তি আরবি অভিধান “লিসানুল আরব”-এ লিখেছেন যে “سجد” হল অভিবাদন (salute) জানানোর একটি ক্রিয়াকলাপ। সাইয়্যিদ মুর্তদা আজ-জেবসেদীও তার কিংবদন্তি আরবি অভিধান “তাজ উল আরুস”-এ একই কথা উল্লেখ করেছেন। “লিসান উল আরব” এবং “তাজ উল আরুস” উভয়ই আরবি বাক্যাংশ “سَجَدَ لَهُ” উদ্ধৃত করেছেন, যার অর্থ: তিনি তাকে অভিবাদন (salute) করেছেন। এছাড়া এর অর্থ হিসেবে আরও উল্লেখ করেছেন : তিনি তাকে সম্মান (respect/ honour) দিয়েছেন; বা তাকে বড় (magnified) করেছেন। আত-তিবরিজি “Exposition of the Hamdseh,” বইয়ের ২৯৪ নং পৃষ্ঠায় আরবি শব্দ “سجد” সম্পর্কে একই কথা বলেছেন ” যেটি আত-তিবরিজির “হামাসে কারমিনা” নামেও পরিচিত।

সুপরিচিত আরবি লেখক আবু-হানিফা আদ-দীনাওয়ারী ” “Book of Plants” (উদ্ভিদের বই”), আল-মুতাররিজি “মুগরিব”-এ উদ্ধৃত করেছেন এবং সাইয়্যিদ মুর্তদা আজ-জেবসেদী “তাজ উল আরুস” এ একটি আরবি বাক্যাংশ “سَجَدَتِ النَّخْلَةُ” উদ্ধৃত করেছেন যার অর্থ: খেজুর গাছ বেঁকে, বা ঝুঁকে আছে। আবু আল-কাসিম মাহমুদ ইবনে উমর আল-জামাখশারী জার আল্লাহ এবং সাইয়্যেদ মুর্তদা আজ-জেবসেদী “আসাস” এবং “তাজ উল আরুস” -এ এই আরবী উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন: “السَّفِينَةُ تَسْجُدُ لِلرِّيحِ” এর অর্থ: বাতাসের প্রভাবে জাহাজ বেঁকে বা ঝুঁকে পড়ে। উভয় সুপরিচিত পণ্ডিতই আরবি “سجد” শব্দটি “ঘোরানো বা আবর্তিত করা (turn)” বা “ঝুঁকে পড়া (incline)” অর্থে অনুবাদ করেছেন।

আরবি ব্যাকরণের বিখ্যাত পণ্ডিত এবং “আরবি অভিধান আল ফাররা” এবং “মাআনিল-কুরআন” এর লেখক, ইয়াহিয়া ইবনে জিয়াদ আল-ফাররা ৫৫ঃ৬ “وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ” আয়াতের অনুবাদ করেছেন : “আর তৃণলতা ও গাছগুলো সূর্যের দিকে ঘুরে যায়” “And the herbs and the trees turn towards the sun”।

কামুস এবং সিহাহ আরবি শব্দ “سَاجِدٌ” কে “سَجَدَ” এর একটি সক্রিয় বিশেষ্য হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যার অর্থ নম্র হওয়া (being lowly), বিনয়ী (humble) বা অনুগত (submissive)।

সাইয়্যিদ মুর্তদা আজ-জেবসেদী “তাজ উল আরুস”-এ ১৬:৪৮ নং আয়াতাংশ “سُجَّدًا لِّلّهِ” এর ব্যাখ্যা করেছেন যার অর্থ হল: অনুবর্তিতার সাথে আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে বিনীত করা।

আবু আল-কাসিম মাহমুদ ইবনে উমর আল-জামখশারী জার আল্লাহ “আসাস” এ আরবি বাক্যাংশ: “شَجَرَةٌ سَاجِدَةٌ” এবং “ شَجَرٌ سَاجِدٌ” উদ্ধৃত করেছেন এর অর্থ: একটি বাঁকানো গাছ, এবং ঝুঁকে থাকা গাছগুলো। আবু-হানিফা আদ-দীনাওয়ারী তাঁর আরবি বই “Book of Plants (গাছের বই)” এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি আরবি বাক্যাংশ “نَجْلَةٌ سَاجِدَةٌ” উল্লেখ করেছেন যার অর্থ: এর ফলের দ্বারা বাঁকানো একটি খেজুর গাছ। কামুস একটি অনুরূপ আরবি বাক্যাংশ “نَخْلٌ سَوَاجِدُ” উদ্ধৃত করে এর অর্থ করেছেন: পাম-গাছগুলি বেঁকে বা ঝোঁকে আছে।

উপরের লাইনগুলিতে আমরা কিংবদন্তি আরবি পণ্ডিতদের বই এবং সেইসব আরবি অভিধান থেকে আরবি “سجد” শব্দের অর্থ দেখেছি যেগুলি কুরআনের শব্দের অর্থের উপর কর্তৃত্ব বলে বিবেচিত হয় এবং দেখতে পেয়েছি যে আরবী ভাষায় এই আরবি শব্দ “سجد” বলতে সাধারণত বোঝানো হয়: কেউ বা কোনকিছুর দিকে মুখ করা, কারো/কিছুর সামনে নম্র/বিনয়ী হওয়া, কারো প্রতি আনুগত্য হওয়া, কাউকে সম্মতি দেওয়া এবং কাউকে মেনে চলা ইত্যাদি।

তাছাড়া, আমরা যদি কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতগুলির বক্তব্যের সাথে মিলাই তবে উপরের অর্থগুলি এই আয়াতগুলিতে যৌক্তিকভাবে খাপ খায়। যেখানে এই আরবি শব্দ “سجد” এর ভুয়া অর্থ “মাথা নিচু করা বা মাটিতে মাথা স্পর্শ করা” কুরআনের এই আয়াতগুলিতে খাপ খায় না কারণ পৃথিবী, আকাশ, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও বৃক্ষরাজি এই “سجدہ” সম্পাদন করতে পারে না। মাটিতে লুটিয়ে পড়া এবং মাটিতে মাথা স্পর্শ করা হল পার্সিয়ান জরথুষ্ট্রীয় “سجدہ” যা বহুঈশ্বরবাদী জরথুষ্ট্রীয় ধর্মে প্রাধান্য ছিল এবং আরব পৌত্তলিকদের দ্বারাও চর্চা করা হত। যেখানে তারা তাদের দেবতাদের পায়ে পড়ত এবং মুশরিকদের দেবতা ‘পৃথিবী গ্রহকে’ তাদের কপাল স্পর্শ করে প্রণাম করত। হিন্দু মুশরিকরা এখনও ভূপৃষ্ঠ বা পৃথিবীকে “دھرتی ماں” (ধরিত্রি মা) অর্থাৎ ‘পৃথিবী মা’ বলে ভূপৃষ্ঠ বা মাটিকে দেবতা হিসেবে প্রণাম করে যেভাবে আরব পৌত্তলিক, জরথুষ্ট্রিয়ান এবং অন্যান্য মুশরিকরা পশুর মত মাটিতে লুটিয়ে উপাস্যদেরকে প্রণাম করে এবং তাদের কপাল দ্বারা মাটিকে স্পর্শ করে। আমরা আমাদের প্রতিদিনের প্রার্থনায় একই কাজ করি কারণ পৌত্তলিক এবং মুশরিকরা চেয়েছিল যে আমরা তাদের অনুসরণ করি এবং তাদের পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠানগুলি মেনে চলি। এ কারণেই তারা চাতুরী করে তাদের পৌত্তলিক প্রার্থনা ইসলামে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ইসলামে তাদের পৌত্তলিক সিজদা প্রতিষ্ঠিত করতে কুরআনিক শব্দের অর্থ পরিবর্তন করেছে। তারা তাদের প্রাক-ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহর অদৃশ্য মূর্তি তৈরি করে পাথরের প্রাচীরগুলিতে আমাদের সিজদা করাচ্ছে যেভাবে তারা কুখ্যাত পাথর পূজাঁ করত।

যাইহোক, কুরআন আরবি শব্দ “سجد” এবং এর থেকে উৎপন্ন বিশেষ্য “سجدہ” দ্বারা মাটিতে লুটিয়ে পড়া এবং কপাল দিয়ে মাটিকে স্পর্শ করা বোঝায় না কারন আল্লাহ এমন কোন বস্তুর মূর্তি নন যে তাঁর উপাসনা করার জন্য তাঁর পায়ে লুটিয়ে পরতে হবে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সদা জীবিত এবং অগণিত মহাবিশ্ব এবং তাদের চারপাশে যা আছে তা পরিচালনায় সক্রিয় আছেন। সুতরাং, আল্লাহকে সিজদা (“سجده”) করা হয় শুধুমাত্র তাঁর আদেশ পালনের মাধ্যমে, আমাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসকে আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে, একমাত্র আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ার মাধ্যমে, একমাত্র আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করার মাধ্যমে, আল্লাহর সামনে বিনয়ী হয়ে, আল্লাহর আনুগত্য করার মাধ্যমে, আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে , একমাত্র আল্লাহকে অনুসরণ করে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে।

وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ (13:15

উপরোক্ত আয়াতের উর্দু ও ফার্সি অনুবাদে এবং কিছু ইংরেজি অনুবাদে বর্তমান ক্রিয়াপদ “يَسْجُدُ”-এর অর্থ করা হয়েছে “সিজদা”, অর্থাৎ এই শব্দটি অনুবাদ করা হয়নি এবং তারা আশা করেছেন যে পাঠকগন স্বয়ংক্রিয়ভাবে “সেজদা” কী তা বুঝতে পারবে। যাইহোক, ইংরেজিতে এই আয়াতটির অনুবাদ করা হয়েছে: Whatever is in the skies and the earth prostrate to Allah. যার অর্থ আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে, আল্লাহর কাছে সিজদা করে। মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝতে পারে যে “সেজদা” মানে মুখ নিচু করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কপাল দ্বারা মাটি স্পর্শ করা। কেউ বুঝেতে চায়না যে আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু কীভাবে মাটিতে পড়ে এবং তাদের কপাল দ্বারা মাটি স্পর্শ করে! অতএব এ আয়াতের মূল অর্থকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে পৌত্তলিকতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

যাইহোক, “وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْض” (১৩:১৫) নং আয়াতের প্রকৃত অনুবাদ নিম্নরূপ যা বেশ বোধগম্য:

And obey Allah /follow Allah/incline towards Allah whosever is in the skies and the earth.

আর আল্লাহর আনুগত্য করে/আল্লাহর অনুসরণ করে/আল্লাহর দিকে ঝুঁকে/আল্লাহর কাছে অবনত হয় যারা আকাশ এবং পৃথিবীতে আছে ।

Obeying is only for Allah from whoever is in the skies and in the earth.

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে তাদের আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর জন্য।

وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِن دَآبَّةٍ وَالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ (16:49

What is in the skies and what is in the earth from living things (animal/insect/organism) and His Properties obey Allah/follow Allah/turn towards Allah and they are not arrogant. (Correct Translation)

আকাশে এবং পৃথিবীতে জীবন্ত বস্তু (প্রাণী/পতঙ্গ/জীব) হতে যা কিছু আছে এবং তার মালিকানাধীন সবকিছু আল্লাহর আনুগত্য করে/আল্লাহর অনুসরণ করে/আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তারা অহংকার করে না। (সঠিক অনুবাদ)

তবে বিভ্রান্তিকর অনুবাদে আল্লাহর প্রকৃত বাণী ধ্বংস করে “সেজদা” শব্দ দ্বারা prostration (অধোমুখী হয়ে মাটিতে কপাল ঠেকানো) ব্যবহার করা হয়েছে। এখন বাকিটা পাঠকদের বোঝার জন্য ছেড়ে দিলাম যে, কোন মসজিদে পশুরা সেজদা করতে যায় এবং তারা কীভাবে এটি করে? কীভাবে এবং কোথায় ফেরেশতারা (আল্লাহর মালিকানাধীন সবকিছু) কপাল নীচু করে তাদের সেজদা আদায় করে এবং কীভাবে অন্যান্য জীবিত ও নির্জীব জিনিসগুলি সেজদা করার জন্য তাদের কপালকে নত করে মাটিতে ঘষে? প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের মাটির দেবতা ‘ধরিত্রী মা”-কে অভিবাদন ও প্রণাম করার জন্য সেজদার বিকৃত অর্থ করেছে।

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ (22:18

Haven’t you seen that Allah is obeyed by whoever is in the skies and whoever is in the earth and by the sun and by the moon and by the stars/planets and by the mountains and by the trees and by the living things/animals? (Correct Translation)

তোমরা কি দেখনি যে, যারা আকাশে আছে ও যারা পৃথিবীতে আছে, এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র/গ্রহ, পর্বত, গাছপালা এবং জীবজন্তু আল্লাহর আনুগত্য করে?

আমাদের আলেমদের দেওয়া “سجدہ”-এর সংজ্ঞা মানে হাঁটু গেড়ে বসে মাটিতে কপাল স্পর্শ করা যদি সঠিক হয় তাহলে আপনানি নিজেকেএকটি প্রশ্ন করুন যে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র বা গ্রহ, পাহাড়, গাছ এবং প্রাণীরা কীভাবে “سجدہ” (সেজদা) করে?

সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য নক্ষত্র/গ্রহরা নত হয়ে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে সিজদা “سجدہ” (সিজদা) করার ধারনা হল অজ্ঞ মোল্লাদের কল্পকাহিনী, যারা এমনকি জানে না যে সূর্য পৃথিবীর এক স্থান থেকে অস্ত গেলেও তা প্রকৃতপক্ষে একই পৃথিবীর অন্য জায়গায় তার উদয় হচ্ছে। চাঁদ এবং বাকি নক্ষত্র/গ্রহের অস্ত ও উদয়ের বেলায় একই কথা।

وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ (84:21

আমাদের আলেমরা এই আয়াতের একটি অনর্থক অনুবাদ করেছেন : যখন তাদের কাছে কুরআন পাঠ করা হয় তখন তারা সেজদা করে না???

কেউ এটা ভাবেনা যে ইসলামে ফিরে না এলে কেন তারা আল্লাহকে সেজদা করবে ? অথচ আল্লাহ এই আয়াতে বলছেন

“When the Quran is read on them they don’t accept it/they don’t obey it/ they don’t follow it and they don’t incline towards it”. (84:21)

যখন তাদের কাছে কুরআন পাঠ করা হয় তখন তারা তা গ্রহণ করে না/তারা তা মানে না/তারা তা অনুসরণ করে না কিংবা তারা এর দিকে ঝুঁকে পড়ে না। (৮৪:২১)

কুরআনের কত সুন্দর একটি শব্দগুচ্ছ “وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
(96:19 ” যার প্রকৃত অর্থকে কুরআনের অনুবাদে ধ্বংস করা হয়েছে: “তোমরা সিজদা করে (আল্লাহর) নৈকট্য লাভ কর” যাতে মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝতে পারে মাটিতে উপড় হয়ে পৌত্তলিক দেবতা ‘ধরিত্রীকে’ তাদের কপাল দ্বারা স্পর্শ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আসলে আল্লাহ এই কুরআনের বাণীতে বলেছেন

And obey and get close/ and become obedient and get nearer/ and follow and become near.(96:19)

আর আনুগত্য কর এবং নিকটবর্তী হও/ আর বাধ্যগত হও এবং কাছাকাছি আস/ আর অনুসরণ কর এবং নিকটবর্তী হও। (৯৬:১৯)

প্রকৃতপক্ষে এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের বুঝিয়েছেন যে তাঁর কাছে পৌঁছানোর উপায় হল তাঁর আনুগত্য। আল্লাহর “مقرب” (সবচেয়ে নিকটতম) হওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায়টি বলা হয়েছে وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ বাক্যে অর্থাৎ আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় তাঁর আনুগত্য করা বা তাঁকে অনুসরণ করা। কিন্তু আল্লাহর দুশমন, আল্লাহর নবীর (সাঃ) এর দুশমন এবং ইসলামের শত্রুরা আল্লাহর কথিত আনুগত্যকে শয়তানী সিজদায় রুপান্তরিত করেছে যা তারা তাদের “পৃথিবী দেবতার” জন্য কপালে ভর দিয়ে পালন করত, যা কুরআনের ৬:৯২ এবং ৪২:৭ নং আয়াত অনুযায়ী “أُمَّ الْقُرَى” নামেও পরিচিত। “أُمَّ الْقُرَى” এর প্রকৃত অর্থ হল “ধরিত্রী মা (the globe mother)”। أُمَّ ” মানে ‘মা’ এবং “الْقُرَى” অর্থ “পৃথিবী” বা ধরিত্রী।

পৃথিবীর ছোট এলাকাকে আরবি ভাষায় “قَرْيَةٍ” (ক্বারিয়াহ) বলা হয় যা কোরআনের বিভিন্ন আয়াত যেমন ২:৫৮, ২:২৫৯, ৪:৭৫, ৬:১২৩ ইত্যাদিতে শহর বা টাউন হিসেবে এসেছে। তাই সামগ্রিকভাবে সমগ্র পৃথিবীকে বলা হয় “قُرَى” যা কুরআনের অনেক আয়াতেও উল্লেখ আছে। নির্দিষ্ট আর্টিকেল “ال” (আল) এর উপস্থিতিতে “الْقُرَى” শব্দের শেষে “ى” অক্ষরটি উত্তম পুরুষের কর্মবাচক সর্বনামকে বোঝায় যার অর্থ “আমার”। অতএব, সামগ্রিকভাবে সম্মিলিত শব্দ “أُمَّ الْقُرَى” এর অর্থ হল “ আমার বিশ্ব মাতা (my globe mother)” বা “my earth mother”, যা আরব পৌত্তলিক সহ অন্যান্য অনেক মুশরিক ধর্ম, ও হিন্দু ধর্মে দেবতা “ধরিত্রী মা” নামে পরিচিত, এবং এই পৃথিবী নামক মাতৃ দেবতাকে সারা বিশ্বে মুশরিক পৌত্তলিকরা পূজা করে। এই পৃথিবী/ধরিত্রী দেবতা “أُمَّ الْقُرَى” আরবি সাহিত্যে “সমস্ত নিষ্পত্তির জননী (mother of all settlements)” নামেও পরিচিত।

কুরআনের ৬:৯২ এবং ৪২:৭ নং আয়াতে আল্লাহ “أُمَّ الْقُرَى” এর উপর সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন এবং সতর্কতা শব্দটি অনুবাদেও ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু এমনভাবে যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে কেন এই সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।

অতএব, যারা পৃথিবীতে “سجده” করে যেমনিভাবে আমরা নামাজে করে থাকি তারা আসলে মুশরিক পৌত্তলিকদের মাটির দেবতাকে সিজদা করার “শিরক” করছে।

যাইহোক, আল্লাহর জন্য “سجده” যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে তা কেবলমাত্র আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমেই করা হবে যেমন সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পাহাড়, গাছ, পশুপাখি এবং মহাবিশ্বের চারপাশের সবকিছু আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে “سجده” পালন করে আসছে ।

সুতরাং এই আয়াতগুলো “وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ” (55:6), وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ (13:15), ” وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْض” (13:15), “وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِن دَآبَّةٍ وَالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ” (16:49), “أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ ” (22:18), “وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ” (84:21), “وَادْخُلُواْ الْبَابَ سُجَّدًا” (7:16
, “وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ (96:19)”
এবং কুরআনের আরও অনেক আয়াতের আলোকে ও ধ্রুপদী আরবি সাহিত্য এবং প্রাচীন আরবি অভিধানের গবেষণার সাথে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে আরবি/কুরআনের শব্দ “سجد” এবং এর ডেরিভেটিভ যেমন “سجدہ” দ্বারা হাঁটু গেড়ে কপালে মাটিতে ঠেকিয়ে প্রচলিত প্রণামকে বুঝায় না বরং প্রকৃতপক্ষে আরবি/কুরআনিক শব্দ “سجدہ” এর সঠিক অর্থ হল “আনুগত্য করা, অনুসরণ করা, এবং ঝুঁকে পড়া”।
এই প্রবণতা এবং আনুগত্য যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নির্দেশে বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো প্রতি যায় তবে তা “سجد الحرام” নামে পরিচিত, যা “المسجد الحرام”-এ উল্কাপিন্ডের কালো পাথরের দিকে মুখ করে, পায়ের ছাপের মূর্তি এবং মূর্তির গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত ঘরের পাথরের দেয়ালের দিকে, অথবা পৌত্তলিক উপাসনালয় কাবার দিকে মুখ করে বিভিন্ন মসজিদে এবং অন্যান্য ধর্মের মন্দিরে, এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সম্পাদিত হয়। একটি মজার বিষয় যে অনেক হিন্দু মন্দিরও আমাদের মসজিদের মতো পৌত্তলিক উপাসনালয় কাবার দিকে মুখ করে দেখা যায়। মুশরিকদের “চন্দ্র দেবতার” প্রতীক হিসেবে চাঁদের চিহ্ন মিনারের চূড়ায় এবং আমাদের মসজিদের গম্বুজের শীর্ষে দেখা যায় এবং সমস্ত হিন্দু মন্দিরে চন্দ্র দেবতার একই চিহ্ন পাওয়া যায়।

আরবি ব্যাকরণ অনুসারে “مسجد” (মসজিদ) শব্দটি “سَجَدَ” (সা’জাদা) ক্রিয়া হতে একটি ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য (مصدر) যা একই মূল শব্দ “سجد” (সিন জিম দাল) থেকে উদ্ভূত । মসজিদ (“مسجد”) আসলে আরবি শব্দ “منصب” (মানসাব) এর প্রতিশব্দ যেমন উর্দুতে “گدّی” (আসন, পদ বা অবস্থান)। আপনি হয়তো শুনেছেন “گدی نشین” (গদ্দি নশীন), অর্থাৎ যিনি কোনো অংশীদারিত্ব ছাড়াই স্বাধীনভাবে একটি নির্দিষ্ট পদ, আসন বা পদে অধিষ্ঠিত। আরবিতে একে বলা হয় “سجادہ” (সাজাদা), যা বসার জন্য পাটি, কার্পেট বা প্যাড নামেও পরিচিত। অতএব, কোরানিক শব্দ “مسجد” (মসজিদ) এর প্রকৃত অর্থ হল “منصب” (মানসাব), “مسند” (মসনাদ), পদ, অবস্থান এবং কারো স্থান। এটি একটি বিল্ডিং বা জমির মতো জায়গা নয়, এটি কাউকে মনোনীত একটি অবস্থান, যেমন একজন শিক্ষক বা পিতামাতার স্থান যা একই হতে পারে না কিন্তু তাদের নিজস্ব জায়গা ধরে রাখতে পারে, যা একটি “মান্যতার ক্ষেত্র”। নির্দিষ্ট আর্টিকেল “ال” (আল) “المسجد” কে সুনির্দিষ্ট মান্যতার ক্ষেত্রে পরিনত করেছে। এবং “المساجد” হল মসজিদের বহুবচন। যদি আল্লাহর নামের সাথে “المساجد” ব্যবহার করা হয় তবে তাঁর বিস্তৃত দায়িত্ব বা মান্যতার ক্ষেত্রকে কোন ভবনে বন্দী করা যাবে না, বরং সমগ্র বিশ্ব, সমগ্র মহাবিশ্ব এবং প্রকৃতপক্ষে অগণিত মহাবিশ্ব সবই একত্রে আল্লাহর দায়িত্বের ও মান্যতার ক্ষেত্র, যিনি মহাবিশ্বের পালনকর্তা (رب العالمین)।

মসজিদ (مسجد) হল “سجد” বা “سجده” এর একটি মান্যতার ক্ষেত্র, যা আসলে একটি প্রান্তিক অবস্থান বা পদ অথবা এমন একজনের পদ যিনি অধিষ্ঠিত, মালিক বা “سجدہ” পাওয়ার যোগ্য। যদি দায়িত্ব বা মান্যতার এই ক্ষেত্রটি একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত হয়, তা আল্লাহর মসজিদ যা অদৃশ্য কারণ আল্লাহ অদৃশ্য। অন্যদিকে যদি মান্যতার ক্ষেত্রটির, অধিকার বা পদ বা “سجدہ” গ্রহনের ক্ষেত্রটি মূর্তির জন্য মনোনীত করা হয় কুরআনে তাকেও “مسجد” (মসজিদ) বলা হয়েছে, এবং তাদের এই মসজিদকে হারম বা অবৈধ বলা হয়েছে। মসজিদ আসলে একটি “منصب” অবস্থান, “مسند” পদ বা মান্যতার ক্ষেত্রের অধিকার ধারণকারী ব্যক্তির আসন। যারা মনে করে যে মূর্তি, পাথর এবং দেখা বা অদেখা মূর্তি তাদের “শাফায়াত” বা পরিত্রাণের জন্য দায়ী এবং তাদের জীবন বিধান প্রদান করে তারা তাদের জন্য “سجده” পালন করে যা তাদের “مسجد”। যারা স্বীকার করে সবকিছুর ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহই দ্বায়িত্বশীল তারা এই “منصب” বা “مسند” এর উপর আল্লাহকে নিযুক্ত করে, অর্থাৎ যে অবস্থান, পদ বা আসনকে বলা হয় আল্লাহর মসজিদ, যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অধিকার, আল্লাহর অবস্থান, আল্লাহর পদ এবং আল্লাহর আসন। “مسجد” হল আল্লাহর কল্পিত পদবী যার অর্থ আল্লাহর পদ (منصب/مسند)।

৭২:১৮ নং আয়াতের সঠিক উপলব্ধি নিম্নরূপ যেটিতে “الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ” বাক্যাংশটি আনুগত্য, সুপারিশ এবং আরাধনার জন্য আল্লাহর আসন, অবস্থান (منصب) বা পদকে নির্দেশ করে।

وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا (72:18)

And that the positions (“منصب”mansab/”مسند” masnad), seats/posts are designated for Allah alone for submission, so do not render/requisite/call anyone along with Allah. (72:18)

এবং সেই আনুগত্যের পদ (“منصب”মানসাব/”مسند” মসনদ), আসন/ অবস্থানসমুহ একমাত্র আল্লাহর জন্য মনোনীত, তাই আল্লাহর সাথে কাউকে প্রত্যর্পণ / অপরিহার্য করো না/ডেকো না। (৭২:১৮)

সুতরাং সিজদা মানে হাটু গেড়ে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করা নয়, বরং সিজদা মানে “আনুগত্য করা, বা অনুসরণ করা। আর মসজিদ শব্দটির অর্থ সিজদার স্থান, যেখানে সিজদা করা হয়। সিজদা অর্থ মান্য করা বা অনুগত হওয়া। এই অনুগত বা মান্য করা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হয় তাকে বলা হয় নিষিদ্ধ/ অবৈধ সিজদা। যেখানে এই সিজদার আয়োজন করা হয় তাকে বলা হয় মসজিদুল হারাম বা নিষিদ্ধ/অবৈধ মসজিদ। আর সিজদা অর্থাৎ মান্য করা বা অনুগত হওয়া যদি একমাত্র আল্লাহর জন্য হয় তাহলে এই মসজিদ তথা অনুগত হওয়ার স্থল হবে কাল্পনিক (virtual), এবং অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত যা চার দেয়ালে বন্দী কোন ঘর নয়, কারন আল্লাহকে দেখা যায় না এবং তার সাম্রাজ্য অসীম।

সতর্কীকরণ ঃ এই পেইজটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা তাদের প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীত হলেও, আল কুরানে বর্নিত আল্লাহর প্রকৃত বিধানের আনুসরন করতে চায়।এবং তাদের অর্জিত বিশ্বাসকে সত্যের মানদণ্ডে যাচাই করার সাহস রাখে। আর যারা নিজেদের পুরনো বিশ্বাসে বা বাপ দাদার বিশ্বাসে থাকতে চায় তাদের জন্য এই পেইজ উপযুক্ত নয়।
শুভেচ্ছান্তে
আবদুল্লাহিল কাউছার

Source: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid0mWJdTJFp2AmrX85upUuz5WNRcTpppnEsco4meN5teJYF4iBhQoee39WALZyZXvRrl&id=100076490634616

কথিত তাশাহুদ।

♦তাশাহুদের বৈঠকে আমরা কি পাঠ করছি আবেগ নয় আল্লাহর দেয়া বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করার অনুরোধ রইলো।

★ কথিত তাশাহুদ।

اَلتَّحِيَّاتُ للهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ।

উচ্চারণ:- আত-তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি অস্বস্বালা-ওয়া-তু অত্বত্বাইয়্যিবা-তু, আসসালা-মু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু অরাহ্‌মাতুল্লা-হি অবারাকা-তুহ্‌, আসসালা-মু আলাইনা অ আলা ইবা-দিল্লা-হিস্ব স্বা-লিহীন, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ্‌।

অর্থ: “আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত (দোয়া ও অভিবাদন), সালাওয়াত (সালাতসমূহ/অনুগ্রহ প্রার্থনা), তাইয়িবাত (পবিত্রতা)। হে নবী, আপনার উপর সালাম (শান্তি) এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত (দয়া) ও বরকত (সমৃদ্ধি) হোক। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর সালাম (শান্তি) হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রসূল”।

★তাহিয়্যাত শব্দের মূল শব্দ হচ্ছে حي যার অর্থ জীবিত। অর্থাৎ জীবিত মানুষের জন্য দোয়া ও অভিবাদন কে তাহিয়্যাত বলে । আমরা যে জীবিত মানুষকে সালাম জানাই তা মূলত সালামের মাধ্যমে একে অপরকে অভিবাদন জানাই দোয়া হিসাবে। পবিত্র কুরআনে তাহিয়্যাত শব্দটি মোট ছয়টি আয়াতে এসেছে এবং এই ছয়টি আয়াতেই জীবিত মানুষকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে আল্লাহ্ কে নয়। দেখুন নিচের আয়াত গুলিতে কি বলা হয়েছে —

وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
আর যখন তোমাদেরকে কোন অভিবাদন জানানো হয় তখন (তার জবাবে) তোমরা তার চেয়ে আরো ভাল অভিবাদন জানাবে কিংবা (অন্ততপক্ষে) একই অভিবাদন ফিরিয়ে দেবে। আল্লাহ তো সবকিছুরই হিসাব গ্রহণকারী। (আন নিসা ৪:৮৬)
فَاِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ مُبٰرَكَةً طَيِّبَةً ؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللّٰهُ لَكُمُ الْاٰيٰتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
তবে যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন (ঘরে অবস্থানকারী) তোমাদের লোকদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ সালাম দেবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর বিধানসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (আন-নূর ২৪:৬১)
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلٰمًا ۙ
এমন লোকদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদানে (জান্নাতে) কক্ষ দেওয়া হবে এবং সেখানে তাদেরকে অভিবাদন ও সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। (আল-ফুরকান ২৫:৭৫)
دَعْوٰىهُمْ فِيْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلٰمٌ ۚ وَاٰخِرُ دَعْوٰىهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ
সেখানে তাদের দোয়া হবে, “হে আল্লাহ! তুমি মহিয়ান”; সেখানে তাদের (পারস্পরিক) অভিবাদন হবে, “সালাম (শান্তি)” এবং তাদের দোয়া শেষ হবে এই বলে যে, সকল প্রশংসা আল্লার, যিনি নিখিল জগতের প্রভু।(ইউনুস ১০:১০)
وَاُدْخِلَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ ؕ تَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلٰمٌ
আর যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।(ইবরাহীম ১৪:২৩)
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهٗ سَلٰمٌ ۖۚ وَاَعَدَّ لَهُمْ اَجْرًا كَرِيْمًا
যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে: ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান।(আল-আহযাব ৩৩:৪৪)

♦ উপরের আয়াত গুলির আলোকে এটা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট যে তাহিয়্যাত (৪:৮৬) বলতে আল্লাহ্ জীবিত মানুষকে সালাম জানানোকে বুঝিয়েছেন অর্থাৎ পরস্পরকে দোয়ার মাধ্যমে অভিবাদন জানানো কে বুঝিয়েছেন। تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَٰمٌۚ “তাহিয়্যাতুহুম ফীহা ছালামুন” (১০:১০, ১৪:২৩)। মানুষের জন্যই তাহিয়্যাত,আল্লাহর জন্য হামদ। تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাহিয়্যাত (সালাম ও অভিবাদন) (২৪:৬১), কিন্তু আল্লাহকে তাহিয়্যাত নয়। লক্ষ্য করুন সূরা আস- সাফফাতের ১৮১ নাম্বার আয়াতে রাসূলদের ক্ষেত্রে অর্থাৎ মানুষের ক্ষেত্রে সালাম শব্দ ব্যহার করা হয়েছে। এর পরের আয়াতে আল্লাহ্ জন্য হামদ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
وَسَلَٰمٌ عَلَى ٱلْمُرْسَلِينَ
আর রাসূলদের প্রতি সালাম।
وَٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
আর সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য।(আস- সাফফাত ৩৭:১৮১-৮২)

★ কেউ কেউ আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত বলার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে গিয়ে বলেন যে, আল কুরআনে আল্লাহকে কর্জে হাসানাহ বা উত্তম ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ আল্লাহকে ঋণ দেয়া যায় না। তেমনি আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত বলতে দোষ কোথায়? কুরআনের আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, কর্জে হাসানাহর ক্ষেত্রে আসলে আল্লাহ ঋণ গ্রহণ করেন একটি রূপক অর্থে এবং তা হলো রসূলের মাধ্যমেই তা সংগৃহীত ও বণ্টিত হয়, মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত অর্থনৈতিক বণ্টন ব্যবস্থার বাস্তবায়নের জন্য। কুরআনের কোথাও রূপক অর্থেও আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত শব্দটি ব্যবহার হয়নি। সুতরাং তাহিয়্যাতের প্রসঙ্গে কুরআন থেকে যে সূত্র পাওয়া যায় সেটাই এক্ষেত্রে চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হবে, আর তা হলো তাহিয়্যাত হচ্ছে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন, যা মানুষের জন্য প্রযোজ্য আল্লাহর জন্য নয়, আল্লাহর জন্য হচ্ছে হামদ যা আল্লাহ্ কুরআনের শুরুতেই বলে দিয়েছেন।
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ
‘আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।(হামদ ১:২)

♦ এবার আসুন প্রচলিত হাদিসের মাধ্যমে আমরা তাশাহুদ নামে কি পাঠ করছি সেটা দেখি।
اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ

আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি

অর্থ: আল্লাহর জন্য তাহিয়্যাত (অর্থাৎ আল্লাহর জন্য সালাম (দোয়া) ও অভিবাদন)

♦ চিন্তা করুন যে আল্লাহ্ তাহিয়্যাত শব্দ দিয়ে মানুষের জন্য দোয়া ও অভিবাদন নির্ধারন করেছেন (৪:৮৬) সেই তাহিয়্যাত কি আল্লাহ্ তাঁর জন্য নির্ধারন করতে পারেন? আল্লাহ্ কি মানুষের দোয়ার মুখাপেক্ষী? মা’আ-যাল্লাহ্। এর মাধ্যমে মানুষের জন্য তাহিয়্যাতে আল্লাহ্কে শরিক করা হয়েছে যা সুস্পষ্ট শিরক।

♦ প্রচলিত এই তাশাহুদের আরেকটি আপত্তির দিক হলো, এতে রসূলকে সম্বোধন করে বলা হয়, “ইয়া আইয়ুহান্নাবিয়্যু” (হে নবী)। অথচ আমরা এখন তা বলতে পারি না, কারণ রসূল আমাদের মধ্যে উপস্থিত নেই, জীবিত নেই। মৃত ব্যক্তিকে সম্বোধন করে কোনো কথা বলা যেতে পারে না।আল্লাহর রাসূল কি এমন তাশাহুদ শিক্ষা দিতে পারে যে তাশাহুদের শব্দ সাহাবিরা নিজেই পরিবর্তন করতে পারে? অথবা জীবিত থাকা অবস্হায় পড়লে শুদ্ধ হবে আর মৃত অবস্হায় পড়লে অসুদ্ধ হবে? এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য রাসূল কেন বলে গেলেন না যে আমি জীবিত অবস্হায় তোমরা এই শব্দ এই ভাবে পড়বে আর আমার মৃত্যুর পর এই শব্দ এই ভাবে পড়বে অথবা মৃত্যুর পরও এই ভাবে পড়লে সমস্যা নাই ? এই না বলে যাওয়াটা কি ত্রুটি নয়? এই না বলে যাওয়ার করনেইতো রাসূলের মৃত্যুর পর তাশাহুদ নিয়ে সাহাবীদের মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে, তা নয় কি? আল্লাহ্ কি রাসূলের কথিত হাদিসের মাধ্যমে এমন বিধান দিতে পারে, পরে রাসূলের মৃত্যুর পর সাহাবীরা দুই দলে বিভক্ত হবে? একদল শব্দ পরিবর্তন করে পড়বে এটা কি বিশ্বাস যোগ্য? দেখুন তথাকথিত মুহাদ্দিসরা তাদের বইতে কি লিখে রেখেছেন?

তাশাহহুদ সম্পর্কিত সকল ছহীহ মরফূ হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-কে সম্বোধন সূচক ‘আইয়ুহান্নাবী’ শব্দ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ কতিপয় ছাহাবী ‘আইয়ুহান্নাবী’-এর পরিবর্তে ‘আলান্নাবী’ বলতে থাকেন। ইবনু মাসউদ বলেনঃ আমরা উক্ত শব্দে অর্থাৎ أَيُّهَا النَّبِيُّ হে নাবী! সম্বোধন সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তাশাহহুদ পাঠ করতাম যখন তিনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলেন, কিন্তু যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমরা أَيُّهَا النَّبِيُّ এর পরিবর্তে على النبى এর অর্থাৎ নাবীর উপর বলতাম। অথচ সকল ছাহাবী, তাবেঈন, মুহাদ্দেছীন, ফুক্বাহা পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ পড়েছেন। এই মতভেদের কারণ হ’ল এই যে, রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলা গেলেও তাঁর মৃত্যুর পরে তো আর তাঁকে ঐভাবে সম্বোধন করা যায় না। কেননা সরাসরি এরূপ গায়েবী সম্বোধন কেবল আল্লাহকেই করা যায়। মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এভাবে সম্বোধন করলে তাঁকে আল্লাহ সাব্যস্ত করা হয়ে যায়। সেকারণ কিছু সংখ্যক ছাহাবী ‘আলান্নাবী’ অর্থাৎ ‘নবীর উপরে’ বলতে থাকেন।

পক্ষান্তরে অন্য সকল ছাহাবী পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতে থাকেন। ত্বীবী (মৃ: ৭৪৩ হিঃ) বলেন, এটা এজন্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁদেরকে উক্ত শব্দেই ‘তাশাহহুদ’ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তার কোন অংশ তাঁর মৃত্যুর পরে পরিবর্তন করতে বলে যাননি। অতএব ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত শব্দ পরিবর্তনে রাজী হননি। ছাহেবে মির‘আত বলেন, জীবিত-মৃত কিংবা উপস্থিতি-অনুপস্থিতির বিষয়টি ধর্তব্য নয়। কেননা স্বীয় জীবদ্দশায়ও তিনি বহু সময় ছাহাবীদের থেকে দূরে সফরে বা জিহাদের ময়দানে থাকতেন। তবুও তারা তাশাহহুদে নবীকে উক্ত সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতেন। তারা তাঁর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে উক্ত সম্বোধনে কোন হেরফের করতেন না। তাছাড়া বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ বিষয়াবলীর (من خصائصه) অন্তর্ভুক্ত। এটা স্রেফ তাশাহহুদের মধ্যেই পড়া যাবে, অন্য সময় নয়।

উল্লেখ্য যে, এই সম্বোধনের মধ্যে কবর পূজারীদের জন্য কোন সুযোগ নেই। তারা এই হাদীছের দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বত্র হাযির-নাযির প্রমাণ করতে চায় ও মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য তাঁকে ‘অসীলা’ হিসাবে গ্রহণ করতে চায়। এটা পরিষ্কারভাবে ‘শিরকে আকবর’ বা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (তথ্য সূত্র ছালাতুর রাসূল সাঃ, আসাদুল্লাহ্ গালিব, রাসূল সাঃ এর সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি, নাছির উদ্দিন আলবানী)

♦কথিত দুরূদে ইবরাহীম।

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ:- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্‌মত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্‌মত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।

♦ প্রথম কথা হচ্ছে কথিত তাশাহুদ ও দুরূদ কুরআনে নেই আছে হাদিসে। প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ কুরআন পাঠ করে সালাত আদায় করতে বলেছেন ফলে রাসূল কি করে কুরআনের বিরুদ্ধে গিয়ে সালাতে এই তাশাহুদ ও দুরূদ পড়তে বলবে? দেখুন নিচের আয়াত গুলিতে কি বলা হচ্ছে —-

إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتْ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ كِتَٰبًا مَّوْقُوتًا
নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে কিতাব (পাঠ)*।(আন-নিসা ৪:১০৩)

  • রাসূলের সময় কুরআন ছাড়া আর কোন বই ছিলনা। ফলে এই আয়াত প্রমান করে যে রাসূল সালাতে সব কিছু কুরআন থেকে পাঠ করতেন।

أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيْلِ وَقُرْءَانَ ٱلْفَجْرِۖ إِنَّ قُرْءَانَ ٱلْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং ফজরে (অধিক) কুরআন পাঠ করবে। ফজরের কুরআন পাঠ অনুধাবনে সহায়ক।
وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِۦ
আর রাত্রির কিছু অংশে তা (কুরআন) দিয়ে তাহাজ্জুদ (সালাত) পড়।(ইসরা ১৭:৭৮-৭৯)

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡكَ مِنَ الۡكِتٰبِ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡكَرِ ؕ وَلَذِكۡرُ اللّٰهِ اَكۡبَرُ ؕ وَاللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
তোমার কাছে যে কিতাব (কোরআন) নাযিল করা হয়েছে তা থেকে পাঠ করে সালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই নামায অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণই সবচেয়ে বড়। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা জানেন।(আল-আনকাবূত ২৯:৪৫)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللّٰهِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ ۙ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।(ফাতির ৩৫:২৯)

★ সালাতে কথিত দুরূদে ইবরাহীমে নবী নাকি এই ভাবে দোয়া করতেন “হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্‌মত বর্ষণ কর” এই ভাবে নিজের নাম নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা কি বিনয়ের মধ্যে পরে? অথচ আল্লাহ্ বিনয়ের সাথে সালাতে দাঁড়াতে বলেছেন (২:২৩৮) ফলে আল্লাহ্ কি বিনয় বহির্ভূত এই ভাবে নবীকে নিজের নাম নিয়ে দোয়ার নির্দেশ দিতে পারে? কুরআনে কি এর কোন দৃষ্টান্ত আছে? নবী বাদ দিন কোন সাধারন মানুষ কি নিজের নাম নিয়ে আল্লাহর কাছে এই ভাবে দোয়া করে? কুরআনের অসংখ্য আয়াতে নবীরা নিজের জন্য দোয়া করতেন ‘আমাকে’ শব্দ দিয়ে যা আকুতি ও বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এমন কি স্বয়ং আল্লাহ্ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সালামুন আলাল মুরছালিন) কে এই ভাবে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।

وَقُل رَّبِّ أَدْخِلْنِى مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِى مُخْرَجَ صِدْقٍ وَٱجْعَل لِّى مِن لَّدُنكَ سُلْطَٰنًا نَّصِيرًا
বল(মুহাম্মদ), হে আমার রব! আমাকে দাখিল কর সত্যরূপে এবং আমাকে বের কর সত্যরূপে এবং দান কর আমাকে নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য।(আল-ইসরা ১৭:৮০)
فَتَقَبَّلَہَا رَبُّہَا بِقَبُوۡلٍ حَسَنٍ وَّ اَنۡۢبَتَہَا نَبَاتًا حَسَنًا ۙ وَّ کَفَّلَہَا زَکَرِیَّا ۚؕ کُلَّمَا دَخَلَ عَلَیۡہَا زَکَرِیَّا الۡمِحۡرَابَ ۙ وَجَدَ عِنۡدَہَا رِزۡقًا ۚ قَالَ یٰمَرۡیَمُ اَنّٰی لَکِ ہٰذَا ؕ قَالَتۡ ہُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَرۡزُقُ مَنۡ یَّشَآءُ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ﴿۳۷﴾
অতঃপর তার রব তাকে(মারিয়াম কে) উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়্যার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়্যা তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, ‘হে মারইয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি’? সে বলত, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন’।
ہُنَالِکَ دَعَا زَکَرِیَّا رَبَّہٗ ۚ قَالَ رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ ﴿۳۸﴾
সেখানে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।(আলে-ইমরান ৩:৩৭-৩৮)
وَزَكَرِيَّآ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُۥ رَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ
আর স্মরণ কর যাকারিয়্যার কথা, যখন সে তার রবকে আহবান করে বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী’।
فَٱسْتَجَبْنَا لَهُۥ وَوَهَبْنَا لَهُۥ يَحْيَىٰ وَأَصْلَحْنَا لَهُۥ زَوْجَهُۥٓۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًاۖ وَكَانُوا۟ لَنَا خَٰشِعِينَ
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী।(আল-আম্বিয়া ২১:৮৯-৯০)

***আল্লাহ্ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সালামুন আলাল মুরছালিন) কে সালামুন আলা ইবরাহীমের আদর্শ অনুসরণ করতে বলেছেন। দেখুন সালামুন আলা ইবরাহীম কি ভাবে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন —

رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।(আল-বাকারাহ ২:১২৮)

★ এবার দেখুন কথিত মানব রচিত হাদিসে কি বলা হচ্ছে? এই দুরূদ যে মানুষের তৈরি রাসূলের নয় তা সুস্পষ্ট।

তাশাহহুদের পর নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) নিজের উপর দরুদ পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ৫/৩৭৪, হাকেম, মুস্তাদরাক)(তথ্য সূত্র স্বলাতে মুবাশশির, আব্দুল হামিদ ফাইযী)

★ এরপর কথিত দুরূদে বলা হচ্ছে “তুমি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ”। সালামুন আলা ইবরাহীম এর পিতা ছিল মুশরিক। প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ কি তার উপরও বরকত নাজিল করেছিলেন? আবার বলা হচ্ছে “হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর”। ইতিহাস বলে আবু লাহাব ও আবু তালিব ছিল রাসূলের আপন চাচা এবং তারা উভয় মুশরিক অবস্থায় মারা যায়। তার মানে তথিত দুরূদের মাধ্যমে আমরা আবু লাহাব ও আবু তালিব উভয় এর উপরও আল্লাহর বরকত বর্ষণের দোয়া করছি, তা নয়কি? অথচ কুরআনের ১১১ নাম্বার সূরার নাম করনই করা হয়েছে ‘লাহাব’। এই সূরা একনম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, تَبَّتْ يَدَآ أَبِى لَهَبٍ وَتَبَّ( আবূ লাহাবের হাত দু‘টো ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক সে নিজে)। ফলে এটি যে সুস্পষ্ট কুরআন বিরোধী কুফরী দুরূদ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

★ সালামুন আলা ইবরাহীম তাঁর বংশধরের মধ্য থেকে মক্কাতে একজন রাসূল পাঠানোর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিল।আল্লাহ্ তার প্রার্থনা কবুল করেছিল। ফলে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সালামুন আলাল মুরছালিন) ছিল সালামুন আলা ইবরাহীম এর বংশধর। ফলে আল্লাহর পক্ষে কথিত দুরূদের মাধ্যমে কি ভাবে বলা সম্ভব যে মুহাম্মদের বংশের উপর বরকত বর্ষনের দোয়া কর? অথচ তিনি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সালামুন আলাল মুরছালিন) কে পাঠিয়েছেন সালামুন আলা ইবরাহীম এর বংশধরের মধ্য থেকে। ফলে রাসূলের বংশধরের প্রসঙ্গ আসা কি অবান্তর নয়?এটা কি কুরআন বিরোধী নয়? সুতরাং এই দুরূদ যে অবান্তর লাহওয়াল হাদিস দিয়ে বানানো হয়েছে তা দিবালোকের মতো পরিস্কার।

وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَٰهِۦمُ ٱلْقَوَاعِدَ مِنَ ٱلْبَيْتِ وَإِسْمَٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিত্গুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’।
رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
رَبَّنَا وَٱبْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ
‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।
كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا۟ تَعْلَمُونَ
যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।(আল-বাকারাহ ২:১২৭-১২৯,১৫১)

★ ইবাদত অর্থাৎ আদেশ নিষেধ পালন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর। সালাত হচ্ছে একটি ইবাদত যা আল্লাহ্ শুধু তাঁর স্মরণার্থে কায়েম করতে বলেছেন। ফলে কুরআন বহির্ভুত কোন নির্দেশের আলোকে সালাতে কোন মানুষের নাম নিয়ে তাকে স্মরন করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করার পাশাপাশি ঐ মানুষকে স্মরন করা যা সুস্পষ্ট শিরক। অপর দিকে কথিত দুরূদে আল্লাহ্ কি তথাকথিত হাদিসের মাধ্যমে শুধুমাত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সালামুন আলাল মুরছালিন) এর জন্য মুমিনদের প্রতি দোয়ার নির্দেশ দিতে পারে? এতে কি রাসূলদের মধ্যে প্রার্থক্য সূচিত হয় না? অথচ আল্লাহ্ মুমিনদেরকে রাসূলদের মধ্যে প্রার্থক্য করতে নিষেধ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে যে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে মুমিনদেরকে রাসূলদের মধ্যে প্রার্থক্য সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন, সে আল্লাহ্ কি শুধু মাত্র একজন রাসূলের জন্য মুমিনদেরকে প্রার্থক্য সৃষ্টিকারী দোয়ার নির্দেশ দিতে পারে? তথাকথিত মুহাদ্দিস সাহেবরা প্রচলিত হাদিসকে বলছেন ওহী, প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ কি পরস্পর বিরোধী ওহী নাযিল করতে পারেন (৪:৮২)?

مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنۡ یُّؤۡتِیَهُ اللّٰهُ الۡكِتٰبَ وَالۡحُكۡمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ یَقُوۡلَ لِلنَّاسِ كُوۡنُوۡا عِبَادًا لِّیۡ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلٰكِنۡ كُوۡنُوۡا رَبّٰنِیّٖنَ بِمَا كُنۡتُمۡ تُعَلِّمُوۡنَ الۡكِتٰبَ وَبِمَا كُنۡتُمۡ تَدۡرُسُوۡنَ ۙ
কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার উপাসক হয়ে যাও’। বরং সে বলবে, ‘তোমরা রববানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’।(আলি ‘ইমরান ৩:৭৯)*

*যদি তাই হয় তবে কিতাব বহির্ভুত নির্দেশ হিসাবে নবী কি করে বলতে পারে যে সালাতে আমার জন্য দুরূদ পাঠ করো? এটা কি নবীর নির্দেশ নয়? এই নির্দেশতো নবীর নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রয়োজনের তাগিতে সাময়িক কোন নির্দেশ নয়, এই নির্দেশতো মুসলিমরা ইবাদত হিসাবে স্হায়ী নির্দেশ হিসাবে পালন করে। ইবাদত হিসাবে স্হায়ী ভাবে কোন মানুষের নির্দেশ পালন করাকি তার ইবাদত করা নয়? অথচ আল্লাহ্ বলেছেন ‘তোমরা রববানী হও’ অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী হও। কারন নির্দেশ দাতা একমাত্র আল্লাহ্ (১২:৪০) আল্লাহর বিধিবদ্ধ নির্দেশ (৪২:১৩) আছে কুরআনে আর কোথাও নেই। ফলে কুরআন বহির্ভুত এই সমস্ত বিধান কে বিধিবদ্ধ বিধান হিসাবে পালন করা সম্পূর্ণ কুফরী।কারন বিধিবদ্ধ কিতাব হচ্ছে কুরআন। এর সাথে অন্য কিতাবের বিধানকে বিধিবদ্ধ কিতাবের বিধান হিসাবে মানার অর্থ হচ্ছে কুরআনের সাথে শরিক করা।

إذا صلى أحدكم فليبدأ بتحميد ربه جل وعز والثناء عليه ثم يصلي وفي رواية: ليصل) على النبي صلى الله عليه وسلم ثم يدعو بما شاء
তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করলে প্ৰথমে যেন আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ছালাত পাঠ করে। অতঃপর যা ইচ্ছা দু’আ করবে।(আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ। তথ্য সূত্র ‘সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি’ নাছির উদ্দিন আলবানী)

اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكۡرِیۡ
আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।(ত্ব-হা ২০:১৪)
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَنُسُكِیۡ وَمَحۡیَایَ وَمَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ
বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’।(আল-আন‘আম ৬:১৬২)

***আল্লাহ্ রাসূলগণের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ্ মানুষকে নবীনদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন,যার কারনে মুমিনরা নবীনদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতোনা।

تِلْكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ ٱللَّهُۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَٰتٍۚ وَءَاتَيْنَا عِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ٱلْبَيِّنَٰتِ وَأَيَّدْنَٰهُ بِرُوحِ ٱلْقُدُسِۗ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقْتَتَلَ ٱلَّذِينَ مِنۢ بَعْدِهِم مِّنۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ ٱلْبَيِّنَٰتُ وَلَٰكِنِ ٱخْتَلَفُوا۟ فَمِنْهُم مَّنْ ءَامَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَۚ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقْتَتَلُوا۟ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারো কারো মর্যাদা উঁচু করেছেন। আর আমি ঈসা ইবনে মারয়ামকে দিয়েছি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এবং আমি তাকে শক্তিশালী করেছি রূহুল কুদুস এর মাধ্যমে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের পরবর্তীরা লড়াই করত না, তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পর। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে, আর তাদের কেউ কুফরী করেছে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তারা লড়াই করত না। কিন্তু আল্লাহ যা চান, তা করেন।(আল-বাকারাহ ২:২৫৩)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَرُسُلِهٖ وَلَمْ يُفَرِّقُوْا بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ اُولٰٓئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيْهِمْ اُجُوْرَهُمْ ؕ وَكَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করেনি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আন নিসা ৪:১৫২)
قُلْ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤي اِبْرٰهِيْمَ وَاِسْمٰعِيْلَ وَاِسْحٰقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰي وَعِيْسٰي وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ ۪ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ ۫ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ

বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর, আর যা নাযিল হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর। আর যা দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী’। (আলে-ইমরান ৩:৮৪)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَرُسُلِهٖ وَيُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّفَرِّقُوْا بَيْنَ اللّٰهِ وَرُسُلِهٖ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّنَكْفُرُ بِبَعْضٍ ۙ وَّيُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَّخِذُوْا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا ۙ
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায় ।
اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكٰفِرُوْنَ حَقًّا ۚ وَاَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব।(আন নিসা ৪:১৫০-১৫১)

♦ আল্লাহর পক্ষে পরস্পর বিরোধী ওহী নাযিল করা সম্ভব নয়, তার প্রমান নিচের আয়াতটি। কারন কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন ওহী নেই। ফলে আল্লাহর পক্ষে কুরআন বিরোধী ওহী হাদিসের মাধ্যমে নাযিল করার প্রশ্নই আসেনা। ফলে কথিত দুরূদে ইবরাহীম যে মানব সৃষ্ট তা সুস্পষ্ট।

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلْقُرْءَانَۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُوا۟ فِيهِ ٱخْتِلَٰفًا كَثِيرًا
তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।(আন-নিসা ৪:৮২)

Source fb: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid02wTFMix55pNu3E1wz9NY4jgB33v7UrNwzZAauJBr7b1a8XX6hUfWuadirjaSDXAnvl&id=100003737428249