নবী (সঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষণ সম্পর্কে কুরআন মাফিক ফয়সালাঃ
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অনেকেই বলে, নবী (সঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে রসূলের সুন্নাহে ( বিধান ১৭ঃ৭৭) তথা হাদীসকে দ্বীনের দলিল হিসাবে রেখে গেছেন। তাদের এই কথা ঠিক নহে। কারণ নবী (সঃ) দ্বীনের ক্ষেত্রে একটি কথাও নিজের তরফ থেকে বা মনগড়াভাবে বলেন নাই ৫৩ঃ৩। তাঁর প্রতি যা ওহী নাযিল হত দ্বীনের ক্ষেত্রে তিনি শুধু তাই ব্যক্ত করেন ৫৩ঃ৪। তিনি কোন কিছু আল্লাহর নামে বানিয়ে বলেন নাই ৬৯ঃ৪৪। যদি আল্লাহর নামে কোন কিছু বানিয়ে বলতেন তাহলে আল্লাহ তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতেন ৬৯ঃ৪৫ এবং তাঁর জীবন ধমনী কাটিয়ে দিতেন ৬৯ঃ৪৬। তাছাড়া তিনি ওহী ব্যতিত দ্বীনের ক্ষেত্রে কাউকে সতর্ক করেন নাই ২১ঃ৪৫। আর নবী (সঃ) ওহী ব্যতিত কোনকিছু অনুসরণও করেন নাই ৬ঃ৫০/১০ঃ১৫ -১৬/৬১/৬ঃ১৯/৪২ঃ৭/ ২১ঃ৪৫/ ৬৯ঃ৪২-৪৯/ ৫৩ঃ২-৬/২৮ঃ৮৭-৮৮/ ৩৮ঃ৮৬/ ৩৩ঃ২/ ৭ঃ২’২০৩/ ৮৪ঃ২০-২৪/ ৪৬ঃ৯-১০/ ৬ঃ৫১/ ১১৫/ ১০৬/৫০ঃ৪৫/ ৪৩ঃ৪৩-৪৪/১৭ঃ৭৩-৭৫/৭২ঃ১৯-২৮/ ৭২ঃ২-৫।
আর আল্লাহ তো নবী (সা.)-এর জন্য এই কুআরনকে বিধান হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন ২৮ঃ৮৫। আর নবী (সঃ)-কে আল্লাহ বলেন, তুমি ওহিকে অবলম্বন কর ৪৩ঃ৪৩। আর তিনি তো প্রভুর স্পষ্ট প্রমাণের উপর অর্থাৎ ওহীর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ৬ঃ৫৭। কারণ দ্বীনের বিষয়ে কুরআনই পরিপূর্ণ দলিল ৫ঃ৩। কারণ সত্য ও ন্যায়ের দিক থেকে আল্লাহর কথাই পরিপূর্ণ ৬ঃ১১৫। অতএব, দ্বীনের বিষয়ে যারা কুরআন মাফিক বিধান দেয় না তারা যালিম, ফাসিক ও কাফির ৫ঃ৪৪, ৪৫, ৪৭)। কাজেই নবী (সঃ) কুরআনের বাইরে হাদীসকে বা সুন্নাকে দ্বীনের বিষয়ে দলিল হিসাবে রেখে গেছেন এই কথার কোন ভিত্তি নেই।
তবে এক শ্রেণীর লোক নবী (সঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণকে বিকৃতভাবে বর্ণনা করেছে। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী (সঃ) সেই দুইটি বিষয়ের কথাই উল্লেখ করে বলেছেন, যে দুইটি বিষয় সূরা মায়েদার ৪৮ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে জানিয়েদিয়েছেন।
“লিকুল্লী যাআলনা মিনকুম শির আতা ওয়া মিনহাজা” ৫ঃ৪৮ । এখানে উল্লেখ্য যে,” শির আতা” অর্থ ধর্মীয় আইন (আরবী অভি. পৃ. নং-১৫২০)।
“মিনহাজার ” আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রকাশ্য রাস্তা (আরবী অভি. পৃ. নং- ২৩১২)। উক্ত আয়াতের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি ধর্মীয় আইন (কুরআন) এবং (আল্লাহ প্রাপ্তির) প্রকাশ্য রাস্তা। অর্থাৎ এই দুইটি বিষয় হচ্ছে (১) আল্লাহর বিধান যেটা কিতাবউল্লাহ, অর্থাৎ এই কুরআন। (২) অপরটি হচ্ছে মিনহাজা। অর্থাৎ আল্লাহ প্রাপ্তির প্রকাশ্য পথ। যে পথটা বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান ভিত্তিক দর্শনের যুগেও মানুষের কাছে অজানা। আর আল্লাহ বলেন, অজানা বিষয়টি রসূল তোমাদেরকে শিক্ষা দিবেন ২ঃ১৫১। এই জন্য মুমিনদের মধ্য থেকেই মুমিনদের কাছে রসূল পাঠাই ৩ঃ১৬৪/ ২৪ঃ৫৫। এইজন্য প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীর নিয়েছেন তোমার (শেষাংশে) কাছে একজন রসূল যাবে, তাকে তুমি রিশ্বাস করবে এবং (রিসালাত দিয়ে) সাহায্য করবে ৩ঃ৮১। এই অঙ্গিকার অনুসারে প্রত্যেক নবীর শেষাংশে বিশ্বস্তদের মধ্যথেকে একজনকে রেসালাতের ভার দিয়ে রসূল হিসাবে রেখে গেছেন। যার মধ্যে আল্লাহ প্রাপ্তির প্রকাশ্য পথ নিহিত আছে। অতএব বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) দুটি বিষয় রেখে গেছেন (১) কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ কুরআন (২) রসুল যেটা আল্লাহ প্রাপ্তির স্পষ্ট পথ যেটা মিনহাযা বলে উল্লেখ করা হযেছে অর্থাৎ আহলে বাইতের কথা বলা হয়েছে।এই আহলে বাইত হল নবীর আদর্শিক বংশধর। । অতএব বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী (সঃ) কুরআনের বাইরে হাদীসকে বা সুন্নাকে দ্বীনের বিষয়ে দলিল হিসাবে রেখে গেছেন এই কথার কোন ভিত্তি নেই।
মোঃ নজরুল ইসলাম = ২০–০৪–২০১৯ খ্রীঃ।