Category Archives: Article

Ramadan?

রমজান রোজা নয়; রোজাও রমজান নয়।

আরবিতে ‘সিয়াম’, পার্শীতে ‘রোজা’ আর বাংলায় ‘উপবাস’বা কৃচ্ছ সাধনা। রমজান আরবি চন্দ্র মাসের নবম ও সবচেয়ে ছোট মাসটির নাম।

বিশ্বে বর্ষ বা সময় গণনার প্রধান দু’টি উৎস: সৌর বর্ষ ও চন্দ্র বর্ষ। ছোট বেলার ভূগোলে শেখা যে গ্রহ-নক্ষত্রের ঘুর্ণন, আবর্তন-বিবতনের কারণে পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে দিবারাত্র ও বার্ষিক গতির ফলে প্রায় ৩৬৫ দিনে বছর ও স্থানভেদে ২/৪ ও ৬ ঋতুর পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনকে লক্ষ্য করে ৩৬৫ দিনকে ১২ ভাগে ভাগ করেছে; যার প্রত্যেক অংশকে মাস বলে। অতঃপর মাসকে সপ্তাহ, দিন, ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ডে ভাগ করা হয়েছে।

কোরানে ঐ ১২ ভাগের নির্দিষ্ট একটি মাসের দিনের অংশে উপবাস পালনের নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশ রয়েছে সূর্য উদয় থেকে ডোবা পর্যন্ত পানাহার ও যৌন ভোগ-বিলাস নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট রয়েছে সময়ের কোন মুহুর্ত পর্যন্ত উপবাস থেকে কখন ভঙ্গ করবে। অর্থাৎ রোজার চরিত্র, বৈশিষ্ট ও পরিচয় বহন করে একমাত্র সৌরকাল, চন্দ্রকাল নয়।

চন্দ্র দিন রাত্র করে না, উপবাস শুরু ও ভঙ্গের সময় নির্ধারণ করে না, সকাল সন্ধ্যা করে না, নামাজের সময় বলে দেয় না, ছেহরি-ইফতারের সময় বলে দেয় না। অর্থাৎ্ রোজা-নামাজ পালনে চন্দ্র সময়ের কোন ভূমিকা নেই, একমাত্র হজ্জের দিনটি ছাড়া। তবুও এই চাঁদকে নিয়ে আদিকাল থেকেই বছরের নির্দিষ্ট কতিপয় ধর্মীয় পর্বের সময়কাল নিয়ে মুছলিম বিশ্বে যত ঝগড়া ফাছাদ তথা অধর্ম চলছে, বিশ্বের অন্য কোন ধর্মে এমন কোন নজির নেই। হাস্যকর বিষয় যে, শরিয়ত দৈনিক রোজাটি পূরণ করে সূর্য দেখে; মাসটি পুরণ করে চন্দ্র দেখে আর বছরটি পুরণ করে সূর্য দেখে! বলাবাহুল্য, হজ্জের অনুষ্ঠানটি নিয়ে এমন ঝগড়া ফাছাদ বা মত বিরোধ হয় না বটে!

কারণ:

১. নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে, নির্দিষ্ট একটি সময় পৃথিবীর সকল মুছলিম হাজির হয় বলে।

২. সৌদি রাজার কোরান বিবর্জিত একক মতে হজ্জের দিন তারিখ ধার্য হয় বলে।

এই ঝগড়া-ফাছাদ বন্ধ হতে পারে:

ক. পৃথিবীর সকল মুছলিমগণ রমজান মাসে আরব দেশে হাজির হয়ে রোজা, ঈদ পালন করলে।

খ. সঠিক হোক বা ভুল হোক মুছলিম বিশ্ব একক ব্যক্তির আদেশ মান্য করলে।

গ. চাঁদটি গুলি করে ভূপাতিত করলে।

ঘ. একমাত্র কোরান অনুসরণ করলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।

সমস্যার কারণ একমাত্র চন্দ্র বর্ষ। চন্দ্র বর্ষ হয় ৩৫৪ দিনে; পক্ষান্তরে সৌর বর্ষ হয় প্রায় ৩৬৫ দিনে। সৌর বর্ষের তুলনায় চন্দ্র বর্ষে ১১ দিন কম। মূলত ৩৬৫ দিনেই বছর হয়, আর তাই ১১ দিনের ঘাটতি পূরণের জন্য আগামী বছর থেকে কাল্পনিক ও অবৈজ্ঞানিকভাবে ১১ দিন ধার করে এনে চন্দ্র বছর ৩৬৫ দিন পুরো করে একটি বছর ধার্য করা হয়। আর এ কারণেই চন্দ্র মাস প্রতি বছর ১১ দিন পিছু হটতে থাকে এবং মাসগুলি ঘুরতে থাকে; অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১২টি নাম ঠিক থাকলেও তার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে না; থাকে না তার নির্দিষ্ট পরিচয়। ফলে ১২টি মাসেই এমনকি বছরের প্রত্যেকটি দিনেই কালের ব্যবধানে রমজান, মুহররম বা শাবান নাম ধারণ করে। অতএব সে হিসাবে মুছলিমগণ বছরের প্রত্যেকটি মাস ও দিনেই রোজা রাখে।

আজকের মুছলিম সমাজের ধর্মীয় পর্বগুলির দিন তারিখ চন্দ্র বর্ষ অনুসরণ করে বলেই কখনও জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি, কখনও জানুয়ারি-ডিসেম্বর আবার কখনও ডিসেম্বর-নভেম্বর ইত্যাদি চক্রকারে রোজা রাখে। ফলে কোরানে নির্দেশ চরমভাবেই লঙ্ঘিত হচ্ছে। অর্থাৎ কোরানের আলোকে সময়ের হিসাবে তাদের রোজা ঈদ সবই সন্দেহজনক বলেই মনে হয়!

মুছলিম বিশ্বের শুধু রোজা ঈদই নয়, ধর্মীয় সমস্ত পর্বগুলি, যেমন রাছুলের জন্ম তারিখ, শবে কদরের নির্দিষ্ট রাত, কোরবানীর তারিখ, মে’রাজের তারিখ সবই চাঁদের ফাঁদে পড়ে প্রায় ১৪ শত বছর যাবত ঘুরে ঘুরে আজ তা কোথায় অবস্থান করছে তা কারো জানা নেই।

মোঘল সম্রাট আকবরের শাসন আমলে ভারতবর্ষে চন্দ্র বর্ষ চালু ছিল। প্রজাদের অনুরোধ ছিল ধানের মওসুমে এসে খাজনা আদায় করতে। সে বছর বাংলা পৌষ মাসে প্রধান ফসল ধানের মওসুম ছিল, তাই ধান বিক্রয় করে সহজেই সরকারের খাজনা পরিশোধ করলো। পরের বছরও খাজনা পরিশোধ করতে মাত্র ১১ দিনের হেরফের ছাড়া তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার পরের বছর নির্দিষ্ট পৌষে খাজনা আদায় করতে এসে সরকার দেখলো যে, এবারের পৌষ মাসে ধান পাকেনি। কারণ চন্দ্র বর্ষের গুণে ২ বছরে বাংলা পৌষ মাস পিছিয়ে বাংলা অগ্রহায়ণের ২২ দিনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম তো আর ২২ দিন পিছিয়ে ধান পাকাতে পারে না! অতএব এবারের পৌষে ধানও পাকেনি আর তাই খাজনাও আদায় করা সম্ভব হয় নি। এ সমস্যার কথা সম্রাট আকবরকে জানালে তার সমাধানস্বরূপ চন্দ্র বর্ষের পরিবর্তে সৌর বর্ষ প্রবর্তন করে ধান পাকার মওসুম পৌষে নির্দিষ্ট করে মাসের নড়চড় বন্ধ করে খাজনা আদায়ের সময়কাল নির্দিষ্ট করা হয়।

পৃথিবী গোল হওয়ার কারণে এবং আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ফলে একই দেশে এবং বিভিন্ন দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের সময়ের পার্থক্য ১ মিনিট থেকে প্রায় ১০/১১ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় চাঁদের আবির্ভাব ও তিরোধান বড়ই স্পর্শকাতর ও রহস্যময়। কারণ দিন-রাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোন সময় অসময় প্রতিপদ (জন্মলগ্ন) লাগতে পারে, আর এই প্রতিপদ লাগার ২০/২২ ঘণ্টা পরে মাত্র কয়েক মিনিট বা সেকেন্ডের জন্য চাঁদের উদয় হয়। এমতাবস্থায় নির্দিষ্ট একটি দেশের এক প্রান্তের স্থানীয় সময় উদাহরণ স্বরূপ বেলা ১২টা ৫ মিনিটে প্রতিপদ লাগলে পরের দিন ভোর ৮/১২টা ৫মি: ঐ আকাশে মুহুর্তের জন্য চাঁদ উঠবে। কিন্তু তখন প্রখর সূর্যের আলোর জন্য অথবা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য এমন কি দূরবীণ বাইনোকুলার দ্বারাও তা দর্শন করা সম্ভব হয় না; তাছাড়া যন্ত্রগুলি চোখে লাগাতে লাগাতে বা খুজতে খুজতেই চাঁদ উঠে পুনঃ অস্ত যাবে। অথচ আকাশে চাঁদ উঠেছিল; পরের দিনের চাঁদের বড় আকৃতি দেখেই বোঝা যায় যে গত দিনই আকাশে চাঁদ উঠেছিল। এমতাবস্থায় দেশের অপর প্রান্তে যেখানে সময়ের এমনকি ২/৫ মিনিটেরও পার্থক্য থাকে সে প্রান্তের আকাশে চাঁদ দেখার কোন প্রশ্নই উঠে না। এই সময়ের পার্থক্যের কারণে একই দেশের এক প্রান্তের উদিত চাঁদ দর্শন হলেও অপর প্রান্তের লোকদের তা দেখা সম্ভব নয়। ফলে মুছলিম দেশগুলিতে অথবা একই দেশের দুই প্রান্তের লোকদের মধ্যে হয় মত বিরোধ। ফলে একদলের ঈদের দিনে অন্য দল রোজা রাখে, অন্যের রোজার দিনে ঐ দল ঈদ করে। অর্থাৎ একদলের দৃষ্টিতে অন্যদল অবৈধ তথা হারাম! বস্তুতঃপক্ষে কোরানের আলোতে উভয় দলই অবৈধ বলে ধারণা হয়।

একই দেশের চাঁদ দর্শন নিয়ে যখন এরূপ সমস্যার উদ্ভব হয়, তখন আরব বা পাকিস্থানের আকাশের উদিত চাঁদ দর্শনের খবর পেয়ে বিশ্বের সকল দেশের রোজা ঈদ পালন করা কি করে বৈধ বা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে! মূলত চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রাদি সকল সময়, সকল অবস্থায়ই আকাশে থাকে। এমন কি অমাবস্যার রাতেও স্থানভেদে চাঁদ দর্শন করা সম্ভব। এই চাঁদ দেখে রোজা ঈদ পালনের বিধান থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে মানুষ যদি কখনও চন্দ্র, মঙ্গল অথবা অন্য কোন গ্রহে বসবাসের উপযোগী করতে পারে ; তখন এই কোরান সেখানে অচল হয়ে পড়বে।

‘কোরান সমগ্র মানব জাতির’ কথাগুলি আজকের সমাজ মৌখিক বিশ্বাস করে মাত্র ; কিন্তু বাস্তবে প্রমাণ করার ক্ষমতা, জ্ঞান আজ দেড় হাজার বছরের মধ্যেও আমরা কেউ অর্জন করতে পারিনি।

মুহম্মদ চন্দ্র বর্ষের প্রবর্তন করেননি। (তথ্যসূত্র: দৈনিক ইনকিলাব: ১৮৯ তম সংখ্যা, ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৭)। আবুবকর পর্যন্ত রোজা বা ঈদ আজকের রোজার মত পা-পা করে পিছু হটতো না। রমজান, রমজানের জায়গায়ই নির্দিষ্ট থাকতো। কিন্তু ওমরের আমল থেকে সৌরবর্ষ ছেড়ে চন্দ্রবর্ষ চালু হয়। (সংক্ষিপ্ত ইছলামী বিশ্বকোষ: ২য় খ. ২য় সস্করণ; পৃ: ৫০৭, ৫০৮; ই. ফা; ইছলামের ইতিহাস, ছেহা-ছেত্তা ইত্যাদি)। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রমজান প্রতি বছর ১১দিন পিছু হট্ছে।

অনেকের ধারণা যে, ‘রাছুলের পূর্ব থেকেই চন্দ্রমাস চালু ছিল;’ কিন্তু রাছুল সেই চন্দ্র বর্ষের কোন্ সন তারিখে জন্ম-ওফাত্ করেছেন, ২৩টি যুদ্ধের চন্দ্র সন-তারিখ কি ছিল! তা বিশ্বের কারোরই জানা নেই, দলিলপত্রও নেই। উপরন্তু সকল ইতিহাস-হাদিছেই সৌর সন-তারিখের (খ্রিষ্টাব্দের) উল্লেখ বা দলিলপত্র পাওয়া যায়। মূলত খলিফা ওমর পূর্বের সৌরসনের পরিবর্তে চন্দ্রসন প্রবর্তন করলেও মাসগুলির নাম পরিবর্তন করেননি বলেই শরিয়ত অবাস্তব সন্দেহ করে মাত্র।

এক্ষণে আরবগণ চন্দ্রবর্ষ ছেড়ে সৌরবর্ষ প্রবর্তন করলে, লীপ ইয়ারের সমস্যা ছাড়া রমজানসহ রাছুলের জন্ম-মৃত্যু তারিখ, শ’বে কদর, মে’রাজ ইত্যাদি যাবতীয় ধর্মীয় দিন-ক্ষণগুলি স্থায়ী হয়ে যাবে; বছর বছর ১১ দিন পিছু হটবে না; ৯ম মাস রমজান, ৯ম মাস পৌষের রোজা জুলাই বা চৈত্রে ঢুকবে না।

আরব দেশ বা দল, উপ-দলিয় ইমামদের অনুসরণ/অনুকরণ করা মুছলিমদের ধর্ম নয়, কোরান অনুসরণ করাই ধর্ম।

রোজার সময়কাল সম্বন্ধে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলি প্রাকৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব সত্য বলেই স্বীকার করতে হয়। অতএব, কোরান যদি এ সমস্যাগুলির সমাধান দিতে না পারে তবে স্বীকার করতেই হবে যে:

ক. কোরান পূর্ণ জীবন বিধান নয়।

খ. কোরানের প্রকৃত অর্থ উদ্ধার করতে আলেম-আল্লামাগণ ব্যর্থ হয়েছেন।

গ. স্ব-জ্ঞানে, স্ব-ইচ্ছায় জেনে-শুনে কোরান অমান্য করে দলিয় স্বার্থে সৌদি আরবকে অনুকরণ করছে।

প্রথম ধারাটি স্বীকার করার শক্তি-সাহস বিশ্বের একজন মুছলিমেরও নেই; যদিও শরিয়ত তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ। অতঃপর দ্বিতীয় ধারাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য; তৃতীয় ধারাটি আরো সত্য; যেহেতু দ্বিতীয় খলিফা ওমরের চন্দ্র বর্ষ চালু করার পর থেকে অদ্যাবধি প্রায় দেড় হাজার বছরের মুছলিম বিশ্বের সমূহ ধর্মীয় পর্বগুলির দিন-ক্ষণগুলি চাঁদের ফাঁদে পড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। অতএব এ সম্বন্ধে কোরানের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াতাংশগুলি একান্তভাবেই লক্ষণীয় :

১। আইয়্যা-মাম্মা’দুদাত। (২: বাকারা-১৮৪) অর্থ: নির্দিষ্ট কতিপয় দিন মাত্র।

নির্দিষ্ট কিছু দিন বলতে ৩৬৫ দিনের ১২ ভাগের নির্দিষ্ট একটি ভাগকে বুঝায়; ঐ নির্দিষ্ট ভাগ বা মাসের নির্দিষ্ট গুণাগুণ বা বৈশিষ্টও থাকে। কিন্তু চন্দ্র বছরে এ ধরনের মাসের কোন নির্দিষ্টতা নেই। অর্থাৎ ৩৬৫ দিন তথা প্রত্যেকটি মাসই পর্যায়ক্রমে মহররম, রমজান বা শাবান ইত্যাদি নাম ধারণ করে থাকে; যা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। তাই ৩৩ বছর যিনি লাগাতার রোজা রেখেছেন, তিনি বছরের প্রত্যেকটি মাস তথা প্রত্যেকটি দিনেই রোজা রেখেছেন।

অতএব, আজকের মুছলিম সমাজ পর্যায়ক্রমে ১২ মাস বা ৩৬৫দিনই রোজা পালন করে থাকেন। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট কাল ব্যাপীয়া রোজা পালন করেন। ফলে উল্লিখিত নির্দেশটি চরমভাবেই লঙ্ঘিত হচ্ছে।

২। ফামান কা-না…উখারা…। (২: বাকারা-১৮৪) অর্থ: তোমাদের মধ্যে কেহ অসুস্থ থাকলে বা প্রবাসী/বিদেশী/ ভ্রমণে থাকলে অন্য সময় হিসাব করে রোজা রাখবে।

উল্লিখিত আয়াতে রোগীদের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। এখানে ‘সফর’ শব্দটি উল্লেখযোগ্য। তার সাধারণ অর্থ ভ্রমণ, অতঃপর: (স্থান) ত্যাগ করা; স্থানান্তরিত হওয়া; বিচ্ছিন্ন হওয়া; অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি বুঝায় (দেখুন: আরবি-ইংরেজি অভিধান; বাই জে. এন. কাউয়ান)। মূল কথা হলো বিদেশী বা প্রবাসীগণ অন্য সময় অর্থাৎ নিজ নিজ হিসাব অনুযায়ী রোজা রাখবে, যখন ইচ্ছা তখন নয়।

আরবি ‘সফর’ এর ‘ভ্রমণ’ অর্থটি অত্যন্ত ব্যাপক ও রূপক; ভ্রমণ বলতে দু’চার ঘণ্টা থেকে দিন, সাপ্তাহ, মাস, বছর থেকে ২/১০ বছরও হতে পারে। অতএব এমতাবস্থায় কেউ ৫ বছর বিদেশে অবস্থান করে দেশে ফিরে বর্তমান বছরসহ গত ৫ বছরের মোট ৬ মাস লাগাতার রোজা পালন করবে; এটা কোন অবস্থাতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ভ্রমণের দীর্ঘতার কারণে লাগাতার ১ বছর বা ততোধিক রোজা রাখতেও হতে পারে। অবশ্য এই ‘সফর’ সম্বন্ধে ফেকহা, এজমায় কিছু দুর্বল ব্যক্তিগত এবং বিতর্কিত মত প্রচলিত আছে।

অপরপক্ষে ২/১০ ঘণ্টা থেকে দু’চার দিন ভ্রমণে থাকলে ঐ দিন বা সময়কালে রোজা না রেখে নির্ধারিত রোজা শেষে অন্য সময় তা পালন করারও কোন যুক্তি থাকতে পারে না। কারণ এ রকম খুচরা ভ্রমণ সমাজের ৫০% শতাংশ লোকেই অহরহ করে থাকে এবং ব্যক্তি ও সমাজ জীবন ধারনের তাগিদে করতেই হয়। অতএব রোজার মাস বলতে তখন নির্দ্দিষ্ট মাসের অস্তিত্বই থাকে না।

সফর থেকে ‘মুসাফির’, বাংলায় প্রবাসী, আগন্তুক, বিদেশী বা পর্যটক। আপন দেশ, এলাকা ত্যাগ করে অন্য দেশে বা এলাকায় অবস্থান বা ভ্রমণ করাকেই মুসাফির বা প্রবাসী বলে। তাছাড়া আপন দেশ ব্যতীত অন্য সকল দেশের লোকই বিদেশী বা প্রবাসী। এই প্রবাসী বা বিদেশীদের জন্যই অন্য সময় গণনা বা হিসাব করে রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কোরানে। গোল পৃথিবীর কারণে নির্দিষ্ট একটি স্থানের নির্দিষ্ট একটি সময় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আমুল হের ফের হয়। সময়ের হিসাব বলতে যেমন: ‘বাংলাদেশ সময় ২ তারিখ বেলা ১০ টার সময় ভূমিকম্প হয়েছে;’ সেই সময়টা হিসাব-নিকাশ করে আমেরিকার সময় দাঁড়ায় ১ তারিখ রাত্র ৮ টার সময়। ২৪ ঘণ্টায় যদি ১০ ঘণ্টার পার্থক্য হয় তবে ১ বছরে কত পার্থক্য হবে! সেটা হিসাব-নিকাশ করে সময়-কাল ধার্য করাকেই কোরানের আলোকে ‘প্রবাসীদের অন্য সময় গণনা করে’ রোজা রাখার নির্দেশ বুঝিয়েছে।

মাস বলতে নির্দিষ্ট একটি আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশকে বুঝায়। কোরান নাজিল হয়েছে আরব দেশে তাই আরবের একটি নির্দিষ্ট মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাসটি আরবি রমজান মাস। আরব ভিন্ন অন্য কোন দেশে নবীর আগমণ হলে সেই দেশেরই ফজিলতের মাসটি রোজার জন্য নির্দিষ্ট হতো ; বাংলাদেশে আগমণ হলে ফজিলত বা কল্যাণের মাস হিসাবে পৌষ মাসকেই যে নির্দিষ্ট করা হতো, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অতএব রমজান মাসের নির্দিষ্ট আবহাওয়া, জলবায়ু অর্থাৎ সামগ্রিক কল্যাণ-ফজিলত অন্য দেশের যে মাসটির মধ্যে পাবে ঠিক সেই মাসটিই কোরানের ভাষায় প্রবাসীদের অন্য সময় হিসাব করে রোজা রাখার মাস বুঝিয়েছে।

১২টি মাসের মধ্যে তুলনামূলকভাবে রমজান মাসকেই শ্রেষ্ঠ কল্যাণের মাস হিসাবে ঘোষিত আছে। অতএব প্রত্যেকটি দেশের স্ব-স্ব ১২টি মাসের মধ্যে বিচার বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে যে মাসটি শ্রেষ্ঠ কল্যাণের বিবেচিত হবে, ঠিক সেই মাসটিকেই কোরানের ভাষায় ‘প্রবাসীদের অন্য সময় গণনা করে রোজা রাখার মাস বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে।

উল্লিখিত বর্ণনা আয়াতটির ব্যাখ্যা নয় বরং সরলার্থ এবং ইহাই যে যুক্তিসঙ্গত ও নিরপেক্ষ এবং কোরানসম্মত তা পরবর্তী আয়াতে স্বচ্ছ আয়নার মত পরিস্কার করে দিয়েছে।

৩। ফামান সাহেদা…উখারা…। (২: বাকারা- ১৮৫) অর্থ: সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাসটি পাবে/উপস্থিত থাকবে/ প্রত্যক্ষ করবে/ সাক্ষী থাকবে তারা যেন এই মাসেই রোজা রাখে। এবং যারা অসুস্থ ও প্রবাসী/বিদেশী /সফরে থাকলে তারা অন্য সময় গণনা করে পূরণ করবে।

আয়াতটি সহজ-সরল ও ব্যাখ্যাসহ অবতীর্ণ। এতে নতুন করে ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। তবুও দেড় হাজার বছর যাবৎ আমাদের এই সহজ সরল বিষয়টা বোধগম্য হচ্ছে না বলেই একই কথা বার বার ওলট-পালট করে বলতে হয় এবং কোরানেও অনুরূপ বলা আছে। মাস বলতে ৩৬৫ দিনের এক ভাগকে বুঝায় ; মাস বলতে নির্দিষ্ট একটি আবহাওয়া ও জলবায়ুকে বুঝায়। নির্দিষ্ট একটি দেশের হিসাব করা মাস পৃথিবীর সকল দেশের লোক ২/১০ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় একই সঙ্গে মাসটির বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ বা সাক্ষী থাকতে পারে না, তা পূর্বেও আলোচিত হয়েছে।

আরবের লু-হাওয়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আরবগণ; আমেরিকা-ইউরোপের তুষার বরফ পড়ার মাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী স্ব স্ব দেশীয়গণ; বাংলাদেশের চৈত্রের টাক ফাটা রোদ, ঘাম ঝরা গরম বা কাল বৈশাখী ঝড়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী বাংলাদেশীগণ। আর সকল ভিন্ন দেশীগণ তার পরোক্ষ সাক্ষী। অর্থাৎ তারা ভোগ করে না, দেখে না বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না ; কিন্তু জানে যে, কোন্ দেশে, কোন্ মাসে কখন কি অবস্থা ধারণ করে; এর মানেই তারা পরোক্ষদর্শী।

একই সৌরমাস গণনায়ও যেখানে আমেরিকার জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি, বাংলার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ বা আষাঢ়-শ্রাবণ ইউরোপ/আমেরিকায় প্রত্যক্ষ করা যায় না! সেখানে সৌর ভিন্ন আরবের চন্দ্র বর্ষের হিসাব করা মহরম/রমজান মাস একই সময় অন্য কোন দেশে প্রত্যক্ষ করা বা সাক্ষী থাকা একেবারেই অবাস্তব। এজন্যই আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘উক্ত মাস যারা প্রত্যক্ষ করে বা সাক্ষী থাকে তারা যেন এই মাসে রোজা রাখে; দূরদেশী/প্রবাসী ও রোগী অন্য সময় গণনা করে রোজা রাখবে’ অর্থাৎ আরবে যারা বসবাস করে তাদের জন্য রমজান (সৌর হিসাব অনুযায়ী) এবং আরব ভিন্ন অন্য দেশীরা সময়কালের হিসাব-নিকাশ করে তাদের রোজার মাস বের করে নিবে। আয়াতে বর্ণিত ‘যারা প্রত্যক্ষ করে বা সাক্ষী থাকে’, তার অর্থই সকলেই উক্ত মাস প্রত্যক্ষ করে না বা সাক্ষী থাকতে পারে না। এখানে ‘যারা’ ও ‘প্রত্যক্ষ’ শব্দদ্বয়ের অর্থ বুঝতে কলেজ ইউনিভারসিটির ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। তবুও আজ এ দু’টি শব্দ বোঝার সহজ-সরল জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে! অথবা আমরা জেনে শুনেই কোরানের অমোঘ বাণী অবহেলা করছি!

উল্লিখিত বর্ণনা আয়াতটির তফসীর ব্যাখ্যা নয় বরং পূর্ববৎ সরলার্থ এবং ইহাই যে কোরানিক যুক্তিসঙ্গত তা পরবর্তী আয়াতে আরো স্বচ্ছ আয়নার মত পরিস্কার করে দিয়েছে।

৪। ইউরিদুল্লাহু…অছরা…। [২: ১৮৫] অর্থ: আল্লাহ তোমাদের সহজ ও আরামের মধ্যেই রোজা চাহেন; তোমাদের কষ্ট ক্লেশ হোক তা মোটেই চাহেন না।

রোজা রাখার কষ্ট ক্লেশ শিথিল করে আরাম আয়েশ ভোগের সুযোগ-সুবিধা একমাত্র রোগী ও প্রবাসী বা ভ্রমণকারীদের জন্যই যে বিধিবদ্ধ করেছেন তা সঙ্গত নয়। বরং সকল রোজাদারীর জন্যই এ সুযোগটি অবস্থাভেদে সমান প্রযোজ্য বটে! অর্থাৎ স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে সমান এবং সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেয় এই আয়াতটি।

আবহাওয়া, জলবায়ু ইত্যাদির নিরীখে প্রত্যেকটি মাসের গুণাগুণ, আরাম-আয়েশ বা ফজিলত সমান নয়। পৌষের ৮/৯ ঘণ্টা উপবাস আর চৈত্রের টাক ফাটা গরমের ১৪/১৫ এমনকি দেশভেদে ২০/২২ ঘণ্টা উপবাসে দেহ-মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বা ফজিলত অবশ্যই সমান কল্যাণকর যে নয় তা ১২ বছরের শিশুও সাক্ষী দিতে পারে। অতএব প্রত্যেকটি জাতির ১২টি মাসের মধ্যে তুলনামূলকভাবে নিশ্চয়ই একটি সহজ আরামের বা ফজিলতের মাস আছেই আছে। কোরানে ‘প্রবাসীগণ অন্য সময় হিসাব করে রোজা পূরণ করবে’, সে হিসাবটি প্রত্যেক জাতির কল্যাণকর মাসটিকেই ইঙ্গিত করেছে। রমজান মাস তুলনামূলকভাবে ১২টি মাসের তুলনায় কল্যাণকর তথা ফজিলতের মাস ছিল বলেই রোজার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল; কিন্তু চন্দ্রবর্ষ চালু করার পর তা আর অবশিষ্ট নেই। রমজান মাস কেমন এবং কেন ফজিলতের মাস ছিল, সেটা সহজভাবে বোঝার জন্য প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসাবে নিচে বাংলা পৌষ মাস এবং ইউরোপ-আমেরিকার ফেব্র“য়ারীর উদাহরণটিই উপযুক্ত মনে করা যায়:

১. এ মাসের দিনগুলি সবচেয়ে ছোট, মাত্র ৮/৯ ঘণ্টার।

২. মাসটিও সবচেয়ে ছোট, মাত্র ২৮/২৯/৩০ দিনের।

৩. আবহাওয়া ও জলবায়ু আরামপ্রদ ও স্বাস্থ্যপ্রদ।

৪. রোগ-শোক তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আসমানী বালা, জমিনী বালা মুক্ত।

৫. নিত্য নতুন এবং হরেক রকমের খাদ্য শস্যের মওসুম তথা অভাব অভিযোগ মুক্ত।

৬. প্রচণ্ড কাজ করার উপযুক্ত আবহাওয়া ও পরিবেশ।

৭. ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, ভ্রমণ, অতিথি আদর-আপ্যায়ণ, প্রকাশ্যে সমাবেশ, মহা সমাবেশ ইত্যাদিতে প্রকৃতি কোন বাধা বা প্রতিকুলতার সৃষ্টি করে না।

৮. এ সময় দিনটি ছোট, মাসটি ছোট, তাপহীন হেতু নিতান্ত বৃদ্ধ ও ছোট শিশুগণও আনন্দ, উৎফুল্ল ও স্বতঃফুর্তভাবে উপবাস পালন করতে সক্ষম ও আগ্রহশীল হয়।

৯. উপবাস ব্রতে দেহের সুষ্কতার সঙ্গে প্রাকৃতির সুষ্কতা বহুল পরিমাণে সাহায্য করে।

১০. মানুষের হৃদয়-মন মুক্তাকাশ ও পরিবেশের মতই নির্মল, সজিব ও উদার থাকে; ঝামেলা মুক্ত হৃদয় খুলে আল্লাহকে ডাকার, ধ্যান, সাধনার সময়-সুযোগ পায়।

বিজ্ঞান, জ্যোতিষ বিজ্ঞানই নয়, চাষা-কুলি এমনকি পশুদের মতেও ১২টি মাসের মধ্যে এ মাসটি বিচার বিশ্লেষণে উপবাস পালনের সহজতর মাস অর্থাৎ রহমতের মাস বলেই বিবেচিত হয়। এ মাসটি রোজাদারীর জন্য কষ্ট ক্লেশহীন তথা আরামদায়ক ও কল্যাণকর। এমন সুযোগ সুবিধা ও গুণাগুণ রমজান মাসে বিদ্যমান ছিল বলেই আল্লাহ রমজান মাসে রোজা রাখার সময় ধার্য করেছিলেন। কিন্তু ওমরের আমল থেকে চন্দ্র বর্ষ চালু করার কারণে আজ তা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক দেশ বা জাতির তুলনামূলকভাবে এমন একটি কল্যাণকর মাস অবশ্য অবশ্যই আছে। রমজান বলতে প্রত্যেকের সেই মাসটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে এমন একটি মাস আছে যখন:

১. দিনটি থাকে সবচেয়ে বড় ১৫/১৬ ঘণ্টার; কোন দেশে ২০/২২ ঘণ্টাও হয়।

২. মাসটি থাকে সবচেয়ে বড়, ৩১ দিনে।

৩. তখন খাদ্যশস্যের থাকে চরম অভাব; এমনকি মধ্যবিত্তের ঘরেও দু’মুঠো খাদ্যের যোগান থাকে না।

৪. ঝড় বাদল, জলোচ্ছাস, হাজারো রকমের আসমানী জমিনী বালা মছিবত তথা দুর্যোগে থাকে ভরপুর।

৫. চলাফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ প্রকৃতি চরমভাবে প্রতিকুল অবস্থা ধারণ করে।

৬. প্রচণ্ড গরমে এমনকি পশু-পক্ষী, জন্তু-জানোয়ার পর্যন্ত পানিতে আশ্রয় নেয়।

৭. মারাত্বক রোগ-শোক, মহামারি ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব থাকে।

৮. প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঠে ময়দানে এমনকি ঈদের নামাজ পর্যন্ত করা সম্ভব হয় না। ঈদের যাবতীয় আনন্দ আয়োজন মুহুর্তের মধ্যেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়! জীবন, সংসার নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়, ফলে একনিষ্ঠ সাধন-ভজন বা ধর্মানুশীলণ অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দেখা দেয়।

৯. বৃদ্ধ, শিশু এমন কঠিন দিনে রোজা রাখতে ভয় পায়; অভাব, অস্বাস্থ্যকর তদুপরি এমন লম্বা দিনে সুস্থ লোকেরাও রোজা রেখে অসুস্থ হয়ে কল্যাণ কামনায় বরং অকল্যাণ ডেকে আনে। রোজা অবস্থায় এ সময় অনেককে লজ্জা ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে খেতেও দেখা যায়।

১০. এহেন অবস্থায় ছোয়াবের আশায় রোজা রেখে বরং সমূহ আপদ-বিপদ ডেকে আনে। এমন কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে আল্লাহ কোন মতেই মানুষের কাছ থেকে রোজা চাহে না ; তা পরিস্কারভাবেই কোরানে ঘোষণা করেছে।

১১. উল্লিখিত প্রাকৃতিক বালা-মছিবত বা সমস্যাগুলির বাস্তব সত্যতা উপলব্দি করত সম্প্রতি ( ২০১০ ইং সন) মিশর বাধ্য হয়ে ঘড়ির কাটা আগ/পিছ করে ১ ঘণ্টা আগেই রোজা ভঙ্গের (ইফতার) সময় নির্ধারণ করে; একই কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানি বা অসমর্থতা ও উৎপাদন ব্যহত হওয়ার কারণে আমিরাতের শ্রমিকদের রোজা রাখার কঠিন আদেশ রহিত করার ফতোয়া দেয়। (খবর: সিএনএন)

অদূর ভবিষ্যতে চাঁদ, সূর্য বা অন্য যে কোন গ্রহে মানুষ বসবাস করলেও এই একই নিয়মে তাদের যে কাল বা মাসটি তুলনায় কল্যাণকর পাবে ঠিক সেই মাসেই তারা রোজা রাখবে। আল্লাহর আইন সর্বত্র এবং সবার জন্য একরকম। এখানে কোন রকমের পক্ষপাতিত্ব বা প্রকৃতি বিরোধ নেই, নেই অসামাঞ্জস্যতা।

‘কোরান মনুষ্য জাতির জন্য’, একথা ওয়াজ-নছিহত ছাড়া বাস্তব প্রমাণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই ; কারণ প্রচলিত রমজান অন্য গ্রহে তো দূরের কথা! পৃথিবীর উত্তর মেরু অঞ্চল, কানাডার নর্থওয়েস্ট টেরিটরি, নুনোভাট ও ইউকন টেরিটরি প্রভিন্সত্রয়; গ্রীনল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়ার খানিক উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ মেরুর এ্যান্টারটিকা প্রভৃতি এলাকায় ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত্র; এমন দেশ আছে যেখানে ২০/২২ ঘণ্টা উত্তপ্ত দিন, ঐ সকল এলাকায় আদিকাল থেকেই প্রচলিত নামাজ, রোজা, শবে মেরাজ, শবেবরাত, শবেকদর প্রভৃতি অনুষ্ঠানাদি অচল হয়ে পড়ে আছে; অতএব তাদের নিজস্ব পবিবেশ, সময়-সুযোগ অনুযায়ী হিসাব নিকাশ করে তাদের অনুষ্ঠানাদির সময় সূচি নির্ধারণ করে নিতেই হয়।

একমাত্র আরব দেশকে অনুকরণ তথা চন্দ্র বর্ষের কারণে আজকের মুছলিম বিশ্বের রোজা, ঈদ, নবীর জন্মোৎসব, শ’বে-কদর, শ’বে বরাত, শ’বে-মেরাজ ইত্যাদি সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সময়ের হিসাবে চাঁদের ফাঁদে আবদ্ধ। অতএব, আরববাসী তথা মুছলিম বিশ্বের এক্ষণে উচিত:

ক. চন্দ্র বর্ষ ছেড়ে সৌর বর্ষ প্রবর্তন করা।

খ. ডাক্তার, বিজ্ঞানী, জ্যোতিষ বিজ্ঞানিদের সাহায্যে নবম মাস, ছোট্ট মাস রমজানকে এমনভাবে নির্ধারণ করা, যাতে সে-ই রাছুলের আমলের রমজানের সকল গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য তথা ফজিলত আজকের রমজানে স্থান পায়।

গ. বিশ্বকে ৪ভাগে বিভক্ত করে অথবা যে সমস্ত দেশের স্বতন্ত্র মাস আছে তারা স্বতন্ত্রভাবে তাদের মাসগুলির বিচার বিশ্লেষণ করে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কল্যাণের এবং ছোট মাসটি রোজার মাস হিসাবে সাব্যস্ত করা। ইহাই কোরানের নির্দেশ।

ফলে:

১. কোরানের সঠিক ব্যাখ্যা বলবৎ হবে।

২. মুছলিম বিশ্বের অথবা একই দেশে ধর্মানুষ্ঠানের দিন-তারিখ নিয়ে মতবিরোধ তথা অধর্ম বন্ধ হবে।

৩. রোজাদারীগণ রোজার প্রকৃত তাৎপর্য ও সমান ফলাফল উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে।

৪. শিশু ও বৃদ্ধগণ স্বতঃফূর্তভাবে রোজা পালনে আগ্রহী হবে।

৫. কথিত প্রগতিশীল ও অনাগ্রহশীলদের ধর্মের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

৬. শীত আর গ্রীষ্মকালের উপবাসের দৈহিক ও মানসিক কল্যাণের (ছোয়াব) ফলাফল যে এক হতে পারে না; বরং বিপরীত ও আকাশ-পাতাল পার্থক্য, তা প্রত্যেক রোজাদারীই বাস্তবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

৭. স্বজাতির মধ্যে একই ধর্মানুষ্ঠান নিয়ে লাঠালাঠি, খুনাখুনী বন্ধ হলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোরানের প্রতি সন্দেহ অনেকটা দূর হবে।

৮. মুহম্মদের অনুসৃত সে-ই রমজান মাস আবার ফিরে পাবে।

৯. আল্লাহর কেতাবের ফয়সালার উপর রাজা-বাদশা বা চাঁদ দেখা কমিটির কুফুরি হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে।

১০. ‘কোরান মনুষ্য জাতির জন্য’ দাবিটা শুধু শ্লোগান সর্বস্বই থাকবে না বরং বাস্তবেই তা প্রমাণিত হবে।

১১. প্রত্যেকটি এলাকা বা দেশ স্ব-স্ব সময় অনুযায়ী রোজা, ঈদ ও হজ্জ পালন করবে। এ হজ্জটি জাতীয় বা দেশীয় হজ্জ হিসাবে স্বীকৃত হবে; আজ যাকে ওমরা হজ্জ বলে।

১২. বছরে একটি আন্তর্জাতিক হজ্জ অবশ্যই থাকবে; তার দিন-তারিখ কোরানেই নির্দিষ্ট করা আছে। সময়ক্ষণ গ্রীনউইচ সময় অনুযায়ী ধার্য হবে। এ হজ্জে প্রত্যেকটি দেশের জ্ঞানী-গুনীগণই প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করবে। তার মূল ও প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকবে প্রত্যেকটি দেশের যাবতীয় সমস্যাদি তুলে ধরা এবং তার স্থায়ী এবং সুস্পষ্ট ও সুষম সমাধান করা।

প্রত্যেকটি বস্তু-অবস্তুর বদলা রয়েছে। তা হিসাব-নিকাশ, গবেষণা ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করে নিতে হয়। যেমন: ডলারকে টাকা, রিয়ালকে মার্ক; বাংলাকে আরবি; আরবিকে হিন্দি; জানুয়ারিকে পৌষ; অতঃপর রমজানকে পৌষ, পৌষকে ফেব্র“য়ারি করা সম্ভব; শুধুমাত্র দরকার গবেষণা ও হিসাব নিকাশের। এ সম্বন্ধে সুন্দর একটি আয়াত অনুসরণীয়:

আশ্বাহরুল…ক্বিছাছ। (২:বাকারা-১৯৪) অর্থ: নিষিদ্ধ (পবিত্র) মাসের বদলে নিষিদ্ধ (পবিত্র) মাস। এবং সবকিছুরই বদলা রয়েছে।

এতে আরবগণ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে:

কোরানের বিধান মতে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে একক আল্লাহতে বিশ্বাসী ও সঙ্গতি যার আছে, তাকে অবশ্যই শপথ বা হজ্জ করতে হবে। (৩: এমরান- ৯৬, ৯৭)

ধর্ম গুরু ইব্রাহিম, আর তারই বংশধর ও অনুসারি সকল মানবজাতি; এমন কি সকল রাছুল-নবীগণও। তিনিই কাবা ঘরের সংস্কারক। অতএব একক আল্লাহতে বিশ্বাসী সকল মুছলিম অমুছলিমদের সমান অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে এই কাবা ঘরের প্রতি। যে কোন ব্যক্তির হজ্জের ইচ্ছা এবং সঙ্গতি থাকলে তাকে বাধা দেয়ার অধিকার কোন মানুষ বা সরকারের নেই; পক্ষান্তরে সৌদি রাজাগণ কোরান বিরুদ্ধ, বে-আইনী ফতোয়া দিয়ে একক আল্লাহতে বিশ্বাসী অমুছলিমদের হজ্জ গমণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া সৌদি সরকারের স্থানের অপ্রতুলতা, অদূরদর্শিতা, প্রাকৃতিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে প্রত্যেকটি দেশের গমনেচ্ছুদের সংখ্যা নির্ধারিত করে দেয়া হয় ; যা কোরানের আলোতে বৈধ নয়। ফলে কোটি কোটি মানুষের ইচ্ছা ও আর্থিক সঙ্গতি থাকতেও তারা হজ্জ করতে পারছে না। অতএব, আজ প্রত্যেকটি দেশ রোজা, হজ্জ স্বতন্ত্র সময় পালন করলে:

ক. আরব সরকারের হজ্জ গমনেচ্ছুদের সংখ্যা নির্র্দিষ্ট করার দরকার হবে না।

খ. আরব সরকারের কোরানের নির্দেশ অমান্য করে দোযোখী হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

গ. স্বভাবতঃই হাজীদের সংখ্যা লক্ষকোটি গুণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে সৌদি সরকারের বৈদেশিক আয় ততোধিক বৃদ্ধি পাবে এবং তা কালাকাল যাবৎ বলবৎ থাকবে।

আরবদের তেলের পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে, একদিন শেষও হবে। এমতাবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হঠাৎ যে কোন সময় তেল ফুরিয়েও যেতে পারে; ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। অতএব সৌদি সরকারের উচিত নিকট অথবা দুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই কোরানিক তথ্যের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা।

কোরানে বর্ণিত “চন্দ্র ও সূর্য হিসাবের জন্য” বটে! চন্দ্র প্রধানত পৃথিবী পৃষ্ঠের পানি এবং জীব দেহের রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ বা হিসাব দেয়; পক্ষান্তরে সূর্য প্রধানত সময়-কাল ও আবহাওয়ার হিসাব দেয়।

আমার দেশ, আমার ভাষা, আমার মাটি, আমার প্রকৃতি-পরিবেশ, আমার বিশ্বাস, আমার ধর্ম রক্ষা পবিত্র এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসাবে যুগ যুগ ধরে বিবেচিত হয়ে আসছে; সুতরাং এবারের সংগ্রাম হোক আমার নিজস্ব এবং নির্দিষ্ট কল্যাণকর কালে উপবাসব্রত ধারণের।

চুল, গোফ এবং দাড়ী কর্তন করার কথা কোরআনে উল্লেখ নাই

❤চুল, গোফ এবং দাড়ী কর্তন করার কথা
কোরআনে উল্লেখ নাই কিংবা এইগুলি রাখা হারাম বা
রাখা নিষেধ এমন আয়াত কুরআনে নাই❤
নারীদের মুখমন্ডলে গোফ এবং দাড়ী নাই। অথচ পুরুষদের মুখমন্ডলে গোফ এবং দাড়ী আছে। এটা আল্লাহর বিধান বা নিয়ম। আর মানুষের শরিরের চুল ও দাড়ী এবং গোফ যত টুকু বড় হওয়া বা লম্বা হওয়ার প্রয়োজন ততটুকুই বড় বা লম্বা হবে তার বেশি হবে না। যেমন চোখের ভ্ররু যতটুকু বড় হওয়ার প্রয়োজন তার বেশি বড় হয় না। যেমন ভাবে আদম (আঃ) এর সময় চুল দাড়ী গোফ কর্তন করার জন্য কোন কাঁচি বা খুর ছিল না। কারন খুর তৈরির জন্য লোহা ও আগুন কোনটা তখন আবিস্কার হয়নি। ফলে তখন আদম (আঃ) এর মুখমন্ডলে দাড়ী গোফ এবং মাথায় চুল বড় হয়েছিল যততুকু বড় হওয়া প্রয়োজন ততটুক। সেই থেকে চুল দাড়ী গোফ রাখার নিয়ম চলে আসছে। কারন এগুলি সবই আল্লাহর দেওয়া বিধান/নিয়ম। এখন যদি কেহ চুল, দাড়ী ও গোফ কর্তন করে তাহলে আল্লার নিয়মের পরিবর্তন করল, কিন্তু আল্লাহর নিয়মের কোন পরির্বতন নেই (১৭ঃ৭৭)। আর পুরুষের মুখমন্ডলে গোফ এবং দাড়ী দেওয়ার আল্লাহর একটি উদ্দেশ্য আছে। কারন আল্লাহ কোন কিছু নিরর্থক সৃষ্টি করে নাই (৩৮ঃ২৭) (২১ঃ১৬)। তাই চুল, দাড়ী ও গোফ কর্তন করে তারা আল্লাহর উদ্দ্যেশকে ব্যর্থ করে। কিন্তু যারা আল্লাহর নির্দশনকে ব্যর্থ করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম (হজ্ব-৫১)। কাজেই চুল দাড়ী ও গোফ কর্তন করা বিধি সম্মত নহে। তা ছাড়া চুল দাড়ী ও গোফ রাখা হারাম বা নিষেধ এমন আয়াত পবিত্র কোরআনে নেই। তারপর অনেকেই বলে গোফ এবং চুল রাখা হারাম, তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করি। আদম (আঃ) যখন বেহেস্তে ছিলেন তখন তিনি শারিরিক ভাবে পূর্নাঙ্গ পুরুষ মানুষ ছিলেন, তখন তার সাথে তার স্ত্রীও ছিল (০২ঃ৩৫) তখন তার মুখে নিশ্চয় গোফ ছিল আর গোফ যদি হারাম হতো তবে হারাম বস্তু বেহেশ্তে কিভাবে ছিল। যেহেতু বেহেশ্তে কোন হারাম বা অপবিত্র বস্তুর উপস্থিত থাকতে পারেনা। কারন অপবিত্রতার কারনে ইবলিস সেখান থেকে বহিষকৃত হয়েছিল (১৫ঃ৩৪)। সেই হিসাবে আদম (আঃ) কে যখন আল্লাহ ওই মুহুর্তে তুমি ও তোমার স্ত্রী একসাথে জান্নাতে বসবাস কর (০২ঃ৩৫) আবার হাশরের দিনেও চুলের ঝুটি ধরিয়া অপরাধীদেরকে পাকড়াও করা হবে (৫৫ঃ৪১) (৯৬ঃ১৫) এই আয়াতে নাওয়াছি শব্দ এসেছে, যার অর্থ চুলের উপরের অংশ (আরবি অভিধান পৃঃ নং- ২৪৮৩)। এই আয়াতে প্রমাণ হয় হাশরের দিন মানুষের মাথায় চুল বড় থাকবে কাজেই বর্তমানেও চুল দাড়ী ও গোফ যতটুকু বড় হওয়া প্রয়োজন ততটুকু বড় হবে এতে কোন বাধা নেই সেহেতু চুল দাড়ী ও গোফ রাখা হালাল। এতে প্রমান হয় আদম (আঃ) এর মুখমন্ডলের গোফ এবং মাথার চুল নিশ্চয় হারাম ছিলনা। যেহেতু পবিত্র কোরআনে কোথাও গোফ এবং চুল রাখা হারাম বা নিষেধ এই মর্মে কোন আয়াত পবিত্র কোরআনে আসে নাই। এতে প্রমাণিত হয় যে, চুল, দাড়ী গোফ রাখা আল্লাহ হারাম করে নাই এটা নিশ্চিত। মূলতঃ ঐগুলিই হারাম যাহা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। মূলত পবিত্র কোরআনের সকল আয়াতে নবী (সঃ) এর মুখ নিঃসৃত বাণী (৬৯ঃ৪০)। তাঁর প্রতি যাহা অহি অবর্তীণ হয় শুধু তিনি তাহাই বলেন (৫৩ঃ৪)। তিনি নিজের তরফ থেকে কোন কিছুই বলেন নাই (৫৩ঃ৩)। তিনি আল্লাহর নামে কোন কিছুই বানাইয়া বলে নাই (৬৯ঃ৪৪)। আর আল্লাহ বলেন নাই এমন কথা যদি তিনি আল্লাহর নামে বানাইয়া বলিতেন তাহলে আল্লাহ তার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া ফেলিতেন (৬৯ঃ৪৫) এবং তার জীবন ধমনী কাটিয়া দিতেন (৬৯ঃ৪৬)। আর এই কোরআন নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতিত অপর কাহারো রচনা নহে (১০ঃ৩৭)। ইহা প্রভুর পক্ষথেকে নাজিলকৃত গ্রন্থ (৬৯ঃ৪৩)। কাজেই এই কোরআনে যাহা হারাম বলে উল্লেখ নেই তাহা নবী (সঃ) হারাম করেন নাই এটাও নিশ্চিত। কারণ তিনি ওহি ব্যতিত কাউকে সতর্ক করে নাই (২১ঃ৪৫)। আর নবী (সা.)-এর জন্য বিধান স্বরূপ এই কোরানই (২৮ঃ৮৫)। যেহেতু চুল, দাড়ী গোফ রাখা হারাম কোন ওহি আসে নাই বিধায় তিনি এইগুলি হারাম মর্মে কাউকে সতর্ক করে নাই। তাছাড়াও নবী (স) ওহি ব্যতিত কোনকিছু অনুসরণ করে নাই (৬ঃ৫০)। আর হারাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আমি যাহা হারাম করেছি ইতিপূর্বে কোরআনে শুধু তাহাই হারাম (১৬ঃ১১৮)। আল্লাহ আরো বলেন, আর যাহা কিছু হারাম করেছি যাহা ব্যতিত বাকী সমস্ত কিছুই হালাল (৩ঃ৯৩)। যেহেতু চুল, দাড়ী গোফ রাখা হারাম এই কোরআনে উল্লেখ নেই তাহলে এটা অবশ্যই হালাল। আর কোন হালাল বস্তুকে তোমরা হারাম বলিওনা (৫ঃ৮৭)। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকেই বলে- এই কোরআনের বাইরেও আল্লাহর কিছু ওহি আছে, যাহা কোরআন লিপিবদ্ধ করার সময় বাদ পড়েছে। তাদের কথা ঠিক নহে। কারণ এই কোরআন আল্লাহ নিজেই হেফাজত করেন (১৫ঃ৯) এবং সর্বাবস্থায় অভিসপ্ত শয়তান হইতে এই কোরআনকে হেফাজত করেন (১৫ঃ১৭)। অর্থাৎ নবী (স) এর উপর নাজিলকৃত সকল ওহি এই কোরআনের ভিতর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আর এই জন্য ওহি ব্যতিত কোন কথা এই কোরআনে নেই এটাও নিশ্চিত। কারণ নবী (স) রূপের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর কথাগুলোকে ব্যক্ত করেছেন। ফলে ইবলিশের অনুপ্রবেশ এই কোরআনের ভিতরে ঘটে নাই। এইজন্য পবিত্র কোরআনের কথাগুলো নবী (স) সুরতের মাধ্যমে আল্লাহর কথা। যদি নবী (স) রূপের বাইরে এসে আল্লাহ মানুষের সাথে কথা বলতো সেক্ষেত্রে প্রতারিত শয়তান মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চনা দিতে পারত। কারণ ইবলিশ মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চনা দিতে সক্ষম (৩১ঃ৩৩) (৩৫ঃ৫)। যখন ওহি নাজিল হয়েছে তখন নবী (সঃ) এর নিজ আকৃতিতেই আল্লাহ স্থির হয়েছে (৫৩ঃ৬)। কারণ নবী (সঃ) এর রূপ ইবলিশ ধারণ করতে পারে না, কারণ নবী (সঃ) স্বরূপে সেজদাকারী (৭ঃ২৯)। আর যেহেতু ইবলিশ আদম কাবায় সেজদা না দিয়েই কাফের (২ঃ৩৪) সেহেতু ইবলিশ আদম কাবায় সেজদার শামিল হবে না (১৫ঃ৩৩) এইজন্য নবী (স) এর সুরত ইবলিশ ধারণ করে না। এই জন্য পবিত্র কোরআনের মধ্যে ইবলিশের কথার অনুপ্রবেশ ঘটানো রোধ করার জন্য নবীর রূপের মাধ্যমে আল্লাহ কোরআন নাযিল করেছেন। আর এইভাবেই তিনি কোরআনকে ইবলিশ থেকে হেফাজত করেছেন (১৫ঃ১৭)। যেহেতু চুল, দাড়ি গোফ ও বাদ্যযন্ত্র হারামের কথা কোরআনে উল্লেখ নাই, বিধায় এইগুলি হারাম নহে। কারণ দ্বীনের সকল বিষয় ফয়সালাকারী এই কোরআন (৮৫ঃ১৩)। আর এই কোরআন মোতাবেক যারা দ্বীনের বিষয়ে বিধান দেয় না উহারাই যালেম, ফাসেক ও কাফের (৫ঃ৪৪) (৫ঃ৪৫) (৫ঃ৪৭)। যেহেতু উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণ হয় আল্লাহ যাহা হারাম করেছেন তাহা ব্যতিত সকল বস্তু হালাল (৩ঃ৯৩)। যেহেতু চুল, দাড়ি গোফ রাখা হারাম কোরআনে উল্লেখ নেই তাহলে এইগুলি রাখা হালাল। আর এইগুলি মানব শরীরে আল্লাহর দেওয়া নিদর্শন। অতএব যারা বর্তমানে চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করেন তাহারা আল্লাহর নির্দশনের পরিবর্তন ঘটায়। আল্লাহর নির্দশনের বা নিয়মের কোন পরিবর্তন করা যাবে না (১৭ঃ৭৭)। আর চুল, দাড়ি গোফ যেহেতু আল্লাহর নিদর্শন তাহলে আল্লাহর নির্দশনকে যারা কর্তন করে তাহারা আল্লাহর নিদর্শনকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। ফলে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম (২২ঃ৫১)। তাই আল্লাহর নির্দেশকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে রসূলকে রেসালাতের ভার দেওয়া হইয়াছে (৬ঃ১২৪)। আর আল্লাহ বলেন, আমার নির্দেশ মোতাবেক তোমরা রসূলের আনুগত্য কর, এইজন্য আমি তোমাদের মধ্যথেকে তোমাদের কাছে রসূল পাঠাইয়াছি (৪ঃ৬৪)। তাই মানুষ কোরআনের সমস্ত নির্দেশ পালন করবে বলে রসূলের কাছে তথা গুরুর কাছে আনুগত্যের বায়াত গ্রহণ করে, অথচ কিছু লোক গুরুর কাছে বায়াত গ্রহণ করার পর গুরুর তথা রসূলের নিষেধ থাকার পরও তারা চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করে কোরআনের পরিপন্থি তথা মুসলমানদের পরিপন্থি কাজ করে। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, যারা এই রকম ভাবে আল্লাহ ও রসূলের নিষেধকে নিষেধ মনে করে না তাদের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নত না হয় (৯ঃ২৯)। অর্থাৎ চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করা যাবে না, তারপরও রসূল তথা গুরুর নিষেধ অমান্য করে চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করে তারা রসূল তথা গুরুর অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ যে সমস্ত ভক্তগণকে রসূল তথা গুরু চুল, দাড়ি গোফ কর্তন না করা নির্দেশ দেন তারপরও সেই নির্দেশ অমান্য করে চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করে তাদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ ও রসূল (কুরআন মোতাবেক) কোন নির্দেশ দিলে কোন মমিন সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না (৩৩ঃ৩৬)। যদি সে আল্লাহ রসূলকে অমান্য করে তাহলে সে পথভ্রষ্ট (৩৩ঃ৩৬)। তারা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হয়নি। তাদের জন্য আল্লাহ বলেন, হে মোমিন তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও (২ঃ২০৮)। কাজেই চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ রসূলের আনুগত্য করে তারা গুরুর কাছে পরিপূর্ণভাবে বায়াত গ্রহণ করে। আর যারা গুরুর তথা রসুলের পরিপূর্ণভাবে আনুগত্য করে তারা সেদিন নবীর সঙ্গী হবে (৪ঃ৬৯)। এখানে উল্লেখ্য যে, এমন অনেক লোক আছে, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয় এবং স্বল্প মূল্যে তা বাজারে বিক্রয় করে (২ঃ৭৯) ঠিক তদ্রƒপ এমন কিছু লোকও আছে, যাহারা নবী (স) বলেন নাই এমন কথা নবীর হাদীস বলে চালিয়ে দেয় যেগুলি নবী (স) বলেন নাই। সেই সমস্ত বিষয়গুলি মানব রচিত গ্রন্থের উল্লেখ করে বলেÑ ইহা হারাম, ইহা হালাল ইত্যাদি। তাদেরকে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করিবার জন্য বলিওনা ইহা হালাল এবং ইহা হারাম’ (১৬ঃ১১৬)। কারণ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারী সবচেয়ে বড় যালিম (১১ঃ১৮)। আর যারা এমনটি করে তারাই অজ্ঞ বা মূর্খ। আল্লাহ বলেন ‘তোমরা অজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে পরিহার কর’ (৭ঃ১৯৯)। কারণ কোরআনই দ্বীনের বিষয়ে পরিপূর্ণ দলিল (৫ঃ৩)। কাজেই দ্বীনের বিষয়ে এজমা,কেয়াস বা মানব রচিত গ্রন্থ কিংবা হাদীসের কোন প্রয়োজন নাই। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে তাহাই আল্লাহ হারাম করেছেন যাহা কোরআনে উল্লেখ আছে, আর যেগুলি হারামের কথা কোরআনে উল্লেখ নেই সেগুলি নবী (স) হারাম করেন নাই, কারণ উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হারামের বিষয়টি কোরআনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর এই কোরআনের যাহা হারাম করে নাই এমন বিষয়টি যাহারা হারাম করিবে উহারাই সীমালংঘনকারী। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সীমালংঘন করিওনা’ (৫ঃ৮৭)। আর নবী (স) সীমালংঘনকারী ছিলেন না বিধায় কোরআনে যাহা হারাম করে নাই তাহা তিনি হারাম করে নাই এটা নিশ্চিত। কারণ আল্লাহ সীমালংঘনকারীকে পছন্দ করে না (৫ঃ৮৭)। অতবএ, চুল, দাড়ি গোফ ও বাদ্যযন্ত্র হারাম নহে।

From সত্যৰ সন্ধান fb

আলেম কে,কারা,fb

#আলেমকেকারা ???? ৮ঃ২৯

মাদ্রাসা কারা কেনো বানাইছে??? ১৯ঃ৫৯

অনেক অহঙ্কারি শিক্ষিতরায়ো কুশিক্ষার তাঁবেদারি করে !!!
~~~~
মুফতি-মুহাদ্দেস ও নিজেরা

আল্লাহ্সাজামাওলানা-২ঃ২৮৬ +++ ঐসবেের সিলেবাস কাহাদের কৌশলে বানানো???

আলেম কে/কারা??? #ঐশীবাণী_কুরআন হলো আলেম-৮ঃ২৯

~~
তারা কোন্ #ধর্মের #আলেমওলেমা?

কুরআন বুঝার চেষ্টাকরা হতে মানুষকে দূরে রেখে বুখারীগংদের বানানো হাদিসের ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্যই
১৭৮১ সালে ইংরেজদের চাতুরীতে প্রথম তৈরি করা হয় #আলিয়া_মাদ্রাসা, কোলকাতা,
তারও পরে আবার

১৮৬৬ সালে খৃষ্টানইংরেজদের বানানো সিলেবাসে তৈরিহলো #দাকওয়ামি_মাদ্রাসা, দেওবন্দ,সাহারানপুর, উত্তরপ্রদেশ, বৃটিশইন্ডিয়া(ভারত)।
সেই তারা, যারা আল্লাহর ঐশীবাণী/কুরআনের বিরুদ্ধে বানানো ধর্মের প্রচারক !! আবার

সৌদির বানানো মদিনা’তেয়ো
১৯৬১ সালে
ঐ একি সিলেবাসে তৈরি করা হয়েছে

মদিনা_ইউনিভার্সিটি

মানুষকে কুরআন বুঝার চেষ্টাকরা হতে দূরে রেখে-৭/২-৩
বলেবলে বানানো হাদিসের-৩১/৬ ধর্ম পালনকারী মুশরিকদের সাথে নিতে-৪/১১৬, ৬/১১৬
~~
(কুরআনের সুরা ও আয়াত নং মিলিয়ে বুঝুন)আল্লাহু আকবার : বলার আয়াত দিয়ে বলেন ? আপনি সত্যবাদি ??? ৪৬ঃ১৩+

~~
যাহারা 🏵️আল্লাহ্‌র আয়াতে🏵️ বিশ্বাস করে না তাহারা তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তাহারাই মিথ্যাবাদী।

اِنَّمَا يَفْتَرِى الْـكَذِبَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ‌ۚ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الْكٰذِبُوْنَ

সূরা নম্বরঃ ১৬, আয়াত নম্বরঃ ১০৫

আবদুল ওহাব নজদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

😡ওহাবীদের চিন্তাধারা কতটা নোংরা এবং রাসূল পাক সঃ এর বিদ্বেষী একবার পড়ে দেখুন।
আবদুল ওহাব নজদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়।😡

🚫আব্দুল ওয়াহাব নজদীর মতবাদে যারা বিশ্বাস করে,,তারাই হলো ওয়াহাবী।।
🚫কিন্তু কে এই ওয়াহাব নজদী??
🚫কিই বা তাহার মতবাদ?
☕আসুন সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।।
🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝🏝
বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্নিত আছে, আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্নিত,,রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ আমার
ওফাতের পর নজদ হতে শয়তানের তীক্ষ্ণধারার দুটি শিং বের হবে।।
উক্ত দুটি শিংয়ের মধ্যে ওয়াহাব নজদীকে
শয়তানের দ্বিতীয় শিং হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়।এই ঘৃণিত ব্যক্তিটি আবু বকর সিদ্দিক(রাঃ)খেলাফতের এগারশত বছর পর আবির্ভূত হয়।বহু কালের প্রতিষ্ঠিত ইসলামের মুল কাঠামোতে এই ব্যক্তি প্রবল ঝাকুনি দেয়। সে সমগ্র
আরব ভূখণ্ডে
তোলপাড় ও ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে।।
তার মতবাদগুলো ছিলঃ
১ / প্রিয় নবীজী (সঃ) এর রওজা শরীফ জিয়ারত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি এই নিষেধ অমান্য করবে, তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। তার হুকুম অমান্য করায় লোক মারফত জিয়ারতকারীর মাথা ও দাড়ি
মুড়ায়ে দেয়।।
২/ আযানের মধ্যে মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বাক্য উচ্চারণ করা যেনার অপেক্ষা বড় অপরাধ। তার বাসস্থান সংলগ্ন এক মসজিদ থেকে আযানের সময়
উক্ত বাক্য উচ্চারণের কারনে মুয়াজ্জীনকে ধরে এনে প্রকাশ্যে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।
৩/ কোরআন বুঝার জন্য কোন তাফসীর কিতাবের প্রয়োজন নাই,, যে যার মতো কুরআনের ব্যাখ্যা করতে পারবে। উক্ত ঘোষণার পর তার নেতৃত্বে
ফিকাহ্ তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থসমূহ পুড়িয়ে দেয়া হয়।
৪/ রাসূলুল্লাহ (সঃ) মরে মাটির সাথে মিশে
গেছে, কাজেই তাকে কেউ দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে না, ইহা সকলের জন্য নিষিদ্ধ।
৫/ চার ইমাম কিছুই নয়। তাদের মাজহাব বাতিল। কেননা তাঁরা দিশেহারা ছিলেন।
৬/ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ছিলেন ডাক পিয়নের মত।
৭/ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর হাতে যত মুশরিক বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হয়েছে, আল্লাহ বিশ্বাসী হওয়ার কারনে তারা সবাই জান্নাতে যাবে।
৮/ যারা ওয়াহাবী আকিদায় বিশ্বাসী হবে না, তাদের মাল সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ও তাদের হত্যা করা জায়েজ হবে।
৯/ ওয়াহাবী আকিদায় অনুপ্রবেশের ধারা ছিল এইঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আমি এতদিন কাফের ছিলাম এবং আমার মাতা পিতা /দাদা দাদী সকলে কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
১০/ আজ হতে আর কেউ আজান ও নামাজের শেষে দোয়া করবে না।
১১/ আওলিয়া কেরামের মাজার গুলো ভেঙে তদস্থলে পায়খানা নির্মাণ করা উত্তম। নজদীরা উক্ত আকিদার বাস্তবায়নের জন্য এহসা প্রদেশের পবিত্র মাজারগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এবং এবং তারই মেয়ের জামাতা সৌদি প্রথম ওহাবী সরকার হযরত মা ফাতেমা রাঃ সহ সকল বিখ্যাত সাহাবীদের রওজা মোবারক বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যা আজও বিদ্যমান রয়ে গেছে। ( নাউজুবিল্লাহ )।
ফতওয়ায়ে “শামী, ইশয়াতে হক্ব,ওহাবীদের ইতিহাস, ওহাবীদের উৎপত্তি, সাইফুল মাযহাব, মাযহাব কি ও কেন, সাইফুল জাব্বার” ইত্যাদি কিতাবে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর পরিচয় সম্পর্কে এইভাবে বর্ণিত আছে। সংগৃহীত

https://www.facebook.com/100024127759217/posts/pfbid076Dbk2ALUyeXs1g38Pi8CtSwZ7QdGZrM2Kg9GStLya6D1qAxfw9FgEF4MPZjDTGFl/SourceFbLink

সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস ও কুরআন অস্বীকারকারীদের কান্ড- Syed Wali

সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস ও কুরআন অস্বীকারকারীদের কান্ড
বিদ্রুপ-যুক্তি: কুরআনের কৌশল

বহুল আলোচিত-সমালোচিত ভারতীয় মুসলিম বংশোদ্ভত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস। এই উপন্যাসে মূলতঃ রাসুল (সঃ) এবং তার সঙ্গী-সাথীদের বিকৃত নামকরণে কাল্পনিক চরিত্র দাঁড় করিয়ে কুরআন ও রাসুল (সঃ) সম্পর্কে সেই সপ্তম শতাব্দির অবিশ্বাসীদের উপহাস ও বিদ্রুপের বিষয়গুলোই উপজীব্য করা হয়েছে।

উপনাস্যের নামকরণ
‘স্য্যাটানিক ভার্সেস’ নামকরণ ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাকের বর্ণনাকৃত ইতিহাসে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর মক্কা জীবনের একটি কথিত ঘটনা থেকে নেওয়া হয়েছে। ইবনে ইসহাকের এই মৌখিক ইতিহাস বর্ণনার সূত্র ধরে পরবর্তীতে নবম শতাব্দিতে ইতিহাসবিদ এবং কুরআনের প্রথম তাফসিরকারক আল তারাবী তার লিখিত ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রথম পর্যায়ে মক্কায় রাসুল (সঃ) মক্কাবাসী কাফিরদের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছান। এই সমঝোতার শর্ত হিসেবে রাসুল (সঃ) ও তার অনুসারীরা আল্লাহর ইবাদত করার পাশাপাশি কাবায় রক্ষিত তিনটি মূর্তি লাত, উজ্জা ও মানাত-এর পূজা করবে এই শর্তে যে কাফিররা মুহাম্মাদ (সঃ) এর আল্লাহরও ইবাদত করবে। বলা হয় এই সমঝোতার অনুমতি দিয়ে আল্লাহ তিনটি আয়াত অবতীর্ণ করার পরই রাসুল (সঃ) এই সমঝোতায় পৌঁছান। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছানোর পরপরই রাসুল (সঃ) বুঝতে পারেন যে তিনি যে তিনটি আয়াত কুরআনের আয়াত মনে করেছেন সেগুলো আসলে জিবরাঈল (আঃ) বাহিত আল্লাহর আয়াত নয়। এটি শয়তান আল্লাহর আয়াত বলে তাকে বিভ্রান্ত করেছে। এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ রাসুলকে প্রকৃত বিষয় জানিয়ে ওহী অবতীর্ণ করেন যা পরবর্তীতে সুরা নজম-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পরপরই রাসুল (সঃ) কাফিরদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি থেকে সরে যান।
ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক ও আল তাবারীর বর্ণনা অনুযায়ী রাসুল ভুলক্রমে শয়তানের বাণীকে ওহী হিসেবে মনে করেন। আাল্লাহর কাছ থেকে ওহী নাজিল হওয়ার পরপরই রাসুল তার ভুল জানতে পেরে সাথে সাথে সে সমঝোতা ভেঙে দেন এবং তিনি তার নিজস্ব ধারায় আল্লাহর একাত্ববাদের বাণীর প্রচারণা চালিয়ে যান।
ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক ও আল তাবারী তাদের বর্ণনায় এই তিনিটি পংক্তিকে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বা ‘শয়তানের পংক্তি’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। সালমান রুশদীর উপন্যাসের নামকরণ এখান থেকেই।

উপনাস্যের কাহিনী
এই উপন্যাসে অন্যতম দুই চরিত্র বোম্বের অভিনেতা ফারিশতা এবং একজন ইমিগ্রান্ট চামচা। বিমান দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার পর ফারিশতা ও চামচার কথপোকথনের মধ্য দিয়ে উপন্যাসের শুরু। বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর ফারিশতার নাম হয় জিবরাঈল ও চামচা হয় শয়তান। উপনাস্যের অন্যতম প্রধান চরিত্র মাহু- (রাসুল) এবং আয়েশা। এই সব চরিত্রের বর্ণনার মাধ্যমে লেখক কুরআনকে শয়তানের ভাষ্য হিসেবে এবং মাহু- চরিত্রটিকে একজন ভিলেন হিসেবে তুলে ধরে স্যাটায়ারধর্মী বর্ণনার মাধ্যমে কুরআনের বাণীকে শয়তানের বাণী এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-কে একটি হাস্যকর চরিত্র হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস চালান।

কেন রুশদী এবং স্যটানিক ভার্সেস আলোচিত
কুরআনকে শয়তানের বাণী এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-কে হাস্যকর চরিত্র হিসেবে চিত্রায়ানের প্রচেষ্টা অতীতে বহুজনে করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্যটানিক ভার্সেস পশ্চিমা মহলে এত ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেল কেন? এ প্রশ্নে যে বিষয়টি সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো : এই উপন্যাসটির চরিত্র উপস্থাপনা বর্ণনার বৈশিষ্ট্য এবং সর্বোপরি উপনাসের বিচিত্র চরিত্র চিত্রয়ানের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে তা হলো, কুরআনে বর্ণিত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সন্তান কুরবানি দেওয়ার প্রসঙ্গটি। এই গ্রন্থে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়, ‘সন্তানকে জবেহ’ এর উদ্যোগটি মানবিক দিক থেকে যেহেতু চরম বর্বরতার সুতরাং কুরআন শয়তানের বাণী ব্যতীত আর কি হতে পারে?
সালমান রুশদী তার উপন্যাসে এই যুক্তির মাধ্যমে মানুষের মানবিক মূল্যবোধের দিকটি খুবই কৌশলে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অন্তত পশ্চিমা দুনিয়ায় হলেও বেশ কিছুটা সফল হয়েছেন।
কুরআনে সন্তান হত্যা নিষিদ্ধ সম্পর্কে উপদেশ
কুরআনে সন্তান হত্যা জঘন্যতম কর্ম বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। ‘পুত্র শিশুরা আমার আর নারী শিশুরা আল্লাহর কন্যা’-এই যুক্তি দিয়ে বহু পিতা তার কন্যা শিশুদের হত্যা করত এবং আরবে তা অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। এই নারী শিশুদের হত্যার বিষয়ে বেশ কয়েকটি আয়াতে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়ে তা থেকে বিরত থাকার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
“উহাদের কাহাকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তাহার মুখম-ল কাল হইয়া যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। উহাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাহার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হইতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে উহাকে রাখিয়া দেবে, না মাটিতে পুঁতিয়া ফেলিবে। সাবধান! উাহারা যাহা সিদ্ধান্ত নেয় তাহা কত নিকৃষ্ট!” (১৬ : ৫৮, ৫৯)
“তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র সন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান। এই প্রকার বণ্টন তো অসংগত।” (৫৩ : ২১, ২২)
“যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, কী অপরাধে উহাকে হত্যা করা হইয়াছিল?” (৮১ : ৮, ৯)
“তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করিও না। উহাদিগকে আমিই রিযিক দেই। এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয়ই উহাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।” (১৭ : ৩১)
সুতরাং যে কুরআন যখন নিজেই সন্তান হত্যাকে বর্বরতম কর্ম বলে অভিহিত করছে এবং কর্মের জন্য কঠোর শাস্তির সংবাদ দিচ্ছে, সেই কুরআন কিভাবে একজন রাসুলকে তার নিজ পুত্রকে জবেহ করার আদেশ দিতে পারে এবং কিভাবে তা একজন অনুগত ব্যক্তির সৎ ও মহৎ কর্ম বলে বর্ণনা করতে পারে: যে কোন বিবেকবান, যুক্তিরোধসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে এ প্রশ্ন উত্থাপন খুবই স্বাভাবিক।

জবাবের জন্য কুরআনই যথেষ্ট
আল্লাহ বলেন, ইব্রাহিমকে তার নিজ পুত্রকে জবেহ করার যে আদেশ দিয়েছিলেন এই আদেশের মাধ্যমে তিনি তার প্রিয় রাসুল ইব্রাহীম (আঃ)-কে পরীক্ষা করেন এবং এ পরীক্ষা শুধুমাত্র ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্যই।
আল্লাহ বলেন :
“নিশ্চয়ই ইহা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাহাকে মুক্ত করিলাম এক কুরবানীর বিনিময়ে। আমি ইহা পরবর্তীদের স্মরণে রাখিয়াছি। ইব্রাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।” (৩৭ঃ ১০৬-১০৯)
কি এমন বিষয় ছিল ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবনে যার জন্য এ কাজটি যে ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্য মোটেও বর্বরতা নয় বরং তিনি যে প্রকৃত আত্মসমর্পনকারী, অনুগত, কৃতজ্ঞ এবং জ্ঞানী তার এক কঠিন পরীক্ষা মাত্র?
এ প্রশ্নের খুবই শক্ত যুক্তিসংগত এবং যে কোন মানবিক গুলবলী সম্পন্ন ব্যক্তির কাছে অবশ্যয়ই গ্রহণযোগ্য জবাবটি কুরআনে বর্ণিত ইব্রাহীম (আঃ) জীবনের কয়েকটি ঘটনার মধ্যেই দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নিচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করা যেতে পারে :
“উহারা বলিল, ‘ইহার জন্য এক ইমারত নির্মাণ কর, অতঃপর ইহাকে জলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর।। উহারা তাহার বিরুদ্ধে চক্রান্তের সংকল্প করিয়াছিল; কিন্তু আমি উহাদিগকে অতিশয় হেয় করিয়া দিলাম।” ( ৩৭ঃ ৯৭, ৯৮)
“তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত আসিয়াছে কি? যখন তাহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, সালাম।’ উত্তরে সে বলিল, ‘সালাম। ইহারা তো অপরিচিত লোক।
অতঃপর ইব্রাহীম তাহার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি মাংসল গো-বৎস ভাজা লইয়া আসিল ও তাহাদের সামনে রাখিল এবং বলিল, তোমরা খাইতেছ না কেন।
ইহাতে উহাদের সম্পর্কে তাহার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হইল।
উহারা বলিল, ‘ভীত হইও না। অতঃপর উহারা তাহাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিলো।
তখন তাহার স্ত্রী চীৎকার করিতে করিতে সম্মুখে আসিল এবং গাল চাপড়াইয়া বলিল, ‘‘এই বৃদ্ধা-বন্ধার সন্তান হইবে। তাহারা বলিল, ‘তোমার প্রতিপালক এই রকমই বলিয়াছেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।” (৫১ঃ ২৪-৩০)
“যখন ইব্রাহীম বলিল, ‘ হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর আমাকে দেখাও।’ তিনি বলিলেন, ‘তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না?’ সে বলিল, ‘কেন করিব না, তবে ইহা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য।’ তিনি বলিলেন, ‘তবে চারটি পাখি লও এবং উহাদেরকে তোমার বশীভূত করিয়া লও। তৎপর তাহাদের এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন কর। অতঃপর উহাদেরেকে ডাক দাও, উহারা দ্রুত গতিতে তোমার নিকট চলিয়া আসিবে। জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (২ঃ ২৬০)
“সে বলিল, ‘আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চলিলাম তিনি আমাকে অবশ্যয়ই সৎ পথে পরিচালিত করিবেন।; হে আমার প্রতিপালক আমাকে এক সৎ কর্মপরায়ণ সন্তান দান কর।’ অতঃপর আমি তাহাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তাহার পিতার সঙ্গে কাজ করিবার মতো বয়সে উপনীত হইল তখন ইব্রাহীম বলিল, বৎস আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ করিতেছি। এখন তোমার অভিমত কি বল? সে বলিল, ‘হে আমার পিতা । আপনি যাহা আদিষ্ট হইয়াছেন তাহাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাইবেন। যখন তাহারা উভয়ে আনুগত্য করিল এবং ইব্রাহীম তাহার পুত্রকে কাত করিয়া শায়িত করিল, তখন আমি তাহাকে আহবান করিয়া বলিলাম, ‘ হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করিলে।’এইভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি। নিশ্চয়ই ইহা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাহাকে মুক্ত করিলাম এক কুরবানির বিনিময়ে। আমি ইহা পরবর্তীদের স্মরণে রাখিয়াছি। ইব্রাহীমের ওপর শান্তি বর্ষিত হোউক।” (৩৭ঃ ৯৯-১০৯)

উপরের আয়াত থেকে শিক্ষা এবং কিছু প্রশ্ন
ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবনের উল্লিখিত চারটি ঘটনার প্রথম তিনটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে যদি সর্বোচ্চ মানবিকতাবোধ সম্পন্ন যুক্তিবাদী ও জ্ঞানী কোন ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হচ্ছে, আপনার অভিজ্ঞতায় আপনি জানেন যে আগুনের কু-ে নিক্ষেপ করার পর আপনি পুড়ে মারা যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এক ব্যক্তি আপনার সামনে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘ভয় করো না, আগুন তোমার কোনই ক্ষতি করবে না। আপনাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হলো, আপনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন কোথায় আগুন, এত শান্তির আবাস।
আপনার জীবনে দ্বিতীয় ঘটনা, আপনার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং বৃদ্ধা। সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা সে হারিয়েছে। এমন সময় সে ব্যক্তি আপনার সামনে এসে হাজির হয়ে বলল, তুমি এক সু-সন্তানের পিতা হবে, আপনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন আপনার বৃদ্ধা-বন্ধ্যা স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর তিনি এক জ্ঞানী সন্তানের জন্ম দিলেন। তৃতীয়বার সে ব্যক্তির সামনে আপনি হাজির, আপনি বললেন তুমি তো মৃতকে জীবিত করতে পার , কিভাবে কর আমাকে দেখাও। ঐ ব্যক্তির পরামর্শে আপনি চারটি পাখিকে টুকরো টুকরো করে খন্ডাংশ চারটি পাহাড়ে রেখে আসলেন। তারপর সে পাখিরা আপনার ডাকে জীবন্ত হয়ে আপনার ঘরে ফিরে এলো।
চতুর্থবার ঐ ব্যক্তি হাজির, তিনি মনে মনে ঠিক করেছেন, আপনাকে তিনি পরীক্ষা করতে চান, আপনার জীবনে উল্লেখিত তিনিটি অলৌকিক ঘটনার পর তার প্রতি আপনার বিশ্বাস কৃতজ্ঞতাবোধ কতটুকু? তিনি আপনাকে আদেশ দিলেন, তোমার সন্তানকে জবেহ্ কর!
আপনার জন্য নিশ্চিতই এটি কঠিন। ঐ ব্যক্তিকে যে আপনার মতো করে জানে না, তার জন্য এই কাজটি নিঃসন্দেহে বর্বরতা, শয়তানের কর্ম! কিন্তু আপনি যদি একজন কৃতজ্ঞ, বুদ্ধিমান, যুক্তিবোধসম্পন্ন ও জ্ঞানী ব্যক্তি হন, আপনি কি করবেন? কিম্বা এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে যিনি বর্বরতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, সেই সালমান রুশদি আপনার স্থানে থাকেন এবং তিনি যদি কৃতজ্ঞ, বুদ্ধিমান, যুক্তিবোধসম্পন্ন এবং জ্ঞানী হন তাহলে তিনি কি করতেন?
নিঃসন্দেহে একজন কৃতজ্ঞ, বুদ্ধিমান, যুক্তিবোধসম্পন্ন জ্ঞানীর জন্য ঐ পরিস্থিতিতে যে কাজটি করা উচিত ইব্রাহীম সেই কাজটিই করেছিলেন।
অধিকন্তু তিনি তার নিজের বিষয়টি সন্তানের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেননি। তিনি তার সন্তানের অনুমতি প্রার্থনা করে আধুনিক উচ্চ মানবিকতাবোধ সম্পন্ন একজন ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটান এবং এর মাধ্যমে তার চরিত্রের মহত্বম আরেকটি দিকও প্রকাশ পায়।

ইব্রাহিমকে অনুসরণ
সকল বিশ্বাসীদের জন্য অনুসরণীয় ইব্রাহীম। আল্লাহ বলেন :
যে নিজেকে নির্বোধ করিয়াছে, সে ব্যতীত ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ হইতে কে আর কে বিমুখ হইবে। ………। (২ :১৩০)
“তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাহার অনুসারীদের মধ্যে রহিয়াছে উত্তম আদর্শ। ………। ………। ………। তোমরা যাহারা আল্লাহ ও আখিরাতে প্রত্যাশা কর নিশ্চয়ই তাহাদের জন্য রহিয়াছে উত্তম আদর্শ তাহাদের (ইব্রাহিম ও তাহার অনুসারীদের) মধ্যে। ……….।” ( ৬০ঃ ৪, ৫, ৬)

তর্ক-বিতর্ক-যুক্তি-ইব্রাহিম
“তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখ নাই, যে ইব্রাহীমের সঙ্গে তাহার প্রতিপালক সমন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হইয়াছিল, যেহেতু আল্লাহ তাহাকে কর্তত্ব দিয়াছিলেন। যখন ইবরাহীম বলিল, ‘তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান’, সে বলিল আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।’ ইব্রাহীম বলিল, ‘আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক হইতে উদিত করান, তুমি উহাকে পশ্চিম দিক হইতে উদিত করাও তো। অতঃপর যে কুফরি করিয়াছিল সে হতবুদ্ধি হইয়া গেল।……..। (২ঃ ২৫৮)
“তাহার সম্প্রদায় তাহার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হইল। সে বলিল, ‘তোমরা কি আল্লাহ সম্মন্ধে আমার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হইবে? তিনি তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন। আমার প্রতিপালক অন্যবিধ ইচ্ছা না করিলে তোমারা যাহাকে তাহার শরিক কর তাহাকে আমি ভয় করি না, সবকিছুই আমার প্রতিপালকের জ্ঞানায়াত্ব, তবে কি তোমরা অনুধাবণ করিবে না। …………। ……….। ……….আর ইহা আমার যুক্তি প্রমাণ যাহা ইব্রাহীমকে দিয়াছিলাম তাহার সম্প্রদায়ের মুকাবেলায়। আমি যাহাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। ((৬ : ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩)

কুরআনই যথেষ্ট
কুরআন, ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সঃ) বিরুদ্ধে রটনা ও বিদ্রুপ এবং নানাবিধ প্রশ্ন উত্থাপন গত চৌদ্দশত বছর একটি নিয়মিত ঘটনা। বর্তমানেও তা ঘটে চলেছে। তবে একাবিংশ শতাব্দির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার যুগে আধুনিক জ্ঞানে জ্ঞানী হিসেবে দাবিদার একদল অবিশ্বাসী কুরআনের দর্শন, রাসুল (সঃ) এবং কুরআন সম্পর্কে যেসব প্রসঙ্গ টেনে এনে এই আক্রমণ, বিদ্রুপ অথবা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন তার কোনটিই নতুন নয়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর গত প্রায় ১৪’শ বছরে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বহু অগ্রসর হয়েছে কিন্তু কুরআন, ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সঃ) সম্পর্কে যে সকল অভিযোগ, রটনা ও বিদ্রুপ প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয় বা প্রশ্ন উত্থাপন এখনও করা হচ্ছে। কুরআন পাঠে আমরা জানি, এসবের মূল বিষয়বস্তু ও ধরন সেই ৭ম শতাব্দিতে বা তার বহু পূর্বে মনুষ্য জ্ঞানের চর্চার শুরুর পর্ব থেকেই আল্লাহ, নবী-রাসুল এবং আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্নেরই যেন চর্বিত চর্বন। আরো লক্ষণীয় হচ্ছে,স্বয়ং কুরআন এই সকল অভিযোগ রটনা, বিদ্রুপ ও উত্থাপিত প্রশ্নসহ তার যথাযথ যুক্তিসংগত উত্তর বহন করছে।
সুতরাং বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ, ইসলাম, কুরআন, ও মুহাম্মাদ (সঃ) সংক্রান্ত কোন প্রশ্নে উত্তম পন্থায় বিতর্কে অংশগ্রহণ এবং অকাট্য গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন কুরআনের উপদেশ।
বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ, ইসলাম, কুরআন, ও মুহাম্মাদ (সঃ) সংক্রান্ত কোন প্রশ্নে উত্তম পন্থায় বিতর্কে অংশগ্রহণ এবং অকাট্য গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন কুরআনের উপদেশ। এবং ইসলাম ধর্ম প্রসঙ্গে কুরআনই বিশ্বাসীদের জন্য গ্রহণযোগ্য উত্তম যুক্তির উৎস ।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্বাসী বলে দাবীদার হলেও বহুজনে কুরআন অস্বীকারী হতে পারে। এইসব কুরআন অস্বীকারকারীরাই নিজেদেরকে বিশ্বাসী হিসাবে প্রচার করে আল্লাহ, ইসলাম এবং রাসুলের বিরুদ্ধে বিদ্রুপের ক্ষেত্রে কুরআনের উপদেশ অস্বীকার করে এমন সব বিধান দিচ্ছে যা অবিশ্বাসীদের থেকে কুরআন এবং রাসুলকে আরো বেশী অপমান করছেন।
সালমান রুশদীকে হত্যার নির্দেশ বা চেষ্টা তেমনই একটি কর্মকান্ড মাত্র

আমার লিখিত : কুরআন ইতিহাস হাদিস গ্রন্থ থেকে (সামান্য পরিবর্তিত)

Source fb link(in comments Zia Mahmood ‘s Satanic verses article)

সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস-syed wali fbfd

লজিক, বিতর্ক,
সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস
(কুরআনের আলোকে কুরআন, ইতিহাস হাদিস গ্রন্থ থেকে ‘লজিক, বিতর্ক বিদ্রুপ’ অধ্যায়ের একটি অংশ)

বহুল আলোচিত-সমালোচিত ভারতীয় মুসলিম বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস। এই উপন্যাসে মূলতঃ রাসুল (সঃ) এবং তার সঙ্গী-সাথীদের বিকৃত নামকরণে কাল্পনিক চরিত্র দাঁড় করিয়ে কুরআন ও রাসুল (সঃ) সম্পর্কে সেই সপ্তম শতাব্দির অবিশ্বাসীদের কুরআন ও রাসুল (সঃ) প্রতি উপহাস ও বিদ্রুপাত্মক বিষয়গুলোই উপজীব্য করা হয়েছে।
‘স্য্যাটানিক ভার্সেস’ নামকরণ ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাকের বর্ণনাকৃত ইতিহাসে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর মক্কা জীবনের একটি কথিত ঘটনা থেকে নেওয়া হয়েছে। ইবনে ইসহাকের এই মৌখিক ইতিহাস বর্ণনার সূত্র ধরে পরবর্তীতে নবম শতাব্দিতে ইতিহাসবিদ এবং কুরআনের প্রথম তাফসিরকারকদের একজন আল তাবারী তার লিখিত ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রথম পর্যায়ে মক্কায় রাসুল (সঃ) মক্কাবাসী কাফিরদের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছান। এই সমঝোতার শর্ত হিসেবে রাসুল (সঃ) ও তার অনুসারীরা আল্লাহর ইবাদত করার পাশাপাশি কাবায় রক্ষিত তিনটি মূর্তি লাত, উজ্জা ও মানাত-এর পূজা করবে এই শর্তে যে কাফিররা তাদের তিনটি মূর্তির পূজা করার সঙ্গে মুহাম্মাদ (সঃ) এর আল্লাহরও ইবাদত করবে। বলা হয় এই সমঝোতার অনুমতি দিয়ে আল্লাহ তিনটি আয়াত অবতীর্ণ করার পরই রাসুল (সঃ) এই সমঝোতায় পৌঁছান। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছানোর পরপরই রাসুল (সঃ) বুঝতে পারেন যে তিনি যে তিনটি আয়াত কুরআনের আয়াত মনে করেছেন সেগুলো আসলে জিবরাঈল (আঃ) বাহিত আল্লাহর আয়াত নয়। এটি শয়তান আল্লাহর আয়াত বলে তাকে বিভ্রান্ত করেছে। এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ রাসুলকে প্রকৃত বিষয় জানিয়ে ওহী অবতীর্ণ করেন যা পরবর্তীতে সুরা নজম-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পরপরই রাসুল (সঃ) কাফিরদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি থেকে সরে যান।
ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক ও আল তাবারীর বর্ণনা অনুযায়ী রাসুল ভুলক্রমে শয়তানের বাণীকে ওহী হিসেবে মনে করেন। আাল্লাহর নিকট থেকে ওহী নাজিল হওয়ার পরপরই রাসুল তার ভুল জানতে পেরে সাথে সাথে সে সমঝোতা ভেঙে দেন এবং তিনি তার নিজস্ব ধারায় আল্লাহর একাত্ববাদের বাণীর প্রচারণা চালিয়ে যান।
ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক ও আল তাবারী তাদের বর্ণনায় এই তিনিটি পংক্তিকে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বা ‘শয়তানের পংক্তি’ হিসেবে নামকরণ করা হয়।
সালমান রুশদীর উপন্যাসের নামকরণ এখান থেকেই। এই উপন্যাসে অন্যতম দুই চরিত্র বোম্বের অভিনেতা ফারিশতা এবং একজন ইমিগ্রান্ট চামচা। বিমান দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার পর ফারিশতা ও চামচার কথপোকথনের মধ্য দিয়ে উপন্যাসের শুরু। বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর ফারিশতার নাম হয় জিবরাঈল ও চামচা হয় শয়তান। উপনাস্যের অন্যতম প্রধান চরিত্র মাহু- (রাসুল) এবং আয়েশা। এই সব চরিত্রের বর্ণনার মাধ্যমে লেখক কুরআনকে শয়তানের ভাষ্য হিসেবে এবং মাহু- চরিত্রটিকে একজন ভিলেন হিসেবে তুলে ধরে স্যাটায়ারধর্মী বর্ণনার মাধ্যমে কুরআনের বাণীকে শয়তানের বাণী এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-কে একটি হাস্যকর চরিত্র হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস চালান।
তবে কুরআনকে শয়তানের বাণী এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-কে হাস্যকর চরিত্র হিসেবে চিত্রায়ানের প্রচেষ্টা অতীতে বহুজনে করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্যটানিক ভার্সেস পশ্চিমা মহলে এত ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেল কেন? এ প্রশ্নে যে বিষয়টি সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো : এই উপন্যাসটির চরিত্র উপস্থাপনা বর্ণনার বৈশিষ্ট্য এবং সর্বোপরি উপনাসের বিচিত্র চরিত্র চিত্রয়ানের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে তা হলো, কুরআনে বর্ণিত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সন্তান কুরবানি দেওয়ার প্রসঙ্গটি। এই গ্রন্থে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়, ‘সন্তানকে জবেহ’ এর উদ্যোগটি মানবিক দিক থেকে যেহেতু চরম বর্বরতার সুতরাং কুরআন শয়তানের বাণী ব্যতীত আর কি হতে পারে?
সালমান রুশদী তার উপন্যাসে এই যুক্তির মাধ্যমে মানুষের মানবিক মূল্যবোধের দিকটি খুবই কৌশলে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অন্তত পশ্চিমা দুনিয়ায় হলেও বেশ কিছুটা সফল হয়েছেন।
কুরআনে সন্তান হত্যা জঘন্যতম কর্ম বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। ‘পুত্র শিশুরা আমার আর নারী শিশুরা আল্লাহর কন্যা’-এই যুক্তি দিয়ে বহু পিতা তার কন্যা শিশুদের হত্যা করত এবং আরবে তা অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। এই নারী শিশুদের হত্যার বিষয়ে বেশ কয়েকটি আয়াতে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়ে তা থেকে বিরত থাকার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
“উহাদের কাহাকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তাহার মুখম-ল কাল হইয়া যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। উহাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাহার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হইতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে উহাকে রাখিয়া দেবে, না মাটিতে পুঁতিয়া ফেলিবে। সাবধান! উাহারা যাহা সিদ্ধান্ত নেয় তাহা কত নিকৃষ্ট!” (১৬ : ৫৮, ৫৯)
“তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র সন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান। এই প্রকার বণ্টন তো অসংগত।” (৫৩ : ২১, ২২)
“যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, কী অপরাধে উহাকে হত্যা করা হইয়াছিল?” (৮১ : ৮, ৯)
“তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করিও না। উহাদিগকে আমিই রিযিক দেই। এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয়ই উহাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।” (১৭ : ৩১)
সুতরাং যে কুরআন যখন নিজেই সন্তান হত্যাকে বর্বরতম কর্ম বলে অভিহিত করছে এবং কর্মের জন্য কঠোর শাস্তির সংবাদ দিচ্ছে, সেই কুরআন কিভাবে একজন রাসুলকে তার নিজ পুত্রকে জবেহ করার আদেশ দিতে পারে এবং কিভাবে তা একজন অনুগত ব্যক্তির সৎ ও মহৎ কর্ম বলে বর্ণনা করতে পারেÑ যে কোন বিবেকবান, যুক্তিরোধসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে এ প্রশ্ন উত্থাপন খুবই স্বাভাবিক।
আল্লাহ বলেন, এই আদেশের মাধ্যমে তিনি তার প্রিয় রাসুল ইব্রাহীম (আঃ)-কে পরীক্ষা করেন এবং এ পরীক্ষা শুধুমাত্র ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্যই।
আল্লাহ বলেন :
“নিশ্চয়ই ইহা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাহাকে মুক্ত করিলাম এক কুরবানীর বিনিময়ে। আমি ইহা পরবর্তীদের স্মরণে রাখিয়াছি। ইব্রাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।” (৩৭ঃ ১০৬-১০৯)
কি এমন বিষয় ছিল ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবনে যার জন্য এ কাজটি যে ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্য মোটেও বর্বরতা নয় বরং তিনি যে প্রকৃত আত্মসমর্পনকারী, অনুগত, কৃতজ্ঞ এবং জ্ঞানী তার এক কঠিন পরীক্ষা মাত্র?
এ প্রশ্নের খুবই শক্ত যুক্তিসংগত এবং যে কোন মানবিক গুলবলী সম্পন্ন ব্যক্তির কাছে অবশ্যয়ই গ্রহণযোগ্য বাধ্য জবাবটি কুরআনে বর্ণিত ইব্রাহীম (আঃ) জীবনের কয়েকটি ঘটনার মধ্যেই দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নিচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করা যেতে পারে :
“উহারা বলিল, ‘ইহার জন্য এক ইমারত নির্মাণ কর, অতঃপর ইহাকে জলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর।। উহারা তাহার বিরুদ্ধে চক্রান্তের সংকল্প করিয়াছিল; কিন্তু আমি উহাদিগকে অতিশয় হেয় করিয়া দিলাম।” ( ৩৭ঃ ৯৭, ৯৮)
“তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত আসিয়াছে কি? যখন তাহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, সালাম।’ উত্তরে সে বলিল, ‘সালাম। ইহারা তো অপরিচিত লোক।
অতঃপর ইব্রাহীম তাহার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি মাংসল গো-বৎস ভাজা লইয়া আসিল ও তাহাদের সামনে রাখিল এবং বলিল, তোমরা খাইতেছ না কেন।
ইহাতে উহাদের সম্পর্কে তাহার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হইল।
উহারা বলিল, ‘ভীত হইও না। অতঃপর উহারা তাহাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিলো।
তখন তাহার স্ত্রী চীৎকার করিতে করিতে সম্মুখে আসিল এবং গাল চাপড়াইয়া বলিল, ‘‘এই বৃদ্ধা-বন্ধার সন্তান হইবে। তাহারা বলিল, ‘তোমার প্রতিপালক এই রকমই বলিয়াছেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।” (৫১ঃ ২৪-৩০)
“যখন ইব্রাহীম বলিল, ‘ হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর আমাকে দেখাও।’ তিনি বলিলেন, ‘তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না?’ সে বলিল, ‘কেন করিব না, তবে ইহা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য।’ তিনি বলিলেন, ‘তবে চারটি পাখি লও এবং উহাদেরকে তোমার বশীভূত করিয়া লও। তৎপর তাহাদের এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন কর। অতঃপর উহাদেরেকে ডাক দাও, উহারা দ্রƒত গতিতে তোমার নিকট চলিয়া আসিবে। জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (২ঃ ২৬০)
“সে বলিল, ‘আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চলিলাম তিনি আমাকে অবশ্যয়ই সৎ পথে পরিচালিত করিবেন।; হে আমার প্রতিপালক আমাকে এক সৎ কর্মপরায়ণ সন্তান দান কর।’ অতঃপর আমি তাহাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তাহার পিতার সঙ্গে কাজ করিবার মতো বয়সে উপনীত হইল তখন ইব্রাহীম বলিল, বৎস আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ করিতেছি। এখন তোমার অভিমত কি বল? সে বলিল, ‘হে আমার পিতা । আপনি যাহা আদিষ্ট হইয়াছেন তাহাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাইবেন। যখন তাহারা উভয়ে আনুগত্য করিল এবং ইব্রাহীম তাহার পুত্রকে কাত করিয়া শায়িত করিল, তখন আমি তাহাকে আহবান করিয়া বলিলাম, ‘ হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করিলে।’Ñ এইভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি। নিশ্চয়ই ইহা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।
আমি তাহাকে মুক্ত করিলাম এক কুরবানির বিনিময়ে। আমি ইহা পরবর্তীদের স্মরণে রাখিয়াছি। ইব্রাহীমের ওপর শান্তি বর্ষিত হোউক।” (৩৭ঃ ৯৯-১০৯)
ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবনের উল্লেখিত চারটি ঘটনার প্রথম তিনটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে যদি সর্বোচ্চ মানবিকতাবোধ সম্পন্ন যুক্তিবাদী ও জ্ঞানী কোন ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাকে অগ্নিকু-ে নিক্ষেপ করা হচ্ছে, আপনার অভিজ্ঞতায় আপনি জানেন যে আগুনের কু-ে নিক্ষেপ করার পর আপনি পুড়ে মারা যাচ্ছেন, টিক সেই মুহূর্তে এক ব্যক্তি আপনার সামনে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘ভয় করো না, আগুন তোমার কোনই ক্ষতি করবে না। আপনাকে অগ্নিকু-ে নিক্ষেপ করা হলো, আপনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন কোথায় আগুন, এত শান্তির আবাস।
আপনার জীবনে দ্বিতীয় ঘটনা, আপনার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং বৃদ্ধা। সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা সে হারিয়েছে। এমন সময় সে ব্যক্তি আপনার সামনে এসে হাজির হয়ে বলল, তুমি এক সু-সন্তানের পিতা হবে, আপনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন আপনার বৃদ্ধা-বন্ধ্যা স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর তিনি এক জ্ঞানী সন্তানের জন্ম দিলেন। তৃতীয়বার সে ব্যক্তির সামনে আপনি হাজির, আপনি বললেন তুমি তো মৃতকে জীবিত করতে পার , কিভাবে কর আমাকে দেখাও। ঐ ব্যক্তির পরামর্শে আপনি চারটি পাখিকে টুকরো টুকরো করে খ-াংশ চারটি পাহাড়ে রেখে আসলেন। তারপর সে পাখিরা আপনার ডাকে জীবন্ত হয়ে আপনার ঘরে ফিরে এলো। চতুর্থবার ঐ ব্যক্তি হাজির, তিনি মনে মনে ঠিক করেছেন, আপনাকে তিনি পরীক্ষা করতে চান, আপনার জীবনে উল্লেখিত তিনিটি অলৌকিক ঘটনার পর তার প্রতি আপনার বিশ্বাস কৃতজ্ঞতাবোধ কতটুকু? তিনি আপনাকে আদেশ দিলেন, তোমার সন্তানকে জবেহ্ কর!
আপনার জন্য নিশ্চিতই এটি কঠিন। ঐ ব্যক্তিকে যে আপনার মতো করে জানে না, তার জন্য এই কাজটি নিঃসন্দেহে বর্বরতা, শয়তানের কর্ম! কিন্তু আপনি যদি একজন কৃতজ্ঞ, বুদ্ধিমান, যুক্তিবোধসম্পন্ন ও জ্ঞানী ব্যক্তি হন, আপনি কি করবেন? কিম্বা এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে যিনি বর্বরতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, সেই সালমান রুশদি আপনার স্থানে থাকেন এবং তিনি যদি কৃতজ্ঞ, বুদ্ধিমান, যুক্তিবোধসম্পন্ন এবং জ্ঞানী হন তাহলে তিনি কি করতেন?
নিঃসন্দেহে একজন কৃতজ্ঞ, বুদ্ধিমান, যুক্তিবোধসম্পন্ন জ্ঞানীর জন্য ঐ পরিস্থিতিতে যে কাজটি করা উচিত ইব্রাহীম সেই কাজটিই করেছিলেন।
অধিকন্তু তিনি তার নিজের বিষয়টি সন্তানের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেননি। তিনি তার সন্তানের অনুমতি প্রার্থনা করে আধুনিক উচ্চ মানবিকতাবোধ সম্পন্ন একজন ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটান এবং এর মাধ্যমে তার চরিত্রের মহত্বম আরেকটি দিকও প্রকাশ পায়।

নবী (সঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষণ সম্পর্কে কুরআন মাফিক ফয়সালাঃ

নবী (সঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষণ সম্পর্কে কুরআন মাফিক ফয়সালাঃ
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অনেকেই বলে, নবী (সঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে রসূলের সুন্নাহে ( বিধান ১৭ঃ৭৭) তথা হাদীসকে দ্বীনের দলিল হিসাবে রেখে গেছেন। তাদের এই কথা ঠিক নহে। কারণ নবী (সঃ) দ্বীনের ক্ষেত্রে একটি কথাও নিজের তরফ থেকে বা মনগড়াভাবে বলেন নাই ৫৩ঃ৩। তাঁর প্রতি যা ওহী নাযিল হত দ্বীনের ক্ষেত্রে তিনি শুধু তাই ব্যক্ত করেন ৫৩ঃ৪। তিনি কোন কিছু আল্লাহর নামে বানিয়ে বলেন নাই ৬৯ঃ৪৪। যদি আল্লাহর নামে কোন কিছু বানিয়ে বলতেন তাহলে আল্লাহ তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতেন ৬৯ঃ৪৫ এবং তাঁর জীবন ধমনী কাটিয়ে দিতেন ৬৯ঃ৪৬। তাছাড়া তিনি ওহী ব্যতিত দ্বীনের ক্ষেত্রে কাউকে সতর্ক করেন নাই ২১ঃ৪৫। আর নবী (সঃ) ওহী ব্যতিত কোনকিছু অনুসরণও করেন নাই ৬ঃ৫০/১০ঃ১৫ -১৬/৬১/৬ঃ১৯/৪২ঃ৭/ ২১ঃ৪৫/ ৬৯ঃ৪২-৪৯/ ৫৩ঃ২-৬/২৮ঃ৮৭-৮৮/ ৩৮ঃ৮৬/ ৩৩ঃ২/ ৭ঃ২’২০৩/ ৮৪ঃ২০-২৪/ ৪৬ঃ৯-১০/ ৬ঃ৫১/ ১১৫/ ১০৬/৫০ঃ৪৫/ ৪৩ঃ৪৩-৪৪/১৭ঃ৭৩-৭৫/৭২ঃ১৯-২৮/ ৭২ঃ২-৫।
আর আল্লাহ তো নবী (সা.)-এর জন্য এই কুআরনকে বিধান হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন ২৮ঃ৮৫। আর নবী (সঃ)-কে আল্লাহ বলেন, তুমি ওহিকে অবলম্বন কর ৪৩ঃ৪৩। আর তিনি তো প্রভুর স্পষ্ট প্রমাণের উপর অর্থাৎ ওহীর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ৬ঃ৫৭। কারণ দ্বীনের বিষয়ে কুরআনই পরিপূর্ণ দলিল ৫ঃ৩। কারণ সত্য ও ন্যায়ের দিক থেকে আল্লাহর কথাই পরিপূর্ণ ৬ঃ১১৫। অতএব, দ্বীনের বিষয়ে যারা কুরআন মাফিক বিধান দেয় না তারা যালিম, ফাসিক ও কাফির ৫ঃ৪৪, ৪৫, ৪৭)। কাজেই নবী (সঃ) কুরআনের বাইরে হাদীসকে বা সুন্নাকে দ্বীনের বিষয়ে দলিল হিসাবে রেখে গেছেন এই কথার কোন ভিত্তি নেই।

তবে এক শ্রেণীর লোক নবী (সঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণকে বিকৃতভাবে বর্ণনা করেছে। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী (সঃ) সেই দুইটি বিষয়ের কথাই উল্লেখ করে বলেছেন, যে দুইটি বিষয় সূরা মায়েদার ৪৮ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে জানিয়েদিয়েছেন।

“লিকুল্লী যাআলনা মিনকুম শির আতা ওয়া মিনহাজা” ৫ঃ৪৮ । এখানে উল্লেখ্য যে,” শির আতা” অর্থ ধর্মীয় আইন (আরবী অভি. পৃ. নং-১৫২০)।
“মিনহাজার ” আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রকাশ্য রাস্তা (আরবী অভি. পৃ. নং- ২৩১২)। উক্ত আয়াতের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি ধর্মীয় আইন (কুরআন) এবং (আল্লাহ প্রাপ্তির) প্রকাশ্য রাস্তা। অর্থাৎ এই দুইটি বিষয় হচ্ছে (১) আল্লাহর বিধান যেটা কিতাবউল্লাহ, অর্থাৎ এই কুরআন। (২) অপরটি হচ্ছে মিনহাজা। অর্থাৎ আল্লাহ প্রাপ্তির প্রকাশ্য পথ। যে পথটা বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান ভিত্তিক দর্শনের যুগেও মানুষের কাছে অজানা। আর আল্লাহ বলেন, অজানা বিষয়টি রসূল তোমাদেরকে শিক্ষা দিবেন ২ঃ১৫১। এই জন্য মুমিনদের মধ্য থেকেই মুমিনদের কাছে রসূল পাঠাই ৩ঃ১৬৪/ ২৪ঃ৫৫। এইজন্য প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীর নিয়েছেন তোমার (শেষাংশে) কাছে একজন রসূল যাবে, তাকে তুমি রিশ্বাস করবে এবং (রিসালাত দিয়ে) সাহায্য করবে ৩ঃ৮১। এই অঙ্গিকার অনুসারে প্রত্যেক নবীর শেষাংশে বিশ্বস্তদের মধ্যথেকে একজনকে রেসালাতের ভার দিয়ে রসূল হিসাবে রেখে গেছেন। যার মধ্যে আল্লাহ প্রাপ্তির প্রকাশ্য পথ নিহিত আছে। অতএব বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) দুটি বিষয় রেখে গেছেন (১) কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ কুরআন (২) রসুল যেটা আল্লাহ প্রাপ্তির স্পষ্ট পথ যেটা মিনহাযা বলে উল্লেখ করা হযেছে অর্থাৎ আহলে বাইতের কথা বলা হয়েছে।এই আহলে বাইত হল নবীর আদর্শিক বংশধর। । অতএব বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী (সঃ) কুরআনের বাইরে হাদীসকে বা সুন্নাকে দ্বীনের বিষয়ে দলিল হিসাবে রেখে গেছেন এই কথার কোন ভিত্তি নেই।

মোঃ নজরুল ইসলাম = ২০–০৪–২০১৯ খ্রীঃ।

Corona covid-19

By Md Millat

বিসমিল্লাহ

“”স্বঘোষিত মুসলিম”” বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি বিশেষ আহবান

–মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে “পবিত্র কুরআনই” একমাত্র অবতারিত বিধান-(৬৫:৫)
–সম্মানিত রাসুলের জন্যেও পবিত্র কুরআনকেই বিধান হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল-(২৮:৮৫/৪৫:১৮)
–অতঃপর, সম্মানিত রাসুল আল্লাহর সাহায্যে মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কুরআনকেই সংবিধান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন-(৪৮:২৪/২৮:৮৫/৪৫:১৮)
–আপনাদের উপরেও আল্লাহর পক্ষ থেকে একই দায়িত্ব অর্পিত ছিল-(২২:৪১)
–কিন্তুু আপনারা পবিত্র আয়াতের নির্দেশকে কর্মে অস্বীকার করে আল্লাহর কাছে মুনাফিক,কাফির,যালিম ও ফাসিক হিসেবে পরিচিত হয়েছেন-(৪:৬১/৫:৪৪,৪৫,৪৭)
–ফলে, আল্লাহ অতীতের মতোই বর্তমান বিশ্বেও অতি ক্ষুদ্র “করোনা” দ্বারা শাস্তির অাঘাত হানলেন-(৮৯:১৩/৮:৫২,৫৪/ ৭:১৩৩)
–এবং শুধুমাত্র একটির আঘাতেই বিশ্বশক্তি নিরব,নিথর,নিস্তব্ধ হয়ে গেলো-(৩৬:২৮,২৯)
–আর আল্লাহ প্রমান দিলেন যে, বিশ্বজগতের সবচেয়ে দূর্বল সৃষ্টি মানুষ-(৪:২৮)
…….হে দিব্যদৃষ্টিবানরা, আল্লাহর উপদেশ গ্রহন করো-(৫৯:২)

–অতএব, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্থায়িত্ব-(৭:১২৮)
–নিজেদের ও জনগণকে আল্লাহর মারাত্মক শাস্তি থেকে বাচাতে-(৪০:২৯)
–অতি দ্রুত “মহাগ্রন্থ কুরআনকে” স্ব-স্ব রাষ্ট্রের একমাত্র সংবিধান হিসেবে ঘোষনা করুন এবং রাষ্ট্র, নিজেদের ও জাতিকে পরিচালিত করতে ” পবিত্র কুরআন” অনুসরন করুন-(৬৫:৫/ ২৮:৮৫/৪৫:১৮/৭:৩/৬:১৫৫/৪৩:৪৪)

আসুন,দয়ালু রবের কাছে ক্ষমা চাই…

–ও রব! আমাদের সকল পাপরাশি ও কাজে সীমালংঘনকে ক্ষমা করে দিন, আমাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় রাখুন…..(৩:১৪৭)
–ও রব! আমরা ঈমান এনেছি আমাদের ক্ষমা করুন দয়া করুন,আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু…(২৩:১০৯,১১৮)
–ও রব! আপনি আমাদের অভিভাবক, আমাদের ক্ষমা করুন, দয়া করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল
ইহ-পরকালে আমাদের জন্য কল্যান নির্ধারিত করুন, আমরা আপনার প্রতি বিনীত হয়েছি…..(৭:১৫৫,১৫৬)
আলহামদুলিল্লাহ।

How quranists do salat without Hadith?

সংক্ষিপ্ত পোস্ট

ইদানিং কালে এমন কথা শুনা যায় কুরআন মানি হাদিস মানি না, কিছু কিছু নামধারী মুসলিম দাবীদারদের মুখে, যারা আবার নিজেদের আহলে কুরআন বলে দাবী করে।
তারা দাবী করে রাসুল সাঃ এর নামে কোন হাদিস নেই সব মানুষের বানানো হাদিস, মুসলিমদের পথভ্রষ্ট করার জন্য রাসুল সাঃ নামে হাদিস চালিয়ে দেওয়া হইছে।।

শুধু কুরআন মানি হাদিস মানি না তাদের এই বিশ্বাস মতে তারা নিজেরকেি জাহান্নামী ফেরকা বানিয়ে নিয়েছে নিজেদের অজ্ঞতা বা পার্থিব লোভে। আর এটা প্রমান করবো কোন হাদিস দিয়ে নয় বরং আল কুরআনে বহুল আলোচিত সালাত নামক ইবাদত দ্বারাই।

যখন কুরআন মানি হাদিস মানিদের বলা হয় শুধু কুরআন অনুসরন করে কেমনে আপনারা সালাত আদায় করেন বা কায়েম করেন। তখন তারা সরাসরি উত্তর না দিয়ে নয় ছয় করে বা বলে সালাত আদায় কি সালাত কায়েম করা কি জিনিস আবার। অর্থাৎ তাদের কথায় বুঝা যায় সালাত কোন আমল (কায়িক ও পঠিত) বিষয় নয় শুধু বিশ্বাসের বিষয়। তাই আল কুরআনের আয়াত দিয়ে প্রমান করবো সালাত একটি দৈনিক গুরুত্বপুর্ন ও তারা কেমনে জাহান্নামি ফেরকা হয়ে গেছে।

১) সালাত দৈনিক আমল করা একটি ইবাদতঃ

আল কুরআন হতে যে সকল আয়াত দিবো সেগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেব যে সালাত শুধু বিশ্বাসের ব্যপার নয় দৈনিক আমল করা ইবাদত

ক) নিদৃষ্ট সময় সালাত আদায় ফরজ

আল্লাহ বলেন
অতঃপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন সালাত ঠিক করে পড়। নিশ্চয় সালাত মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

সুরা আন নিসা, আয়াত ১০৩

খ) দৈনিক কখন সালাত আদায় করতে হবে

আল্লাহ বলেন
আর সালাত কায়েম কর দিনের দু’ প্রান্তভাগে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরেবের সময়) ও রাতের প্রথমাংশে (অর্থাৎ এশার সময়)।

সুরা হুদ, আয়াত ১১৪

আল্লাহ বলেন
সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত (অর্থাৎ যোহ্‌র, আসর, মাগরেব ও এশার) সালাত কায়েম কর, আর কায়েম কর ফজরের নামায।

সুরা বানী ইসরায়ীল, আয়াত ৭৮

আল্লাহ বলেন
আর সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরে) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসরে) তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর রাত্রির কিছু সময়ে (এশায়) এবং দিনের প্রান্তভাগগুলিতে (ফজর, যোহ্‌র ও মাগরেবে), যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার।

সুরা ত্বাহা, আয়াত ১৩০

আল্লাহ বলেন
(৯) মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন সালাত (আযান) দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।
(১০) অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

সুরা আল জুমুআহ, আয়াত ৯-১০

গ) সালাত আদায় বিষয়ক অন্যান্য আয়াত

আল্লাহ বলেন
যখন তোমরা কোন দেশ সফর কর, তখন নামাযে কিছুটা হ্রাস করলে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে। নিশ্চয় কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

সুরা আন নিসা, আয়াত ১৫৩

আল্লাহ বলেন
আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ।

সুরা ত্বােয়া হা, আয়াত ১৩২

আল্লাহ বলেন
তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা সালাত আদায় কারী।

সূরা আল-মাআরিজ, আয়াত:২২

উল্লেখিত আয়াতগুলো হতে বুঝতে পারলাম সালাত শুধু বিশ্বাসের ব্যপার নয় এটা দৈনিক আমলের ব্যপার। আল কুআরনে দৈনিক সালাত আদায়ের কথা বললেও কিন্তু সালাতের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত কোন পদ্ধতিতে আদায় হবে তার বর্ননা করা হয় নাই।

২) কুরআন মানি হাদিস মানি না তাদের কথা বা বিশ্বাস তারা নিজেরাই কেন জাহান্নামি হয়ে যায়ঃ

আল্লাহ বলেন
(সালাতে) কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।

সুরা আল মুযযাম্মিল, আয়াত ২০

আল্লাহ বলেন
যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি সালাতে দন্ডায়মান হন,

সুরা আশ শোআরা, আয়াত ২১৮

আল্লাহ বলেন
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

সুরা আল হজ্জ, আয়াত ৭৭

আল কুরআনে সালাত আদায় পদ্ধতির এমন বর্ননাই পাওয়া যায়, মানে সালাতের জন্য দাড়াতে হবে রুকু করতে হবে সেজদা করতে হবে, আয়াত পাঠ করতে হবে। কিন্তু কুরআনে সালাত আদায় পদ্ধতি সম্পুর্ন বিবরন পাওয়া যায় না অর্থাৎ

ক) সালাতে কোনটার আগে কোনটা করতে তার বর্ননা পাওয়া যায় না
খ) কোন অবস্থায় (দাড়ানো, রুকু, সেজদা) কি বলতে বা হবে না এর কোন বর্ননা পাওয়া যায় না
গ) সালাতে কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করতে বলা হইছে কিন্তু সালাতের কোন অবস্থায় পাঠ করতে হবে তার বর্ননা পাওয়া যায় না
ঘ) আয়াত গুলো উচ্চ স্বরে না মনে মনে পড়তে হবে তার বর্ননা পাওয়া যায় না
গ) কোন অবস্থা দিয়ে সালাত শুরু ও শেষ করতে হবে তার বর্ননা পাওয়া যায় না
ঘ) জামআতে সালাত কে কি করবে অর্থাৎ একজন ইমাম সালাত পড়াবে না সবাই একযোগে ইমাম ছাড়া পড়বে এর বর্ননা পাওয়া যায় না
ঙ) জামআতে সালাত আদায় করলে কেও সালাত শুরুর বেশ খানিক পর যোগ দিলে সে কি ভাবে বা কি অবস্থায় সালাত শুরু করবে তার বর্ননা পাওয়া যায় না।
মোটা দাগে বিষয়গুলো বললাম, প্রচলিত সালাতে এমন অনেক বিষয় আছে যা সম্পাদনের পদ্ধতি আল কুরআন হতে বর্ননা পাওয়া যায় না।

যেহেতু কুরআন মানি, হাদিস মানি না দাবীদাররা শুধু কুরআন মানে সেহেতু তাদের ইবাদতের দলিলের একমাত্র উৎস আল কুরআন এবং যেহেতু সেই আল কুরআনে দৈনিক সালাত আদায়ের কথা বলা হইছে কিন্তু সেই সালাত আদায়ের সম্পুর্ন পদ্ধতি আল কুরআনে পাওয়া যায় না। সেহেতু তাদের কথা বা বিশ্বাস মতে তাদের পক্ষে আজিবন সালাত আদায় করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। যদি কেও সালাত আদায় করে দাবী করলেও নিজেদের মনগড়া নিয়মে সালাত আদায় করে, যা আল্লাহর নিকট মন গড়া নিয়মে আমল করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয় সুরা কাসাস আয়াত ৫০ মতে।

যেহেতু তাদের কথা বা বিশ্বাস মতে কুরআনের দলিল দিয়ে সালাত আদায় করা আজিবন কোন ক্রমে সম্ভব নয় সেহেতু সুরা সুরা মুদাসসির আয়াত নং ৪১, ৪২,৪৩,৪৭ মতে তারা জাহান্নামী হয়ে যায়। এবার সুরা মুদাসসির এর আয়াত গুলো আবার একটু দেখে নেই

আল্লাহ বলেন
(৪১) অপরাধীদের সম্পর্কে
(৪২) বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে?
(৪৩) তারা বলবেঃ আমরা সালাত পড়তাম না,
(৪৪) অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না,
(৪৫) আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম।
(৪৬) এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।
(৪৭) আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত।

সুরা মুদাসসির, আয়াত ৪১-৪৭

এই বিষয়ে বিস্তারিত পোস্ট লিং নিচে দেওয়া হলো, যেখানে এই সংক্রান্ত মনে যত ধরনের প্রশ্ন জাগবে তার উত্তর পাবেন আশা করি।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1015075008834891&id=100009972030385

……..

Source:-(see many comments)

https://m.facebook.com/groups/1637342032970504?view=permalink&id=2635409619830402

.

Commented by syedraf:- https://refquranistajm.wordpress.com/2020/04/26/in-quran-only-two-fard-salat-syedraf/

Quran চোরের হাত কাটা

By Rakibul Islam fb

আজ আলোচনার বিষয় — কোরআনের আলোকে চোরের হাত কাটা,,

চোরের শাস্তি
১২:১-৩ “আলিফ-লাম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত। আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যেমতে আমি এ কোরআন তোমার নিকট অবতীর্ণ করেছি। তুমি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের অন্তর্ভূক্ত ছিলে।”
কোরআনে চুরির শাস্তির কথা কি বলা হয়েছে?
৫:৩৮ আয়াতে চুরির জন্য জন্য নির্ধারিত শাস্তির বর্ননা দেয়া আছে।
৫:৩৮ “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে ‘এক্তা’উ’ ‘আইদিয়াহুমা’ তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।”
৫:৩৯ “অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
আরবি শব্দ ‘এক্তা’উ’ অর্থ “কাটো” , আর ‘আইদিয়াহুমা’ অর্থ “হাতগুলো” (তিন বা ততোধিক)।
৫:৩৮ শাব্দিক অর্থ দাড়ায় – “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাতগুলো (তিন বা ততোধিক) কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।”
হাতগুলো কতটুকু কাটতে হবে , তার দুই ধরনের মত পাওয়া যায়।
১ম মতানুযায়ী হাতগুলো একেবারে কেটে ফেলে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর সাথে একমত হওয়া যাচ্ছে না নিম্নোক্ত কারনে। প্রথমত আরবি শব্দ ‘আইদিয়াহুমা’ , ‘ইয়াদ’ বা দুই হাতের বহুবচন। এক হাতের আরবি ‘ইদ’। আমরা জানি প্রতিটি মানুষের এমনকি চোরের ও দুইটার বেশি হাত নেই। তাহলে আমরা তিন বা ততোধিক হাত কেমনে কাটব? যদি আমরা স্বীকার ও করে নেই যে এই আয়াতে পুরুষ ও নারী দুই চোরের কথা বলা হয়েছে , তাহলে কি আমাদের চোরের দুটো হাতই কেটে ফেলতে বলা হয়েছে?
দ্বিতীয়ত যদি কাউকে ভুলবশত চোর সাব্যস্ত করা হয় বা কাউকে শত্রুতাকরে চোর হিসাবে ফাসানো হয় অতঃপর তাদের দুই হাত কেটে ফেলা হয় , তখন কিভাবে শুধরানো হবে? আবার এমন ও তো হতে পারে , এমন কেউ যার হাত নেই কিন্ত বুদ্ধি দিয়ে চুরি করতে সহায়তা করেছে, তার কি শাস্তি?
তৃতীয়ত হাত কেটে ফেলা হলে , ৫:৩৯ আয়াতে আল্লাহ যে বলেছেন চোর যদি তওবা করে ও সংশোধিত হয় , তো আল্লাহ নিশ্চয় তার তওবা কবুল করেবেন। এই আয়াতের প্রোয়োগ কিভাবে হবে? হাত তো ফিরে আসবে না!! এর অর্থ দাড়ায় হাত সম্পুর্ন কেটে ফেল্লে ৫:৩৯ আয়াতের কোন কার্যকারীতাই থাকে না। কোরানের আয়াত তো আর মিথ্যা হতে পারে না!!
২য় মতানুযায়ী হাত একেবারে কেটে না ফেলে , হাতে cut mark বা দাগ চিহ্ন রেখে দিতে। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে তারা কোরআনের ১২:৩১ ও ১২:৫০ আয়াতদ্বয়ের উল্লেখ করেন , যেখানে মহিলারা ছুরি দিয়ে নিজেই নিজের হাত কেটেছিল। নিজেই নিজের হাত নিশ্চয় সম্পুর্ন কেটে ফেলা সম্ভব না। কমনসেন্স তাই বলে।
১২:৩১ “…. সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বললঃ ইউসুফ এদের সামনে চলে এস। যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বললঃ কখনই নয় এ ব্যক্তি মানব নয়। এ তো কোন মহান ফেরেশতা।”
১২:৫০ “বাদশাহ বললঃ ফিরে যাও তোমাদের প্রভুর কাছে এবং জিজ্ঞেস কর তাকে ঐ মহিলার স্বরূপ কি, যারা স্বীয় হস্ত কর্তন করেছিল! আমার পালনকর্তা তো তাদের ছলনা সবই জানেন।”
যদিও হাতে দাগ দেয়া মানবিক ও ব্যাবহারিকভাবে অধিক গ্রহনযোগ্য তবুও এই মতের সাথেও একমত হওয়া যাচ্ছে না। কারন ১ম মতের বিরুদ্ধে যে কারন গুলো উল্লেখ করা হয়েছে , তা এই মতের বিরুদ্ধেও খাটে। তাছাড়াও বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতই উন্নতি হয়েছে যে প্লাস্টিক সার্জারী করে দাগ তুলে ফেলা কোন ব্যাপারই নয়।
তদুপরি ৫:৩৮ আয়াতে ‘কাতা’আ’ আর ১২:৩১ আয়াতে ‘কাত্তা’আ’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যদিও দুটো শব্দই আরবিতে একই শব্দের ভিন্ন রুপ এবং ‘কাত্তা’আ’ শব্দের মানে কোরানের অন্য আয়াতগুলোতে (৫:৩৩, ৭:১২৪, ২০:৭১ ও ২৬:৪৯) সম্পুর্ন কেটে ফেলা বলা হয়েছে। তাহলে আমরা কোন মানেটা নিব? হাত সম্পুর্ন কেটে ফেলা নাকি হাতে কেটে দাগ বা চিহ্ন দিয়ে দেয়া? উত্তর কোরানের আলোকে পরের পোস্টে দিব ইনশাল্লাহ,
,
,
চোরের শাস্তি।(শেষ অংশ)
৩য় মতানুযায়ী কুরআনের নৈতিকতা স্মরনে রেখে বলা হয়েছে চোরদের হাত নয় , তাদের চুরির সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের কেটে ফেলতে অর্থাৎ তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে। এই মতের সমর্থনে ৩টি কারন দর্শানো হয়েছে।
১ম কারন – সকলেই জানেন বাংলায় কিছু শব্দ আছে যার আক্ষরিক ও আলঙ্করিক দুই ধরনের মানে করা হয়। যেমন – যদি বলা হয় আমার হাত ব্যাথা করছে। এখানে ‘হাত’ শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই হাতকে বোঝায়। কিন্তু যদি বলি , আমার খুব হাত টানাটানি যাচ্ছে। এখানে নিশ্চয় কেউ আমার হাত ধরে টানাটানি করছে না। এখানে হাতের আলঙ্করিক অর্থ বোঝানো হয়েছে , অর্থাৎ আমার টাকা বা সম্পদের অভাব ঘটেছে।
সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের বুঝাতে বাংলায় বা ইংরাজীতে বা আরবিতেও ‘হাত’ শব্দটি ব্যাবহৃত হয়। যেমন এরশাদ শিকদারের ডান হাত বা right hand man ছিল অমুক , এটা বলতে আমরা বুঝি এরশাদ শিকদারের প্রধান সহায়তাকারী ছিল অমুক। অমুকের পক্ষে এ কাজটা করা সম্ভব ছিল না , যদি না তমুকের হাত ওর পিছনে থাকত!! এখানে পৃষ্ঠপোষককে বুঝানো হয়েছে। কোন চোরের পক্ষে সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষক ছাড়া একা চুরি করা দূরুহ। তাকে চুরির মাল কারো না কারো কাছে বেচা লাগবে , কারো না কারো সহায়তা তার লাগবে। একারনেই সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের তার কাছ থেকে কেটে বা বিচ্ছিন্ন করে ফেল্লেই , তার চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিচ্ছিন্ন কিভাবে করতে হবে তার বর্ননাও কুরআনে আছে। সে বর্ননায় পরে আসছি।
তদ্রুপ কুরআনেও ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আক্ষরিক ও আলঙ্করিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। প্রমানস্বরুপ ২৭:১২ , ৫:৬৪ , ৩৮:৪৫ আয়াতগুলো পড়ে দেখুন।
২৭:১২ “ আপনার হাত আপনার বগলে ঢুকিয়ে দিন, সুশুভ্র হয়ে বের হবে নির্দোষ অবস্থায়। এগুলো ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্যতম। নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।”
এই আয়াতে ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আক্ষরিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে।
৫:৬৪ “আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।….” এই আয়াতে ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আলঙ্করিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। এখানে হাত বন্ধ বলতে কৃপনতা বোঝায়।
৩৮:৪৫ “স্মরণ করুন, হাত ও চোখের অধিকারী আমার বান্দা ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা।” এখানেও ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আলঙ্করিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। আরো দেখতে পারেন ২:১৯৫, ২:২৩৭ ও ২২:১০ আয়াতগুলি।
তাহলে ৫:৩৮ আয়াতের তর্জমা যদি “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের তাদের কাছ থেকে কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।” এভাবে করা হয় তাহলে দেখুন ৫:৩৯ নং আয়াতের সাথেও কোন বিরোধ থাকে না।
৫:৩৯ “অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
২য় কারন – মানুষ খুন করা নিশ্চয় চুরি করার থেকেও জঘন্য অপরাধ। কুরআনে খুনীর জন্য দুই ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৪:৯২ আয়াতে বিশ্বাসীদের অনিচ্ছাকৃত খুনের শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে। এই শাস্তি মৃত্যুদন্ড ও নয় বা জেল বাস ও নয়। ৪:৯২ “মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”
ইচ্ছাকৃত খুনের শাস্তি – ২:১৭৮ “হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।”
দুটো আয়াতেই দেখুন ক্ষতিপুরন দেয়া ও ক্ষতিপুরন দিয়ে মৃত্যুদন্ড রহিতের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। এটা হয়তোবা খুন হওয়া ব্যাক্তির পরিবারের ভরনপোষনের স্বার্থে করা হয়েছে। খুনীর এই যে শাস্তি , এটা নিশ্চয় চোরের হাত কেটে ফেলার শাস্তির চেয়ে বেশী নয়। চুরির শাস্তি তো আর খুনের শাস্তির চেয়ে বেশি হতে পারেনা?
৩য় বা শেষ কারন আল্লাহ সুরা ইউসুফে (১২) উদাহরন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন , চোরের শাস্তি কিভাবে দিতে হবে।
১২:৭০ অতঃপর যখন ইউসুফ তাদের রসদপত্র প্রস্তুত করে দিল, তখন পানপাত্র আপন ভাইয়ের রসদের মধ্যে রেখে দিল। অতঃপর একজন ঘোষক ডেকে বললঃ হে কাফেলার লোকজন, তোমরা অবশ্যই চোর।
১২:৭১ তারা ওদের দিকে মুখ করে বললঃ তোমাদের কি হারিয়েছে?
১২:৭২ তারা বললঃ আমরা বাদশাহর পানপাত্র হারিয়েছি এবং যে কেউ এটা এনে দেবে সে এক উটের বোঝা পরিমাণ মাল পাবে এবং আমি এর যামিন।
১২:৭৩ তারা বললঃ আল্লাহর কসম, তোমরা তো জান, আমরা অনর্থ ঘটাতে এদেশে আসিনি এবং আমরা কখনও চোর ছিলাম না।
১২:৭৪ তারা বললঃ যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও, তবে যে, চুরি করেছে তার কি শাস্তি?
১২:৭৫ তারা বললঃ এর শাস্তি এই যে, যার রসদপত্র থেকে তা পাওয়া যাবে, এর প্রতিদানে সে দাসত্বে যাবে। আমরা যালেমদেরকে এভাবেই শাস্তি দেই।
১২:৭৬ অতঃপর ইউসুফ আপন ভাইদের থলের পূর্বে তাদের থলে তল্লাশী শুরু করলেন। অবশেষে সেই পাত্র আপন ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে বের করলেন। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম। সে বাদশাহর আইনে আপন ভাইকে কখনও দাসত্বে দিতে পারত না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আমি যাকে ইচ্ছা, মর্যাদায় উন্নীত করি এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর এক জ্ঞানীজন।
১২:৭৭ তারা বলতে লাগলঃ যদি সে চুরি করে থাকে, তবে তার এক ভাইও ইতিপূর্বে চুরি করেছিল। তখন ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে রাখলেন এবং তাদেরকে জানালেন না। মনে মনে বললেনঃ তোমরা লোক হিসাবে নিতান্ত মন্দ এবং আল্লাহ খুব জ্ঞাত রয়েছেন, যা তোমরা বর্ণনা করছ;
১২:৭৮ তারা বলতে লাগলঃ হে আযীয, তার পিতা আছেন, যিনি খুবই বৃদ্ধ বয়স্ক। সুতরাং আপনি আমাদের একজনকে তার বদলে রেখে দিন। আমরা আপনাকে অনুগ্রহশীল ব্যক্তিদের একজন দেখতে পাচ্ছি।
১২:৭৯ তিনি বললেনঃ যার কাছে আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। তা হলে তো আমরা নিশ্চিতই অন্যায়কারী হয়ে যাব।”
উপরের আয়াতগুলোতে আল্লাহর আইনে চুরির শাস্তির প্রয়োগ কিভাবে হবে তা দেখানো হয়েছে।
১২:৭ “অবশ্য ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
১২:৩৮ “আমি আপন পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্ম অনুসরণ করছি। আমাদের জন্য শোভা পায় না যে, কোন বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার করি। এটা আমাদের প্রতি এবং অন্য সব লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্ত অধিকাংশ লোক অনুগ্রহ স্বীকার করে না।”
উপরের আয়াতগুলো থেকে এটা পরিস্কার তারা রাজার আইন (১২:৭৬) অনুসরন করেনি , বরং চোরকে শাস্তি দিয়েছে আল্লাহর আইনে(১২:৭৫)। লক্ষ করুন ওরা ১২:৩৮ “আমি আপন পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্ম অনুসরণ করছি।”
দেখা যাচ্ছে আল্লাহর আইনে চোরের শাস্তি নিম্নরুপ :
১) সন্দেহভাজন চোরকে প্রথমেই চুরি স্বীকার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং স্বীকার করে চুরির মাল ফেরৎ দিলে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।১২:৭২
২)৫:৩৮ চুরি প্রমান হলে তার সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের থেকে কেটে ফেলা হবে অর্থাৎ সে দাসত্বে যাবে।১২:৭৫ এর অর্থ দাড়ায় চোরাই মালের টাকা বা জরিমানার সমপরিমান অর্থ চোর শ্রম মজুরি দিয়ে শোধ দিবে।
এখন দেখুন এরপরে যদি চোর ক্ষমা চায় ও অনুতপ্ত হয় , তাহলে তাকে ক্ষমা করা সম্ভব।
আয়াতগুলো থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে কাউকে চুরির দায়ে ফাসানো সম্ভব। হাত কেটে ফেল্লে যার চুরির মিথ্যা অভিযোগে হাত কাটা গেছে , তার হাত কিভাবে ফেরৎ দেয়া যাবে। আর চুরির শাস্তি যদি হাত কেটেই ফেলা হবে , তাহলে নিশ্চয় ইউসুফ নিজের আদরের ভাইকে চুরির দায়ে ফাসাতো না।
আজকের মুসলমান ভাইয়েরা বলতে পারেন , এই আইন সেই ইউসুফের জমানার জন্য প্রযোজ্য ছিল , আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর উত্তরে বলব , আল্লাহ আমাদের এই কাহিনী শুনিয়েছেন কিছু শেখানোর জন্য , আনন্দ উপভোগের জন্য নয়।
পোস্টের শুরু করেছিলাম সূরা ইউসুফের ১ম আয়াত দিয়ে , শেষ করছি শেষ আয়াত দিয়ে।
১২:১১১ তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়েত।

Sourse

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1132321620453100&id=100010258176779

Epidemic(মহামাৰী) in Quran

By ss Jaman fbfd

মহামারি নিয়ে পবিত্র কোরআনের যত আয়াত•••
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
★★ রোগের মহামারি নিয়ে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে বেশ কিছু আয়াত আছে। আসুন জেনে নেয়া যাক কী বলা হচ্ছে সেসব আয়াতে…
★ সুরা আহযাব: আয়াত-৯
আর তারপর আমি তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম এক ঝঞ্ঝা বায়ু এবং এক বাহিনী। এমন এক বাহিনী যা তোমরা চোখে দেখতে পাওনি।
★ সুরা আনআম: আয়াত-৪২
তারপর আমি তাদের ওপর রোগব্যাধি, অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা চাপিয়ে দিয়েছিলাম, যেন তারা আমার কাছে নম্রতাসহ নতি স্বীকার করে।
★ সুরা ইয়াসিন: আয়াত-২৮-২৯
তারপর (তাদের এই অবিচারমূলক জুলুম কার্য করার পর) তাদের বিরুদ্ধে আমি আকাশ থেকে কোনো সেনাদল পাঠাইনি। পাঠানোর কোনো প্রয়োজনও আমার ছিল না। শুধু একটা বিস্ফোরণের শব্দ হলো, আর সহসা তারা সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল (মৃত লাশ হয়ে গেল)।
★ সুরা আ’রাফ: আয়াত-১৩৩
শেষ পর্যন্ত আমি এই জাতিকে পোকামাকড় বা পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত, প্লাবন ইত্যাদি দ্বারা শাস্তি দিয়ে ক্লিষ্ট করি।
★ সুরা বাকারা: আয়াত-২৬
নিশ্চয়ই আল্লাহ মশা কিংবা এর চাইতেও তুচ্ছ বিষয় (ভাইরাস বা জীবাণু) দিয়ে উদাহরণ বা তাঁর নিদর্শন প্রকাশ করতে লজ্জা বোধ করেন না।
★ সুরা আ’রাফ: আয়াত-৯৪
ওর অধিবাসীদের আমি দুঃখ, দারিদ্র্য, রোগব্যাধি এবং অভাব-অনটন দ্বারা আক্রান্ত করে থাকি। উদ্দেশ্য হলো তারা যেন, নম্র এবং বিনয়ী হয়।
★ সুরা মুদ্দাসসির: আয়াত-৩১
তোমার রবের সেনাদল বা সেনাবাহিনী (কত প্রকৃতির বা কত রূপের কিংবা কত ধরনের) তা শুধু তিনিই জানেন।
★ সুরা আল-আনআম: আয়াত-৬৫
তুমি তাদের বলো যে, আল্লাহ তোমাদের ঊর্ধ্বলোক হতে বা ওপর থেকে এবং তোমাদের পায়ের নিচ হতে শাস্তি বা বিপদ পাঠাতে পূর্ণ সক্ষম।
★ সুরা আল আ’রাফ: আয়াত-৯১
তারপর আমার ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করে ফেলল। ফলে তারা তাদের নিজেদের গৃহেই মৃত অবস্থায় উল্টো হয়ে পড়ে রইল।
★ সুরা আল কামার: আয়াত-৩৪
তারপর আমি এই লূত সম্প্রদায়ের ওপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বর্ষণকারী এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিবায়ু।
★ সুরা ইউনুস: আয়াত-১৩
অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে বহু জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা সীমা অতিক্রম করেছিল।
★ সুরা সাবা: আয়াত-১৬
তারপর প্রবল বন্যার পানি তৈরি করলাম এবং ফসলি জমিগুলো পরিবর্তন করে দিলাম। অকৃতজ্ঞ ও অহংকারী ছাড়া এমন শাস্তি আমি কাউকে দিই না।
★ সুরা বাকারা: আয়াত-১৪৮
নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর ওপর (অর্থাৎ আরশ, পঙ্গপাল কিংবা ভাইরাস) সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।
★ সুরা বাকারা: আয়াত-১৫৫
আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি এবং ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে পরীক্ষা করব। তবে তুমি ধৈর্যশীলদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।
★ সুরা সাফফাত: আয়াত-১৭৩
আর আমার বাহিনীই হয় বিজয়ী (আমার পরিকল্পনা পূর্ণ করে)।
★ সুরা আল আন’আম: আয়াত- ৪৪-৪৫
অতঃপর যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপদেশ এবং দিক-নির্দেশনা দেওয়া হলো, তারা তা ভুলে গেল (আল্লাহর কথাকে তুচ্ছ ভেবে প্রত্যাখ্যান করল) তাদের এই সীমালঙ্ঘনের পর আমি তাদের জন্যে প্রতিটি কল্যাণকর বস্তুর দরজা খুলে দিলাম অর্থাৎ তাদের জন্যে ভোগ বিলাসিতা, খাদ্য সরঞ্জাম, প্রত্যেক সেক্টরে সফলতা, উন্নতি এবং উন্নয়ন বৃদ্ধির দরজাসমূহ খুলে দিলাম। শেষ পর্যন্ত যখন তারা আমার দানকৃত কল্যাণকর বস্তুসমূহ পাওয়ার পর আনন্দিত, উল্লসিত এবং গর্বিত হয়ে উঠল, তারপর হঠাৎ একদিন আমি সমস্ত কল্যাণকর বস্তুর দরজাসমূহ বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দরজাসমূহ বন্ধ করে দিলাম । আর তারা সেই অবস্থায় হতাশ হয়ে পড়ল। তারপর এই অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মূল শিকড় কর্তিত হয়ে গেল এবং সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যেই রইল, যিনি বিশ্বজগতের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনকারী বা সবকিছুর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী ‘রব’।
★ সুরা ত্বাহা: আয়াত-১৪
নিশ্চয়ই আমিই হলাম ‘আল্লাহ’। অতএব আমার আইনের অধীনে থাকো।
★ সুরা মুলক: আয়াত- ১৬-১৭
তোমরা কী ভাবনা মুক্ত হয়ে গিয়েছে যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদেরসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না? অথবা তোমাদের ভূগর্ভের বিলীন করে দেবেন না? এমন অবস্থায় যে ভূভাগ তথা জমিন (আল্লাহর নির্দেশে) আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে বা ভূমিকম্পকে চলমান করে দেয়া হবে।
নাকি তোমরা ভাবনামুক্ত হয়ে গিয়েছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের ওপর কংকরবর্ষী ঝঞ্ঝা-বৃষ্টি কিংবা প্রস্তর-বৃষ্টি বর্ষণ করার হুকুম দেবেন না? (যদি আমি এমন করার হুকুম করি) তখন তোমরা জানতে পারবে বা উপলব্ধি করবে, কেমন ছিল আমার সতর্কবাণীর পথ-নির্দেশ।
★ সুরা আল আ’রাফ: আয়াত-১৩০
তারপর আমি ফেরাউনের অনুসারীদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে রেখেছিলাম এবং অজন্ম ও ফসলহানি দ্বারা বিপন্ন করেছিলাম। (সঙ্কটাপন্ন এবং বিপদগ্রস্ত অবস্থায় রেখেছিলাম) উদ্দেশ্য ছিল, তারা হয়তো আমার পথ-নির্দেশ গ্রহণ করবে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করবে আনবে। (আমার আধিপত্য স্বীকার করে নেবে)
★ সুরা আল আ’রাফ: আয়াত- ৯৭-৯৮
জনপদের অধিবাসীরা কী ভাবনামুক্ত হয়ে গিয়েছে সেই আল্লাহর বিষয়ে যে, তিনি তাদের ওপর ঘুমন্ত অবস্থায় শাস্তি পাঠাবেন না? যে শাস্তি তাদের গ্রাস করে ফেলবে! নাকি জনপদের অধিবাসীরা চিন্তামুক্ত হয়ে গিয়েছে এই বিষয়ে যে, আমি তাদের ওপর শাস্তি পাঠাব না, এমন অবস্থায় যে যখন তারা আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত ছিল?
★ সুরা ফাজর: আয়াত- ৬-১৪
আপনি কী দেখেননি, আপনার ‘রব’ আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিল? যাদের দৈহিক গঠন ছিল, স্তম্ভ এবং খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ এবং তাদের এত শক্তি ও বলবীর দেয়া হয়েছিল যে, সারা বিশ্বের শহরসমূহে অন্য কোনো মানবগোষ্ঠীকে দেয়া হয়নি। এবং সামুদ গোত্রকে যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করত এবং বহু সৈন্যবাহিনীর অধিপতি ফেরাউনের সাথে, যারা দেশের সীমাসমূহ লঙ্গন করেছিল। অতঃপর সেখানে বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। তারপর আপনার ‘রব’ তাদের ওপর শাস্তির কশাঘাত করলেন। নিশ্চয়ই আপনার ‘রব’ প্রতিটি বিষয়ের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

Punishment in this world-Quran

By syed wali fbfd

পৃথিবীতে আল্লাহর শাস্তি : কুরআন যা বলে
ক. প্রাথমিক ধারণা
৩০. ৪১: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদেরকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।
৬. ৪৩-৪৪: আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল। তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম; ফলে তখনই তাহারা নিরাশ হইল।
৪৪. ১৫-১৬: আমি কিছুকালের জন্য শাস্তি রহিত করিব- তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবে। যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করিব, সেদিন নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই।
৩. ১৭৮: কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য। আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।

বিস্তারিত

২. ৫৭-৫৯: আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না৪২ ও সাল্ওয়া৪৩ প্রেরণ করিলাম। ‘তোমাদেরকে যে উত্তম জীবিকা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর। তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতিই জুলুম করিয়াছিল। স্মরণ কর, যখন আমি বলিলাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নতশিরে প্রবেশ কর দ্বারা দিয়া এবং বল: ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করিব। কিন্তু যাহারা অন্যায় করিয়াছিল তাহারা তাহাদেরকে যাহা বলা হইয়াছিল তাহার পরিবর্তে অন্য কথা বলিল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হইতে শান্তি প্রেরণ করিলাম, কারণ তাহারা সত্য ত্যাগ করিয়াছিল।

২. ৬১: যখন তোমরা বলিয়াছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একইরকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করিব না; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর- তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সবজি, কাঁকুড়, গম,৪৮ মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।’ মূসা বলিল, ‘তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করিতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যাহা চাও নিশ্চয়ই তাহা সেখানে আছে।’ তাহারা লঞ্ছনা ও দারিদ্রগস্ত হইল এবং তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইল। ইহা এইজন্য যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতকে৪৯ অস্বীকার করিত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করিবার জন্যই তাহাদের এই পরিণতি হইয়াছিল।

২.৮৫-৮৬: তোমরাই তাহারা যাহারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করিতেছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করিতেছ, তোমরা নিজেরা তাহাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছ এবং তাহারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ চাও; অথচ তাহাদের বহিষ্করণই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নন। তাহারাই আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবন μয় করে; সুতরাং তাহাদের শাস্তি লাঘব করা হইবে না এবং তাহারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না।

৩. ১১২: আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাহিরে যেখানেই তাহাদের পাওয়া গিয়াছে সেখানেই তাহারা লাঞ্ছিত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইয়াছে এবং হীনতাগ্রস্ত হইয়াছে। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ প্রত্যাখান করিত এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করিত; ইহা এইজন্য যে, তাহারা অবাধ্য হইয়াছিল এবং সীমালংঘন করিত।

৩. ১৬৫-১৬৭. কী ব্যাপার! যখন তোমাদের মুসীবত আসিল তখন তোমরা বলিল, ‘ইহা কোথা হইতে আসিল? অথচ তোমরা তো দ্বিগুন বিপদ ঘটাইয়াছিলে। বল, ‘ইহা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হইতে’; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপর্যয় ঘটিয়াছিল তাহা আল্লাহ্রই হুকুমে; ইহা মুমিনগণকে জানিবার জন্য এবং মুনাফিকদেরকে জানিবার জন্য এবং তাহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘আস, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা প্রতিরোধ কর।’ তাহারা বলিয়াছিল, ‘যদি যুদ্ধ জানিতাম তবে নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করিতাম।’ সেদিন তাহারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীর নিকটতর ছিল। যাহা তাহাদের অন্তরে নাই তাহারা তাহা মুখে বলে; তাহারা যাহা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।

৩. ১৭৮: কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য। আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।

৪. ৬১-৬২: তাহাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হইতে মুখ একেবারে ফিরাইয়া লইতে দেখিবে।
তাহাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাহাদের কোন মুসীবত হইবে তখন তাহাদের কী অবস্থা হইবে? অতঃপর তাহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া তোমার নিকট আসিয়া বলিবে, ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাই নাই।’

৪. ৭৮-৭৯: তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাইবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করিলেও। যদি তাহাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে ‘ইহা আল্লাহ্র নিকট হইতে।’ আর যদি তাহাদের কোন অকল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে, ‘ইহা তোমার নিকট হইতে।’ বল, ‘সবকিছুই আল্লাহ্র নিকট হইতে। এই সম্প্রদায়ের হইল কী যে, ইহারা একেবারেই কোন কথা বোঝে না!
কল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে এবং অকল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা তোমার নিজের কারণে এবং তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছি; সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

৫. ১৮. ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।’ বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদেরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন; আস্মান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে।

৫. ৭০-৭১: আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ও তাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাহাদের নিকট এমন কিছু আনে যাহা তাহাদের মনঃপূত নয়, তখনই তাহারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে। তাহারা মনে করিয়াছিল, তাহাদের কোন শাস্তি হইবে না; ফলে তাহারা অন্ধ ও বধির হইয়া গিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছিলেন। পুনরায় তাহাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হইয়াছিল। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।

৬. ৬: তাহারা কি দেখে না যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি? তাহাদেরকে দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করি নাই এবং তাহাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম, আর তাহাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম; অতঃপর তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।

৬. ১০-১১: তোমরা পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হইয়াছে। তাহারা যাহা লইয়া ঠাট্টাবিদ্রুপ করিতেছিল পরিণামে তাহাই বিদ্রুপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করিয়াছে। বল, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমন কর, অতঃপর দেখ, যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল।’

৬. ৪০-৪৫: বল, ‘ তোমরা ভাবিয়া দেখ যে, আল্লাহ্র শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হইলে তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? না, তোমরা শুধু তাঁহাকেই ডাকিবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁহাকে ডাকিতেছ তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সেই দুঃখ দূর করিবেন এবং যাহাকে তোমরা তাঁহার শরীক করিতে, তাহা তোমরা বিস্মৃত হইবে।
তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; অতঃপর তাহাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ- ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল। তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম; ফলে তখনই তাহারা নিরাশ হইল।
অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূল্যেচ্ছেদ করা হইল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই- যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।

৬. ৪৯: যাহারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলিয়াছে সত্য ত্যাগের জন্য তাহাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে।

৬. ১২৩: এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়াছি; কিন্তু তাহারা শুধু তাহাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে; অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।

৬. ১৩১-১৩২: ইহা এইহেতু যে, অধিবাসীবৃন্দ যখন অনবিহত, তখন কোন জনপদকে উহার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়। প্রত্যেকে যাহা করে তদনুসারে তাহা স্থান রহিয়াছে এবং উহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।

৬. ১৪৮: যাহারা র্শিক করিয়াছে তাহারা বলিবে, ‘আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ র্শিক করিতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করিতাম না।’ এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও প্রত্যাখান করিয়াছিল, অবশেষে তাহারা আমার শাস্তি ভোগ করিয়াছিল, বল, ‘তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? থাকিলে আমার নিকট তাহা পেশ কর; তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল।’

৭. ৪-৫: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি! আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল রাত্রিতে অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তাহারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল তখন তাহাদের কথা শুধু ইহাই ছিল যে, ‘নিশ্চয় আমরা জালিম ছিলাম।’

৭: ৯৪-১০৩: আমি কোন জনপদে নবী পাঠাইলে উহার অধিবাসীবৃন্দকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা আক্রান্ত করি, যাহাতে তাহারা কাকুতি-মিনতি করে। অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তাহারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করিয়াছে।’ অতঃপর অকস্মাৎ তাহাদেরকে আমি পাকড়াও করি, কিন্তু তাহারা উপলব্ধি করিতে পারে না। যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনিত ও তাক্ওয়া অবলম্বন করিত তবে আমি তাহাদের জন্য আকাশম-লী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করিতাম, কিন্তু তাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল; সুতরাং তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি।
তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে রাত্রিতে যখন তাহারা থাকিবে নিদ্রামগ্ন? অথবা জনপদের অধিবাসীবৃন্দ কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে পূর্বাহ্নে যখন তাহারা থাকিবে ক্রীড়ারত? তাহারা কি আল্লাহ্র কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেহই আল্লাহ্র কৌশল হইতে নিরাপদ মনে করে না।
কোন দেশের জনগণের পর যাহারা ঐ দেশের উত্তরাধিকারী হয় তাহাদের নিকট ইহা কি প্রতীয়মান হয় নাই যে, আমি ইচ্ছা করিলে তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? আর আমি তাহাদের হৃদয় মোহর করিয়া দিব, ফলে তাহারা শুনিবে না।
এই সকল জনপদের কিছু বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বিবৃত করিতেছি, তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূলগণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছিল; কিন্তু যাহা তাহারা পূর্বে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাতে ঈমান আনিবার পাত্র তাহারা ছিল না, এইভাবে আল্লাহ্ কাফিরদের হৃদয় মোহর করিয়া দেন। আমি তাহাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাই; বরং তাহাদের অধিকাংশকে তো পাপাচারীই পাইয়াছি।
তাহাদের পর মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পরিষদবর্গের নিকট পাঠাই; কিন্তু তাহারা উহা অস্বীকার করে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।

৭. ১৬৫-১৬৭: যে উপদেশ তাহাদেরকে দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন উহা বিস্মৃত হয়, তখন যাহারা অসৎকার্য হইতে নিবৃত্ত করিত তাহাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং যাহারা জুলুম করে তাহারা কুফরী করিত বলিয়া আমি তাহাদেরকে কঠোর শাস্তি দেই। তাহারাা যখন নিষিদ্ধ কাজ ঔদ্ধত্যসহকারে করিতে লাগিল তখন তাহাদেরকে বলিলাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তিনি তো কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের উপর এমন লোকদেরকে প্রেরণ করিবেন যাহারা তাহাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকিবে, আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে তৎপর এবং তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।

৭. ১৮২-১৮৩: যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাহাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে লইয়া যাই যে, তাহারা জানিতেও পারিবে না। আমি তাহাদেরকে সময় দিয়া থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

৮. ৩১-৩৬: যখন তাহাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তাহারা তখন বলে, ‘আমরা তো শ্রবণ করিলাম, ইচ্ছা করিলে আমরাও ইহার অনুরূপ বলিতে পারি, ইহা তো শুধু সেকালের লোকদের উপকথা। স্মরণ কর, তাহারা বলিয়াছিল, ‘হে আল্লাহ্! ইহা (আল্লাহর আয়াত) যদি তোমার পক্ষ হইতে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হইতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও ।’
এবং তাহাদের কী বা বলিবার আছে যে, আল্লাহ্ তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তাহারা লোকদেরকে মসজিদুল হারাম হইতে নিবৃত্ত করে? তাহারা উহার তত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকীগণই উহার তত্বাবধায়ক; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা অবগত নয়।
কা‘বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর।
আল্লার্হ পথ হইতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাহারা ধন-সম্পদ ব্যয় করিতেই থাকিবে; অতঃপর উহা তাহাদের মনস্তাপের কারণ হইবে; ইহার পর তাহারা পরাভূত হইবে এবং যাহারা কুফরী করে তাহাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হইবে।

৮. ৫০-৫৩: ৫০. তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফিরিশ্তাগণ কাফিরদের মুখম-লে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে এবং বলিতেছে, ‘তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর। ইহা তাহা, তোমাদের হস্ত যাহা পূর্বে প্রেরণ করিয়াছিল, আল্লাহ্ তো তাহার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। ফির‘আওনের স্বজন ও উহাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা আল্লাহ্র আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ্ ইহাদের পাপের জন্য ইহাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর; ইহা এইজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থায় পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি উহাদেরকে যে সম্পদ দান করিয়াছেন, উহা পরিবর্তন করিবেন; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

৯. ৫১-৫২: বল, ‘আমাদের জন্য আল্লাহ্ যাহা নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হইবে না; তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক এবং আল্লাহ্র উপরই মু’মিনদের নির্ভর করা উচিত।’
বল, ‘তোমরা আমাদের দুইটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করিতেছ এবং আমরা প্রতীক্ষা করিতেছি, আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ পক্ষ হইতে অথবা আমাদের হস্ত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।

১১. ১০১-১০২: আমি উহাদের প্রতি জুলুম করি নাই কিন্তু উহারাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল। যখন তোমার প্রতিপালকের বিধান আসিল তখন আল্লাহ্ ব্যতীত যে ইলাহ্সমূহের তাহারা ‘ইবাদত করিত তাহারা উহাদের কোন কাজে আসিল না। তাহারা ধ্বংস ব্যতীত উহাদের অন্য কিছু বৃদ্ধি করিল না।
এইরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন উহারা জুলুম করিয়া থাকে। নিশ্চয়ই তাঁহার শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন।

১৩. ৬: মঙ্গলের পূর্বে উহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, যদিও উহাদের পূর্বে ইহার বহু দৃষ্টান্ত গত হইয়াছে। মানুষের সীমালংঘন সত্বেও তোমার প্রতিপালক তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে তো কঠোর।

১৩. ৩১-৩৪: যদি কোন কুরআন এমন হইত যদ্দ¦ারা পর্বতকে গতিশীল করা যাইত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যাইত অথবা মৃতের সঙ্গে কথা বলা যাইত- তবুও উহারা উহাতে বিশ্বাস করিত না। কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ্র ইখ্িতয়ারভুক্ত। তবে কি যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে নিশ্চয়ই সকলকে সৎপথে পরিচালিত করিতে পারিতেন?
যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের কর্মফলের জন্য তাহাদের বিপর্যয় ঘটিতেই থাকিবে, অথবা বিপর্যয় তাহাদের আশেপাশে আপতিত হইতেই থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি আসিয়া পড়িবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হইয়াছে এবং যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়াছিলাম, তাহার পর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!
তবে কি প্রত্যেক মানুষ যাহা করে তাহার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি ইহাদের অক্ষম ইলাহ্গুলির মত? অথচ উহারা আল্লাহ্র বহু শরীক করিয়াছে। বল, ‘উহাদের পরিচয় দাও।’ তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও- যাহা তিনি জানেন না? অথবা ইহা বাহ্যিক কথা মাত্র? না, কাফিরদের নিকট উহাদের ছলনা শোভন প্রতীয়মান হইয়াছে এবং উহাদেরকে সৎপথ হইতে নিবৃত্ত করা হইয়াছে, আর আল্লাহ্ যাহাকে বিভ্রান্ত করেন তাহার কোন পথপ্রদর্শক নাই। উহাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! এবং আল্লাহ্র শাস্তি হইতে রক্ষা করিবার উহাদের কেহ নাই।

১৩. ৪০-৪১: উহাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়াছি তাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাই অথবা যদি ইহার পূর্বে তোমার কাল পূর্ণ করিয়া দেই- তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা এবং হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ।
উহারা কি দেখে না যে, আমি উহাদের দেশকে চতুর্দিক হইতে সংকুচিত করিয়া আনিতেছি? আল্লাহ্ আদেশ করেন, তাঁহার আদেশ রদ করিবার কেহ নাই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর।

১৬. ৯৪. পরস্পর প্রবঞ্চনা করিবার জন্য তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার করিও না; করিলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলাইয়া যাইবে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করিবে; তোমাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি।

১৬. ১১২. আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিতেছেন এক জনপদের যাহা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসিত সর্বদিক হইতে উহার প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর উহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করিল, ফলে তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য আল্লাহ্ তাহাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করাইলেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।

১৭. ৪-৭: এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনী ইস্রাঈলকে জানাইয়াছিলাম, ‘নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হইবে।’
অতঃপর এই দুইয়ের প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হইল তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলাম আমার বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; উহার ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ধ্বংস করিয়াছিল। আর প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হইয়াই থাকে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে পুনরায় উহাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করিলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করিলাম ও সংখ্যায় গরিষ্ঠ করিলাম। তোমরা সৎকর্ম করিলে সৎকর্ম নিজেদের জন্য করিবে এবং মন্দ কর্ম করিলে তাহাও করিবে নিজেদের জন্য। অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হইলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করিলাম তোমাদের মুখম-ল কালিমাচ্ছন্ন করিবার জন্য, প্রথমবার তাহারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করিয়াছিল পুনরায় সেইভাবেই উহাতে প্রবেশ করিবার জন্য এবং তাহারা যাহা অধিকার করিয়াছিল তাহা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করিবার জন্য।

১৭. ১৬-১৭: আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করিতে চাই তখন উহার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করিতে আদেশ করি, কিন্তু উহারা সেখানে অসৎকর্ম করে; অতঃপর উহার প্রতি দ-াজ্ঞা ন্যায়সংগত হইয়া যায় এবং আমি উহা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি। নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করিয়াছি! তোমার প্রতিপালকই তাঁহার বান্দাদের পাপচরণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।

১৯. ৭৩- ৭৫: উহাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্ত করা হইলে কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, ‘দুই দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসাবে উত্তম?
উহাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি-যাহারা উহাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্যদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল। বল, ‘যাহারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাহাদেরকে প্রচুর ঢিল দিবেন যতক্ষণ না তাহারা, যে বিষয়ে তাহাদেরকে সতর্ক করা হইতেছে তাহা প্রত্যক্ষ করিবে, উহা শাস্তি হউক অথবা কিয়ামতই হউক। অতঃপর তাহারা জানিতে পারিবে, কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল ।

২১. ১১-১৫: আমি ধ্বংস করিয়াছি কত জনপদ, যাহার অধিবাসীরা ছিল জালিম এবং তাহাদের পরে সৃষ্টি করিয়াছি অপর জাতি। অতঃপর যখন উহারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করিল তখনই উহারা জনপদ হইতে পলায়ন করিতে লাগিল।
উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘পলায়ন করিও না এবং ফিরিয়া আস তোমাদের ভোগসম্ভারের নিকট ও তোমাদের আবাসগৃহে, হয়ত এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে।’ উহারা বলিল, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম জালিম।’
উহাদের এই আর্তনাদ চলিতে থাকে আমি উহাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি-সদৃশ না করা পর্যন্ত।

২১. ৬৬-৭০: ইব্রাহীম বলিল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদত কর যাহা তোমাদের কোন উপকার করিতে পারে না, ক্ষতিও করিতে পারে না? ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহ্র পরিবর্তে তোমরা যাহাদের ‘ইবাদত কর তাহাদেরকে! তবুও কি তোমরা বুঝিবে না?
উহারা বলিল, ‘তাহাকে পোড়াইয়া দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, তোমরা যদি কিছু করিতে চাও।’
আমি বলিলাম, ‘হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হইয়া যাও।’
উহারা তাহার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করিয়াছিল। কিন্তু আমি উহাদেরকে করিয়া দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।

২১. ৮৭: এবং স্মরণ কর যুন-্ নূন (ইউনুস আঃ) -এর কথা, যখন সে ক্রোধভারে বাহির হইয়া গিয়াছিল এবং মনে করিয়াছিল আমি তাহার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করিব না। অতঃপর সে অন্ধকার হইতে আহ্বান করিয়াছিল: ‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী।’

২২. ৪৭-৪৮: তাহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তাহার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার সহ¯্র বৎসরের সমান; এবং আমি অবকাশ দিয়াছি কত জনপদকে যখন উহারা ছিল জালিম; অতঃপর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।

২২. ৬০: ইহাই হইয়া থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হইয়া সমতুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করিলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হইলে আল্লাহ্ তাহাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন; আল্লাহ্ নিশ্চিয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।

২৩. ৭৩- ৭৭: তুমি তো উহাদেরকে সরল পথে আহ্বান করিতেছ। যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহারা তো সরল পথ হইতে বিচ্যুত, আমি উহাদেরকে দয়া করিলেও এবং উহাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করিলেও উহারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিতে থাকিবে। আমি তো উহাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধৃত করিলাম, কিন্তু উহারা উহাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনত হইল না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না। অবশেষে যখন আমি উহাদের জন্য কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলিয়া দেই তখনই উহারা ইহাতে হতাশ হইয়া পড়ে।

২৭. ৪৯-৫২: উহারা বলিল, ‘তোমরা আলাøহ্র নামে শপথ গ্রহণ কর, ‘আমরা রাত্রিকালে তাহাকে ও তাহার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করিব; অতঃপর তাহার অভিভাবককে নিশ্চয় বলিব, ‘তাহার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই; আমরা অবশ্যই সত্যাবাদী।’
উহারা এক চক্রান্ত করিয়াছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করিলাম, কিন্তু উহারা বুঝিতে পারে নাই।
অতএব দেখ, উহাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হইয়াছে- আমি অবশ্যই উহাদেরকে ও উহাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করিয়াছি।
এই তো উহাদের ঘরবাড়ি- সীমালংঘনহেতুযাহা জনশূন্য অবস্থায় পড়িয়া আছে; ইহাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।

২৮. ৫৮-৫৯: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি যাহার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের দম্ভ করিত! এইগুলিই তো উহাদের ঘরবাড়ি; উহাদের পর এইগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করিয়াছে। আর আমি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী!
তোমার প্রতিপালক জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না উহার কেন্দ্রে তাঁহার আয়াত আবৃত্তি করিবার জন্য রাসূল প্রেরণ না করিয়া এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন ইহার বাসিন্দারা জুলুম করে।

২৯. ১০: মানুষের মধ্যে কতক বলে, ‘আমরা আল্লাহে বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহ্র পথে যখন উহারা নিগৃহীত হয়, তখন উহারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহ্র শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে কোন সাহায্য আসিলে উহারা বলিতে থাকে, ‘আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম।’ বিশ্ববাসীর অন্তঃকরণে যাহা আছে, আল্লাহ্ কি তাহা সম্যক অবগত নহেন?’

২৯. ৩৪-৩৫: ‘আমরা এই জনপদবাসীদের উপর আকাশ হইতে শস্তি নাযিল করিব, কারণ উহারা পাপাচার করিতেছিল।’ আমি তো বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে একটি স্পষ্ট আয়াত রাখিয়াছি।

২৯. ৩৯-৪০: এবং আমি সংহার করিয়াছিলাম কারূন, ফির‘আওন ও হামানকে। মূসা উহাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসিয়াছিল; তখন তাহারা দেশে দম্ভ করিত; কিন্তু উহারা আমার শাস্তি এড়াইতে পারে নাই। উহাদের প্রত্যেককেই আমি তাহার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়াছিলাম : উহাদের কাহারও প্রতি প্রেরণ করিয়াছি প্রস্তরসহ প্রচ- ঝটিকা, উহাদের কাহাকেও আঘাত করিয়াছিল মহানাদ, কাহাকেও আমি প্রোথিত করিয়াছিলাম ভূগর্ভে এবং কাহাকেও করিয়াছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই; তাহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল।

৩০. ৩৬: আমি যখন মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদ দেই তাহারা তাহাতে উৎফুল্ল হয় এবং উহাদের কৃতকর্মের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত হইলেই উহারা হতাশ হইয়া পড়ে।

৩০. ৪১: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদেরকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩২. ২০-২১: এবং যাহারা পাপাচার করিয়াছে তাহাদের বাসস্থান হইবে জাহান্নাম; যখনই উহারা জাহান্নাম হইতে বাহির হইতে চাহিবে তখনই উহাদেরকে ফিরাইয়া দেওয়া হইবে উহাতে এবং উহাদেরকে বলা হইবে, ‘ যে অগ্নিশাস্তিকে তোমরা মিথ্যা বলিতে, উহা আস্বাদন কর।’ গুরু শাস্তির পূর্বে উহাদেরকে আমি অবশ্যই লঘুশাস্তি আস্বাদন করাইব, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩৩. ২৪. কারণ আল্লাহ্ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাহাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তাঁহার ইচ্ছা হইলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা উহাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৩৪. ১৫-১৭: সাবাবাসীদের জন্য তো উহাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন: দুইটি উদ্যান, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে, উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত রিযিক ভোগ কর এবং তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম নগরী এবং ক্ষমাশীল প্রতিপালক। পরে উহারা অবাধ্য হইল। ফলে আমি উহাদের উপর প্রবাহিত করিলাম বাঁধভাঙ্গা বন্যা এবং উহাদের উদ্যান দুইটিকে পরিবর্তন করিয়া দিলাম এমন দুইটি উদ্যানে যাহাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি উহাদেরকে এই শাস্তি দিয়াছিলাম উহাদের কুফরীর জন্য। আমি কৃতঘœ ব্যতীত আর কাহাকেও এমন শাস্তি দেই না।

৩৯. ২৫- ২৬: উহাদের পূর্ববর্তিগণও অস্বীকার করিয়াছিল, ফলে শাস্তি এমনভাবে উহাদেরকে গ্রাস করিল যে, উহারা ধারণাও করিতে পারে নাই। ফলে আল্লাহ্ উহাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ করাইলেন এবং আখিরাতের শাস্তি তো কঠিনতর। যদি ইহারা জানিত!

৪২. ৩০: তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাহাত তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করিয়া দেন।

৪২. ৪৮: উহারা যদি মুখ ফিরাইয়া নেয়, তবে তোমাকে তো আমি ইহাদের রক্ষক করিয়া পাঠাই নাই। তোমার কাজ তো কেবল বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া। আমি মানুষকে যখন অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন সে ইহাতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন উহাদের কৃতকর্মের জন্য উহাদের বিপদ-আপদ ঘটে তখন মানুষ হইয়া পড়ে অকৃতজ্ঞ।

৪৩. ৪৬-৪৮: মূসাকে তো আমি নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, ‘আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত।’
সে উহাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসিবামাত্র উহারা তাহা লইয়া হাসি-ঠাট্টা করিতে লাগিল। আমি উহাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাই নাই যাহা উহার অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি উহাদেরকে শাস্তি দিলাম যাহাতে উহারা প্রত্যাবর্তন করে।

৪৪. ১৫-১৬: আমি কিছুকালের জন্য শাস্তি রহিত করিব- তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবে। যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করিব, সেদিন নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই।

৫৭. ২২-২৩: পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহ্র পক্ষে ইহা খুবই সহজ। ইহা এইজন্য যে, তোমরা যাহা হারাইয়াছ তাহাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যাহা তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন তাহার জন্য হর্ষোৎফুল্ল না হও। আল্লাহ্ পসন্দ করেন না উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে।

৬৪. ১১: আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তাহার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

বিস্তারিত

২. ৫৭-৫৯: আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না৪২ ও সাল্ওয়া৪৩ প্রেরণ করিলাম। ‘তোমাদেরকে যে উত্তম জীবিকা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর। তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতিই জুলুম করিয়াছিল। স্মরণ কর, যখন আমি বলিলাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নতশিরে প্রবেশ কর দ্বারা দিয়া এবং বল: ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করিব। কিন্তু যাহারা অন্যায় করিয়াছিল তাহারা তাহাদেরকে যাহা বলা হইয়াছিল তাহার পরিবর্তে অন্য কথা বলিল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হইতে শান্তি প্রেরণ করিলাম, কারণ তাহারা সত্য ত্যাগ করিয়াছিল।

২. ৬১: যখন তোমরা বলিয়াছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একইরকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করিব না; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর- তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সবজি, কাঁকুড়, গম,৪৮ মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।’ মূসা বলিল, ‘তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করিতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যাহা চাও নিশ্চয়ই তাহা সেখানে আছে।’ তাহারা লঞ্ছনা ও দারিদ্রগস্ত হইল এবং তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইল। ইহা এইজন্য যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতকে৪৯ অস্বীকার করিত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করিবার জন্যই তাহাদের এই পরিণতি হইয়াছিল।

২.৮৫-৮৬: তোমরাই তাহারা যাহারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করিতেছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করিতেছ, তোমরা নিজেরা তাহাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছ এবং তাহারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ চাও; অথচ তাহাদের বহিষ্করণই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নন। তাহারাই আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবন μয় করে; সুতরাং তাহাদের শাস্তি লাঘব করা হইবে না এবং তাহারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না।

৩. ১১২: আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাহিরে যেখানেই তাহাদের পাওয়া গিয়াছে সেখানেই তাহারা লাঞ্ছিত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইয়াছে এবং হীনতাগ্রস্ত হইয়াছে। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ প্রত্যাখান করিত এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করিত; ইহা এইজন্য যে, তাহারা অবাধ্য হইয়াছিল এবং সীমালংঘন করিত।

৩. ১৬৫-১৬৭. কী ব্যাপার! যখন তোমাদের মুসীবত আসিল তখন তোমরা বলিল, ‘ইহা কোথা হইতে আসিল? অথচ তোমরা তো দ্বিগুন বিপদ ঘটাইয়াছিলে। বল, ‘ইহা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হইতে’; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপর্যয় ঘটিয়াছিল তাহা আল্লাহ্রই হুকুমে; ইহা মুমিনগণকে জানিবার জন্য এবং মুনাফিকদেরকে জানিবার জন্য এবং তাহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘আস, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা প্রতিরোধ কর।’ তাহারা বলিয়াছিল, ‘যদি যুদ্ধ জানিতাম তবে নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করিতাম।’ সেদিন তাহারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীর নিকটতর ছিল। যাহা তাহাদের অন্তরে নাই তাহারা তাহা মুখে বলে; তাহারা যাহা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।

৩. ১৭৮: কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য। আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।

৪. ৬১-৬২: তাহাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হইতে মুখ একেবারে ফিরাইয়া লইতে দেখিবে।
তাহাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাহাদের কোন মুসীবত হইবে তখন তাহাদের কী অবস্থা হইবে? অতঃপর তাহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া তোমার নিকট আসিয়া বলিবে, ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাই নাই।’

৪. ৭৮-৭৯: তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাইবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করিলেও। যদি তাহাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে ‘ইহা আল্লাহ্র নিকট হইতে।’ আর যদি তাহাদের কোন অকল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে, ‘ইহা তোমার নিকট হইতে।’ বল, ‘সবকিছুই আল্লাহ্র নিকট হইতে। এই সম্প্রদায়ের হইল কী যে, ইহারা একেবারেই কোন কথা বোঝে না!
কল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে এবং অকল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা তোমার নিজের কারণে এবং তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছি; সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

৫. ১৮. ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।’ বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদেরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন; আস্মান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে।

৫. ৭০-৭১: আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ও তাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাহাদের নিকট এমন কিছু আনে যাহা তাহাদের মনঃপূত নয়, তখনই তাহারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে। তাহারা মনে করিয়াছিল, তাহাদের কোন শাস্তি হইবে না; ফলে তাহারা অন্ধ ও বধির হইয়া গিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছিলেন। পুনরায় তাহাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হইয়াছিল। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।

৬. ৬: তাহারা কি দেখে না যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি? তাহাদেরকে দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করি নাই এবং তাহাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম, আর তাহাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম; অতঃপর তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।

৬. ১০-১১: তোমরা পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হইয়াছে। তাহারা যাহা লইয়া ঠাট্টাবিদ্রুপ করিতেছিল পরিণামে তাহাই বিদ্রুপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করিয়াছে। বল, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমন কর, অতঃপর দেখ, যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল।’

৬. ৪০-৪৫: বল, ‘ তোমরা ভাবিয়া দেখ যে, আল্লাহ্র শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হইলে তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? না, তোমরা শুধু তাঁহাকেই ডাকিবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁহাকে ডাকিতেছ তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সেই দুঃখ দূর করিবেন এবং যাহাকে তোমরা তাঁহার শরীক করিতে, তাহা তোমরা বিস্মৃত হইবে।
তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; অতঃপর তাহাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ- ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল। তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম; ফলে তখনই তাহারা নিরাশ হইল।
অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূল্যেচ্ছেদ করা হইল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই- যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।

৬. ৪৯: যাহারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলিয়াছে সত্য ত্যাগের জন্য তাহাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে।

৬. ১২৩: এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়াছি; কিন্তু তাহারা শুধু তাহাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে; অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।

৬. ১৩১-১৩২: ইহা এইহেতু যে, অধিবাসীবৃন্দ যখন অনবিহত, তখন কোন জনপদকে উহার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়। প্রত্যেকে যাহা করে তদনুসারে তাহা স্থান রহিয়াছে এবং উহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।

৬. ১৪৮: যাহারা র্শিক করিয়াছে তাহারা বলিবে, ‘আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ র্শিক করিতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করিতাম না।’ এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও প্রত্যাখান করিয়াছিল, অবশেষে তাহারা আমার শাস্তি ভোগ করিয়াছিল, বল, ‘তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? থাকিলে আমার নিকট তাহা পেশ কর; তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল।’

৭. ৪-৫: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি! আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল রাত্রিতে অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তাহারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল তখন তাহাদের কথা শুধু ইহাই ছিল যে, ‘নিশ্চয় আমরা জালিম ছিলাম।’

৭: ৯৪-১০৩: আমি কোন জনপদে নবী পাঠাইলে উহার অধিবাসীবৃন্দকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা আক্রান্ত করি, যাহাতে তাহারা কাকুতি-মিনতি করে। অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তাহারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করিয়াছে।’ অতঃপর অকস্মাৎ তাহাদেরকে আমি পাকড়াও করি, কিন্তু তাহারা উপলব্ধি করিতে পারে না। যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনিত ও তাক্ওয়া অবলম্বন করিত তবে আমি তাহাদের জন্য আকাশম-লী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করিতাম, কিন্তু তাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল; সুতরাং তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি।
তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে রাত্রিতে যখন তাহারা থাকিবে নিদ্রামগ্ন? অথবা জনপদের অধিবাসীবৃন্দ কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে পূর্বাহ্নে যখন তাহারা থাকিবে ক্রীড়ারত? তাহারা কি আল্লাহ্র কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেহই আল্লাহ্র কৌশল হইতে নিরাপদ মনে করে না।
কোন দেশের জনগণের পর যাহারা ঐ দেশের উত্তরাধিকারী হয় তাহাদের নিকট ইহা কি প্রতীয়মান হয় নাই যে, আমি ইচ্ছা করিলে তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? আর আমি তাহাদের হৃদয় মোহর করিয়া দিব, ফলে তাহারা শুনিবে না।
এই সকল জনপদের কিছু বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বিবৃত করিতেছি, তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূলগণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছিল; কিন্তু যাহা তাহারা পূর্বে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাতে ঈমান আনিবার পাত্র তাহারা ছিল না, এইভাবে আল্লাহ্ কাফিরদের হৃদয় মোহর করিয়া দেন। আমি তাহাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাই; বরং তাহাদের অধিকাংশকে তো পাপাচারীই পাইয়াছি।
তাহাদের পর মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পরিষদবর্গের নিকট পাঠাই; কিন্তু তাহারা উহা অস্বীকার করে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।

৭. ১৬৫-১৬৭: যে উপদেশ তাহাদেরকে দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন উহা বিস্মৃত হয়, তখন যাহারা অসৎকার্য হইতে নিবৃত্ত করিত তাহাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং যাহারা জুলুম করে তাহারা কুফরী করিত বলিয়া আমি তাহাদেরকে কঠোর শাস্তি দেই। তাহারাা যখন নিষিদ্ধ কাজ ঔদ্ধত্যসহকারে করিতে লাগিল তখন তাহাদেরকে বলিলাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তিনি তো কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের উপর এমন লোকদেরকে প্রেরণ করিবেন যাহারা তাহাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকিবে, আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে তৎপর এবং তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।

৭. ১৮২-১৮৩: যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাহাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে লইয়া যাই যে, তাহারা জানিতেও পারিবে না। আমি তাহাদেরকে সময় দিয়া থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

৮. ৩১-৩৬: যখন তাহাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তাহারা তখন বলে, ‘আমরা তো শ্রবণ করিলাম, ইচ্ছা করিলে আমরাও ইহার অনুরূপ বলিতে পারি, ইহা তো শুধু সেকালের লোকদের উপকথা। স্মরণ কর, তাহারা বলিয়াছিল, ‘হে আল্লাহ্! ইহা (আল্লাহর আয়াত) যদি তোমার পক্ষ হইতে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হইতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও ।’
এবং তাহাদের কী বা বলিবার আছে যে, আল্লাহ্ তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তাহারা লোকদেরকে মসজিদুল হারাম হইতে নিবৃত্ত করে? তাহারা উহার তত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকীগণই উহার তত্বাবধায়ক; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা অবগত নয়।
কা‘বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর।
আল্লার্হ পথ হইতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাহারা ধন-সম্পদ ব্যয় করিতেই থাকিবে; অতঃপর উহা তাহাদের মনস্তাপের কারণ হইবে; ইহার পর তাহারা পরাভূত হইবে এবং যাহারা কুফরী করে তাহাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হইবে।

৮. ৫০-৫৩: ৫০. তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফিরিশ্তাগণ কাফিরদের মুখম-লে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে এবং বলিতেছে, ‘তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর। ইহা তাহা, তোমাদের হস্ত যাহা পূর্বে প্রেরণ করিয়াছিল, আল্লাহ্ তো তাহার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। ফির‘আওনের স্বজন ও উহাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা আল্লাহ্র আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ্ ইহাদের পাপের জন্য ইহাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর; ইহা এইজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থায় পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি উহাদেরকে যে সম্পদ দান করিয়াছেন, উহা পরিবর্তন করিবেন; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

৯. ৫১-৫২: বল, ‘আমাদের জন্য আল্লাহ্ যাহা নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হইবে না; তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক এবং আল্লাহ্র উপরই মু’মিনদের নির্ভর করা উচিত।’
বল, ‘তোমরা আমাদের দুইটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করিতেছ এবং আমরা প্রতীক্ষা করিতেছি, আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ পক্ষ হইতে অথবা আমাদের হস্ত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।

১১. ১০১-১০২: আমি উহাদের প্রতি জুলুম করি নাই কিন্তু উহারাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল। যখন তোমার প্রতিপালকের বিধান আসিল তখন আল্লাহ্ ব্যতীত যে ইলাহ্সমূহের তাহারা ‘ইবাদত করিত তাহারা উহাদের কোন কাজে আসিল না। তাহারা ধ্বংস ব্যতীত উহাদের অন্য কিছু বৃদ্ধি করিল না।
এইরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন উহারা জুলুম করিয়া থাকে। নিশ্চয়ই তাঁহার শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন।

১৩. ৬: মঙ্গলের পূর্বে উহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, যদিও উহাদের পূর্বে ইহার বহু দৃষ্টান্ত গত হইয়াছে। মানুষের সীমালংঘন সত্বেও তোমার প্রতিপালক তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে তো কঠোর।

১৩. ৩১-৩৪: যদি কোন কুরআন এমন হইত যদ্দ¦ারা পর্বতকে গতিশীল করা যাইত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যাইত অথবা মৃতের সঙ্গে কথা বলা যাইত- তবুও উহারা উহাতে বিশ্বাস করিত না। কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ্র ইখ্িতয়ারভুক্ত। তবে কি যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে নিশ্চয়ই সকলকে সৎপথে পরিচালিত করিতে পারিতেন?
যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের কর্মফলের জন্য তাহাদের বিপর্যয় ঘটিতেই থাকিবে, অথবা বিপর্যয় তাহাদের আশেপাশে আপতিত হইতেই থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি আসিয়া পড়িবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হইয়াছে এবং যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়াছিলাম, তাহার পর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!
তবে কি প্রত্যেক মানুষ যাহা করে তাহার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি ইহাদের অক্ষম ইলাহ্গুলির মত? অথচ উহারা আল্লাহ্র বহু শরীক করিয়াছে। বল, ‘উহাদের পরিচয় দাও।’ তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও- যাহা তিনি জানেন না? অথবা ইহা বাহ্যিক কথা মাত্র? না, কাফিরদের নিকট উহাদের ছলনা শোভন প্রতীয়মান হইয়াছে এবং উহাদেরকে সৎপথ হইতে নিবৃত্ত করা হইয়াছে, আর আল্লাহ্ যাহাকে বিভ্রান্ত করেন তাহার কোন পথপ্রদর্শক নাই। উহাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! এবং আল্লাহ্র শাস্তি হইতে রক্ষা করিবার উহাদের কেহ নাই।

১৩. ৪০-৪১: উহাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়াছি তাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাই অথবা যদি ইহার পূর্বে তোমার কাল পূর্ণ করিয়া দেই- তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা এবং হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ।
উহারা কি দেখে না যে, আমি উহাদের দেশকে চতুর্দিক হইতে সংকুচিত করিয়া আনিতেছি? আল্লাহ্ আদেশ করেন, তাঁহার আদেশ রদ করিবার কেহ নাই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর।

১৬. ৯৪. পরস্পর প্রবঞ্চনা করিবার জন্য তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার করিও না; করিলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলাইয়া যাইবে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করিবে; তোমাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি।

১৬. ১১২. আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিতেছেন এক জনপদের যাহা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসিত সর্বদিক হইতে উহার প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর উহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করিল, ফলে তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য আল্লাহ্ তাহাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করাইলেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।

১৭. ৪-৭: এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনী ইস্রাঈলকে জানাইয়াছিলাম, ‘নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হইবে।’
অতঃপর এই দুইয়ের প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হইল তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলাম আমার বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; উহার ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ধ্বংস করিয়াছিল। আর প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হইয়াই থাকে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে পুনরায় উহাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করিলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করিলাম ও সংখ্যায় গরিষ্ঠ করিলাম। তোমরা সৎকর্ম করিলে সৎকর্ম নিজেদের জন্য করিবে এবং মন্দ কর্ম করিলে তাহাও করিবে নিজেদের জন্য। অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হইলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করিলাম তোমাদের মুখম-ল কালিমাচ্ছন্ন করিবার জন্য, প্রথমবার তাহারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করিয়াছিল পুনরায় সেইভাবেই উহাতে প্রবেশ করিবার জন্য এবং তাহারা যাহা অধিকার করিয়াছিল তাহা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করিবার জন্য।

১৭. ১৬-১৭: আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করিতে চাই তখন উহার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করিতে আদেশ করি, কিন্তু উহারা সেখানে অসৎকর্ম করে; অতঃপর উহার প্রতি দ-াজ্ঞা ন্যায়সংগত হইয়া যায় এবং আমি উহা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি। নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করিয়াছি! তোমার প্রতিপালকই তাঁহার বান্দাদের পাপচরণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।

১৯. ৭৩- ৭৫: উহাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্ত করা হইলে কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, ‘দুই দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসাবে উত্তম?
উহাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি-যাহারা উহাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্যদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল। বল, ‘যাহারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাহাদেরকে প্রচুর ঢিল দিবেন যতক্ষণ না তাহারা, যে বিষয়ে তাহাদেরকে সতর্ক করা হইতেছে তাহা প্রত্যক্ষ করিবে, উহা শাস্তি হউক অথবা কিয়ামতই হউক। অতঃপর তাহারা জানিতে পারিবে, কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল ।

২১. ১১-১৫: আমি ধ্বংস করিয়াছি কত জনপদ, যাহার অধিবাসীরা ছিল জালিম এবং তাহাদের পরে সৃষ্টি করিয়াছি অপর জাতি। অতঃপর যখন উহারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করিল তখনই উহারা জনপদ হইতে পলায়ন করিতে লাগিল।
উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘পলায়ন করিও না এবং ফিরিয়া আস তোমাদের ভোগসম্ভারের নিকট ও তোমাদের আবাসগৃহে, হয়ত এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে।’ উহারা বলিল, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম জালিম।’
উহাদের এই আর্তনাদ চলিতে থাকে আমি উহাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি-সদৃশ না করা পর্যন্ত।

২১. ৬৬-৭০: ইব্রাহীম বলিল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদত কর যাহা তোমাদের কোন উপকার করিতে পারে না, ক্ষতিও করিতে পারে না? ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহ্র পরিবর্তে তোমরা যাহাদের ‘ইবাদত কর তাহাদেরকে! তবুও কি তোমরা বুঝিবে না?
উহারা বলিল, ‘তাহাকে পোড়াইয়া দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, তোমরা যদি কিছু করিতে চাও।’
আমি বলিলাম, ‘হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হইয়া যাও।’
উহারা তাহার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করিয়াছিল। কিন্তু আমি উহাদেরকে করিয়া দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।

২১. ৮৭: এবং স্মরণ কর যুন-্ নূন (ইউনুস আঃ) -এর কথা, যখন সে ক্রোধভারে বাহির হইয়া গিয়াছিল এবং মনে করিয়াছিল আমি তাহার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করিব না। অতঃপর সে অন্ধকার হইতে আহ্বান করিয়াছিল: ‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী।’

২২. ৪৭-৪৮: তাহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তাহার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার সহ¯্র বৎসরের সমান; এবং আমি অবকাশ দিয়াছি কত জনপদকে যখন উহারা ছিল জালিম; অতঃপর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।

২২. ৬০: ইহাই হইয়া থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হইয়া সমতুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করিলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হইলে আল্লাহ্ তাহাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন; আল্লাহ্ নিশ্চিয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।

২৩. ৭৩- ৭৭: তুমি তো উহাদেরকে সরল পথে আহ্বান করিতেছ। যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহারা তো সরল পথ হইতে বিচ্যুত, আমি উহাদেরকে দয়া করিলেও এবং উহাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করিলেও উহারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিতে থাকিবে। আমি তো উহাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধৃত করিলাম, কিন্তু উহারা উহাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনত হইল না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না। অবশেষে যখন আমি উহাদের জন্য কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলিয়া দেই তখনই উহারা ইহাতে হতাশ হইয়া পড়ে।

২৭. ৪৯-৫২: উহারা বলিল, ‘তোমরা আলাøহ্র নামে শপথ গ্রহণ কর, ‘আমরা রাত্রিকালে তাহাকে ও তাহার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করিব; অতঃপর তাহার অভিভাবককে নিশ্চয় বলিব, ‘তাহার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই; আমরা অবশ্যই সত্যাবাদী।’
উহারা এক চক্রান্ত করিয়াছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করিলাম, কিন্তু উহারা বুঝিতে পারে নাই।
অতএব দেখ, উহাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হইয়াছে- আমি অবশ্যই উহাদেরকে ও উহাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করিয়াছি।
এই তো উহাদের ঘরবাড়ি- সীমালংঘনহেতুযাহা জনশূন্য অবস্থায় পড়িয়া আছে; ইহাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।

২৮. ৫৮-৫৯: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি যাহার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের দম্ভ করিত! এইগুলিই তো উহাদের ঘরবাড়ি; উহাদের পর এইগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করিয়াছে। আর আমি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী!
তোমার প্রতিপালক জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না উহার কেন্দ্রে তাঁহার আয়াত আবৃত্তি করিবার জন্য রাসূল প্রেরণ না করিয়া এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন ইহার বাসিন্দারা জুলুম করে।

২৯. ১০: মানুষের মধ্যে কতক বলে, ‘আমরা আল্লাহে বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহ্র পথে যখন উহারা নিগৃহীত হয়, তখন উহারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহ্র শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে কোন সাহায্য আসিলে উহারা বলিতে থাকে, ‘আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম।’ বিশ্ববাসীর অন্তঃকরণে যাহা আছে, আল্লাহ্ কি তাহা সম্যক অবগত নহেন?’

২৯. ৩৪-৩৫: ‘আমরা এই জনপদবাসীদের উপর আকাশ হইতে শস্তি নাযিল করিব, কারণ উহারা পাপাচার করিতেছিল।’ আমি তো বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে একটি স্পষ্ট আয়াত রাখিয়াছি।

২৯. ৩৯-৪০: এবং আমি সংহার করিয়াছিলাম কারূন, ফির‘আওন ও হামানকে। মূসা উহাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসিয়াছিল; তখন তাহারা দেশে দম্ভ করিত; কিন্তু উহারা আমার শাস্তি এড়াইতে পারে নাই। উহাদের প্রত্যেককেই আমি তাহার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়াছিলাম : উহাদের কাহারও প্রতি প্রেরণ করিয়াছি প্রস্তরসহ প্রচ- ঝটিকা, উহাদের কাহাকেও আঘাত করিয়াছিল মহানাদ, কাহাকেও আমি প্রোথিত করিয়াছিলাম ভূগর্ভে এবং কাহাকেও করিয়াছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই; তাহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল।

৩০. ৩৬: আমি যখন মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদ দেই তাহারা তাহাতে উৎফুল্ল হয় এবং উহাদের কৃতকর্মের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত হইলেই উহারা হতাশ হইয়া পড়ে।

৩০. ৪১: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদেরকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩২. ২০-২১: এবং যাহারা পাপাচার করিয়াছে তাহাদের বাসস্থান হইবে জাহান্নাম; যখনই উহারা জাহান্নাম হইতে বাহির হইতে চাহিবে তখনই উহাদেরকে ফিরাইয়া দেওয়া হইবে উহাতে এবং উহাদেরকে বলা হইবে, ‘ যে অগ্নিশাস্তিকে তোমরা মিথ্যা বলিতে, উহা আস্বাদন কর।’ গুরু শাস্তির পূর্বে উহাদেরকে আমি অবশ্যই লঘুশাস্তি আস্বাদন করাইব, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩৩. ২৪. কারণ আল্লাহ্ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাহাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তাঁহার ইচ্ছা হইলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা উহাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৩৪. ১৫-১৭: সাবাবাসীদের জন্য তো উহাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন: দুইটি উদ্যান, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে, উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত রিযিক ভোগ কর এবং তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম নগরী এবং ক্ষমাশীল প্রতিপালক। পরে উহারা অবাধ্য হইল। ফলে আমি উহাদের উপর প্রবাহিত করিলাম বাঁধভাঙ্গা বন্যা এবং উহাদের উদ্যান দুইটিকে পরিবর্তন করিয়া দিলাম এমন দুইটি উদ্যানে যাহাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি উহাদেরকে এই শাস্তি দিয়াছিলাম উহাদের কুফরীর জন্য। আমি কৃতঘœ ব্যতীত আর কাহাকেও এমন শাস্তি দেই না।

৩৯. ২৫- ২৬: উহাদের পূর্ববর্তিগণও অস্বীকার করিয়াছিল, ফলে শাস্তি এমনভাবে উহাদেরকে গ্রাস করিল যে, উহারা ধারণাও করিতে পারে নাই। ফলে আল্লাহ্ উহাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ করাইলেন এবং আখিরাতের শাস্তি তো কঠিনতর। যদি ইহারা জানিত!

৪২. ৩০: তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাহাত তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করিয়া দেন।

৪২. ৪৮: উহারা যদি মুখ ফিরাইয়া নেয়, তবে তোমাকে তো আমি ইহাদের রক্ষক করিয়া পাঠাই নাই। তোমার কাজ তো কেবল বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া। আমি মানুষকে যখন অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন সে ইহাতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন উহাদের কৃতকর্মের জন্য উহাদের বিপদ-আপদ ঘটে তখন মানুষ হইয়া পড়ে অকৃতজ্ঞ।

৪৩. ৪৬-৪৮: মূসাকে তো আমি নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, ‘আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত।’
সে উহাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসিবামাত্র উহারা তাহা লইয়া হাসি-ঠাট্টা করিতে লাগিল। আমি উহাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাই নাই যাহা উহার অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি উহাদেরকে শাস্তি দিলাম যাহাতে উহারা প্রত্যাবর্তন করে।

৪৪. ১৫-১৬: আমি কিছুকালের জন্য শাস্তি রহিত করিব- তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবে। যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করিব, সেদিন নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই।

৫৭. ২২-২৩: পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহ্র পক্ষে ইহা খুবই সহজ। ইহা এইজন্য যে, তোমরা যাহা হারাইয়াছ তাহাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যাহা তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন তাহার জন্য হর্ষোৎফুল্ল না হও। আল্লাহ্ পসন্দ করেন না উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে।

৬৪. ১১: আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তাহার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

‘আল্লাহর সংরক্ষণ’ বনাম ‘শয়তানের সংরক্ষণ’

by syed wali fbfdbd

link see comments

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157280572366460&id=521056459

.

‘আল্লাহর সংরক্ষণ’ বনাম ‘শয়তানের সংরক্ষণ’

নবী (সঃ) কে আল্লাহ ওহির মাধ্যমে কিতাব, হিকমত, কিতাবের তাফসির- দিয়েছেন। সেই সাথে আল্লাহ কুরআনে জানান, তিনি ইঙ্গিতের মাধ্যেমে মানুষকে অনেক সময় নির্দেশ দেন। সুতরাং নবীকেও নিশ্চিত ইঙ্গিতের মাধ্যমে তার করনীয় প্রসঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে নবীকে আল্লাহ যে কিতাব এবং হিকমত দিয়েছেন তা ব্যাবহার করে নিজ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী নবী তার নিজ কর্মকান্ড প্রসঙ্গে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা স্বাভািবক। কখনো সে সিদ্ধান্তের কোনটি আল্লাহর দৃষ্টিতে যথাযথ মনে না হলে আল্লাহ ওহি পাঠিয়ে তা সংশোধন করেছেন। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আয়াত কুরআনে আছে।
পবিত্র কুরআনে মু’মিনদের স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নবীর আনুগত্য করার, আদেশ-নির্দেশ মেনে চলার এবং তাকে অনুসরণ করার। এখন নবী (সঃ) সেটি ওহির মাধ্যমে পান, ইঙ্গিতের মাধ্যমে পান আর আল্লাহ তাকে যে ওহির মাধ্যমে কিতাব কিতাব ও হিকমত দিয়েছেন সে আলোকে নিজে সিদ্ধান্ত দিন – সে সিদ্ধান্ত — তা দেখার জন্য মুমিনদের কোন পছন্দ থাকবে না -এটি পবিত্র কুআনের স্পষ্ট নির্দেশ। নবী যা বলবেন/আদেশ করবেন মু’মিনগণ তা মানতে বাধ্য। পবিত্র কুরআনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মুলত নবী (সঃ) জীবনের কর্মকান্ডসহ তার জীবনী। সুতরাং সেগুলোর মাধ্যমে নবী (সঃ) অনুসরণ করা কঠিন কিছু নয়।
সমস্যাটি সেখানে নয়। সমস্যা নবী (সঃ) অনুসরণ নয়। সমস্যাটি তাদের নিয়ে যারা ‘নবী (স্:)-করেছেন, বলেছেন, আমি নবীকে করতে দেখেছি’- এ কথাগুলো দাবী করেন। তাদের নিয়ে।
নবী যখন কোন কিছু করেছেন, বলেছেন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আল্লাহ সয়ং নবীকে বলছেন, “মুসাকে যখন কিতাব দেয়া হয় তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না।” অর্থাৎ মুসাকে নিয়ে যেসব গল্প সে সময় প্রচলিত ছিল তা ত্যাগ করে আল্লাহ নবীকে কুরআনের মাধ্যমে যে সত্য জানাচ্ছেন। নবীকে শুধুমাত্র সে সত্য গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।
সুতরাং কেউ একজন দাবী করলেন, নবী বলেছেন, ‘অসুস্থ হলে তুমি ঊটের মুত্র খাও’ আমি ঐ লোকের কথা কি বিশ্বাস করব?
কারো মনে কি প্রশ্ন আসবে না, ‘আসলে কি লোকটি সত্য বলছে? নাকি নবীর নামে অসত্য বলছে?
নবীর নামে বা অন্য মু’মিনদের নামে বহু লোক অসত্য বলত সে উদাহরণ কুরআনে আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন। নবীর বিপক্ষে যারা তারা তো বলতই এমনকি মুমিনদের মধ্যে অনেকে কখনো কখনো অসত্য বলেছে, সে উদাহরণও কুরআনে আছে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু আয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে সাবধান করেছেন। সেই সাথে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে, কেউ কিছু শুনেছে, দেখেছে – এমন কোন দাবীর সত্যতা যাচাই-এর কিছু পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। সাধারণ ব্যবসা বিষয়ে থেকে ওয়ািসয়াত বিষয়ে লিখিত দলিল এবং সেই সাথে দুইজন সাক্ষী। লিখিত দলিল না হলে অন্তত দু’জন সাক্ষী যারা দু’জন একই সাক্ষী দেবে। তিনি মু’মিন হউন বা সাহাবী হউন সকলের জন্য একই ব্যবস্থা। আবার বিষয়টি যদি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে সাক্ষী চারজন । একজন পুরুষের সমান দুইজন নারী সাক্ষী। অথ্যাৎ কোন নারী যদি কারো কোন বিষয় সাক্ষী দেয় তবে চারজন নারীকে একই কথা বলতে হবে। আল্লাহ বলেন এভাবেই মানুষ কারো কোন কথার সত্যতা কেবল যাচাই করতে পারে। এভাবেই সত্যের নিকটর পৌছান যায় । সুতরাং কেউ যদি দাবী করেন রাসুল (সঃ)- বলেছেন – তবে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন?
অনেকে কুরআন এবং সিয়াহ সিত্তার ইতিহাসকে এক করে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে যে কারো মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগ্া উচিত:
১. পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতের পেছনে বা সামনে অমুক সাহাবী/ তমুক সাহাবী বলেছেন -এ কথাটি কেন নেই?
এ প্রশ্নের উত্তরে পরম সত্য হচ্ছে কুরআন সংরক্ষনের ইতিহাস আর সিয়াহ সিত্তাহ সংরক্ষনের ইতিহাস আদৌ এক নয়।
কুরআন রাসুল (সঃ) –এর সময় একদিকে যেমন লিখিত রূপ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মুমিনরা তা মুখস্ত করেছেন। ফলে একজন মু’মিন যে শব্দে, বাক্যে দাড়ি কমায় একটি আয়াত উচ্চারণ করতেন শত মু’মিন সেই একই শব্দে, বাক্যে দাড়ি কমায় তা উচ্চারণ করতেন। সুতরাং কত সাক্ষী প্রয়োজন? একজন সামান্য ভুল করলে আরেকজন তা শুদ্ধ করে দিচ্ছেন। সে রীতি আজও চলে আসছে।
মানুষের কথার প্রাথমিক সত্য মিথ্যা যাচাই-এ কুরআনের সাক্ষী সংত্রান্ত আয়াতগুলি আমরা পড়েছি। সুতরাং কারো কোন বিষয়ে কেউ কিছু দাবী করলে, যেমন অমুকে এ কথা বলেছে, করছে বা অমুককে আমি করতে দেখেছি/শুনেছি -এসব ক্ষেত্রে করআনের বিধানটি কি ? এসব বিষয়ের সত্যতা প্রমানিত করতে হলে কয়জন সাক্ষী দরকার? কুরআন কি বলে? রাসুল (সঃ) কিছু বলেছেন বা করেছেন কুরআন ব্যহীত আর যে সব সুত্র থেকে আমরা তথ্য পাই সে বিষয়ে কুরআনের বিধান অনুযায়ী সে সুত্রের বা তথ্যের সত্যতা কতটুকু?
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে:
১. সিয়াহ সিত্তাহ থেকে বা কুরআন ব্যতীত অন্য কোন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে বা পরবর্তীতে কারো বর্ণনা থেকে ইসলাম ধর্মের রীতি-নীতি সম্পর্কে বা রাসুল (সঃ)-কে কোন কিছু করতে দেখেছেন বা বলতে শুনেছেন- এমন ঘটনা দুজন সাহাবী হুবুহ একইভাবে বলতে পেরেছেন এমন একটি উদাহরণ কি দিতে পারবেন?
২. এ সম্পর্কে আল্লাহর বিধান কি?
৩. কিভাবে এই সিয়াহ সিত্তাহ-এর জন্ম?
যারা এই গ্রন্থগুলো সংকলিত করেছে তারা নিজেরাই দাবী করছে, কুরআন থাকা সত্ত্বেও তখন আল্লাহ এবং রাসুলের নামে মিথ্যা বলা হত। রাসুল (সঃ)-এর ওফাতের ২০০ বছর পর যারা সিয়াহ সিত্তাহ সংকলন করলেন তারা এ কাজের পেছনে প্রধান যে যুক্তি দেন তা হল: “রাসুলের নামে লোকজন মিথ্যা বলত, অবস্থা এমন দাড়াল যে কোনটি আসলে আল্লাহ এবং রাসূল-এর কথা আর কোনটি আল্লাহ এবং রাসূল -এর নামে মানুষের নিজের মনগড়া কথা সেটি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে দাড়াল। সে কারণে তারা রাসুলের নামে প্রচলিত কথা বা হাদিসগুলোর মধ্য থেকে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা যাচাই করে সহিহ হাদিস লিপিবদ্ধ করেন। গ্রন্থগুেলার সংকলনকারীদের দাবী অনুযায়ী তারা তাদের নিজ জ্ঞানে, তাদের নিজস্ব মত ও পদ্ধতি অনুসরণ করে মানুষের এই মুখের কথা যাচাই-বাছাই করে তাদের দৃষ্টিতে যেগুলো সত্য মনে হল তা একত্র করে গ্রন্থ সংকলন করলেন।”
এক্ষেত্রে সংগত প্রশ্ন :
(১) ইমামগন রাসুল (সঃ) কথার সত্য-মিথ্যা বাছাই করতে যে পদ্ধিতি অথ্যাৎ সনদ পদ্ধতি ব্যাবহার করলেন- সত্য মিথ্যা যাচাই করার এ পদ্ধতি কি কুরআনের বিধানসম্মত পদ্ধতি?
(২) আল্লাহ কুরআনে শিক্ষা দেয়া সত্য মিথ্যা যাচাই করার পদ্ধতি বাদ দিয়ে ইমামগণ কেন জাহিলিয়াত যুগের পদ্ধতি গ্রহণ করলেন?
(৩) আল্লাহ পবিত্র করআনে বলেন: যারা কোন কিছু সত্য হিসাবে দাবী করে কিন্তু সাক্ষী হাজির করে না তারা মিথ্যুক।
(৪) আবু হুরাইরা, আনাস, আয়েশা (রা) প্রমুখ যারা রাসুল বলেছেন/করেছেন দাবী করে একটি হাদিস বলেন, তখন তাদের দাবীর সমর্থনে তারা কি কোন সাক্ষী হাজির করেছেন- যারা হবুহু একই সাক্ষী দিয়েছেন?
(5) সিয়াহ সিত্তাহে (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ-ইত্যাদি) কি এমন একটি হাদিস কি আছে, যে হাদিসটি দুজন সাহাবী, তাবীঈ বা তাবে-তাবীঈ সকল পর্যায়ে একই কথা, শব্দ, বাক্য দাড়ি, কমাসহ হুবুহ একইভাবে বর্ণনা করেছেন?
তবে আল্লাহ যেমন বলেন, ‘যারা কাউকে কিছু বলেতে শুনেছে/দেখেছে বলে দাবী করে কিন্তু সাক্ষী হাজির করে না’ তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মিথ্যুক। নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর বান্দা তার রাসুলের অনুসারীদের দৃষ্টিতেও মিথ্যুক। তিনি সাহাবী বলে দাবী করুন বা রাসুল (সঃ)-এর স্ত্রী বা আপন কেউ বলেই দাবী করুন।
প্রশ্ন হচ্ছে সিয়াহ সিত্তাহের অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে আমরা কি রাসুল (সঃ) কে অনুসরণের নামে মিথ্যুকদের অনুসরণ করব? অন্যদিকে যে এ কাজটি করবেন তিনি কি কুরআন অস্বীকার করছেন না ?
সাক্ষীবিহীন কারো কথিত হাদিস সত্য বলে বিশ্বাস তো দূরের কথা, সত্য মনে করার মত কি কোন পথ মু’মিনের জন্য খোলা আছে? আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করেন, কুরআনের হাদিসের চেয়ে উত্তম হাদিস আর কি আছে?

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো বলেন, তিনি নবী-রাসুলদের ‘তামান্না’ (কথা, বর্ণনা-ইত্যাদি) এর মধ্য থেকে শুধুমাত্র আল্লাহর আয়াত সংরক্ষণ করেন।
এখানে সংরক্ষন শব্দটি খেয়াল করুন। কোন কিছু যখন ‘সংরক্ষণ’ করা হয় সেটি পরবর্তী প্রজম্মের জন্য সংরক্ষণ বুঝায়। অথ্যাৎ নবী (সঃ)-এর পরবর্তী প্রজম্মের জন্য আল্লাহ শুধুমাত্র তার আয়াত সংরক্ষন করেছেন। নবী রাসুলদের মুখ নিতৃত আয়াত ব্যতিত অন্য কোন ‘কথা’ বা –‘বর্ণনা’ নয়। সুতরাং আল্লাহ পবিত্র কুরআনেই মাধ্যমেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সয়ং নবী সঃ- -এর আদেশ, নিষেধ ইত্যাদির আনুগত্য ও অনুসরণ করার ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে বর্ণিত নবীর কর্মকান্ড অনুসরণ আর কোন কথা বর্ণনা অনুসরণ যোগ্য নয়। সুতরাং কুরআন মানলে নবী-রাসুলকে অন্য কোন ব্যক্তি কিছু করতে দেখেছেন বা বলতে শুনেছেন এমন দাবী করে কারো বর্ণনা অনুসরণ যোগ্য হয় কিভাবে?
আল্লাহ অবশ্য নবী-রাসুলগণের ‘তামান্না’-এর মধ্যে আল্লাহর আয়াত ছাড়া বাকী কথা/বর্ণনা তার কাছে মুল্যহীন তা বলেন নি। তিনি সেগুলো কোন কোন মানুষের জন্য কাজে লাগাবেন -সে কথাটি কুরআনে বলেছেন। আল্লাহ বলেন সেসব হবে শয়তানের ময়লাযুক্ত। কথিত সে বর্ণনা তিনি মুনাফিকদের জন্য পরীক্ষাসরুপ হিসাবে ব্যবহার করেন।
শম্ভবত শয়তান সে সুযোগ নিয়ে তারই অনুসারীদের দিয়ে সেসব ময়লাযুক্ত কথা/বর্ণনা/বাণী নবী (সঃ) -এর ওফাতের প্রায় ২০০ বছর পর চূড়ান্তভাবে সংরক্ষণ করতে সফল হয়েছে। তারই সেই সংরক্ষিত বাণী নানা চটকদার কথার মোড়কে নবী (সঃ) -এর অনুসরণ বালে দাবী করে বিপুল সংখ্যক মানুষকে তারই অনুসারী বানাচ্ছে!
সুতরাং আপনি প্রকৃত মুসলিম হতে চাইলে আপনি নবী (সঃ)-কে অনুসরণ করার জন্য সংরক্ষিত বাণীগ্রন্থের কোনটি বেছে নেবেন সে সিদ্ধান্ত আপনার।

(আলোচনার আকার ছোট রাখার জন্য উপরােক্ত আলোচনার তথ্য সুত্র দেওয়া হয়নি। যারা কুরআন পাঠ করেছেন তাদের কাছে তথ্য-সুত্র সংক্রান্ত আয়াতগুলো স্পষ্ট হওয়ারই কথা। তবে কেউ সে আয়াত সম্পর্কে জানতে চাইলে বা এই আলোচনায় প্রদত্ত কোন তথ্য সৃত্র জানতে চাইলে কমেন্টে জানাতে পারেন।)

…….

In comment by wali

জীবনী গ্রন্থ হচ্ছে কারাে জীবনের কর্মকান্ড যে গ্রন্থে লিখিত থাকে। এই কর্মকান্ড বিভিন্ন ভাবে লিখিত হতে পারে। মূল কথা হচ্ছে সেই গ্রন্থ থেকে যার কথা বলা হচ্ছে তার জীনের কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কী- না? কুরআন থেকে আমরা রাসুল (সঃ)-এর জীবনের কর্মকান্ড জানতে পারছি কী-না?
কুরআনের অন্তত এক তৃতীয়াংশ বাণী সরাসরি রাসুল (সঃ)-এর জীবনের কর্মকান্ড সংশ্লিষ্ট।
কত উদাহরণ চান?
‘আমি আকাশের দিকে বারবার তোমার তাকানোকে লক্ষ্য করি সুতরাং তোমাকে এমন এক কিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যাহা তুমি পছন্দ কর । অতএব তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও —-।’ (২ঃ১৪৪)
‘আমি তোমাদের মধ্য হইেত তোমাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করিয়াছি, যে আমার আয়াত সমূহ তোমাদের নিকট তেলওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দেয় আর যাহা তোমরা জানিত না তাহা শিক্ষা দেয়।’ (২ঃ১৫১)
‘— যখন কাফিররা তাহাকে বহিস্কার করিয়াছিল এবং সে ছিল দুইজনের দ্বিতীয় জন, যখন তাহারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল সে তাহার সঙ্গীকে বলিয়াছিল, বিষন্ন হইও না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন —-। (৯ঃ৪০)
আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করিয়াছেন। কাহারা সত্যবাদী এবং কাহারা মিথ্যাবাদী তোমার নিকট স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত —- তুমি কেন উহাদিগকে অব্যাহতি দিলে? (৯:৪৩)
এগুলো কার জীবনের ঘটনা? এমন কত চান? এই সুরা তাওবার পুেরা বর্ণনা কার জীবন কেন্দ্রীক?
এত গেল সরাসরি। আবার পরোক্ষভাবে কুরআনের সবই রাসুল (সঃ)-এর জীবনী হতে পারে।
আল্লাহ বলেন, তিনি কুরআন রাসুলের জন্য ফরজ করেছেন (দেখুন : ২৮ঃ৮৫)। অর্থাৎ কুরআনের প্রতিটি প্রত্যক্ষ, পরােক্ষ আদেশ, নিদেশ, উপদেশ রাসুল (সঃ) জন্য অবশ্য পালনীয়। আমরা বিশ্বাস করি তিনি তা পালন করেছেন।
সুরাং যখন রাসুল (সঃ)-কে উপদেশ দেয়া হয়, ‘বল আমি ইহার (ধর্ম প্রচার, ধর্ম, হিকমত শিক্ষা -ইত্যাদি) জন্য কোন পারিশ্রমিক চাই না (দেখুন ৬ঃ৯০)। তার মানে আমরা জানতে পারলাম তিনি এ জন্য কোন পাশ্রমিক গ্রহণ করেন নি। এটি কার জীবনের ঘটনা জানলাম?
এভাবে সমগ্র কুরআন পাঠেই আমরা রাসুল (সঃ) জীবনের কর্মকান্ড কি জানতে পারি? আল্লাহ এভাবেই রাসুল (সঃ)-এর জীবনের ঘটনা/কর্মকান্ড যা/যেটুকু পরম সাফল্যের জন্য আমাদের প্রয়োজন তা কি জানান নি? আমরা কি এভাবে তাকে অনুসরণ করতে পারি?