আল কুরআন অর্থ না বুঝে পড়া চরম গুনাহ

আল কুরআন অর্থ না বুঝে বা বুঝার উদ্দেশ্য ছাড়া পড়া চরম গুনাহ (Edited)

By.S Zauhar see fbgp link.

  • শওকত জাওহার

১. আল্লাহ কুরআন কিরায়াতের (পাঠের) নির্দেশ দিয়েছেন (৯৬:১, ১৬:৯৮)। আর কিরায়াত/পাঠ বলতে ‘বুঝে পড়া’ বুঝায়, না বুঝে পড়া নয়। তাই আল্লাহর আদেশ হচ্ছে ‘বুঝে বুঝে কুরআন পড়’। ‘না বুঝে বুঝে কুরআন পড়’ নয়। এমতাবস্থায় যারা বুঝার উদ্দেশ্য ছাড়া কুরআন পড়ে তারা আল্লাহর আদেশ লংঘনকারী তথা গুনাহগার। ‘কিরায়াত’/ পাঠ বলতে বুঝে পড়া বুঝায়, তার প্রমাণ, ১৭:১৪ আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমার আমলনামা কিরায়াত/পাঠ কর, তোমার হিসেবের জন্য তুমি যথেষ্ট”। যদি পাঠ মানে না বুঝে পড়া হয়, তাহলে কিভাবে সে তার হিসাবের জন্য যথেষ্ট হবে?
.
২. আল্লাহ বলেছেন যারা কিতাবের হক্ব আদায় করে তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করে তারাই কিতাবের প্রতি মু’মিন/ ঈমানদার, অন্যরা নয় (২:১২১)। কিতাবের একটি হক হচ্ছে কিতাবের তথ্য অনুসারে আমল করা। না বুঝলে আমল করা যায় না। কিতাবের আরেকটি হক হচ্ছে কিতাবের তথ্য প্রচার করা। না বুঝলে তথ্য প্রচার করা যায় না। কিতাবের আরেকটি হক হচ্ছে কিতাবকে সঠিক উচ্চারণে ও আবৃত্তির ভঙ্গিতে পড়া। কারণ ভুল উচ্চারণে ও আবৃত্তির ভঙ্গিতে পড়লে অর্থ বদলে যায়। সুতরাং কিতাবের অন্যতম হক্ব হচ্ছে কিতাবের অর্থ বুঝা। যারা কিতাবের অর্থ বুঝার উদ্দেশ্য ছাড়া পড়ে তারা আল্লাহর ঘোষণা অনুসারে কিতাবের প্রতি প্রকৃত ঈমানদার নয়।
.
৩. ৪৭:২৪ আয়াতে কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর/ উপাত্ত বিন্যাসের মাধ্যমে তথ্য নির্ণয় বা তথ্যগত সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য চিন্তা গবেষণা (৪:৮২) না করার জন্য আল্লাহ প্রশ্ন রেখেছেন যে, তাদের অন্তর কি তালা লাগানো আছে? না বুঝলে চিন্তা গবেষণা করা সম্ভব নয়। না বুঝা এবং চিন্তা গবেষণা না করা হলো আল্লাহর নির্দেশনা লংঘন এবং গুনাহের কাজ।
.
৪. ৬২:৫ আয়াতে কিতাবকে যথাযথভাবে বহন না করাকে (কিতাব ঘরে রাখা/ কিতাবের ধারক বাহক হওয়া অথচ না পড়া অথবা না বুঝে পড়াকে) ঐ গাধার কাজের সমতুল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে যে গাধা পিঠে কিতাব বহন করে অথচ জানে না সে কি বহন করছে। তাহলে এ ধরনের বেবুঝ পাঠ অবশ্যই তিরস্কারযোগ্য ও গুনাহের কাজ।
.
৫. কুরআন নাজিল করা হয়েছে হিদায়াত, হিদায়াতের প্রমাণ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে (২:১৮৫)। যেভাবে পড়লে হিদায়াত পাওয়া যায় না, হিদায়াতের প্রমাণ বুঝা যায় না, সত্য মিথ্যার পার্থক্য জানা যায় না সেভাবে/ অর্থ না বুঝে পড়া গুনাহ।
.
৬. কুরআন নাজিল করা হয়েছে যেন মানুষ কুরআনের আয়াত নিয়ে তাফাক্কুর/ চিন্তা গবেষণা করে কুরআনে বর্ণিত তথ্যের বাস্তব নমুনা জানা ও তার মাধ্যমে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য (২:২১৯, ১৬:৪৪)। সুতরাং অর্থ না বুঝে পাঠ করলে গুনাহ।
.
৭. যারা জ্ঞান অর্জন করে আর যারা জ্ঞান অর্জন করে না, উভয়ে সমান নয় (৩৯:৯)। জ্ঞানে সুস্থির ব্যক্তিরাই (উলামা) আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর বিধি-বিধানের প্রভাব গ্রহণ করে (৩৫:২৮)। কিতাবের আংশিক বিধান বাস্তবায়ন মানে কিতাবের কিছু অংশের প্রতি ঈমান ও কিছু অংশের প্রতি কুফর (২:৮৫, ৪৭:২৫-২৮)। তাই সমগ্র কিতাবের জ্ঞান অর্জনের জন্য তা পাঠ করতে হবে, অন্যথায় গুনাহ হবে।
.
৮. কুরআনকে সহজ করা হয়েছে এর তথ্য স্মরণ রাখার (বুঝার ও তদনুযায়ী কাজ করার) জন্য। তাই এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে হবে তথা এর উপদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে (৫৪:১৭,২২,৩২,৪০)। না বুঝলে উপদেশ বাস্তবায়ন করা যায় না। তাই না বুঝে পড়া গুনাহ।
.
৯. তার চেয়ে বড় জালিম কে যাকে রবের আয়াত দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় অথচ সে মুখ ফিরিয়ে নেয়? (১৮:৫৭)। (যদি আয়াত না বুঝে তাহলে আয়াত দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় এবং মানুষ তা থেকে বিমুখ থাকে)। তার চেয়ে বড় জালিম কে যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো সাক্ষ্য (কোন তথ্যের পক্ষে বা বিপক্ষে আল্লাহর আয়াত) আছে অথচ সে তা গোপন করে? (২:১৪০)। (যে অর্থ বুঝে না সে নিজের থেকে ও অন্যের থেকে কুরআনের সাক্ষ্য গোপন করে)। সুতরাং অর্থ না বুঝে পাঠ করা সবচেয়ে বড় জুলুম বা গুনাহ।
.
১০. কুরআন পাঠ করতে হবে শয়তানের ধোঁকা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে। (১৬:৯৮)। শয়তান চায় মানুষ যেন কুরআন না বুঝে। না বুঝে বা বুঝার উদ্দেশ্য ছাড়া পড়া হচ্ছে শয়তানের উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা।
.
১১. আসমান-জমিন ও উভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছুই বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি বা প্রণয়ন করা হয় নি। বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি বা প্রণয়ন করার ধারণা কাফিরদের ধারণা। (৩৮:২৭)। উদ্দেশ্য ছাড়া প্রণয়ন করা হয়েছে মর্মে ধারণা করা কাফিরদের ধারণা। এটা সে ধরনের ধারণার অন্তর্ভুক্ত যাতে গুনাহ। (৪৯:১২)। তাই যে ধরনের পাঠে পাঠের উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয় না তা গুনাহ।
.
১২. আল্লাহ কুরআনকে ফরজ করেছেন এবং কুরআনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় ফরজ করেছেন। (২৮:৮৫, ৩৩:৫০, ৬৬:২, ৪:১১, ৯:৬০ ইত্যাদি)। না বুঝে পড়লে এসব ফরজ পালন করা সম্ভব নয়। তাই না বুঝে পড়া গুনাহ।
.
১৩. আল্লাহ যদি তাঁর প্রদত্ত মূল নির্দেশের শর্তসাপেক্ষ ব্যতিক্রমের অনুমতি দেন সেক্ষেত্রে গুনাহ নেই, অন্যথায় গুনাহ আছে। (২:২০৩)। গুনাহের মূল বিষয় হচ্ছে চূড়ান্ত বিচারে তা মানুষের জন্য অকল্যাণকর হওয়া (আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা গুনাহ, তবে আল্লাহর সকল নির্দেশ মূলত মানুষেরই কল্যাণ অকল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে)। (২:২১৯)। সাক্ষ্য গোপন করা গুনাহ (২:২৮৩, ৫:১০৬)। আর কুরআন না বুঝে পড়া হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে থাকা সাক্ষ্য গোপন করার সমতুল্য। (২:১৪০)। তাই কুরআন না বুঝে পড়া গুনাহ।
.
১৪. আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন তা পরিপালন করা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকা মানুষের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব, কারণ আল্লাহ এমন কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা মানুষের পক্ষে সাধ্যের বাহিরে। (২:২৩৩, ২:২৮৬, ৭:৪২, ৬৫:৭, ৬:১৬৫)। সামর্থ্যের তারতম্য ঘটে তথা স্বাভাবিক অবস্থার সামর্থ্য ও ওজরকালীন সামর্থ্য ভিন্নরূপ হয়ে থাকে। ওজর অবস্থায় মূল নির্দেশের ব্যতিক্রম হলে শর্তসাপেক্ষে সে দোষমুক্ত সাব্যস্ত হয়। (২:১৭৩)। এসব আয়াতের শিক্ষানুসারে বুঝা যায়, যে নিরক্ষরতাজনিত কারণে পড়তে পারে না, সে শুনার মাধ্যমে কুরআন বুঝার চেষ্টা করবে; যে আরবি ভাষা (উচ্চারণ ও অর্থ বুঝার পর্যায়ে) শিখতে পারে নি, সে নিজ ভাষায় অনুবাদ পড়ার মাধ্যমে কুরআন বুঝার চেষ্টা করবে; যে সঠিক উচ্চারণে পড়তে সক্ষম হয় না, সে চেষ্টা করলে যতটুকু পারে সেটাই ব্যতিক্রম হিসেবে তার ব্যতিস্বাতন্ত্রিক অবস্থানে তার জন্য সাধ্যমতো সঠিক হিসেবে সাব্যস্ত হবে। সমগ্র কুরআন অধ্যয়ন হবে মূল টার্গেট, তারপর প্রক্রিয়া শুরুর পর যে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেটা তার সামর্থ্যের সাপেক্ষেই বিচার্য হবে। তবে যে আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে আল্লাহ তাকে নিয়মমাফিক বিভিন্ন মাত্রায় (সুবুল) হিদায়াত দিতে থাকেন। (২৯:৬৯)। সামর্থ্য ক্রমোন্নয়নশীল তাই সামর্থ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।

Source:-with comments:-

https://www.facebook.com/groups/747667572302186/permalink/1010112576057683/