Punishment in this world-Quran

By syed wali fbfd

পৃথিবীতে আল্লাহর শাস্তি : কুরআন যা বলে
ক. প্রাথমিক ধারণা
৩০. ৪১: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদেরকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।
৬. ৪৩-৪৪: আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল। তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম; ফলে তখনই তাহারা নিরাশ হইল।
৪৪. ১৫-১৬: আমি কিছুকালের জন্য শাস্তি রহিত করিব- তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবে। যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করিব, সেদিন নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই।
৩. ১৭৮: কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য। আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।

বিস্তারিত

২. ৫৭-৫৯: আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না৪২ ও সাল্ওয়া৪৩ প্রেরণ করিলাম। ‘তোমাদেরকে যে উত্তম জীবিকা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর। তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতিই জুলুম করিয়াছিল। স্মরণ কর, যখন আমি বলিলাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নতশিরে প্রবেশ কর দ্বারা দিয়া এবং বল: ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করিব। কিন্তু যাহারা অন্যায় করিয়াছিল তাহারা তাহাদেরকে যাহা বলা হইয়াছিল তাহার পরিবর্তে অন্য কথা বলিল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হইতে শান্তি প্রেরণ করিলাম, কারণ তাহারা সত্য ত্যাগ করিয়াছিল।

২. ৬১: যখন তোমরা বলিয়াছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একইরকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করিব না; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর- তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সবজি, কাঁকুড়, গম,৪৮ মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।’ মূসা বলিল, ‘তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করিতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যাহা চাও নিশ্চয়ই তাহা সেখানে আছে।’ তাহারা লঞ্ছনা ও দারিদ্রগস্ত হইল এবং তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইল। ইহা এইজন্য যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতকে৪৯ অস্বীকার করিত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করিবার জন্যই তাহাদের এই পরিণতি হইয়াছিল।

২.৮৫-৮৬: তোমরাই তাহারা যাহারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করিতেছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করিতেছ, তোমরা নিজেরা তাহাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছ এবং তাহারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ চাও; অথচ তাহাদের বহিষ্করণই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নন। তাহারাই আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবন μয় করে; সুতরাং তাহাদের শাস্তি লাঘব করা হইবে না এবং তাহারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না।

৩. ১১২: আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাহিরে যেখানেই তাহাদের পাওয়া গিয়াছে সেখানেই তাহারা লাঞ্ছিত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইয়াছে এবং হীনতাগ্রস্ত হইয়াছে। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ প্রত্যাখান করিত এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করিত; ইহা এইজন্য যে, তাহারা অবাধ্য হইয়াছিল এবং সীমালংঘন করিত।

৩. ১৬৫-১৬৭. কী ব্যাপার! যখন তোমাদের মুসীবত আসিল তখন তোমরা বলিল, ‘ইহা কোথা হইতে আসিল? অথচ তোমরা তো দ্বিগুন বিপদ ঘটাইয়াছিলে। বল, ‘ইহা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হইতে’; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপর্যয় ঘটিয়াছিল তাহা আল্লাহ্রই হুকুমে; ইহা মুমিনগণকে জানিবার জন্য এবং মুনাফিকদেরকে জানিবার জন্য এবং তাহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘আস, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা প্রতিরোধ কর।’ তাহারা বলিয়াছিল, ‘যদি যুদ্ধ জানিতাম তবে নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করিতাম।’ সেদিন তাহারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীর নিকটতর ছিল। যাহা তাহাদের অন্তরে নাই তাহারা তাহা মুখে বলে; তাহারা যাহা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।

৩. ১৭৮: কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য। আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।

৪. ৬১-৬২: তাহাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হইতে মুখ একেবারে ফিরাইয়া লইতে দেখিবে।
তাহাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাহাদের কোন মুসীবত হইবে তখন তাহাদের কী অবস্থা হইবে? অতঃপর তাহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া তোমার নিকট আসিয়া বলিবে, ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাই নাই।’

৪. ৭৮-৭৯: তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাইবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করিলেও। যদি তাহাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে ‘ইহা আল্লাহ্র নিকট হইতে।’ আর যদি তাহাদের কোন অকল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে, ‘ইহা তোমার নিকট হইতে।’ বল, ‘সবকিছুই আল্লাহ্র নিকট হইতে। এই সম্প্রদায়ের হইল কী যে, ইহারা একেবারেই কোন কথা বোঝে না!
কল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে এবং অকল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা তোমার নিজের কারণে এবং তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছি; সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

৫. ১৮. ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।’ বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদেরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন; আস্মান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে।

৫. ৭০-৭১: আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ও তাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাহাদের নিকট এমন কিছু আনে যাহা তাহাদের মনঃপূত নয়, তখনই তাহারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে। তাহারা মনে করিয়াছিল, তাহাদের কোন শাস্তি হইবে না; ফলে তাহারা অন্ধ ও বধির হইয়া গিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছিলেন। পুনরায় তাহাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হইয়াছিল। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।

৬. ৬: তাহারা কি দেখে না যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি? তাহাদেরকে দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করি নাই এবং তাহাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম, আর তাহাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম; অতঃপর তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।

৬. ১০-১১: তোমরা পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হইয়াছে। তাহারা যাহা লইয়া ঠাট্টাবিদ্রুপ করিতেছিল পরিণামে তাহাই বিদ্রুপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করিয়াছে। বল, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমন কর, অতঃপর দেখ, যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল।’

৬. ৪০-৪৫: বল, ‘ তোমরা ভাবিয়া দেখ যে, আল্লাহ্র শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হইলে তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? না, তোমরা শুধু তাঁহাকেই ডাকিবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁহাকে ডাকিতেছ তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সেই দুঃখ দূর করিবেন এবং যাহাকে তোমরা তাঁহার শরীক করিতে, তাহা তোমরা বিস্মৃত হইবে।
তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; অতঃপর তাহাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ- ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল। তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম; ফলে তখনই তাহারা নিরাশ হইল।
অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূল্যেচ্ছেদ করা হইল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই- যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।

৬. ৪৯: যাহারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলিয়াছে সত্য ত্যাগের জন্য তাহাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে।

৬. ১২৩: এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়াছি; কিন্তু তাহারা শুধু তাহাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে; অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।

৬. ১৩১-১৩২: ইহা এইহেতু যে, অধিবাসীবৃন্দ যখন অনবিহত, তখন কোন জনপদকে উহার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়। প্রত্যেকে যাহা করে তদনুসারে তাহা স্থান রহিয়াছে এবং উহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।

৬. ১৪৮: যাহারা র্শিক করিয়াছে তাহারা বলিবে, ‘আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ র্শিক করিতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করিতাম না।’ এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও প্রত্যাখান করিয়াছিল, অবশেষে তাহারা আমার শাস্তি ভোগ করিয়াছিল, বল, ‘তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? থাকিলে আমার নিকট তাহা পেশ কর; তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল।’

৭. ৪-৫: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি! আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল রাত্রিতে অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তাহারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল তখন তাহাদের কথা শুধু ইহাই ছিল যে, ‘নিশ্চয় আমরা জালিম ছিলাম।’

৭: ৯৪-১০৩: আমি কোন জনপদে নবী পাঠাইলে উহার অধিবাসীবৃন্দকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা আক্রান্ত করি, যাহাতে তাহারা কাকুতি-মিনতি করে। অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তাহারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করিয়াছে।’ অতঃপর অকস্মাৎ তাহাদেরকে আমি পাকড়াও করি, কিন্তু তাহারা উপলব্ধি করিতে পারে না। যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনিত ও তাক্ওয়া অবলম্বন করিত তবে আমি তাহাদের জন্য আকাশম-লী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করিতাম, কিন্তু তাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল; সুতরাং তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি।
তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে রাত্রিতে যখন তাহারা থাকিবে নিদ্রামগ্ন? অথবা জনপদের অধিবাসীবৃন্দ কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে পূর্বাহ্নে যখন তাহারা থাকিবে ক্রীড়ারত? তাহারা কি আল্লাহ্র কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেহই আল্লাহ্র কৌশল হইতে নিরাপদ মনে করে না।
কোন দেশের জনগণের পর যাহারা ঐ দেশের উত্তরাধিকারী হয় তাহাদের নিকট ইহা কি প্রতীয়মান হয় নাই যে, আমি ইচ্ছা করিলে তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? আর আমি তাহাদের হৃদয় মোহর করিয়া দিব, ফলে তাহারা শুনিবে না।
এই সকল জনপদের কিছু বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বিবৃত করিতেছি, তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূলগণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছিল; কিন্তু যাহা তাহারা পূর্বে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাতে ঈমান আনিবার পাত্র তাহারা ছিল না, এইভাবে আল্লাহ্ কাফিরদের হৃদয় মোহর করিয়া দেন। আমি তাহাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাই; বরং তাহাদের অধিকাংশকে তো পাপাচারীই পাইয়াছি।
তাহাদের পর মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পরিষদবর্গের নিকট পাঠাই; কিন্তু তাহারা উহা অস্বীকার করে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।

৭. ১৬৫-১৬৭: যে উপদেশ তাহাদেরকে দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন উহা বিস্মৃত হয়, তখন যাহারা অসৎকার্য হইতে নিবৃত্ত করিত তাহাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং যাহারা জুলুম করে তাহারা কুফরী করিত বলিয়া আমি তাহাদেরকে কঠোর শাস্তি দেই। তাহারাা যখন নিষিদ্ধ কাজ ঔদ্ধত্যসহকারে করিতে লাগিল তখন তাহাদেরকে বলিলাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তিনি তো কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের উপর এমন লোকদেরকে প্রেরণ করিবেন যাহারা তাহাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকিবে, আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে তৎপর এবং তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।

৭. ১৮২-১৮৩: যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাহাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে লইয়া যাই যে, তাহারা জানিতেও পারিবে না। আমি তাহাদেরকে সময় দিয়া থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

৮. ৩১-৩৬: যখন তাহাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তাহারা তখন বলে, ‘আমরা তো শ্রবণ করিলাম, ইচ্ছা করিলে আমরাও ইহার অনুরূপ বলিতে পারি, ইহা তো শুধু সেকালের লোকদের উপকথা। স্মরণ কর, তাহারা বলিয়াছিল, ‘হে আল্লাহ্! ইহা (আল্লাহর আয়াত) যদি তোমার পক্ষ হইতে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হইতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও ।’
এবং তাহাদের কী বা বলিবার আছে যে, আল্লাহ্ তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তাহারা লোকদেরকে মসজিদুল হারাম হইতে নিবৃত্ত করে? তাহারা উহার তত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকীগণই উহার তত্বাবধায়ক; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা অবগত নয়।
কা‘বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর।
আল্লার্হ পথ হইতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাহারা ধন-সম্পদ ব্যয় করিতেই থাকিবে; অতঃপর উহা তাহাদের মনস্তাপের কারণ হইবে; ইহার পর তাহারা পরাভূত হইবে এবং যাহারা কুফরী করে তাহাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হইবে।

৮. ৫০-৫৩: ৫০. তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফিরিশ্তাগণ কাফিরদের মুখম-লে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে এবং বলিতেছে, ‘তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর। ইহা তাহা, তোমাদের হস্ত যাহা পূর্বে প্রেরণ করিয়াছিল, আল্লাহ্ তো তাহার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। ফির‘আওনের স্বজন ও উহাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা আল্লাহ্র আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ্ ইহাদের পাপের জন্য ইহাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর; ইহা এইজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থায় পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি উহাদেরকে যে সম্পদ দান করিয়াছেন, উহা পরিবর্তন করিবেন; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

৯. ৫১-৫২: বল, ‘আমাদের জন্য আল্লাহ্ যাহা নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হইবে না; তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক এবং আল্লাহ্র উপরই মু’মিনদের নির্ভর করা উচিত।’
বল, ‘তোমরা আমাদের দুইটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করিতেছ এবং আমরা প্রতীক্ষা করিতেছি, আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ পক্ষ হইতে অথবা আমাদের হস্ত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।

১১. ১০১-১০২: আমি উহাদের প্রতি জুলুম করি নাই কিন্তু উহারাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল। যখন তোমার প্রতিপালকের বিধান আসিল তখন আল্লাহ্ ব্যতীত যে ইলাহ্সমূহের তাহারা ‘ইবাদত করিত তাহারা উহাদের কোন কাজে আসিল না। তাহারা ধ্বংস ব্যতীত উহাদের অন্য কিছু বৃদ্ধি করিল না।
এইরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন উহারা জুলুম করিয়া থাকে। নিশ্চয়ই তাঁহার শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন।

১৩. ৬: মঙ্গলের পূর্বে উহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, যদিও উহাদের পূর্বে ইহার বহু দৃষ্টান্ত গত হইয়াছে। মানুষের সীমালংঘন সত্বেও তোমার প্রতিপালক তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে তো কঠোর।

১৩. ৩১-৩৪: যদি কোন কুরআন এমন হইত যদ্দ¦ারা পর্বতকে গতিশীল করা যাইত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যাইত অথবা মৃতের সঙ্গে কথা বলা যাইত- তবুও উহারা উহাতে বিশ্বাস করিত না। কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ্র ইখ্িতয়ারভুক্ত। তবে কি যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে নিশ্চয়ই সকলকে সৎপথে পরিচালিত করিতে পারিতেন?
যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের কর্মফলের জন্য তাহাদের বিপর্যয় ঘটিতেই থাকিবে, অথবা বিপর্যয় তাহাদের আশেপাশে আপতিত হইতেই থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি আসিয়া পড়িবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হইয়াছে এবং যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়াছিলাম, তাহার পর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!
তবে কি প্রত্যেক মানুষ যাহা করে তাহার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি ইহাদের অক্ষম ইলাহ্গুলির মত? অথচ উহারা আল্লাহ্র বহু শরীক করিয়াছে। বল, ‘উহাদের পরিচয় দাও।’ তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও- যাহা তিনি জানেন না? অথবা ইহা বাহ্যিক কথা মাত্র? না, কাফিরদের নিকট উহাদের ছলনা শোভন প্রতীয়মান হইয়াছে এবং উহাদেরকে সৎপথ হইতে নিবৃত্ত করা হইয়াছে, আর আল্লাহ্ যাহাকে বিভ্রান্ত করেন তাহার কোন পথপ্রদর্শক নাই। উহাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! এবং আল্লাহ্র শাস্তি হইতে রক্ষা করিবার উহাদের কেহ নাই।

১৩. ৪০-৪১: উহাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়াছি তাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাই অথবা যদি ইহার পূর্বে তোমার কাল পূর্ণ করিয়া দেই- তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা এবং হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ।
উহারা কি দেখে না যে, আমি উহাদের দেশকে চতুর্দিক হইতে সংকুচিত করিয়া আনিতেছি? আল্লাহ্ আদেশ করেন, তাঁহার আদেশ রদ করিবার কেহ নাই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর।

১৬. ৯৪. পরস্পর প্রবঞ্চনা করিবার জন্য তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার করিও না; করিলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলাইয়া যাইবে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করিবে; তোমাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি।

১৬. ১১২. আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিতেছেন এক জনপদের যাহা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসিত সর্বদিক হইতে উহার প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর উহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করিল, ফলে তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য আল্লাহ্ তাহাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করাইলেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।

১৭. ৪-৭: এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনী ইস্রাঈলকে জানাইয়াছিলাম, ‘নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হইবে।’
অতঃপর এই দুইয়ের প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হইল তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলাম আমার বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; উহার ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ধ্বংস করিয়াছিল। আর প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হইয়াই থাকে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে পুনরায় উহাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করিলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করিলাম ও সংখ্যায় গরিষ্ঠ করিলাম। তোমরা সৎকর্ম করিলে সৎকর্ম নিজেদের জন্য করিবে এবং মন্দ কর্ম করিলে তাহাও করিবে নিজেদের জন্য। অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হইলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করিলাম তোমাদের মুখম-ল কালিমাচ্ছন্ন করিবার জন্য, প্রথমবার তাহারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করিয়াছিল পুনরায় সেইভাবেই উহাতে প্রবেশ করিবার জন্য এবং তাহারা যাহা অধিকার করিয়াছিল তাহা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করিবার জন্য।

১৭. ১৬-১৭: আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করিতে চাই তখন উহার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করিতে আদেশ করি, কিন্তু উহারা সেখানে অসৎকর্ম করে; অতঃপর উহার প্রতি দ-াজ্ঞা ন্যায়সংগত হইয়া যায় এবং আমি উহা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি। নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করিয়াছি! তোমার প্রতিপালকই তাঁহার বান্দাদের পাপচরণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।

১৯. ৭৩- ৭৫: উহাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্ত করা হইলে কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, ‘দুই দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসাবে উত্তম?
উহাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি-যাহারা উহাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্যদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল। বল, ‘যাহারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাহাদেরকে প্রচুর ঢিল দিবেন যতক্ষণ না তাহারা, যে বিষয়ে তাহাদেরকে সতর্ক করা হইতেছে তাহা প্রত্যক্ষ করিবে, উহা শাস্তি হউক অথবা কিয়ামতই হউক। অতঃপর তাহারা জানিতে পারিবে, কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল ।

২১. ১১-১৫: আমি ধ্বংস করিয়াছি কত জনপদ, যাহার অধিবাসীরা ছিল জালিম এবং তাহাদের পরে সৃষ্টি করিয়াছি অপর জাতি। অতঃপর যখন উহারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করিল তখনই উহারা জনপদ হইতে পলায়ন করিতে লাগিল।
উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘পলায়ন করিও না এবং ফিরিয়া আস তোমাদের ভোগসম্ভারের নিকট ও তোমাদের আবাসগৃহে, হয়ত এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে।’ উহারা বলিল, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম জালিম।’
উহাদের এই আর্তনাদ চলিতে থাকে আমি উহাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি-সদৃশ না করা পর্যন্ত।

২১. ৬৬-৭০: ইব্রাহীম বলিল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদত কর যাহা তোমাদের কোন উপকার করিতে পারে না, ক্ষতিও করিতে পারে না? ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহ্র পরিবর্তে তোমরা যাহাদের ‘ইবাদত কর তাহাদেরকে! তবুও কি তোমরা বুঝিবে না?
উহারা বলিল, ‘তাহাকে পোড়াইয়া দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, তোমরা যদি কিছু করিতে চাও।’
আমি বলিলাম, ‘হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হইয়া যাও।’
উহারা তাহার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করিয়াছিল। কিন্তু আমি উহাদেরকে করিয়া দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।

২১. ৮৭: এবং স্মরণ কর যুন-্ নূন (ইউনুস আঃ) -এর কথা, যখন সে ক্রোধভারে বাহির হইয়া গিয়াছিল এবং মনে করিয়াছিল আমি তাহার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করিব না। অতঃপর সে অন্ধকার হইতে আহ্বান করিয়াছিল: ‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী।’

২২. ৪৭-৪৮: তাহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তাহার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার সহ¯্র বৎসরের সমান; এবং আমি অবকাশ দিয়াছি কত জনপদকে যখন উহারা ছিল জালিম; অতঃপর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।

২২. ৬০: ইহাই হইয়া থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হইয়া সমতুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করিলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হইলে আল্লাহ্ তাহাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন; আল্লাহ্ নিশ্চিয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।

২৩. ৭৩- ৭৭: তুমি তো উহাদেরকে সরল পথে আহ্বান করিতেছ। যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহারা তো সরল পথ হইতে বিচ্যুত, আমি উহাদেরকে দয়া করিলেও এবং উহাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করিলেও উহারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিতে থাকিবে। আমি তো উহাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধৃত করিলাম, কিন্তু উহারা উহাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনত হইল না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না। অবশেষে যখন আমি উহাদের জন্য কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলিয়া দেই তখনই উহারা ইহাতে হতাশ হইয়া পড়ে।

২৭. ৪৯-৫২: উহারা বলিল, ‘তোমরা আলাøহ্র নামে শপথ গ্রহণ কর, ‘আমরা রাত্রিকালে তাহাকে ও তাহার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করিব; অতঃপর তাহার অভিভাবককে নিশ্চয় বলিব, ‘তাহার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই; আমরা অবশ্যই সত্যাবাদী।’
উহারা এক চক্রান্ত করিয়াছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করিলাম, কিন্তু উহারা বুঝিতে পারে নাই।
অতএব দেখ, উহাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হইয়াছে- আমি অবশ্যই উহাদেরকে ও উহাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করিয়াছি।
এই তো উহাদের ঘরবাড়ি- সীমালংঘনহেতুযাহা জনশূন্য অবস্থায় পড়িয়া আছে; ইহাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।

২৮. ৫৮-৫৯: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি যাহার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের দম্ভ করিত! এইগুলিই তো উহাদের ঘরবাড়ি; উহাদের পর এইগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করিয়াছে। আর আমি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী!
তোমার প্রতিপালক জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না উহার কেন্দ্রে তাঁহার আয়াত আবৃত্তি করিবার জন্য রাসূল প্রেরণ না করিয়া এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন ইহার বাসিন্দারা জুলুম করে।

২৯. ১০: মানুষের মধ্যে কতক বলে, ‘আমরা আল্লাহে বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহ্র পথে যখন উহারা নিগৃহীত হয়, তখন উহারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহ্র শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে কোন সাহায্য আসিলে উহারা বলিতে থাকে, ‘আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম।’ বিশ্ববাসীর অন্তঃকরণে যাহা আছে, আল্লাহ্ কি তাহা সম্যক অবগত নহেন?’

২৯. ৩৪-৩৫: ‘আমরা এই জনপদবাসীদের উপর আকাশ হইতে শস্তি নাযিল করিব, কারণ উহারা পাপাচার করিতেছিল।’ আমি তো বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে একটি স্পষ্ট আয়াত রাখিয়াছি।

২৯. ৩৯-৪০: এবং আমি সংহার করিয়াছিলাম কারূন, ফির‘আওন ও হামানকে। মূসা উহাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসিয়াছিল; তখন তাহারা দেশে দম্ভ করিত; কিন্তু উহারা আমার শাস্তি এড়াইতে পারে নাই। উহাদের প্রত্যেককেই আমি তাহার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়াছিলাম : উহাদের কাহারও প্রতি প্রেরণ করিয়াছি প্রস্তরসহ প্রচ- ঝটিকা, উহাদের কাহাকেও আঘাত করিয়াছিল মহানাদ, কাহাকেও আমি প্রোথিত করিয়াছিলাম ভূগর্ভে এবং কাহাকেও করিয়াছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই; তাহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল।

৩০. ৩৬: আমি যখন মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদ দেই তাহারা তাহাতে উৎফুল্ল হয় এবং উহাদের কৃতকর্মের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত হইলেই উহারা হতাশ হইয়া পড়ে।

৩০. ৪১: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদেরকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩২. ২০-২১: এবং যাহারা পাপাচার করিয়াছে তাহাদের বাসস্থান হইবে জাহান্নাম; যখনই উহারা জাহান্নাম হইতে বাহির হইতে চাহিবে তখনই উহাদেরকে ফিরাইয়া দেওয়া হইবে উহাতে এবং উহাদেরকে বলা হইবে, ‘ যে অগ্নিশাস্তিকে তোমরা মিথ্যা বলিতে, উহা আস্বাদন কর।’ গুরু শাস্তির পূর্বে উহাদেরকে আমি অবশ্যই লঘুশাস্তি আস্বাদন করাইব, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩৩. ২৪. কারণ আল্লাহ্ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাহাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তাঁহার ইচ্ছা হইলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা উহাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৩৪. ১৫-১৭: সাবাবাসীদের জন্য তো উহাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন: দুইটি উদ্যান, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে, উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত রিযিক ভোগ কর এবং তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম নগরী এবং ক্ষমাশীল প্রতিপালক। পরে উহারা অবাধ্য হইল। ফলে আমি উহাদের উপর প্রবাহিত করিলাম বাঁধভাঙ্গা বন্যা এবং উহাদের উদ্যান দুইটিকে পরিবর্তন করিয়া দিলাম এমন দুইটি উদ্যানে যাহাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি উহাদেরকে এই শাস্তি দিয়াছিলাম উহাদের কুফরীর জন্য। আমি কৃতঘœ ব্যতীত আর কাহাকেও এমন শাস্তি দেই না।

৩৯. ২৫- ২৬: উহাদের পূর্ববর্তিগণও অস্বীকার করিয়াছিল, ফলে শাস্তি এমনভাবে উহাদেরকে গ্রাস করিল যে, উহারা ধারণাও করিতে পারে নাই। ফলে আল্লাহ্ উহাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ করাইলেন এবং আখিরাতের শাস্তি তো কঠিনতর। যদি ইহারা জানিত!

৪২. ৩০: তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাহাত তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করিয়া দেন।

৪২. ৪৮: উহারা যদি মুখ ফিরাইয়া নেয়, তবে তোমাকে তো আমি ইহাদের রক্ষক করিয়া পাঠাই নাই। তোমার কাজ তো কেবল বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া। আমি মানুষকে যখন অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন সে ইহাতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন উহাদের কৃতকর্মের জন্য উহাদের বিপদ-আপদ ঘটে তখন মানুষ হইয়া পড়ে অকৃতজ্ঞ।

৪৩. ৪৬-৪৮: মূসাকে তো আমি নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, ‘আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত।’
সে উহাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসিবামাত্র উহারা তাহা লইয়া হাসি-ঠাট্টা করিতে লাগিল। আমি উহাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাই নাই যাহা উহার অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি উহাদেরকে শাস্তি দিলাম যাহাতে উহারা প্রত্যাবর্তন করে।

৪৪. ১৫-১৬: আমি কিছুকালের জন্য শাস্তি রহিত করিব- তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবে। যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করিব, সেদিন নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই।

৫৭. ২২-২৩: পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহ্র পক্ষে ইহা খুবই সহজ। ইহা এইজন্য যে, তোমরা যাহা হারাইয়াছ তাহাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যাহা তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন তাহার জন্য হর্ষোৎফুল্ল না হও। আল্লাহ্ পসন্দ করেন না উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে।

৬৪. ১১: আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তাহার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

বিস্তারিত

২. ৫৭-৫৯: আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না৪২ ও সাল্ওয়া৪৩ প্রেরণ করিলাম। ‘তোমাদেরকে যে উত্তম জীবিকা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর। তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতিই জুলুম করিয়াছিল। স্মরণ কর, যখন আমি বলিলাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নতশিরে প্রবেশ কর দ্বারা দিয়া এবং বল: ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করিব। কিন্তু যাহারা অন্যায় করিয়াছিল তাহারা তাহাদেরকে যাহা বলা হইয়াছিল তাহার পরিবর্তে অন্য কথা বলিল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হইতে শান্তি প্রেরণ করিলাম, কারণ তাহারা সত্য ত্যাগ করিয়াছিল।

২. ৬১: যখন তোমরা বলিয়াছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একইরকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করিব না; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর- তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সবজি, কাঁকুড়, গম,৪৮ মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।’ মূসা বলিল, ‘তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করিতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যাহা চাও নিশ্চয়ই তাহা সেখানে আছে।’ তাহারা লঞ্ছনা ও দারিদ্রগস্ত হইল এবং তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইল। ইহা এইজন্য যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতকে৪৯ অস্বীকার করিত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করিবার জন্যই তাহাদের এই পরিণতি হইয়াছিল।

২.৮৫-৮৬: তোমরাই তাহারা যাহারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করিতেছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করিতেছ, তোমরা নিজেরা তাহাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছ এবং তাহারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ চাও; অথচ তাহাদের বহিষ্করণই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নন। তাহারাই আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবন μয় করে; সুতরাং তাহাদের শাস্তি লাঘব করা হইবে না এবং তাহারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না।

৩. ১১২: আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাহিরে যেখানেই তাহাদের পাওয়া গিয়াছে সেখানেই তাহারা লাঞ্ছিত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইয়াছে এবং হীনতাগ্রস্ত হইয়াছে। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ প্রত্যাখান করিত এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করিত; ইহা এইজন্য যে, তাহারা অবাধ্য হইয়াছিল এবং সীমালংঘন করিত।

৩. ১৬৫-১৬৭. কী ব্যাপার! যখন তোমাদের মুসীবত আসিল তখন তোমরা বলিল, ‘ইহা কোথা হইতে আসিল? অথচ তোমরা তো দ্বিগুন বিপদ ঘটাইয়াছিলে। বল, ‘ইহা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হইতে’; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপর্যয় ঘটিয়াছিল তাহা আল্লাহ্রই হুকুমে; ইহা মুমিনগণকে জানিবার জন্য এবং মুনাফিকদেরকে জানিবার জন্য এবং তাহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘আস, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা প্রতিরোধ কর।’ তাহারা বলিয়াছিল, ‘যদি যুদ্ধ জানিতাম তবে নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করিতাম।’ সেদিন তাহারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীর নিকটতর ছিল। যাহা তাহাদের অন্তরে নাই তাহারা তাহা মুখে বলে; তাহারা যাহা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।

৩. ১৭৮: কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য। আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।

৪. ৬১-৬২: তাহাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হইতে মুখ একেবারে ফিরাইয়া লইতে দেখিবে।
তাহাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাহাদের কোন মুসীবত হইবে তখন তাহাদের কী অবস্থা হইবে? অতঃপর তাহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া তোমার নিকট আসিয়া বলিবে, ‘আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাই নাই।’

৪. ৭৮-৭৯: তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাইবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করিলেও। যদি তাহাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে ‘ইহা আল্লাহ্র নিকট হইতে।’ আর যদি তাহাদের কোন অকল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে, ‘ইহা তোমার নিকট হইতে।’ বল, ‘সবকিছুই আল্লাহ্র নিকট হইতে। এই সম্প্রদায়ের হইল কী যে, ইহারা একেবারেই কোন কথা বোঝে না!
কল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে এবং অকল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা তোমার নিজের কারণে এবং তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছি; সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

৫. ১৮. ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।’ বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদেরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন; আস্মান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে।

৫. ৭০-৭১: আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ও তাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাহাদের নিকট এমন কিছু আনে যাহা তাহাদের মনঃপূত নয়, তখনই তাহারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে। তাহারা মনে করিয়াছিল, তাহাদের কোন শাস্তি হইবে না; ফলে তাহারা অন্ধ ও বধির হইয়া গিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছিলেন। পুনরায় তাহাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হইয়াছিল। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।

৬. ৬: তাহারা কি দেখে না যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি? তাহাদেরকে দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করি নাই এবং তাহাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম, আর তাহাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম; অতঃপর তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।

৬. ১০-১১: তোমরা পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হইয়াছে। তাহারা যাহা লইয়া ঠাট্টাবিদ্রুপ করিতেছিল পরিণামে তাহাই বিদ্রুপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করিয়াছে। বল, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমন কর, অতঃপর দেখ, যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল।’

৬. ৪০-৪৫: বল, ‘ তোমরা ভাবিয়া দেখ যে, আল্লাহ্র শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হইলে তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? না, তোমরা শুধু তাঁহাকেই ডাকিবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁহাকে ডাকিতেছ তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সেই দুঃখ দূর করিবেন এবং যাহাকে তোমরা তাঁহার শরীক করিতে, তাহা তোমরা বিস্মৃত হইবে।
তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; অতঃপর তাহাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ- ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল। তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম; ফলে তখনই তাহারা নিরাশ হইল।
অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূল্যেচ্ছেদ করা হইল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই- যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।

৬. ৪৯: যাহারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলিয়াছে সত্য ত্যাগের জন্য তাহাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে।

৬. ১২৩: এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়াছি; কিন্তু তাহারা শুধু তাহাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে; অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।

৬. ১৩১-১৩২: ইহা এইহেতু যে, অধিবাসীবৃন্দ যখন অনবিহত, তখন কোন জনপদকে উহার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়। প্রত্যেকে যাহা করে তদনুসারে তাহা স্থান রহিয়াছে এবং উহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।

৬. ১৪৮: যাহারা র্শিক করিয়াছে তাহারা বলিবে, ‘আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ র্শিক করিতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করিতাম না।’ এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও প্রত্যাখান করিয়াছিল, অবশেষে তাহারা আমার শাস্তি ভোগ করিয়াছিল, বল, ‘তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? থাকিলে আমার নিকট তাহা পেশ কর; তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল।’

৭. ৪-৫: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি! আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল রাত্রিতে অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তাহারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল তখন তাহাদের কথা শুধু ইহাই ছিল যে, ‘নিশ্চয় আমরা জালিম ছিলাম।’

৭: ৯৪-১০৩: আমি কোন জনপদে নবী পাঠাইলে উহার অধিবাসীবৃন্দকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা আক্রান্ত করি, যাহাতে তাহারা কাকুতি-মিনতি করে। অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তাহারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করিয়াছে।’ অতঃপর অকস্মাৎ তাহাদেরকে আমি পাকড়াও করি, কিন্তু তাহারা উপলব্ধি করিতে পারে না। যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনিত ও তাক্ওয়া অবলম্বন করিত তবে আমি তাহাদের জন্য আকাশম-লী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করিতাম, কিন্তু তাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল; সুতরাং তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি।
তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে রাত্রিতে যখন তাহারা থাকিবে নিদ্রামগ্ন? অথবা জনপদের অধিবাসীবৃন্দ কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে পূর্বাহ্নে যখন তাহারা থাকিবে ক্রীড়ারত? তাহারা কি আল্লাহ্র কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেহই আল্লাহ্র কৌশল হইতে নিরাপদ মনে করে না।
কোন দেশের জনগণের পর যাহারা ঐ দেশের উত্তরাধিকারী হয় তাহাদের নিকট ইহা কি প্রতীয়মান হয় নাই যে, আমি ইচ্ছা করিলে তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? আর আমি তাহাদের হৃদয় মোহর করিয়া দিব, ফলে তাহারা শুনিবে না।
এই সকল জনপদের কিছু বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বিবৃত করিতেছি, তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূলগণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছিল; কিন্তু যাহা তাহারা পূর্বে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাতে ঈমান আনিবার পাত্র তাহারা ছিল না, এইভাবে আল্লাহ্ কাফিরদের হৃদয় মোহর করিয়া দেন। আমি তাহাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাই; বরং তাহাদের অধিকাংশকে তো পাপাচারীই পাইয়াছি।
তাহাদের পর মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পরিষদবর্গের নিকট পাঠাই; কিন্তু তাহারা উহা অস্বীকার করে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।

৭. ১৬৫-১৬৭: যে উপদেশ তাহাদেরকে দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন উহা বিস্মৃত হয়, তখন যাহারা অসৎকার্য হইতে নিবৃত্ত করিত তাহাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং যাহারা জুলুম করে তাহারা কুফরী করিত বলিয়া আমি তাহাদেরকে কঠোর শাস্তি দেই। তাহারাা যখন নিষিদ্ধ কাজ ঔদ্ধত্যসহকারে করিতে লাগিল তখন তাহাদেরকে বলিলাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তিনি তো কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের উপর এমন লোকদেরকে প্রেরণ করিবেন যাহারা তাহাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকিবে, আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে তৎপর এবং তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।

৭. ১৮২-১৮৩: যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাহাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে লইয়া যাই যে, তাহারা জানিতেও পারিবে না। আমি তাহাদেরকে সময় দিয়া থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

৮. ৩১-৩৬: যখন তাহাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তাহারা তখন বলে, ‘আমরা তো শ্রবণ করিলাম, ইচ্ছা করিলে আমরাও ইহার অনুরূপ বলিতে পারি, ইহা তো শুধু সেকালের লোকদের উপকথা। স্মরণ কর, তাহারা বলিয়াছিল, ‘হে আল্লাহ্! ইহা (আল্লাহর আয়াত) যদি তোমার পক্ষ হইতে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হইতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও ।’
এবং তাহাদের কী বা বলিবার আছে যে, আল্লাহ্ তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যখন তাহারা লোকদেরকে মসজিদুল হারাম হইতে নিবৃত্ত করে? তাহারা উহার তত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকীগণই উহার তত্বাবধায়ক; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা অবগত নয়।
কা‘বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর।
আল্লার্হ পথ হইতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাহারা ধন-সম্পদ ব্যয় করিতেই থাকিবে; অতঃপর উহা তাহাদের মনস্তাপের কারণ হইবে; ইহার পর তাহারা পরাভূত হইবে এবং যাহারা কুফরী করে তাহাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হইবে।

৮. ৫০-৫৩: ৫০. তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফিরিশ্তাগণ কাফিরদের মুখম-লে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে এবং বলিতেছে, ‘তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর। ইহা তাহা, তোমাদের হস্ত যাহা পূর্বে প্রেরণ করিয়াছিল, আল্লাহ্ তো তাহার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। ফির‘আওনের স্বজন ও উহাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা আল্লাহ্র আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ্ ইহাদের পাপের জন্য ইহাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর; ইহা এইজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থায় পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি উহাদেরকে যে সম্পদ দান করিয়াছেন, উহা পরিবর্তন করিবেন; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

৯. ৫১-৫২: বল, ‘আমাদের জন্য আল্লাহ্ যাহা নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হইবে না; তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক এবং আল্লাহ্র উপরই মু’মিনদের নির্ভর করা উচিত।’
বল, ‘তোমরা আমাদের দুইটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করিতেছ এবং আমরা প্রতীক্ষা করিতেছি, আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ পক্ষ হইতে অথবা আমাদের হস্ত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।

১১. ১০১-১০২: আমি উহাদের প্রতি জুলুম করি নাই কিন্তু উহারাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল। যখন তোমার প্রতিপালকের বিধান আসিল তখন আল্লাহ্ ব্যতীত যে ইলাহ্সমূহের তাহারা ‘ইবাদত করিত তাহারা উহাদের কোন কাজে আসিল না। তাহারা ধ্বংস ব্যতীত উহাদের অন্য কিছু বৃদ্ধি করিল না।
এইরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন উহারা জুলুম করিয়া থাকে। নিশ্চয়ই তাঁহার শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন।

১৩. ৬: মঙ্গলের পূর্বে উহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, যদিও উহাদের পূর্বে ইহার বহু দৃষ্টান্ত গত হইয়াছে। মানুষের সীমালংঘন সত্বেও তোমার প্রতিপালক তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে তো কঠোর।

১৩. ৩১-৩৪: যদি কোন কুরআন এমন হইত যদ্দ¦ারা পর্বতকে গতিশীল করা যাইত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যাইত অথবা মৃতের সঙ্গে কথা বলা যাইত- তবুও উহারা উহাতে বিশ্বাস করিত না। কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ্র ইখ্িতয়ারভুক্ত। তবে কি যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে নিশ্চয়ই সকলকে সৎপথে পরিচালিত করিতে পারিতেন?
যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের কর্মফলের জন্য তাহাদের বিপর্যয় ঘটিতেই থাকিবে, অথবা বিপর্যয় তাহাদের আশেপাশে আপতিত হইতেই থাকিবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি আসিয়া পড়িবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হইয়াছে এবং যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়াছিলাম, তাহার পর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!
তবে কি প্রত্যেক মানুষ যাহা করে তাহার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি ইহাদের অক্ষম ইলাহ্গুলির মত? অথচ উহারা আল্লাহ্র বহু শরীক করিয়াছে। বল, ‘উহাদের পরিচয় দাও।’ তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও- যাহা তিনি জানেন না? অথবা ইহা বাহ্যিক কথা মাত্র? না, কাফিরদের নিকট উহাদের ছলনা শোভন প্রতীয়মান হইয়াছে এবং উহাদেরকে সৎপথ হইতে নিবৃত্ত করা হইয়াছে, আর আল্লাহ্ যাহাকে বিভ্রান্ত করেন তাহার কোন পথপ্রদর্শক নাই। উহাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! এবং আল্লাহ্র শাস্তি হইতে রক্ষা করিবার উহাদের কেহ নাই।

১৩. ৪০-৪১: উহাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়াছি তাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাই অথবা যদি ইহার পূর্বে তোমার কাল পূর্ণ করিয়া দেই- তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা এবং হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ।
উহারা কি দেখে না যে, আমি উহাদের দেশকে চতুর্দিক হইতে সংকুচিত করিয়া আনিতেছি? আল্লাহ্ আদেশ করেন, তাঁহার আদেশ রদ করিবার কেহ নাই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর।

১৬. ৯৪. পরস্পর প্রবঞ্চনা করিবার জন্য তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার করিও না; করিলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলাইয়া যাইবে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করিবে; তোমাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি।

১৬. ১১২. আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিতেছেন এক জনপদের যাহা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসিত সর্বদিক হইতে উহার প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর উহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করিল, ফলে তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য আল্লাহ্ তাহাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করাইলেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।

১৭. ৪-৭: এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনী ইস্রাঈলকে জানাইয়াছিলাম, ‘নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হইবে।’
অতঃপর এই দুইয়ের প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হইল তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলাম আমার বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; উহার ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ধ্বংস করিয়াছিল। আর প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হইয়াই থাকে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে পুনরায় উহাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করিলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করিলাম ও সংখ্যায় গরিষ্ঠ করিলাম। তোমরা সৎকর্ম করিলে সৎকর্ম নিজেদের জন্য করিবে এবং মন্দ কর্ম করিলে তাহাও করিবে নিজেদের জন্য। অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হইলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করিলাম তোমাদের মুখম-ল কালিমাচ্ছন্ন করিবার জন্য, প্রথমবার তাহারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করিয়াছিল পুনরায় সেইভাবেই উহাতে প্রবেশ করিবার জন্য এবং তাহারা যাহা অধিকার করিয়াছিল তাহা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করিবার জন্য।

১৭. ১৬-১৭: আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করিতে চাই তখন উহার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করিতে আদেশ করি, কিন্তু উহারা সেখানে অসৎকর্ম করে; অতঃপর উহার প্রতি দ-াজ্ঞা ন্যায়সংগত হইয়া যায় এবং আমি উহা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি। নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করিয়াছি! তোমার প্রতিপালকই তাঁহার বান্দাদের পাপচরণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।

১৯. ৭৩- ৭৫: উহাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্ত করা হইলে কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, ‘দুই দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসাবে উত্তম?
উহাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি-যাহারা উহাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্যদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল। বল, ‘যাহারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাহাদেরকে প্রচুর ঢিল দিবেন যতক্ষণ না তাহারা, যে বিষয়ে তাহাদেরকে সতর্ক করা হইতেছে তাহা প্রত্যক্ষ করিবে, উহা শাস্তি হউক অথবা কিয়ামতই হউক। অতঃপর তাহারা জানিতে পারিবে, কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল ।

২১. ১১-১৫: আমি ধ্বংস করিয়াছি কত জনপদ, যাহার অধিবাসীরা ছিল জালিম এবং তাহাদের পরে সৃষ্টি করিয়াছি অপর জাতি। অতঃপর যখন উহারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করিল তখনই উহারা জনপদ হইতে পলায়ন করিতে লাগিল।
উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘পলায়ন করিও না এবং ফিরিয়া আস তোমাদের ভোগসম্ভারের নিকট ও তোমাদের আবাসগৃহে, হয়ত এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে।’ উহারা বলিল, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম জালিম।’
উহাদের এই আর্তনাদ চলিতে থাকে আমি উহাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি-সদৃশ না করা পর্যন্ত।

২১. ৬৬-৭০: ইব্রাহীম বলিল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদত কর যাহা তোমাদের কোন উপকার করিতে পারে না, ক্ষতিও করিতে পারে না? ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহ্র পরিবর্তে তোমরা যাহাদের ‘ইবাদত কর তাহাদেরকে! তবুও কি তোমরা বুঝিবে না?
উহারা বলিল, ‘তাহাকে পোড়াইয়া দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, তোমরা যদি কিছু করিতে চাও।’
আমি বলিলাম, ‘হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হইয়া যাও।’
উহারা তাহার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করিয়াছিল। কিন্তু আমি উহাদেরকে করিয়া দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।

২১. ৮৭: এবং স্মরণ কর যুন-্ নূন (ইউনুস আঃ) -এর কথা, যখন সে ক্রোধভারে বাহির হইয়া গিয়াছিল এবং মনে করিয়াছিল আমি তাহার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করিব না। অতঃপর সে অন্ধকার হইতে আহ্বান করিয়াছিল: ‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী।’

২২. ৪৭-৪৮: তাহারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তাহার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার সহ¯্র বৎসরের সমান; এবং আমি অবকাশ দিয়াছি কত জনপদকে যখন উহারা ছিল জালিম; অতঃপর উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।

২২. ৬০: ইহাই হইয়া থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হইয়া সমতুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করিলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হইলে আল্লাহ্ তাহাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন; আল্লাহ্ নিশ্চিয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।

২৩. ৭৩- ৭৭: তুমি তো উহাদেরকে সরল পথে আহ্বান করিতেছ। যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহারা তো সরল পথ হইতে বিচ্যুত, আমি উহাদেরকে দয়া করিলেও এবং উহাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করিলেও উহারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিতে থাকিবে। আমি তো উহাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধৃত করিলাম, কিন্তু উহারা উহাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনত হইল না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না। অবশেষে যখন আমি উহাদের জন্য কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলিয়া দেই তখনই উহারা ইহাতে হতাশ হইয়া পড়ে।

২৭. ৪৯-৫২: উহারা বলিল, ‘তোমরা আলাøহ্র নামে শপথ গ্রহণ কর, ‘আমরা রাত্রিকালে তাহাকে ও তাহার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করিব; অতঃপর তাহার অভিভাবককে নিশ্চয় বলিব, ‘তাহার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই; আমরা অবশ্যই সত্যাবাদী।’
উহারা এক চক্রান্ত করিয়াছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করিলাম, কিন্তু উহারা বুঝিতে পারে নাই।
অতএব দেখ, উহাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হইয়াছে- আমি অবশ্যই উহাদেরকে ও উহাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করিয়াছি।
এই তো উহাদের ঘরবাড়ি- সীমালংঘনহেতুযাহা জনশূন্য অবস্থায় পড়িয়া আছে; ইহাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।

২৮. ৫৮-৫৯: কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি যাহার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের দম্ভ করিত! এইগুলিই তো উহাদের ঘরবাড়ি; উহাদের পর এইগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করিয়াছে। আর আমি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী!
তোমার প্রতিপালক জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না উহার কেন্দ্রে তাঁহার আয়াত আবৃত্তি করিবার জন্য রাসূল প্রেরণ না করিয়া এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন ইহার বাসিন্দারা জুলুম করে।

২৯. ১০: মানুষের মধ্যে কতক বলে, ‘আমরা আল্লাহে বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহ্র পথে যখন উহারা নিগৃহীত হয়, তখন উহারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহ্র শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে কোন সাহায্য আসিলে উহারা বলিতে থাকে, ‘আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম।’ বিশ্ববাসীর অন্তঃকরণে যাহা আছে, আল্লাহ্ কি তাহা সম্যক অবগত নহেন?’

২৯. ৩৪-৩৫: ‘আমরা এই জনপদবাসীদের উপর আকাশ হইতে শস্তি নাযিল করিব, কারণ উহারা পাপাচার করিতেছিল।’ আমি তো বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে একটি স্পষ্ট আয়াত রাখিয়াছি।

২৯. ৩৯-৪০: এবং আমি সংহার করিয়াছিলাম কারূন, ফির‘আওন ও হামানকে। মূসা উহাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসিয়াছিল; তখন তাহারা দেশে দম্ভ করিত; কিন্তু উহারা আমার শাস্তি এড়াইতে পারে নাই। উহাদের প্রত্যেককেই আমি তাহার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়াছিলাম : উহাদের কাহারও প্রতি প্রেরণ করিয়াছি প্রস্তরসহ প্রচ- ঝটিকা, উহাদের কাহাকেও আঘাত করিয়াছিল মহানাদ, কাহাকেও আমি প্রোথিত করিয়াছিলাম ভূগর্ভে এবং কাহাকেও করিয়াছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই; তাহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল।

৩০. ৩৬: আমি যখন মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদ দেই তাহারা তাহাতে উৎফুল্ল হয় এবং উহাদের কৃতকর্মের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত হইলেই উহারা হতাশ হইয়া পড়ে।

৩০. ৪১: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদেরকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদান করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩২. ২০-২১: এবং যাহারা পাপাচার করিয়াছে তাহাদের বাসস্থান হইবে জাহান্নাম; যখনই উহারা জাহান্নাম হইতে বাহির হইতে চাহিবে তখনই উহাদেরকে ফিরাইয়া দেওয়া হইবে উহাতে এবং উহাদেরকে বলা হইবে, ‘ যে অগ্নিশাস্তিকে তোমরা মিথ্যা বলিতে, উহা আস্বাদন কর।’ গুরু শাস্তির পূর্বে উহাদেরকে আমি অবশ্যই লঘুশাস্তি আস্বাদন করাইব, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।

৩৩. ২৪. কারণ আল্লাহ্ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাহাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তাঁহার ইচ্ছা হইলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা উহাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৩৪. ১৫-১৭: সাবাবাসীদের জন্য তো উহাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন: দুইটি উদ্যান, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে, উহাদেরকে বলা হইয়াছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত রিযিক ভোগ কর এবং তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম নগরী এবং ক্ষমাশীল প্রতিপালক। পরে উহারা অবাধ্য হইল। ফলে আমি উহাদের উপর প্রবাহিত করিলাম বাঁধভাঙ্গা বন্যা এবং উহাদের উদ্যান দুইটিকে পরিবর্তন করিয়া দিলাম এমন দুইটি উদ্যানে যাহাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি উহাদেরকে এই শাস্তি দিয়াছিলাম উহাদের কুফরীর জন্য। আমি কৃতঘœ ব্যতীত আর কাহাকেও এমন শাস্তি দেই না।

৩৯. ২৫- ২৬: উহাদের পূর্ববর্তিগণও অস্বীকার করিয়াছিল, ফলে শাস্তি এমনভাবে উহাদেরকে গ্রাস করিল যে, উহারা ধারণাও করিতে পারে নাই। ফলে আল্লাহ্ উহাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ করাইলেন এবং আখিরাতের শাস্তি তো কঠিনতর। যদি ইহারা জানিত!

৪২. ৩০: তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাহাত তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করিয়া দেন।

৪২. ৪৮: উহারা যদি মুখ ফিরাইয়া নেয়, তবে তোমাকে তো আমি ইহাদের রক্ষক করিয়া পাঠাই নাই। তোমার কাজ তো কেবল বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া। আমি মানুষকে যখন অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন সে ইহাতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন উহাদের কৃতকর্মের জন্য উহাদের বিপদ-আপদ ঘটে তখন মানুষ হইয়া পড়ে অকৃতজ্ঞ।

৪৩. ৪৬-৪৮: মূসাকে তো আমি নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, ‘আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত।’
সে উহাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসিবামাত্র উহারা তাহা লইয়া হাসি-ঠাট্টা করিতে লাগিল। আমি উহাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাই নাই যাহা উহার অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি উহাদেরকে শাস্তি দিলাম যাহাতে উহারা প্রত্যাবর্তন করে।

৪৪. ১৫-১৬: আমি কিছুকালের জন্য শাস্তি রহিত করিব- তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবে। যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করিব, সেদিন নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই।

৫৭. ২২-২৩: পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহ্র পক্ষে ইহা খুবই সহজ। ইহা এইজন্য যে, তোমরা যাহা হারাইয়াছ তাহাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যাহা তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন তাহার জন্য হর্ষোৎফুল্ল না হও। আল্লাহ্ পসন্দ করেন না উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে।

৬৪. ১১: আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তাহার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েম করার কথা কোরআনে উল্লেখ নেই।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েম করার কথা কোরআনে উল্লেখ নেই


দিনে বা রাতের যে কোনো সময় সালাত আদায় করা যাবে। এজন্য আল্লাহ বলেন, সালাতী কার্যক্রমটা সার্বক্ষণিক (মাআরিজ, ২৩ আয়াত)। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার ভিতরে প্রথম ১২ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে সালাত কায়েম করাকে ফরজ করা হয়েছে, বাকী ১২ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে সালাত আদায় করাকে তাজ্জত করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সালাত আদায় করা মমিনদের উপর লিখিত করা হয়েছে (নিছা, ১০৩ আয়াত)। এই আয়াতে মাউকুতা শব্দ এসেছে। মাউকুতা শব্দের অর্থ নির্ধারিত সময়সীমা। (আরবি অভিধান পৃ. ২৩১৮)। এখানে নির্ধারিত সময়সীমা বলতে ১ম ১২ ঘণ্টাকে বুঝানো হয়েছে।
তবে এখন আমাদের জানতে হবে, ১ম বার ঘণ্টার শুরুটা কখন থেকে হবে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর (বনি ইসরাইল, ৭৮ আয়াত)। অর্থাৎ দুপুর ১২ টার পর হতে রাত ১২টা পর্যন্ত সময়সীমাটা সালাত কায়েমের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমরা সালাত কায়েম কর দিনের শেষাংশে এবং রাত্রের প্রথমাংশে। (হুদ ১১৪ আয়াত)। এই আয়াতে তারাফাই শব্দ এসেছে। তারাফাই শব্দের অর্থ হচ্ছে শেষ সীমা (আরবি অভিধান পৃ. ১৬৬৯)। এই আয়াতে জুলুফাই শব্দ এসেছে, জুলুফাই শব্দ প্রথম অংশ (আরবি অভিধান পৃ. ১৪০৭)। এই সময়সীমার মধ্যে সালাত আদায় করাকে মধ্যবর্তী সালাত বলে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমরা মধ্যবর্তী সালাতকে রক্ষা কর (বাকারা, ২৩৮ আয়াত)। এই দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে একবার সালাতকে রক্ষা করা তেমন একটা কঠিন কাজ নয়, এইজন্য আল্লাহ বলেন, দ্বীনের বিষয়ে আল্লাহ কাহারো উপর কঠোরতা আরোপ করেনা, বা সাধ্যের অতিরিক্ত কারো উপরে চাপিয়ে দেয় না। (হজ্জ, ৭৮ আয়াত)। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকে বলেন ফজরের সালাতটা ফরজ কাজ। কিন্তু না, কারণ সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর। কিন্তু ফজরের সালাতটা এই সময়সীমার ভিতরে পড়েনা, বিধায় ফজরের সালাত ফরয হলে বনি ইসরাইলের ৭৮ আয়াতের পরিপন্থী হয়। কিন্তু যদি কোনো বুঝ কোনো আয়াতের পরিপন্থি হয় তাহলে সেই বুঝ পরিহার করা উচিত। তাই ফজরের সালাতটা কোনো অবস্থায়ই ফরয নয় এটা সালাতে তাজ্জত (বনি ইসরাইল, ৭৮ আয়াত)। কারণ ফজরের সময়টা যদি দিনের অংশের সাথে গণ্য করা হয় তাহলে এটা হয় দিনের প্রথমাংশ, দিনের প্রথমাংশের সালাত তাজ্জতের পর্যায়ভুক্ত (বনি ইসরাইল, ৭৮ আয়াত)। আবার যদি ফজরটা রাতের অংশের সাথে ধরি তাহলে ফজরটা রাতের শেষাংশে পড়ে, আর রাতের শেষাংশের সালাতটা হচ্ছে তাজ্জতের সালাত (বনি ইসরাইল, ৭৮ আয়াত)। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ ফজরের সালাতকে তাজ্জতের সালাত হিসেবে আদায় করে আসছে, তাই আরবি ভাষার সময়ের তালিকায় ফজরের সালাতের সময় নামে একটি সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়, এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমরা ফজরের সালাতের পূর্বে কাহারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি প্রার্থনা করবে (নূর, ৫৮ আয়াত)। এই আয়াত দিয়ে অনেকেই ফজরের সালাতকে ফরজ প্রমাণ করে, কিন্তু না, এই আয়াতে ফজরের সালাত কায়েম কর নির্দেশ আসে নি। বিধায় ফজরের সালাতটা ফরজ নয় বরং এটা তাজ্জতের সালাত। তাছাড়া পবিত্র কোরআনে কোথাও ফজরের সালাত কায়েম কর মর্মে কোনো আয়াত আসে নি কিংবা সকাল সন্ধ্যায় সালাত কায়েম কর এই মর্মেও কোনো আয়াত আসে নি।
কাজেই সালাতের সময়সীমা বলতে দিনের শেষাংশ এবং রাতের ১ম অংশ, অর্থাৎ দুপুর ১২টার পর হতে রাত্র ১২ টা পর্যন্ত এই সময়সীমার মধ্যে কয়বার সালাত কায়েম করতে হবে মর্মে কোনো সংখ্যা উল্লেখ নেই বিধায়, এই সময়সীমার মধ্যে কমপক্ষে একবার সালাত কায়েম করা ফরয এটাই প্রমাণ হয়। অর্থাৎ রাত্র ১২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাজ্জত সালাতের সময়। কাজেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েম করা মর্মে পবিত্র কোরআনে কোনো আয়াত আসে নি। তারপরও যদি কেউ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তাতে কোনো দোষ নেই। তবে দ্বীনের বিষয়ে আল্লাহ কাহারো উপর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয় না। (মমিন ৬২, আয়াত, এবং আরাফ ৪২ আয়াত)। আর দ্বীনকে সহজ করার জন্য আল্লাহ দ্বীনে পাঁচবার আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে বলেছেন। (সূরা ত্বাহা : ১৩০) এখানে উল্লেখ্য যে, এই আয়াত দিয়ে অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রমাণ করে থাকেন। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, সূরা ত্বহার ১৩০ নং আয়াতে সালাত শব্দ আসেনি। এই আয়াতে এসেছে সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি। আর এটা করতে তাহির হওয়া ফরয নয়। আর এর জন্য সেজদাও জরুরি নয়। অথচ সালাতের পূর্বে তাহির হওয়া ফরজ। (সূরা মায়েদা : ৬) এবং সালাতে সেজদা ফরজ। (সূরা নেসা : ১০২)
আল্লাহ বলেন, তোমরা মানুষকে প্রভুর পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা। এবং তাদের সহিত তর্ক কর উত্তম পন্থায়। (নহল, ১২৫ আয়াত)। আর হিকমতের এই শিক্ষাই হচ্ছে রসূলের কাছে (বাকারা ১৫১ আয়াত)। কাজেই রসূল চেহারায় সেজদা কায়েম করাই হচ্ছে সালাত কায়েম করা।

http://www.mdhashibulhaque.com/Quraner%20Bishoy-Vittik%20Alochana%20Part-1b.html