ইফতার বলে রোজা নষ্টকরেন কেনো

Fb
বুখারীগংদের কথাতে, সন্ধ্যায় ইফতার বলে রোজা নষ্টকরেন কেনো ?
কমবেশি ১-ঘন্টা পরেইতো লাইল/রাত/অন্ধকার!
~~
+👉👉আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত 👈👈 + ২/১৮৭,
লাইল/রাত হলো অন্ধকার-৭৯/২৯,
~~~~
অন্ধকারে আবৃত/আচ্ছাদিত/ঢাকা হলেই রাত হয় ৭৯/২৯ সহ সবগুলি আয়াতেই ‘অন্ধকার’ এটাইমূল
~~~~~~~~~~~~`~~~~`~~~~~~~~~
বুখারীগংরা #সন্ধ্যায়-শাফাক এ ৮৪/১৬ সূর্যাভায়,
ইফতার বলেবলে, রোজা নষ্টকরায় তো!
(সূর্যালো দিনের সাথেই যুক্ত, কমবেশী ১-ঘন্টাপরেই অন্ধকার/রাত-৭৯/২৯ হয়)
~~
সূর্য ডুবলেই যদি রাত হয়! তবে
সূর্য না-উঠা প্রভাত কেনো রাত নয় ?
~~
#কুরআন সুরা ও আয়াত নং মিলিয়ে বুঝুন ;
~~~
নবীর(সা) নামে মিথ্যা বলেবলে মানুষকে শির্ককারী-মুশরিক বানাবার ব্যবস্থা করেছে ; চিন্তাকরুন তো ????
~~~
বুখারীগংদের সয়তানি/নষ্টামি দেখুন ও ভাবুন তো !
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
“মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি #ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।” (বুখারী-১৯৫৭ ও মুসলিম-১০৯৮)
~~~
মাগরিবের শুরুটাই ইফতারের সঠিক সময়।
রাসূল সা. আরো বলেছেন,
“যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহূদী ও নাসারাদের অভ্যাস হল ইফতার দেরীতে করা।” (আবূ দাঊদ-২৩৫৩)
~~~~~~~~~~
কুরআন বুঝার চেষ্টাকরুন সব পেয়ে যাবেন তো
~~~~
বুখারীগংরা তো
সন্ধ্যা কে রাত বলেবলে রোজা নষ্টকরায় ২/১৮৭
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
فَلَاۤ اُقۡسِمُ بِالشَّفَقِ ﴿ۙ۱۶﴾
আমি শপথ করি অস্তরাগের –
وَ الَّیۡلِ وَ مَا وَسَقَ ﴿ۙ۱۷﴾
এবং রাতের, আর ওটা যা কিছুর সমাবেশ ঘটায় তার,
৮৪/১৬-১৭
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
وَ اَغۡطَشَ لَیۡلَہَا وَ اَخۡرَجَ ضُحٰہَا ﴿۪۲۹﴾
এবং তিনি ওর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং ওর জ্যোতি বিনির্গত করেছেন।
৭৯/২৯
~~~~~
কমবেশি ১-ঘন্টা পরেইতো লাইল/রাত/অন্ধকার হয়

কুরআন অনুসারে বিয়ে

Muhammad Hasan fbfd

কুরআন অনুসারে বিয়ে……

কুরান অনুসারে বিয়ে করতে হলে য়ে বিষয়গুলো অনুসরন করতে হয় সেগুলো হলো ;
বিয়ে 4:6, 2:221, 4:21, 2:235, 4:24
1- উভয়ের বয়স mature কিনা তা দেখতে হবে (4:6)

2- বিশ্বাসীগন অবিশ্বাসীদেরকে বা মুশরিকীনদের কে বিয়ে করতে পারবেন না (2:221)

3- উভয়কেই একে অপরের প্রতি সুস্পস্ট সম্মতি বা কমিটমেন্ট থাকতে হবে (4:21)

4- বিবাহে সুস্পস্ট প্রকাশ্য ঘোষনা থাকতে হবে (2:235)

5- বিবাহ লিখিত বা কন্টাক্ট হতে হবে (2:235)

6- বিবাহ হল স্থায়ী চুক্তি , অস্থায়ী নয় ॥ 4:21

a) ডিভোর্স দিতে হলে চার মাস অপেক্ষা করতে হবে (2:226)

b) ডিভোর্স এর আগে পারিবারিকভাবে reconcile এর পদক্ষেপ নিতে হবে (4:35)

c) বড়ধরনের নৈতিক অধঃপতন ছাড়া বউকে স্বামীর গৃহ ছাড়া করা যাবে না (65:1)

d) ডিভোর্স দিতে হলে স্ত্রীকে ক্ষতিপূরন দিতে হবে (2:241)

e) সন্তান থাকলে তার ভরনপোষন এর ব্যয়ভার বহন করতে হবে (2:233)

f) সন্তান ছোট হলে সন্তানের লালন পালনের জন্য মাকে দুই বছর ভরনপোষন এর ব্যয় ভার বহন করতে হবে (2:233)

7- স্বামীকে অবশ্যই মোহরানা পরিশোধ করতে হবে (4:24)

এই হল কুরআন অনুযায়ী বিবাহের রীতিনীতি ॥

.

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=636415670502036&id=100024008254594

BB= https://youtu.be/5L52xIQZnGY

Pl chk আল্লাহর নিজ আকৃতিতে আদম তৈরি

MD Nazrul biswas

আল্লাহর নিজ আকৃতিতে আদম তৈরিঃ

আল্লাহর একটি আকৃতি আছে, যেমন সূরা সাদের ৭৫ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, আল্লাহর হাত আছে, সূরা কালামের ৪২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে- আল্লাহর পা আছে এবং সূরা কাসাছ এর ৮৮ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, আল্লাহর চেহারা ধ্বংস হবে না এবং সূরা সেজদার ৪ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, ৬ দিনে পৃথিবী তৈরি করে আল্লাহ আরশে আজীমে সমাসীন হলেন। যেখানে দাঁড়ানো এবং বসা উল্লেখ থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহর একটি আকৃতি আছে বলে প্রতীয়মান হয়। আর আল্লাহর সেই আকৃতিটাই হচ্ছে অতি উত্তম আকৃতি। আল্লাহ বলেন, আদমকে অতি উত্তম আকৃতিতেই তৈরি করা হয়েছে। (সূরা-তীন, আয়াত-৪নং এবং সূরা-মমিন, আয়াত ৬৪) এবং সূরা-রুমের ৩০ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, আল্লাহর প্রকৃতি অনুসারেই মানুষ তৈরি। সূরা-ইনফিতর এর ৮ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, আল্লাহ বলেন, ‘আমি যেমন তেমন আকৃতিতে মানুষ তৈরি করেছি, এইজন্য যে, যেন ইচ্ছামত ঐরূপে আহরণ করতে পারি।’ এখানে উল্লেখ্য যে, এই আয়াতে ‘আইয়ু’ সূরত শব্দ এসেছে। আইয়ু শব্দের আপেক্ষিক অর্থ হচ্ছে যেমন তেমন (আরবি অভিধান পৃ. ৬৩৮)আইয়ু শব্দের সাথে যে শব্দ ব্যবহৃত হবে সেই শব্দের অর্থের সাথে আইয়ু শব্দের অর্থ নির্ভর করে, যেমন তুমি আমাকে যেমনটা ধাক্কা দিলে আমিও তোমাকে তেমনটা ধাক্কা দিলাম। এই আয়াতে আইয়ু সূরত শব্দ এসেছে বিধায় আল্লাহর যেমন সূরত, তেমন সূরতেই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াতে ‘রাক্কাবাকা’ শব্দ এসেছে, ‘রাক্কাবাকা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে আহরণ করা (আরবি অভিধান, পৃ. ১৩৭৪)। যেন ইচ্ছামত আল্লাহ মানব রূপে আহরণ করতে পারে। উপরিউক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, আল্লাহ পাকের নিজ আকৃতি ও প্রকৃতি অনুসারে মানুষ তৈরি করেছে।

সেজদা সম্পর্কে বিভ্রান্তি

MD nazmul biswas

সেজদা সম্পর্কে বিভ্রান্তি নিরশনঃ
&$আজকের আলোচনায় কোরান বিরোধীপুর্ণ কোন মন্তব্য গ্রহন যোগ্য নহে, কারন ,দ্বীনের দলিল একমাত্র কোরআন (জাছিয়া-২০) (রাদ-৩৭) পবিত্র কোরআনই সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী (২ঃ১৮৫)। দ্বীনের সকল বিষয় মিমাংশাকারী এই কোরআন (তারিক-১৩)। আর দ্বীনের বিষয়ে এই কোরআন পরিপূর্ণ (৫ঃ৩)। এই কোরআনের বুঝ যারা অপছন্দ করে তাদের কর্মফল বিনষ্ট হবে (৪৭ঃ৯)। কোরআন প্রত্যাখ্যানকারী ফাসিক (২ঃ৯৯)। সত্য ও ন্যায়ের দিক থেকে এই কোরআনের কথা পরিপূর্ণ (৬ঃ১১৫)। আর যারা কোরআন মোতাবেক না চলে অধিকাংশ লোকের কথা মত চলে তারা আল্লাহর পথ হইতে বিচ্যুত হবে (৬ঃ১১৬)। আর তাই নবী (সঃ) কোরআনের বাইরে কোন কিছু অনুসরণ করে নাই (৬ঃ৫০)। অর্থাৎ তিনি ও এই কোরআনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। তিনি গায়েব বিষয়ে অবগত ছিলেন না (৬ঃ৫০) (৭ঃ১৮৮)। তিনি এই কোরআন ব্যতিত কাউকে দ্বীনের বিষয়ে সতর্ক করে নাই (আম্বিয়া-৪৫)। আর দ্বীনের বিষয়ে তিনি ওহী ব্যতিত কোন কথা বলেন নাই (৫৩ঃ৩) তিনি আল্লাহর নামে কোন কিছু বানাইয়া বলে নাই (৬৯ঃ৪৪)। যদি তিনি আল্লাহর নামে কোন কিছু বানাইয়া বলিত তাহলে আল্লাহ তার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া ফেলিত (৬৯ঃ৪৫) এবং তার জীবন ধমনী কাটিয়া দিতেন (৬৯ঃ৪৬)। আর নবী (সঃ) কে আল্লাহ বলেন ‘তুমি ওহীকে অবলম্বন কর’ (৪৩ঃ৪৩)। আর তিনি তো প্রভুর স্পষ্ট প্রমানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (৬ঃ৫৭)। আর নবী (সঃ) এর জন্য আল্লাহ বিধান স্বরূপ এই কোরআনই দিয়েছেন (২৮ঃ৮৫)। তাই তিনি কোরআন বাদে দ্বীনের বিষয়ে কোন বিধান দেয় নাই এটা নিশ্চিত। আর যারা কোরআন মোতাবেক দ্বীনের বিষয়ে বিধান দেয় না, এরা যালিম, ফাসিক, কাফির (৫ঃ৪৪) (৫ঃ৪৫) (৫ঃ৪৭)। আর কোরআন প্রত্যাখানকারীর জন্য কঠিন শাস্তি (সাফফাত-১৭০)। আবার যারা এই কোরআনের কোন আয়াত গোপন রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ লানত করেন (২ঃ১৫৯)। আর যারা কোরআনের আয়াতকে বিভিন্ন ভাবে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম (২২ঃ৫১)। আর যারা কোরআন বাদেও অন্য কিছুকে দ্বীনের দলিল হিসাবে মনে করে, তারা আল্লাহর সাক্ষাতের আশা পোষণকারী নহে (১০ঃ১৫)। আবার যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয় এবং অল্প মূল্যে বাজারে বিক্রয় করে তাদের জন্য কঠিন দূর্ভোগ (২ঃ৭৯)। আবার আল্লাহর আয়াত বিকৃতকারীর জন্য জাহান্নাম (৪১ঃ৪০) (২ঃ৭৫)। একটি বিষয়ে বিভিন্নভাবে এই কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে করে মানুষ এই কোরআন সহজেই বুঝতে পারে (৬ঃ৬৫)।
,কোরআন গবেষনা করে জানা যায় কোরআনে সেজদা সম্পর্কিত দুই ধরনের আয়াত পাওয়া যায়ঃ

১) সমস্ত সেজদা শুধু আল্লার জন্য,(৭২:১৮)(৪১:৩৭)(৫৩:৬২)

২) আদমের নির্মিত্তে সেজদার হুকুম,(২:৩৪),(৭:১১),(১৭:৬১),(২০:১১৬),(১৮:৫০)

এখন একটা বিষয় মাথায় রেখে দ্বীনের সকল কিছু পরিচালনা করতে হবে, বিষয়টা এই যে , একজন ততক্ষন পুর্ন মোমেন হতে পারবে না যতক্ষন না সে কোরানের সকল আয়াত পালন করবে, পক্ষান্তরে একটি আয়াতের হুকুম অমান্য করিলে কাফের হইবার জন্য যথেষ্ট,
#এখন যারা শুধু আল্লাহকে সেজদার জন্য তালাশ/ গবেষনা করছে , তারা ২ নং পয়েন্টের হুকুম অমান্য করার কারনে তারা কাফের হইবার জন্য যথেষ্ট,

আবার যারা ব্যাক্তি আদমকে আল্লাহ সাব্যস্থ্য করে সেজদা দিচ্ছে তারা নিশ্চিত শেরেকে জড়িয়ে পড়েছে এতে কোন সন্দেহ নাই, কারন সেজদার মালিক তো আল্লাহ (৭২:১৮)

এ বিষয়টা পরিষ্কার হতে গেলে আদম সেজদার রহস্য জানা দরকার?
“”আল্লাহ বলেন, আদমের নিমিত্তে সেজদা কর (আরাফ ১১ আয়াত) (বারাকা, ৩৪ আয়াত), (হিজর, ২৯ আয়াত), (বনি ইসরাইল, ৬১ আয়াত), (কাহফ, ৫০ আয়াত), (ত্বাহা, ১১৬ আয়াত), (সাদ, ৭২ আয়াত)। অনেকেই মনে করে এই সকল আয়াতে আদম সত্তাকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে ফেরেস্তারা ব্যক্তি আদমকে সেজদা দিয়েছে। এই বুঝটা ঠিক নয়। কারণ সেজদা একমাত্র আল্লাহর হক (৪১ ঃ ৩৭)। আল্লাহ ছাড়া সেজদা হারাম। অর্থাৎ সকল সেজদা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে (জিন ১৮ আয়াত)। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি আদম সেজদা পাওয়ার অধিকারী এমন বিশ্বাস করলে আদমের নিমিত্তে সেজদার আয়াতগুলোর সাথে জিন ১৮ আয়াত পরস্পর বিরোধী বলে গণ্য হয়, কিন্তু না এই কোরআনের কোনো আয়াত অন্য কোনো আয়াতের সাথে পরস্পর বিরোধী নয়, অর্থাৎ এই কোরআনের এক আয়াত আরেক আয়াতের পরিপন্থি নয় বরং এক আয়াত আরেক আয়াতের পরিপূরক এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকেই মনে করে যে, আদম হয়ত ফেরেস্তাদের থেকে উত্তম ছিল, তাই ফেরেস্তারা ব্যক্তি আদমকে সেজদা দিয়ে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আদমকে। কিন্তু কথাটা ঠিক নয়, কারণ যদি আয়াতে বলা হত, ওয়াসজুদুলি ইনসানা তাহলে ফেরেশতা ও জিন থেকে ইনসান শ্রেষ্ঠ আর তাই ইনসানকে সেজদা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু না, কিন্তু এখানে এমন আয়াত নেই বিধায় শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আদমকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঐ সেজদার হুকুম ছিল না এটা নিশ্চিত। আদম ফেরেস্তার দলভুক্ত হওয়ার আশায় ইবলিসের ধোঁকায় পড়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষ থেকে ভক্ষণ করেছিল (আরাফ ২০ আয়াত)। এতে বুঝা যায় যে, আদম নিজেকে ফেরেস্তা থেকে উত্তম মনে করে না। তা ছাড়া ইবলিস নিজেকে আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দাবী করেছে (আরাফ ১২ আয়াত)। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব তারাই, যারা ইমান আনে এবং সৎকর্ম করে (ব্যায়িনাহ, ৭ আয়াত)। পক্ষান্তরে নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কাফির, অতঃপর ইমান আনে না (আনফাল, ৫৫ আয়াত)। কাজেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট এটা জন্মগত বা সৃষ্টিগত ব্যাপার নয়, এটা কর্মফলের ব্যাপার। কাজেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট বুঝাবার লক্ষে আদমের নিমিত্তে সেজদার হুকুম হয় নি এটা নিশ্চিত। বরং আদম সেজদার অন্য কারণ আছে, সেটা হচ্ছে এই যে, আদমের মধ্যে দুইটি স্বত্তার অস্তিত্ব স্থাপন করা হয়েছে। (১) ব্যক্তি আদম সত্তা, যেটাকে নফ্স নামে অভিহিত করা হয়েছে। আদমের মধ্যে যখন নফ্স সত্তা স্থাপন করা হয়েছিল তখন সেজদার হুকুম হয় নি, কারণ প্রত্যেক নফসের মৃত্যু আছে (আনকাবুত, ৫৭ আয়াত)। ২য়টি হচ্ছে সৃষ্টার নিজস্ব সত্তা যেটাকে রুহু নামে অভিহিত করা হয়। আসলে রুহু প্রভু স্বত্তা (বনি ইসলাইল, ৮৫ আয়াত)। আদমের মধ্যে যখন আল্লাহর নিজ রুহু তথা প্রভু সত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল তখনই সেখানে সেজদার হুকুম হয়েছিল (হিজর, ২৯ আয়াত) এবং (সাদ, ৭২ আয়াত)। তাহলে দেখা গেল, ফেরেস্তারা আদমকে কেবলা করে ব্যক্তি আদম সত্তাকে বিলীন করে বরং আল্লাকেই সেজদা দিয়েছে বিধায় আদমের নিমিত্তে সে সকল সেজদার হুকুম ছিল সেটা ছিল আল্লাহর উদ্দেশ্যই সেজদা, তাই এই সকল সেজদাও দ্বীনি সেজদা। কারণ সেজদার ব্যবহার বা প্রয়োগ কখনো দুনিয়াবি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, বরং সেজদার ব্যবহার বা প্রয়োগ সবসময়ই হবে দ্বীনের ক্ষেত্রে। যেহেতু দ্বীনের সকল বিষয় একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য (যুমার, ৩ আয়াত)। সেহেতু আদমের নিমিত্তে যে সেজদা ছিল, সেটাও নিশ্চয়ই আল্লাহর উদ্দেশ্যে। তবে এখানে আর একটি বিষয় পরিষ্কার ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে তিনটি কারণে আল্লাহ আদমের নিমিত্তে সেজদা দিতে বলেছিল তা নিম্নরূপ ঃ
১) আল্লাহর নিজ রুহু আদমের মধ্যে ফুৎকার করা হয়েছিল। (হিজর, ২৯ আয়াত) এবং (সাদ, ৭২ আয়াত)।
২) আল্লাহর সুন্দর আকৃতি ও প্রকৃতি অনুসারে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে (ত্বীন, ৪ আয়াত), (রুম, ৩০ আয়াত)।
৩)আদম আল্লাহর খলিফা। (বাকারা, ৩০ আয়াত)। এই আয়াতে খলিফা শব্দ এসেছে, খলিফা শব্দের অর্থ স্থলাভিষিক্ত করা।

উপরিউক্ত ৩টি কারণে ফেরেস্তারা আদমকে কেবলা করে আল্লাহকে সেজদা দিয়েছে বিধায় উপরিউক্ত আয়াতগুলোকে আদমের নিমিত্তে যে সেজদার হুকুম ছিল, তা মূলত আল্লাহকেই সেজদা। ফলে ঐসকল আদম সেজদার আয়াতগুলি সুরা জিন এর ১৮ ও ফসিলতের ৩৭ নং আয়াতের পরিপন্থী হয় নি বা পরস্পর বিরোধী হয় নি। এখানে উল্লেখ্য যে, জন্ম সূত্রে সকল আদম সন্তানই খলিফা নয়। বরং পৃথিবীতে যারা ইমান আনবে এবং সৎ কর্ম করবে তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে আল্লাহ খলিফা নির্ধারণ করেন (নূর, ৫৫ আয়াত)। এইজন্য আল্লাহ বলেন, যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি রিসালাতের ভার অর্পণ করেন (আনআম, ১২৪ আয়াত)। রিসালাতের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণই হচ্ছে রসূল। আর রসূলগনের কাবায় বনি আদমগণ সেজদা দিয়েই মমিন হবেন। এই বিষয়টা প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই পবিত্র কোরআনে আদমের নিমিত্তে সেজদার জন্য উপরিউক্ত আয়াতগুলিতে বার বার নির্দেশ এসেছে। অনেকেই মনে করেন, এই সকল আয়াতগুলি শুধু ফেরেস্তারাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল, বনি আদম এর জন্য প্রযোজ্য নয়। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এই আয়াতের ব্যবহার বা প্রয়োগ শুধু ফেরেস্তাদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিলনা, কারণ ইবলিস জিন জাতীয় (কাহফ, ৫০ আয়াত)। ইবলিস জিন হওয়া সত্বেও যখন আদমকে সেজদা না দিয়েই কাফের,(২:৩৪) এতে প্রমাণ হয় ঐ সকল আয়াতগুলি জিনদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। বেহেশতের মধ্যে আদমের সাথে তাঁর স্ত্রীও উপস্থিত ছিল। (সূরা বাকারা : ৩৫) আর ইবলিস ব্যতীত উপস্থিত সকলে সেজদা করল। (সূরা বাকারা : ৩৪) তাতে প্রমাণ হয় যে, বেহেশতের মধ্যে মা হাওয়া আ. আদম আ. কে সেজদা দিয়েছে। আর তাই বনি আদমের মধ্যেও এই সেজদার প্রয়োগ ও ব্যবহার এসেছে ইউসুফের ১০০ আয়াতে, ইউসুফকে সেজদা দিয়েছিল, তার ১১ ভাই এবং পিতা মাতা। তারপর যদি কেউ বলে এই আয়াতগুলো রহিত করা হয়েছে। কিন্তু না, কারণ কোরআনের কোনো আয়াত রহিত হয় নি। (বাকারা, ১০৬ আয়াত)। তারপরও যদি কেউ বলে এই আয়াতের ব্যবহার ও প্রয়োগ আদম থেকে ইউসুফ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু না, আল্লাহর বিধান সকল বনি আদমের জন্য একই। এই উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, হে মোহাম্মদ, তোমার পূর্বে যে সকল রসূল এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে যেরূপ নিয়ম ছিল, তোমার ক্ষেত্রেও তাই। আমার নিয়মের কোনো পরিবর্তন নেই। (বনি ইসরাইল, ৭৭ আয়াত)।
মা হাওয়া আদম (আঃ)কে সেজদা দিয়েছে। বেহেস্তের ভিতরে আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেন, আদমকে সেজদা কর। সকলেই সেজদা করিল একমাত্র ইবলিশ ব্যতিত। সে অহংকার করিল এবং কাফের হয়ে গেল। এবং আল্লাহ বলিলেন হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী একসাথে জান্নাতে বসবাস কর (সূরা- বাকারা-৩৪) (সূরা- বাকারা-৩৫) এবং ইবলিশকে বলিলেন, তুমি এখান থেকে বাহির হয়ে যাও, তুমি বিতাড়িত। (সূরা- হিযর-৩৪), (সূরা-সাদ-৭৭)। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, বেহেস্তের ভিতরে মা হাওয়া আদম আঃ-কে সেজদা দিয়েছে। কারণ আয়াতে এসেছে, মা হাওয়া বেহেস্তের ভিতর উপস্থিত ছিল (সূরা- বাকারা-৩৫)। আর বেহেস্তের ভিতরে যারা ছিল তারা সকলেই সেজদা করিল একমাত্র ইবলিশ ব্যতিত। (সূরা-বারাকা-৩৪)। কাজেই এক ইনসান আরেক ইনসানকে আল্লাহর খলিফা হিসাবে কেবলা করে সেজদা দিতে পারবে না এই কথার কোন ভিত্তি নাই। অনেকেই বলে সেজদার হুকুম ছিল, ফেরেস্তা ও জ্বীন সম্প্রদায় ইনসান সম্প্রদায়কে সেজদা করবে, তাদের এক কথা ঠিক নহে, কারণ ওয়াস যুদুলী ইনসানা, তোমরা মানুষকে সেজদা কর এমন আয়াত আসে নাই। যদি এমন আয়াত আসত, তাহলে মা হাওয়া যেহেতু ইনসান, সেহেতু তিনি সেজদাকারীর আওতাভুক্ত হইতেন না, বরং তিনি সেজদাযোগ্য হইতেন। যেহেতু আয়াতে এসেছে, ওয়াস যুদুলী আদামা, তোমরা আদমকে সেজদা কর, সেহেতু মা হাওয়া ইনসান হওয়া সত্ত্বেও যদি আদমকে সেজদা না দিতেন তা হলে ইবলিশের মত কাফির হয়ে বহিস্কৃত হইত এটা নিশ্চিত। অনেকেই বলে, আদম আঃ-কে সেজদার হুকুম শুধু ফেরেস্তাদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল, এটা অন্য কোন সম্প্রদায়ের জন্য ছিলনা। তাদের এই কথা ঠিক নহে, কারণ ইবলিশ ছিলেন জ্বীন জাতি (সূরা-ক্বাফ -৫০)। ইবলিশ জ্বীন জাতিয় হওয়া সত্ত্বেও যখন আদমকে সেজদা না দিয়ে কাফের (সূরা-বারাকা-৩৪)। তাতে প্রমাণ হয় যে, সেজদার হুকুম শুধু ফেরেস্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, বরং সকল সৃষ্টির জন্য ছিল। বিধায় মা হাওয়া ঐ সেজদার আওতাভুক্ত ছিল, এতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ সেজদার হুকুম ছিল আল্লাহর খলিফাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, আর আদমকে আল্লাহ খলিফা হিসাবে নির্ধারণ করেছিলেন। (সূরা- বাকারা-৩০)। যেহেতু মা হাওয়া খেলাফত প্রাপ্ত নহে, তাই তিনি ইনসান হওয়া সত্ত্বেও ঐ সেজদা না করে অপরাধি হইতেন, এটা নিশ্চিত। কারণ জমিনের বুকে আল্লাহ খলিফা পাঠিয়েছেন সকল সৃষ্টির উপর তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন এই উদ্দেশ্যে। শুধু ফেরেস্তা ও জ্বীনদের উপর আদম আঃ প্রতিনিধিত্ব করবেন এমন নহে, বরং ফেরেস্তা, জ্বীন ও ইনসানদের উপরও আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আদম আঃ দায়িত্ব পালন করবেন। জন্মসূত্রে কিন্তু সকল বনি আদম খলিফা নহে, পৃথিবীতে যারা ঈমান আনবে এবং সৎ কর্ম করবে, তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। (সূরা-নূর-৫৫)। যাকে আল্লাহ খেলাফত দিবেন, তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন, বাকী বণি আদমের উপর। তাই বেহেস্তের ভিতরে আদম আঃ শুধু ফেরেস্তা ও জ্বীন সম্পদায়ের জন্যই খেলাফত ছিলেন না, বরং মা হাওয়ার উপর ও তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর তাই মা হাওয়া আল্লাহর খলিফা হিসাবে আদম আঃ কে মেনে নিয়েই সেজদা দিয়েছেন এটা নিশ্চিত। আর তাই দুনিয়াতে সকল স্ত্রীগণ তাদের স্বামীর আনুগত্য করে আসছে।
তারপরও প্রিয় পাঠক আপনাদের জেনে রাখা ভাল যে, যদিও সকল সৃষ্টির জন্য আদমকে সেজদার হুকুম ছিল, তবে কেন আয়াতে ফেরেস্তাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এক সময় আল্লাহ ফেরেস্তাদের অবগতির জন্য ঘোষণা করেছিলেন যে, জমিনের বুকে আমি প্রতিনিধি নির্ধারণ করিব। (সূরা- বাকারা-৩০)। তখন শুধু ফেরেস্তারা দ্বি-মত পোষণ করেছিল, (সূরা- বাকারা-৩০)। অন্য কোন সম্প্রদায় দ্বিমত পোষণ করে নাই বিধায় সেজদার সময় ফেরেস্তাদের কথা উল্লেখ করে বলেছে, যেন কোন ভাবেই কোন অযুহাতে ফেরেস্তারা এই সেজদা থেকে বিরত না থাকে। যদিও বেহেস্তের ভিতরে আদম সেজদার ঘটনা ঘটিয়েছে, কিন্তু এর কার্যকারিতা বেহেস্তের ভিতরেই সীমাবদ্ধ নহে বরং দুনিয়াতে বনি আদমদের মধ্যে প্রচলিত আছে, যেমন ইউসুফ আঃকে সেজদা করল তার এগার ভাই। (সূরা- ইউসুফ-১০০)। সকল নবীগণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক সেজদার সময় তোমাদের নিজের চেহারা প্রতিষ্ঠিত কর। (সূরা- আরাফ-২৯)। কাজেই আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা করাই ইবলিশ মুক্তির একমাত্র পথ।
আসলে আদমের নিমিত্তে সেজদার আয়াতগুলি দিয়ে খলিফা আদমকে সেজদার মাধ্যমে পরবর্তীতে রিসালাতের ভারপ্রাপ্ত রসূলগণকে কেবলা করে আল্লাহকে সেজদা করার বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল আদম সেজদার মূল রহস্য বা উদ্দেশ্য। যারা বর্তমানে যে কোনো কারণে আদম কাবায় সেজদা থেকে দূরে থাকে, তারা ঐসকল আয়াতগুলো অর্থাৎ আদমের নিমিত্তে সেজদার আয়াতগুলির উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার সামিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু আল্লাহর কোনো আয়াতের উদ্দেশ্য কেউ ব্যর্থ করতে পারবে না (হুদ, ২০ আয়াত)। কাজেই আল্লাহ পাকের কোনো আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে, এমন বুঝ অন্তরে পোষণ না করাই ভাল। তারপরও যারা আল্লাহর আয়াতের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম (হজ, ৫১ আয়াত)। যারা রসূলগণের মাধ্যমে আদম কাবায় সেজদা করে নি তারাই ইবলিসের অনুসারী, কাফের। কারণ ইবলিস আদম কাবায় সেজদা না দিয়েই কাফের (বাকারা, ৩৪ আয়াত)। ইবলিস এবং ইবলিসের অনুসারীগণ মোমেন নয়। এরা বলে আমরা আল্লাহ ও আখিরাত বিশ্বাস করি (বাকারার ৮ আয়াত), এবং আরো বলে আমরা আল্লাহ বিশ্বাস করি ও রসূল ও বিশ্বিাস করি (নুর, ৪৭ আয়াত)। এরা আরো বলে আমরা আল্লাহর আনুগত্যও রসূলের আনুগত্য স্বীকার করি (নুর, ৪৭ আয়াত)। কিতাবিদের দল বিশেষের মধ্যে ইবলিসের অনুসারী আছে (ইমরান, ১০০ আয়াত)। অর্থাৎ ইবলিস ও তার অনুসারীগণও কিতাব বিশ্বাস করে। ইবলিস জান্নাত ও জাহান্নামও বিশ্বাস করে। কারণ তাকেতো জান্নাত থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছিল (বাকারা, ৩৬ আয়াত) এবং (ত্বাহা, ১২৩ আয়াত)। ইবলিস ফেরেস্তাও বিশ্বাস করে, কারণ তাকে তো ফেরেস্তাদের সাথেই আদম সেজদার হুকুম দেওয়া হয়েছিল, (হিজর, ৩০ আয়াত)। ইবলিস পুনরুত্থান দিবসও বিশ্বাস করে (সাদ, ৭৯ আয়াত)। ইবলিস ও ইবলিসের অনুসারীদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নামের দুর্ভোগ নিদ্দিষ্ট, যদিও তারা লোক দেখানো ছালাত আদায় করে (মাউন, ৬ আয়াত)। যেহেতু ইবলিস জিন জাতীয় (কাফ, ৫০ আয়াত) সেহেতু ইবলিসও আল্লাহর ইবাদত করে (জারিয়া, ৫৬ আয়াত)। ইবলিস আল্লাহকে প্রভু বলে (হিজর, ৩৬ আয়াত)। ইবলিস আল্লাহকে সেজদা করে (রাদ, ১৫ আয়াত)। ইবলিস আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে (ইমরান, ৮৩ আয়াত)। ইবলিস আল্লাহরই পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে (হাদীদ, ১আয়াত) এবং (হাশর, ২৪ আয়াত)। উপরিউক্ত বিশ্বাস অনুসারে উপরিউক্ত কর্মগুলো করার পরও ইবলিস একমাত্র আদমকে সেজদা না দেওয়ার কারণেই কাফের (বাকারা, ৩৪ আয়াত) এবং (সাদ, ৭২ আয়াত)। ঠিক একই ভাবে যারা উপরিউক্ত বিশ্বাস অনুসারে উপরিউক্ত কর্মগুলো করার পরও একমাত্র সম্যক গুরুর সঙ্গ ধারণ করে আদম কাবায় সেজদা দেয়না তারাই ইবলিসের অনুসারী হবে। যেহেতু পূর্ব আলোচনায় আমরা বুঝলাম খেলাফত যেখানে, সেজদা সেখানে। খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেজদা। খেলাফত প্রাপ্ত খলিফাগণই সম্যক গুরু। আর সম্যক গুরুগণই বর্তমান রসূল। মোমেনগণ বলেন, আমরা এই বর্তমান রসূলেরই অনুসরণ করি (ইমরান, ৫৩ আয়াত)। এই রসূলগণ তোমাদের পবিত্র করবেন, কারণ প্রত্যেক বনি আদমের সাথে ইবলিস যুক্ত আছে (ত্বাহা, ১২৩ এবং যুখরুফ ৩৬ আয়াত)। এই ইবলিস মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ পরিত্রাণ পাবে না (শুআরা, ৮৯ আয়াত)। আর যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ সম্যক আদম কাবায় সেজদা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে ইবলিস মুক্ত হতে পারবে না। যখনই কেউ রসুল কাবায় সেজদা দিবে, তখনই সে ইবলিস মুক্ত হবে। কারণ ইবলিস কখনো আদম কাবায় সেজদার শামিল হবে না (হিজর, ৩০ আয়াত)। আর সম্যক গুরুর কাবায় সেজদার মাধ্যমেই ইবলিসকে দেহ মন থেকে দূরীভূত করার একমাত্র উপায় আর এটাই হচ্ছে সালাত। এইজন্য আল্লাহ বলেন, ছালাত হচ্ছে সেই কাজটি যা করলে ইবলিস দূরীভূত হয় (আনকাবুত, ৪৫ আয়াত)। এই আয়াতে নাহাইয়া শব্দ এসেছে, নাহাইয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে দূরীভূত করা। অভিধান (পৃ. ২৩৮৩)। এই আদম কাবাই সেজদা না দিয়ে যারা প্রচলিত প্রক্রিয়ায় লোক দেখানো সালাত নিয়মিত ভাবে আদায় করে, সালাতের সময় তাদের মন স্থির থাকে না। কারণ ঐসময় তাদের দেহ মনের সাথে ইবলিস শামিল থাকে ফলে আনকাবুত, ৪৫ আয়াতের প্রয়োগ তাদের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। আল্লার কোনো আয়তকে কেউ ব্যর্থ করতে পারবে না (হুদ, ২০ আয়াত)। পক্ষান্তরে যারা আদম কাবায় সেজদা করে তাদের সাথে ইবলিস যুক্ত থাকেনা বিধায় সালাতে তাদের মন একনিষ্ঠ হয়। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, এদের উপর ইবলিসের কোনো ক্ষমতা থাকবে না (হিজর, ৪০ আয়াত)। এই আদম কাবায় সেজদা দেওয়াই হচ্ছে সেরাতুল মুস্তাকিম, যা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে (হিজর, ৪১ আয়াত)। আর ইবলিস এই সিরাতুল মোস্তাকিমেই উৎ পাতিয়া বসিয়া আছে, এখান থেকে সকলকে পথ ভ্রষ্ট করার জন্য (আরাফ, ১৬ আয়াত)। যে কায়দায় ইবলিস বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছিল ঠিক একই ভাবে মানুষকেও বিভ্রান্তি করবে (আরাফ, ১৬ আয়াত)। আর ইবলিস এই সেজদা থেকেই মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টা করে (নামল, ২৫ আয়াত)। সম্যক গুরুতে যারা বিশ্বাসী তারাই মোমেন, আর মোমেনদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, তোমরা সেজদা কর (ঐ সেজদা, যে সেজদা ইবলিস করে নি) (হজ, ৭৭ আয়াত)। কাজেই রসুলের সঙ্গ ধারণ করে আদম কাবায় সেজদা দেওয়াই হচ্ছে ঈমানের পথ আর এর বিপরীত অর্থাৎ আদম কাবায় সেজদা না দেওয়া হচ্ছে ইবলিসের পথ। ইবলিসের পথে যারা থাকবে তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন একমাত্র ইমান এবং সৎ কর্ম ব্যতীত সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত (আসর, ১ আয়াত)। এইজন্য আল্লাহ বলেন, তোমরা ইবলিসের অনুসরণ করোনা, ইবলিস তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (বাকারা, ২০৮ আয়াত)। বরং তোমরা অনুসরণ কর তাদের যারা সঠিক পথে আছে (ইয়াসিন, ২১ আয়াত)। সঠিক পথ বলতে ইবলিসের বিপরীত পথ।

তাহলে উপরিক্ত আলোচনায় এটা প্রমান হলো যে আদমকে সেজদা আদমের ব্যাক্তি সত্তার উপরে ছিলো না , আদমের ভিতর অবস্থিত আল্লাহ সত্তাকেই করা হয়েছিল, তাই এই সেজদাই একমাত্র সরল পথ(১৫:৪১) বলে ঘোষনা করা হয়েছে

একশ্রেনীর মানুষ বলে যে সেজদা মানে হলো মেনে নেয়া/ হুকুম পালন করা,,,

এখন প্রশ্ন হলো আমাদের সকলের তো আল্লার আয়াত মেনে নিতে হবে /পালন করতে হবে তাই না?

কিন্তু তোমরা আল্লাহর আয়াতকে সেজদা কর এ মর্মে কোন আয়াত আসেনাই , বরং আয়াতকে সেজদা বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহকে সেজদার হুকুম হয়েছে,(৪১:৩৭)
,
তাহলে এটা নিশ্চিত সেজদার অর্থ কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না,,

মেনে নেয়ার আরবি হলো “আতিউ”

#আবার আরেকশ্রেনীর মানুষ বলে আল্লার আয়াত পাঠকরাকে সেজদা বলে;
কিন্তু না , বরং দুটি বিষয় আলাদা ভাবেই হুকুম করা হয়েছে, যেমন” তারা আল্লার আয়াত পাঠ করে এবং সেজদা করে”(৩:১১৩)
তাহলে আয়াত পাঠ করা এক বিষয় আর সেজদা করার মাঝখানে এবং শব্দটি আসছে , সুতরাং এই দুটি বিষয় এক করে গুলিয়ে ফেলার কোন অবকাশ নাই,
যেমন কোরানে অনেক জায়গায় “সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও”
তারমানে এই‌নয় যে সালাত যাকাত একই বিষয়!!

আবার আরেক শ্রেনীর মানুষ বলে ,
রবের উদ্দেশ্যে দাড়ানোটাকে সেজদা বলে, কিন্তু তাদের এই ধারনাও সঠিক নয় , কারন ” তারা তাদের রবের উদ্দেশ্যে সেজদারত অবস্থায় রাত্রি জাপন করে ও দাড়ায়”””২৫:৬৪
তাহলে রবের উদ্দেশ্যে দাড়ানো এক বিষয় আর সেজদাও আরেকটা আলাদা বিষয়,

গাছ পালাও‌ নক্ষত্র আল্লাহকে সেজদা করে(৫৫:৬)
যদিও তাদের ইবাদত পদ্ধতি আলাদা;;;
কারন প্রত্যেক উম্মতের জন্য আলাদা আলাদা
ইবাদত পদ্ধতি রহিয়াছে,
আর তাছাড়া তোমরা গাছপালা কিংবা সুর্য নক্ষত্রের অনুসরন কর এরকম আয়াত আসেনি,,, বরং নবি/রসুলের অনুসরনের কথা কোরানে আসছে
#আর মোমেনদের সেজদা লুটিয়ে পড়ার মাধ্যমেই করতে হবে ,(১৭:১০৭),(১৯:৫৮),(৩২:১৫)
আপনি যেখানে লুটিয়ে পড়েন না কেনো ,, মন মস্তিষ্কে আল্লাহর সুরত থাকলেই হবে,,,,
ওয়েট,,, পরবর্তি প্রশ্নের মাধ্যমে পোষ্ট করা হবে,,,

.

see comment link

https://www.facebook.com/groups/490654285011208/permalink/669620293781272/

হাদিস কোনটা জাল কোনটা সহিহ

By Mahmood Hasan fbfd

ভুলে ভরা হাদিস কোনটা জাল কোনটা সহিহ, আপনি কি বলতে পারবেন? যেটা যার মতবাদের সাথে মিলে যায় সেটা সঠিক হিসেবে ধরে নেয়, বাকিগুলো জাল ৷

শিয়াদের পাচটা হাদিসের কিতাব, সুন্নিদের ছয়টা আলাদা হাদিসের কিতাব ৷
সুন্নি, শিয়াদের উপদলগুলোর মধ্যেও হাজার হাজার কিতাব ৷ তো ভাই, নবীর কথা কোন কিতাবে আছে??

নবী মৃত্যুর 250 বছর পর সৌদি থেকে 4236 মাইল দুরের একজন পারসিয়ান নবীর নামে একটা কিতাব লিখে বললো এগুলা নবীর বানী ৷ সেটা বিশ্বাস করতে হবে? আব্বাসীয় আমলে স্বেচ্ছাচারি শাষকের বিস্বস্ত সহযোগী বুখারী শাষকের অনুগত থেকে অতি আবেগে শাষকের আরও সান্নিধ্য পাবার মানসে সুন্নিদের জন্য একটা কিতাব লিখল, কারন তৎকালিন শিয়া সুন্নি বিরোধ ছিল ৷ আর শাষক সুন্নিদের আলাদা একটি কিতাবের অপেক্ষাতেই ছিলেন, যেখানে নবীর কর্মকান্ড লেখা থাকবে এবং সেগুলো সুন্নিদের পক্ষে থাকবে ৷ সুন্নিদের পক্ষে নবী ছিলেন, এবং নবীর সমস্ত কার্যকলাপ সুন্নিদের পক্ষে থাকলে, সিংহাসন থেকে আর নামায় কে?

শিয়ারাও নবীর নামে তাদের পক্ষে হাদিস লিখে নিল ৷ এবং আলীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে আলির বংশ হতে শাষক হবে এমন প্রমান পেশ করে হাদিস লিখলো ৷ এখন সেগুলাই হয়ে গেল ধর্মের বই ? নবীর বানী??

বুখারী পারসিয়ানদের প্রাচিন ধর্ম সাসানীয় যুগের জরুথুষ্টিয় ধর্ম থেকে কপি করে বুখারী লিখেছে ৷
প্রমান চাইলে, জরুথুষ্টিক ধর্ম সম্পর্কে জানুন ৷৷

আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, কুরআন আহসানাল হাদীস(উত্তম বানী) সম্বলিত কিতাব (39:23)।
এর বাইরে সব লাহওয়াল হাদীস (অসার বানী, মানুষের মনগড়া বানী )-31:6
এবং জাসিয়াহ-৬

1,2-শাফায়াত (সুপারিশ)

AKSiqdar

.

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

👉 ইসলাম ও শাফায়াত (সুপারিশ), পর্ব ১।

✍✍✍ কোরানিক শিক্ষার বিপরিতে অধিকাংশ মুহাম্মদীরা (সুন্নী , শিয়া , সুফি) বিশ্বাস করে যে হাশরের দিনে মুহাম্মদ (এবং ঈমাম , পীর, সুফি) নিজ নিজ উম্মত ও অনুসারীদের মাঝে যারা পাপী তাদের জন্য সুপারিশ করে বেহেস্ত পাইয়ে দেবেন| এভাবেই তারা কোরানে শেষ দিবসের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাকে বিকৃত করে মুহাম্মদ ,ঈমাম ও পীর সুফিদের এমন ভাবে বাজারজাত করে যেন আল্লাহ নন বরং পীর পয়গম্বররাই বিচার দিবসের নিয়ন্তা| সত্য হলো , এই বিশ্বাস শেষ বিচার দিবসে আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতাকে খর্ব করার সামিলই শুধু নয় , এই বিশ্বাস কোরানের বহু আয়াতকে অস্বীকার ও নিষ্কৃয় করে দেয়|

আজকের মুহাম্মদীদের নৈতিক অধঃপতনের মূলেও এই ভ্রান্ত বিশ্বাস| কেন তারা সৎ , ভাল নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করবে , যখন তারা নিশ্চিত জানে মুসলমান হওয়ার সুবাদে বা সুন্নত পালন করার কারনে বা ঈমামের বা পীরের অনুসারী হওয়ার সুবাদে পরকালে তাদের কিছুই হবে না , পীর পয়গম্বররা সুপারিশ করে তাদের দোযখে যাওয়ার বদলে বেহেস্তে পাঠাবে| এদের অবস্থা সেই সকল ছাত্রের মতো , যারা সারা বছর পড়াশুনা না করে টুকে বা ঘুষ দিয়ে পাশ করতে চায়|

ইসলামে শাফায়াতের সূচনা *

কোরানের আয়াত দৃঢ়রুপে ঘোষনা দেয় যে , ইহকাল ও পরকালের ভবিষ্যত সম্পর্কে আধ্যাত্মিক কোন জ্ঞান মুহাম্মদের ছিল না| এমনকি নিজের ভাল ভাল বা মন্দ করার ক্ষমতাও তার ছিল না|

“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের(ভবিষ্যতের) কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। ৭:১৮৮”

“আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় (ভবিষ্যত) অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? ৬:৫০”

ফলে মুহাম্মদ যে শাফায়াত সম্পর্কে কখনো কিছু বলেন নি , তা নিশ্চিতরুপে বলা যায়| তাই মুহাম্মদের নামে প্রচলিত তথাকথিত হাদিসগ্রন্থগুলিতে শাফায়াত নিয়ে লিখিত কল্প কাহিনীগুলো যে সর্বৈব মিথ্যা তা নিঃসন্দেহে বলা যায়| শাফায়াত নিয়ে কোরানে ও হাদিসে যে বর্ণনা পাই , তা পরষ্পর
বিরোধী এবং এদের ভিতরে সমন্বয় করা অসম্ভব|

কোরানিক আয়াত ১:৪ অনুসারে বিচার দিবসের একমাত্র মালিক আল্লাহ এবং মুহাম্মদ আর সকলের মতোই নশ্বর মনুষ্য আত্মা…:বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। ১৮:১১০”|

শেষ দিবস নিয়ে কোরানের এই আয়াত আর সকল আত্মার মতোই মুহাম্মদের জন্যেও প্রযোজ্য… “যেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।
৮২:১৯” |
একারনে আল্লাহ মুহাম্মদকে বলেছেন..”হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর। ৩:১২৮”|

বিচার দিবসের একমাত্র মালিক ও কর্তা যখন কোন রায় দেবেন ,তা যে রদ বদল হবেনা আমরা সেটা জানতে পারি নিম্মের আয়াত থেকে..”আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই। ৫০:২৯”|

যদি কেউ ধারনা করে থাকে যে শেষ বিচারে আল্লাহ কাউকে দোযখে পাঠানোর রায় দেন এবং মুহাম্মদ বা অন্য কেউ সুপারিশ করে সে রায় পরিবর্তন করে তাকে বাচিয়ে দেবেন , তাহলে সে কোরান অস্বীকার করার পাঁপে পাঁপী হবে| যার জন্য দোযখের রায় হয়ে গেছে , তার জন্য সুপারিশ করে কেউ তাকে বাচাতে পারবে না| কারন আল্লাহ বলেছেন…

“যার জন্যে শাস্তির হুকুম অবধারিত হয়ে গেছে আপনি কি সে জাহান্নামীকে মুক্ত করতে পারবেন? ৩৯:১৯”

শাফায়াতের হাদীসে বিশ্বাসের অর্থই হলো কোরানের আয়াতকে অস্বীকার করে মুহাম্মদ বা অন্যদেরকে দেবতার আসনে বসানোর সমতুল্য| কারন এদের ধারনা এই দেবতারা আল্লাহর থেকেও দয়ালু এবং এই দেবতারা তাদের ইচ্ছাকে আল্লাহর উপরে চাপিয়ে দিয়ে তার রায় পরিবর্তন করতে সক্ষম|

কোরানে কখনোই শেষ বিচার দিবসে মুহাম্মদের বিশেষ কোন ভূমিকার কথা বলা হয় নি , বরং অন্য আর সকলের মতোই মুহাম্মদকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে এবং নিম্নের এই আয়াত মুহাম্মদ ও অন্য আর সকল রসূল পয়গম্বরদের জন্য ও প্রযোজ্য…

“সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। ৮০:৩৪-৩৭”

সুতরাং সেদিন মুহাম্মদ বা অন্য কারো শাফায়াত দুরে থাক , অন্য কারোর জন্য চিন্তা করার সময় ও সুযোগ কোনটাই থাকবেনা| আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন..

“হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। ৩১:৩৩”

মুহাম্মদ সেদিন তার উম্মত দুরে থাক, নিজের কন্যা ফাতেমার ও কোন উপকারে আসবেন না| এটা ভাবা অযৌক্তিক যে মুহাম্মদ অন্যের বিচারে হস্তক্ষেপ করবেন , যখন তিনি নিজে আর সকল রসূলদের মতোই বিচারের সম্মুখীন হবেন , জিজ্ঞাসিত হবেন|

“অতএব, আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব যাদের কাছে রসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই জিজ্ঞেস করব রসূলগণকে। ৭:৬”

মুহাম্মদকে ও বিচারের আওতা থেকে বাদ দেয়া হবে না|

“এটা (কোরান) আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্যে স্মরনিকা এবং শীঘ্রই আপনারা জিজ্ঞাসিত হবেন| ৪৩:৪৪”

বর্তমানের মুসলমানরা যাদের সাথে মুহাম্মদের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তাদের কথা বাদই দিলাম , যারা তার সমসাময়িক সেই মুসলমানদেরও তিনি কোন কাজে আসবেন না…

“আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালকর্তার এবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাব বিন্দুমাত্রও তাদের দায়িত্বে নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন। নতুবা আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন। ৬:৫২”

আল্লাহ ন্যায় বিচারক ও সর্বজ্ঞ| সুপারিশের মাধ্যমে বিচারের রায় পরিবর্তন করা গেলে , সে বিচার ন্যায় বিচার নয়|

“আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট। ২১:৪৭”

কোরানে যে সকল আয়াতে শাফায়াত (شَفَٰعَ) শব্দটি আছে , সেই আয়াতগুলো দুই রকমের : সুস্পষ্ট ও রুপক| সুস্পষ্ট আয়াতগুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কোন শাফায়াত নেই| মুহাম্মদীরা রুপক আয়াতগুলোকে ত্যনা পেচিয়ে প্রমাণ করতে চায় শাফায়াত আছে| এ ব্যাপারে কোরানে বলা হয়েছে…

“তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। ৩:৭”

চলুন সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পড়া যাক….

“আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। ২:৪৮”

“হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। ২:২৫৪”

“তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না। ২:১২৩”

“আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না। ৩৬:২৩”

“বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই , আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। ৩৯:৪৪”

.

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

👉 ইসলাম ও শাফায়াত,পর্ব ২

✍✍✍ কোরানের শাফায়াত সংক্রান্ত রুপক আয়াতগুলো নিয়ে আলোচনা করার আগে চলুন উত্তর খোঁজা যাক গত পোস্টে হামিদুল ইসলাম নামে এক ভাইয়ের করা মন্তব্যের “সূরা মারইয়াম:19/87 – যে দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”| এর উত্তর জানলে রুপক আয়াতগুলো বুঝতে সুবিধা হবে|

কে বা কারা শেষ বিচার দিবসে সুপারিশের অধিকারী হবে? কোরানের সুস্পষ্ট আয়াত অনুযায়ী এরা হলেন – ফেরেশতারা|

“আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন। ৫৩:২৬”

কেন শুধু ফেরেশতারাই সুপারিশের অধিকারী হবেন সেটা জানার আগে চলুন জানা যাক কেন নবী রসূল সহ কোন মানুষ সুপারিশের অধিকারী হবেন না বা সুপারিশ করার যোগ্যতা রাখেন না বা নিজেকে ছাড়া অন্যকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময় ও সুযোগ কোনটাই নেই|

শেষ বিচার দিবসে মানুষের না থাকবে কোন সাহায্যকারী , না থাকবে কোন সুপারিশকারী| তারা একাই বিচারের সম্মুখীন হবে| সেদিন আল্লাহ বলবেন…

“তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, যেমন আমি প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে এসেছ। আমি তো তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে তোমাদের দাবী ছিল যে, তারা তোমাদের ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের দাবী উধাও হয়ে গেছে। ৬:৯৪”

এর অর্থ দাড়ায় সামাজিক প্রতিপত্তি , ধণ সম্পদ , সন্তান সন্ততি , আত্মীয় স্বজন , সুপারিশকারী কেউই সেদিন সঙ্গে থাকবে না| শুধু তাই নয় নিজের চিন্তায় এমনই ব্যতিব্যাস্ত থাকবে যে এদের থেকে পালিয়ে যাবে…

“সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। ৮০:৩৪-৩৭”

নবী রসূলদের ও পিতা মাতা পত্নী সন্তান সন্ততী ছিল| তারা ও অন্যান্য মানুষের মতোই পালাবে| তারাও অন্যান্য মানুষের মতোই আল্লাহর দাস , তারাও একাকি উত্থিত হবে….

“নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না। তাঁর কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গণনা করে রেখেছেন। কেয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে। ১৯:৯৩-৯৫”

সেদিন প্রতিটি মানব আত্মা নিজের ওকালতি নিজেই করবে….

“যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্ন-সমর্থনে সওয়াল জওয়াব করতে করতে আসবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের পূর্ণ ফল পাবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না। ১৬:১১১”

প্রত্যেক ব্যাক্তির সঙ্গে কে থাকবে ও সুপারিশ করবে বা সেই সুপারিশের ফল কী?

সুস্পষ্ট কোরানের আয়াতগুলো থেকে জানলাম – শেষ বিচারের দিনে সকল মানুষ একাকি নিঃসঙ্গভাবে উদভ্রান্তের মতো পালিয়ে বেড়াবে এবং শুধুমাত্র নিজের ভবিষ্যত চিন্তায় ব্যাতিব্যাস্ত থাকবে| এরপরেও যারা এখনো ভাবছেন আল্লাহ মুহাম্মদকে তাদের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন তাদের জন্য..

এই আয়াতগুলোর শুরুতেই মুহাম্মদকে আল্লাহ তিরস্কার করছেন তার যুদ্ধের সঙ্গী নিকটস্ত কিছু সাহাবির পক্ষে বিতর্ক করার জন্য|

“নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। যারা মনে বিশ্বাস ঘাতকতা পোষণ করে তাদের পক্ষ থেকে বিতর্ক করবেন না। আল্লাহ পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাস ঘাতক পাপী। ৪:১০৫-১০৭”

এর পরের আয়াতে এই বিশ্বাস ঘাতক পাপীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ জানিয়ে তিনি মুহাম্মদকে আবার ও তিরস্কার করে বলছেন….

“শুনছ? তুমি তাদের পক্ষ থেকে পার্থিব জীবনে বিতর্ক করছ, অতঃপর কেয়ামতের দিনে তাদের পক্ষ হয়ে আল্লাহর সাথে কে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে? ৪:১০৯”

ভাবুন একবার..নিকট সাহাবিদের জন্যেও মুহাম্মদের ওকালতি করার অনুমতি নেই , না ইহ জীবনে না পরকালে , সেখানে অন্যান্য মুসলমানেরা কিভাবে মুহাম্মদের শাফায়াতের আশা করতে পারে!!

ইসলাম ও শাফায়াত (সুপারিশ) শেষ…

“তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোন এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও? বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” ৩৯:৪৩-৪৪

উপরের এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ ছাড়া কোন সুপারিশকারী নেই| কিন্তু ৫৩:২৬ আয়াত অনুযায়ী “আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন”| তাহলে আয়াত দুটি কি পরষ্পর বিরোধী হয়ে গেল না? না| কারন – ফেরেশতারা নিজের ইচ্ছায় কিছু করেন না , তারা আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমেই সব কিছু করেন| এ কারনে ফেরেশতাদের কাজ কে ও আল্লাহর কাজ বলেই ধরা হয়| এটা বুঝতে নিচের আয়াতদুটি দেখুন …

“আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়,”… ৩৯:৪২
“বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে।”৩২:১১

একই যুক্তিতে বলা যায় আল্লাহ যখন কোন ব্যাক্তিকে করুনা করতে চান , তখন ফেরেশতাদের সুপারিশ করার অনুমতি দেন| প্রথম থেকে শুরু করা যাক , আল্লাহ প্রতিটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বক্ষনের জন্য দুটি ফেরেশতাকে নিয়োজিত করেছেন তার সকল কর্ম নথীভুক্ত করার জন্য|

“আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” ৫০:১৬-১৮

“অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর। “৮২:১০-১২

শেষ বিচারের দিন সকলেই একাকি উত্থিত হবে ,অর্থাৎ কোন মানব আত্মা তার সঙ্গে থাকবে না| (নবী রসূলরাও মানব আত্মা) শুধু থাকবে দুই ফেরেশতা তাদের সঙ্গে..

“এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন। প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী। তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন। তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই। তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে,”৫০:২০-২৪

বিচার শেষ এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করাও সম্পন্ন| এর ভিতরেই যা করার করতে হবে| আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে নিজের ওকালতি নিজেকেই করতে হবে এবং সাক্ষী হিসাবে সর্বক্ষনের সঙ্গী এই ফেরেশতারারা ছাড়া আর কেউ থাকবে না| সুতরাং সত্যিকারের সুপারিশ তো এই ফেরেশতারাই করবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে| এদের পক্ষেই করা সম্ভব সুপারিশ করা , কারন এরা তার সকল কাজের সাক্ষী| কোন মানুষের পক্ষে সুপারিশকারী হওয়া সম্ভব নয় , কারন তারা সকল কর্মের সাক্ষী বাস্তবিকভাবে হতে পারে না|

সুতরাং আমরা এই উপসংহারে পৌছাতে পারি যে , আল্লাহ যার উপর করুনা করতে চান তার জন্য ফেরেশতাদের অনুমতি দেবেন তার ভাল কাজের সাক্ষ্য তথা সুপারিশ করতে|

Zakat. Amirul. Bangla

Amirul Islam satya gopon

.

Mohammd Sobuz যাকাত অর্থ পবিত্র, পরিশুদ্ধ (১৮:৮১; ১৯:১৩)। আতা অর্থ দেওয়া। এ অর্থে ‘যাকাত দেওয়া’ বলতে আমি ‘অর্থ’ দেওয়াকেই বুঝেছি। কারণটা নিচে দেওয়া হলো। তবে মু’মিন ভাই-বোনদের নিকট সবিনয় অনুরোধ- আমার ভুল হলে তা শুধরিয়ে নেওয়ার জন্য মতামত দিবেন।
সমাজে কিছু দেওয়া প্রচলিত আছে, যেমন-

১. চাঁদা দেওয়া, ২. ট্যাক্স দেওয়া, ৩. মুষ্টির চাল দেওয়া, ৪. (বিদ্যুত/ টেলিফোনের) বিল দেওয়া, ৫. বেতন দেওয়া, ৬. ঋণ দেওয়া, ৭. দাদন দেওয়া ৮. সূদ দেওয়া, ৯. ভাড়া দেওয়া, ১০. সদকা দেওয়া ইত্যাদি। এর বিপরীত অর্থও হয়। ভিন্ন ভিন্ন দেওয়া / নেওয়া জিনিষের নাম। তেমনটি যাকাতও একটি দেওয়া /নেওয়া জিনিষের নাম।

আতা অর্থ দেওয়া। যেমন-
১. হক (ফসল) দেওয়া (৬:১৪১);
২. রাজ্য দেওয়া (৪:৫৪);
২. সম্পদ (মাল) দেওয়া (৯২:১৮)।

কুরআনে ‘যাকাত’ দেওয়ার জিনিস-
১. ‘মানুষের ধনে (সম্পদে/মালে) বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা যে সূদ দিয়ে থাকো, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক, তারাই সমৃদ্ধিশালী (৩০:৩৯)। উপরোক্ত আয়াতে সম্পদকে ‘যাকাত’ বলা হয়েছে এবং ‘যাকাত’ দেওয়ার জিনিস।
২. আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না (২:২৭৬)। উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে ‘সূদ, সদকা ও যাকাত অর্থের সাথে সম্পর্কিত।

১. আতা অর্থ দেওয়া। ইনফাক (নাফাকাহ) অর্থ ব্যয় করা।
২:৩ আয়াতে অর্থ ব্যয় করলে সফলকাম, ৩১:৪ আয়াতে যাকাত দিলে সফলকাম।
(ক) আলিফ-লাম-মীম, এ সে-ই কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নাই, মুত্তাকীদের জন্য এ পথ-নির্দেশ, যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে এবং তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তাতে যারা ঈমান আনে, তারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই তাদের রবের নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম (সূরা-২, বাকারা, আয়াত-১-৫)।

(খ) আলিফ-লাম-মীম, ‘এগুলো জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত, পথ-নির্দেশ ও দয়াস্বরূপ মুহসীনের (সৎকর্মপরায়ণদের) জন্য; যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, আর তারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী; তারাই তাদের রবের নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম (সূরা-৩১, লুকমান, আয়াত-২-৫।
উপরের ২:২-৫ আয়াতে সালাতের সাথে ব্যয় এবং ৩১:২-৫ আয়াতে সালাতের সাথে যাকাতের আমল করলে সফলকাম। আমরা কি রিযক থেকে ব্যয় না করে যাকাত (আত্মশুদ্ধি) করব? কিভাবে?

২. আতা অর্থ দেওয়া। ইনফাক (নাফাকাহ) অর্থ ব্যয় করা।
৮:৩ আয়াতে অর্থ ব্যয় করলে মু‘মিন, ৯:৭১ আয়াতে যাকাত দিলে মু‘মিন।
(ক) ‘মু’মিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহ্কে স্মরণ করা হয় এবং তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের রবের উপরই নির্ভর করে, যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মু’মিন। তাদের রবের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মান জনক রিয্ক (সূরা-৮, আনফাল, আয়াতঃ ২-৪)।

(খ) ‘মু‘মিন নর ও মু‘মিন নারী একে অপরের ওলী (বন্ধু) তারা সৎকার্যের নির্দেশ দেয়, অসৎকার্যে নিষেধ করে, ‘সালাতে কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে ….; আল্লাহ মু‘মিন নর ও মু‘মিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের— যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত যেথায় তারা স্থায়ী হবে এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বসস্থানের। আল্লাহর সন্তুষ্টিই শ্রেষ্ঠ এবং তা-ই মহাসাফল্য (সূরা-৯, তাওবা, আয়াতঃ ৭১-৭২)।
উপরের ৮:২-৫ আয়াতে সালাতের সাথে ব্যয় করলে মু’মিন এবং ৯:৭১-৭২ আয়াতে সালাতের সাথে যাকাতের আমল করলে মু’মিন ।

৩. আতা অর্থ দেওয়া। ইনফাক (নাফাকাহ) অর্থ ব্যয় করা।
১৩:২২-২৩ আয়াতে অর্থ ব্যয় করলে জান্নাত, ৪:১৬২ আয়াতে যাকাত দিলে পুরস্কার।

(ক) যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালোর দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, এদেরই জন্য শুভ পরিণাম—স্থায়ী জান্নাত (সূরা-১৩, রাদ, আয়াত: ২২-২৩)।

(খ) ‘তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা ও মু‘মিনগণ তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও ঈমান আনে এবং রীতিমত সালাত কায়েম করে, রীতিমত যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে, আমি তাদেরকেই মহা পুরস্কার দিব (সূরা-৪, নিসা, আয়াত-১৬২)।

উপরের ১৩:২২-২৩ আয়াতে সালাতের সাথে ব্যয় করলে জান্নাত এবং ৪:১৬২ আয়াতে সালাতের সাথে যাকাতের আমল করলে মহাপুরস্কার।

৪. আতা অর্থ দেওয়া। ইনফাক (নাফাকাহ) অর্থ ব্যয় করা।
১৪:৩১ ও ২:২৭৪ আয়াতে অর্থ ব্যয় করলে; আর ২:২৭৭ আয়াতে যাকাত দিলে ভয় নাই এবং তাদেরকে দুঃখিতও হতে হবে না।

(ক) আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মু’মিন তাদেরকে বল ‘সালাত কায়েম করতে এব আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে- সেই দিনের পূর্বে যেদিন কোন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না (সূরা-১৪, ইবরাহীম, আয়াত-৩১)।
যারা তাদের ধনৈশ্বর্য রাত্রে ও দিবসে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের পূণ্যফল তাদের রবের নিকট আছে, তাদের কোন ভয় নাই এবং তাদেরকে দুঃখিতও হতে হবে না (সূরা-২, বাকারা, আয়াত-২৭৪)।

(খ) যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের রবের নিকট আছে। তাদের কোন ভয় নাই এবং তাদেরকে দুঃখিতও হতে হবে না (সূরা-২, বাকারা, আয়াত-২৭৭)।

উপরের ১৪:৩১; ২:২৭৪ আয়াতে সালাতের সাথে ব্যয় এবং ২:২৭৭ আয়াতে সালাতের সাথে যাকাতের আমল করলে তাদের ভয়ও নাই এবং দুঃখিতও হতে হবে না।

আল্লাহ তাঁর কিতাবে ইনফাককে যাকাত বললে সমস্যা নাই। আমি ইনফাককে যাকাত বললে বললেই সমস্যা হবে কেন?

হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর সেই দিন আসার পূর্বে, যেই দিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না এবং কাফিররাই যালিম (সূরা-২, বাকারা, আয়াত-২৫৪)।
আল্লাহ কাফিরকে যালিম বললে সমস্যা নাই, আমি বললে সমস্যা হবে কেন?

আতা অর্থ দেওয়া। যেমন-
১. হক (ফসল) দেওয়া (৬:১৪১); হক আনে হবে কি?
২. রাজ্য দেওয়া (৪:৫৪); রাজ্য আনে হবে কি?
৩. যাকাত দেওয়া (৩০:৩৯); যাকাত (আত্মশুদ্ধি) আনে হবে কি?

আতা অর্থ দেওয়া। ‘যাকাত দেওয়া’, যেমন-
১. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (২:৪৩)।
২. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (২:৮৩)।
৩. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (২:১১০)।
৪. সালাত কায়েম করলে ও যাকাত দিলে (২:১৭৭)।
৫. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (২:২৭৭)।
৬. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (৪:৭৭)।
৭. রীতিমত সালাত কায়েম করে ও রিতীমত যাকাত দেয় (৪:১৬২)।
৮. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (৫:১২)।
৯. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (৫:৫৫)।
১০. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (৯:৫)।
১১. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (৯:১১)।
১২. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (৯:১৮)।
১৩. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (৯:৭১)।
১৪. সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে (২১:৭৩)।
১৫. সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দিবে (৯:১১)।
১৬. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (২২:৭৮)।
১৭. সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে (২৪:৩৭)।
১৮. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (২৪:৫৬)।
১৯. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (২৭:৩)।
২০. সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (৩১:৪)।
২১. সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দিবে (৩৩:৩৩)।
২২. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (৫৮:১৩)।
২৩. সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও (৭৩:২০)।

আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি এ কুরআন বহু বিষয় বার বার বিবৃত করেছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায় (১৭:৪১)।

আমি বঝেছি, সম্পদ (মাল) দিলে যাকাত (আত্মশুদ্ধি) হয় (৯২:১৮)।
উপরোক্ত আয়াতগুলো পড়ে আপনারা কি বুঝলেন?
যাকাত (মাল/সম্পদ) দিলে আত্মশুদ্ধি হবে, না যাকাত (সম্পদ/মাল) না দিলে আত্মশুদ্ধি হবে?