By nazamul biswas
রসুলের বিকল্প মান্যকর কিছু আছে কি?
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীনের ক্ষেত্রে উলামাগণকে কিংবা উলিল আমরগণকে কিংবা তাবলীগের আমিরগণকে কিংবা পীরগণকে আনুগত্য করলে সেই আনুগত্য রসূলের হবে এমন কোনো আয়াত পবিত্র কোরআনে নেই। তাছাড়া উলামা, উলিল আমর, আমির, পীর এই নামগুলো রসূলের গুণবাচক নাম এমন উল্লেখ পবিত্র কোরআনে নেই। এজন্য কোনো অবস্থায় ঐ উলামাগণ কিংবা উলিল আমরগণ কিংবা তাবলীগের আমিরগণ কিংবা পীরগণ রসূলের বিকল্প নয়। কারণ দ্বীনের ক্ষেত্রে রসূল ব্যতীত ৩য় কোন ব্যক্তির আনুগত্য করার কথা কোথাও উল্লেখ নেই। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমার আল্লাহ বিশ্বাস কর ও রসূল বিশ্বাস কর, বলো না তিন। (সূরা নেছা-১৭১)। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তোমরা রসূলের আনুগত্য করবে, এজন্য আমি রসূলই পাঠাই (নেছা, ৬৪ আয়াত)। এই আয়াতে প্রমাণ হয় যে, রসূলের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয় নি।
আল্লাহ বলেন, দ্বীনের বিষয় সকল কিছু একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। (সূরা যুমার : ৩) রসূলের আনুগত্য করলে সে আনুগত্য আল্লাহর হয়। (সূরা নেসা : ৮০) তাই রসূলের আনুগত্য করলে সে আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে গণ্য হয়। রসূল ব্যতীত দ্বীনের ক্ষেত্রে অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য করলে শেরেক হবে। এই জন্য যে, রসূল ব্যতীত তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আনুগত্য করলে সে আনুগত্য রসূলের হবে এমন কোনো আয়াত কোরআনে নেই। এই জন্য আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহ বিশ্বাস কর ও রসূল বিশ্বাস কর। বলিও না তিন। (সূরা নেসা : ১৭১)
যারা তিন পন্থী তারা বলে, আল্লাহ তো তিনের মধ্যে একজন। (সূরা মায়েদা: ৭৩) অতএব দ্বীনের ক্ষেত্রে একমাত্র রসূল ব্যতীত তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আনুগত্য করলে সেটা শেরেকে গণ্য হবে এটা নিশ্চিত। অনেকেই দ্বীনের ক্ষেত্রে তাদের দলের আমিরগণের আনুগত্য করে থাকে। যেহেতু আমিরগণকে তারা রসূল জ্ঞান করে না। তাহলে দ্বীনের ক্ষেত্রে তাদের আমিরগণের আনুগত্য করলে সেটা শেরেকে গণ্য হবে। আবার যারা উলামাগণকে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করে থাকে। যেহেতু তারা উলামাগণকে রসূল জ্ঞান করে না। সেহেতু একই যুক্তিতে উলামাগণকে বা আলেমগণকে বা দলের আমিরগণকে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করে তারাও শেরেকে গণ্য। আবার যারা মসজিদের বেতনভুক্ত ইমামগণকে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করে। যেহেতু মসজিদের ইমামগণকে তারা রসূল জ্ঞান করে না সেহেতু সেই একই যুক্তিতে ঐসকল ইমামগণের দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করাও শেরেকে গণ্য। আবার যারা দ্বীনের ক্ষেত্রে পীরগণকে আনুগত্য করে থাকে। যেহেতু তাদের পীরগণকে তারা রসূল হিসেবে বিশ্বাস করে না বিধায় সেই সকল তিনপন্থী পীরপন্থীগণও শেরেকে গণ্য। (বি.দ্র. তিনপন্থী পীরপন্থী শেরেকে গণ্য অধ্যায়ে বিস্তারিত দেখুন)। আবার যারা আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা কল্পনা বা অনুমান করে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা, কল্পনা ও অনুমান মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। (সূরা ইউনুস : ৩৬) এটা এই জন্য গ্রহণযোগ্য নয় যে, আপনি আল্লাহকে যেমনটি ধারণা করেন কিংবা যেমনটি অনুমান করেন আল্লাহ তো তেমনটি নহেন বিধায় আল্লাহ সম্পর্কে আপনার মস্তিষ্কের এই কাল্পনিক মূর্তিটি আল্লাহ সম্পর্কে একটি মেসেলে গণ্য হয়। আর আল্লাহ সম্পর্কে কোনো মেসেল দেওয়া যাবে না। (সূরা নহল : ৭৪) ফলে যারা আল্লাহর কাল্পনিক মূর্তি মস্তিষ্কে রেখে আল্লাহকে সেজদা করে সেটাও কোরআন মাফিক নয়। আবার যারা আল্লাহকে অনুমানের উপর বিশ্বাস করে কাবা ঘরে হজ করতে যান তাদের মস্তিষ্কে কাবা ঘরের ছবি সেজদার সময় স্থির হয়ে যায় কিংবা যারা কাবা ঘরের ছবিকে কল্পনায় এনে সেখানে সেজদা করে তাদের সেজদাও শেরেক হয়। কারণ আল্লাহ ছাড়া সেজদা হারাম। (সূরা জিন : ১৮) এই জন্য ওয়াসজুদুলি হেরেম শরিফ কিংবা ওয়াসজুদুলি মাকামে ইবরাহিম কিংবা ওয়াসজুদুলি বায়তুল্লাহ। অর্থাৎ তোমরা কাবা ঘরকে সেজদা কর কিংবা তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে সেজদা কর, কিংবা তোমরা আল্লাহর ঘরকে সেজদা কর এমন আয়াত কোরআনে আসেনি। তবে আয়াতে এসেছে আত্তাখাযু মিন মাকামে ইবরাহিম মু-উছাল্লি। (সূরা বাকারা : ১২৫) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে উছাল্লি আদায় করার স্থান হিসেবে সাব্যস্ত কর। এখানে উল্লেখ্য যে, উছাল্লি আর সেজদা একশব্দ নয়। কারণ সেজদা হচ্ছে উপাসনামূলক শব্দ। আর উছাল্লি হচ্ছে প্রশংসামূলক শব্দ। কারণ আল্লাহ বান্দার জন্য উছাল্লি কামনা করে। (সূরা যুখরুফ : ৪৩) [বি.দ্র. এই পুস্তকের ২৪ নং অধ্যায়টি বিস্তারিত দেখুন] এই আয়াত অনুসারে মাকামে ইবরাহিমকে প্রভুর প্রশংসা গুণকীর্তন করার স্থান হিসেবে সাব্যস্ত করতে বলা হয়েছে। তবে সেটা সেজদার লক্ষ্যবস্তু নয়। এ জন্য যারা কাবা ঘরের ছবিকে সেজদার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে অন্তরে স্থির করে সেজদা করে তারাও শেরেকে গণ্য। আর এই ধরনের শেরেকযুক্ত মুশরিকদেরকে কাবা ঘরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ ঘোষণা করেন যে, মুশরিক (হাজী)দের দায় আল্লাহ নেবেন না কিংবা রসূলও তাদের দায়ভার নেবেন না। (সূরা তওবা : ৩) আবার যারা আল্লাহর সাথে অন্যদের নাম ডাকে তারাও শেরেকে গণ্য। কারণ আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেক না। (সূরা জিন : ১৮) বর্তমানে এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা কোনো মূর্তিপূজা করে না আবার কোনো দেবদেবীর উপাসনাও করে না। উহারা কেবল আল্লাহকেই প্রভু বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু উহারা আল্লাহর সাথে মূসা (আ.) কিংবা ঈসা (আ.) কিংবা বিগত রসূলগণের নাম জপনা করে। সূরা জিনের ১৮ নং আয়াত অনুসারে তারাও শেরেকে গণ্য। যখন তাদের বলা হলো, তোমরা (শেরেক পথ পরিহার করে) পরিপূর্ণভাবে আল্লাহতে আত্মসমর্পণ কর। (সূরা বাকারা : ২০৮) কারণ আল্লাহতে আত্মসমর্পণ করাই আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। (সূরা ইমরান : ৮৫) তখন তারা বলল, আমরা তো আমাদের দ্বীনেই আছি। তখন তাদেরকে বলা হল, তোমরা যে আল্লাহর সাথে তোমাদের রসূল ঈসা আ. ও মূসা (আ.) কিংবা বিগত রসূলগণের নাম জপনা করছ। ফলে তোমরা আল্লাহর সাথে তোমাদের রসূলের নাম জপনা করে শেরেকে গণ্য হচ্ছ। কিন্তু আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেক না। (সূরা জিন : ১৮) তখন তারা বলল, এই যুক্তিতে আল্লাহর সাথে আমাদের রসূলের নাম জপনা করলে যদি শেরেক হয় তাহলে তোমরা যখন আল্লাহর সাথে তোমাদের রসূলের নাম ডাক তাহলে তো তোমরাও আমাদের মতো শেরেকে গণ্য। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, কুল ইন্নানী বারিউন মিম্মা তুশরিকা। বল, তোমাদের মতো শেরেক থেকে আমি মুক্ত। (সূরা আনাম : ১৯) তখন তারা বলল, তোমাদেরটা কিভাবে শেরেক মুক্ত হয়? আমরা রসূল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব না করে আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বাস করে অর্থাৎ সূরা আল-ফাতহ-এর ১০নং আয়াত অনুসারে রসূলের হাতই আল্লাহর হাত বিশ্বাস করি এ জন্য আমাদেরটা শেরেকমুক্ত। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, আল্লাযিনা ইয়াকফুরুনা বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি ওয়া উরিদুনা আইয়ু র্ফারিকু বায়নাল্লাহা ওয়া রুসুলিহি (অর্থাৎ উহারাই আল্লাহ ও রসুল অস্বীকারকারী যাহারা ইচ্ছাকৃতভাবে রসুল থেকে আল্লাহকে ফারাক করে অর্থাৎ রসুল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে বা ফবংঃবহপব করে অর্থাৎ পৃথক করে বা দূরত্ব করে (সূরা নেসা : ১৫০) অর্থাৎ এই আয়াত অনুসারে যারা রসূল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে উহারাই আল্লাহ ও রসূল অস্বীকারকারী কাফের। পক্ষান্তরে যারা রসূল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে না উহারাই মোমিন। এই মর্মে আল্লা আরো বলেন, ওয়া য়াল্লাজিনা আমানুবিল্লাহি ওয়া রসুলিহি ওয়া লাম উফারিরকু বায় আহাদা মিনহুম, উলাইকা সাওফা উতিহিম উযুরাহুম-বরং যারা আল্লার রসুল বিশ্বাস করে এবং উহাদের মধ্যে কোনো ফারাক করে না। অর্থাৎ রসুল থেকে আল্লাহকে ংবঢ়ধৎবঃব করে না বা ফবংঃবহপব) করে না অর্থাৎ পৃথক করে না বা দূরত্ব করে না। উহাদের জন্য রহিয়াছে পুরস্কার (সুরা নেসা আয়াত-১৫২)। এখানে উল্লেখ যে, এই আয়াত দিয়েই অনেকেই প্রমাণ করতে চায় যে, আল্লাহর রসুলের মধ্যে কোন ফরভবৎবহঃ বা পার্থক্য নেই। কিন্তু তাদের কথা ঠিক নহে কারণ আল্লাহ ও রসূলের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। রসুল হচ্ছে সৃষ্ট আল্লাহ হচ্ছে শ্রষ্ঠা। রসুলের জন্ম-মৃত্যু আছে পক্ষান্তরে আল্লাহর জন্ম-মৃত্যু নেই। রসুলের সাথে আল্লাহ আছে। অর্থাৎ রসূল হচ্ছে আল্লাহর সংশ্লিষ্ট। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া রসূল চলতে পারে না পক্ষান্তরে আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নহে আল্লাহ একক। তবে এই আয়াতের উদ্দেশ্য হবে রসুলের সাথে আল্লাহ আছে বিধায় রসুল থেকে আল্লাহকে পৃথক না করে অর্থাৎ ংবঢ়ধৎবঃব না করে আল্লাহ ও রসুল বিশ্বাস করা। আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বাস করা। রসূলের হাতই আল্লাহর হাত (সূরা আল-ফাতহ-১০) অর্থাৎ রসূল সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করে সেজদা দিলে রসূল সুরতে, স্বপ্নে আল্লাহর দর্শন হয়। কারণ ইবলিশ যেহেতু আদম সেজদার সামিল হয় না (সূরা হিজর-৩৩) সেহেতু স্বপ্নে আদম সেজদাকারীর চেহারায় ইবলিশ আসে না। তখন কিন্তু রসূল সুরতে স্বপ্নে, রসূলও আসে নাই ইবলিশও আসে নাই। রসূল সুরতে স্বপ্নে স্বয়ং আল্লাহই আসে। এ মর্মে লালন সাইজি তাঁর গানের ভাষায় বলেছে-যিনি মুর্শিদ/গুরু তিনি রসুল, ইহাতে নাই কোনো ভুল। খোদাও সে হয়, এ কথা বলে না লালন কোরানে কয়। এবার এই মর্মে আল্লাহ বলেন তোমরা যখন রসূলের কাছে যাবে তখন তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমনটি থাকবে যে আমরা তো আল্লাহর কাছেই গেলাম। যখন তোমরা রসূলের কাছে বায়াত গ্রহণ করবে তখন তো আল্লাহর কাছেই বায়াত গ্রহণ করলে। (সূরা ফাতহ : ১০) কারণ তাদের হাতের উপরই আল্লাহর হাত। (সূরা ফাতহ : ১০) আর এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন আমি তোমাদের সাথে আছি। (সূরা হাদিদ : ৪)। আল্লাহ তো রসূলের ভেতরই সক্রিয় আছেন। (সূরা আনফাল : ১৭) আল্লাহ মানুষের গর্দানের শাহ রগ অপেক্ষাও নিকটে। (সূরা কাফ : ১৬) (বি. দ্র. একত্ববাদের দ্বীন অধ্যায় ও আল্লাহর অবস্থান সর্বত্রই অধ্যায় বিস্তারিত দেখুন) আল্লাহ মানুষের অতি নিকটে (সুরা বাকারা-১৮৫) যিনি মুর্শিদ/গুরু তিনি রসুল। (বি.দ্র.এই মর্মে সম্যকগুরুই রসুল অধ্যায় বিস্তারিত দেখুন।) অতএব রসূল থেকে আল্লাহকে ফারাক না করে রসূল সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করাই একত্মবাদে দ্বীন। এখানে উল্লেখ্য যে, ফারাক শব্দ অর্থ পৃথক করা। (আরবী অভিধান পৃ. নং ১৮৭৯) আর পৃথক শব্দের ইংরেজি হচ্ছে ঝবঢ়ধৎধঃব। (ইংরেজি অভিধান পৃ. নং ৭০৩) যেটার অর্থ উরংঃধহপব বা দূরত্ব করা বুঝায়। অর্থাৎ সূরা নেসার ১৫০ নং আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে রসূল থেকে আল্লাহ ঝবঢ়ধৎধঃব বা উরংঃধহপব না করে বিশ্বাস করা। বরং রসূলের হাত আল্লাহর হাত বিশ্বাস করে রসূলের মধ্যে ব্যক্তি রসূলকে বিলীন করে সেই সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করে সেখানে আল্লাহকে বর্তমান জেনে সেজদা করা হয়। এটাই হচ্ছে রসূলের মাধ্যমে ঈমান পরীক্ষা করা। (সূরা ফুরকান : ২০) উপরোক্ত আলোচনায় দেখা গেলো যারা রসুল থেকে আল্লাহকে ফারাক করে বা ঝবঢ়ধৎধঃব (পৃথক) করে উহারা সুরা নেসার ১৫০নং আয়াত অনুসারে আল্লাহ ও রসুলকে অস্বীকারকারী বলে গণ্য। তাই উহারা যখনই রসুল থেকে আল্লাহকে ঝবঢ়ধৎধঃব বা পৃথক করে তখনই উহারা আল্লাহর সাথে রসুলের নাম জপনা করে। ফলে উহারা সুরা জিনের ১৮নং আয়াত অমান্যকারী বলে গণ্য হয়। (কারণ এই আয়াতে বলা হয়েছে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না।) রসূলের সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করা এটাই ঈমানের একটা পরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় লেবাসধারী মোমিনগণও আক্রান্ত হয়। এই পরীক্ষা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এমন একটি কঠিন পরীক্ষা করা হবে যে পরীক্ষায় শুধু জালেমরাই আক্রান্ত হবে না। (সূরা আনফাল : ২৫) এইভাবে আমরা রসূল সুরতে আল্লাহ বিশ্বাস করছি বিধায় আমাদেরটা শেরেকমুক্ত। কারণ রসূলের মধ্যে রসূলকে বিলীন করে সেখানে যে আল্লাহর অবস্থান আছে। রসূল সুরতে সেই আল্লাহকেই সেজদা করছি। রসূলকে করছি না। বা আল্লাহর সাথে রসূলকে ডাকছি না। আর এটা আমাদের পক্ষে এইজন্য সম্ভব হচ্ছে যে, সম্যকগুরুই আমাদের রসূল। কাজেই আমাদের রসূল তো বর্তমান বা উপস্থিত আছে। যেহেতু তোমরা তো মুসা (আ.)কে কিংবা ঈসা (আ.)কে কিংবা অনুপস্থিত রসূলগণকে রসূল হিসাবে বিশ্বাস কর। কিন্তু বর্তমান সম্যক গুরুকে রসূল হিসাবে বিশ্বাস কর না। আর তোমাদের রসূল তো বর্তমানে নেই। তাহারা অনুপস্থিত। এইজন্য তোমরা রসূলের হাতের স্পর্শ লাভ করতে পারছ না বিধায় তোমাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে রসূলের নাম ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফলে তোমরা আল্লাহর সাথে রসূলের নাম জপনা করে সূরা জিনের ১৮ নং আয়াতের পরিপন্থী গণ্য। তাই সম্যকগুরুকে রসূল বিশ্বাস করেই সেখানে বায়আত গ্রহণের মাধ্যমে একত্মবাদের দ্বীনের পৌঁছানোই একমাত্র উপায়। তাই এই রসূলের কোনো বিকল্প নেই। এইজন্য সম্যকগুরুকে রসূল বিশ্বাস করে সেই রসূল সুরতে আল্লাহকে সেজদা করা শেরেক মুক্তির একমাত্র পথ। এই পথে না এসে যারা ঈসা (আ.)কে কিংবা মুসা (আ.)কে কিংবা অনুপস্থিত রসূলগণকে রসূল হিসাবে বিশ্বাস করে আল্লাহর সাথে ঈসা (আ.) ও মুসা (আ.) কিংবা অনুপস্থিত রসূলের নাম জপনা করে তারা শেরেকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, শেরেক করলে কর্ম নিষ্ফল হয়। (সূরা যুমার : ৬৫) শেরেক সবচেয়ে বড় জুলুম। (সূরা লোকমান : ১৩) শেরেক করলে ঈমান কলুষিত হয়। তাই আল্লাহ বলেন, তোমাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করো না। (সূরা আনাম : ৮২) শেরেকের অপরাধ কখনোই ক্ষমা করা হবে না। (সূরা নেসা : ৪৮)
আর যারা সম্যকগুরুকে রসূল বিশ্বাস করে তার সঙ্গ ধারণ করে একত্মবাদের দ্বীনে পৌঁছলো তারা শেরেক থেকে মুক্তি পাবে এই জন্য যে, সম্যকগুরুই রসূল। [বি.দ্র. সম্যকগুরু রসূল অধ্যায় বিস্তারিত দেখুন] আর রসূলের আনুগত্য করলে সে আনুগত্য আল্লাহর হয়। (সূরা নেসা : ৮০) এজন্য সম্যকগুরুকে রসূল বিশ্বাস করে তার আনুগত্যকারীগণ শেরেকমুক্ত। আর যারা সম্যকগুরুকে রসূল বিশ্বাস না করে অনুপস্থিত রসূলগণকে বিশ্বাস করে সম্যকগুরুকে তথা এই রসূলের সঙ্গ ধারণ না করে মারা গেল তখন তারা আফসোস করে বলবে, হায় আমরা যদি রসূলের সঙ্গ ধারণ করতাম! (সূরা ফুরকান : ২৭) দ্বীনের ক্ষেত্রে রসূলের কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ রসূর ব্যতীত শেরেক মুক্তির কোন উপায় নেই।