সিয়াম ও সাওম শব্দের সঠিক বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন: (পর্ব-১)

🔥🔒😇 সিয়াম ও সাওম শব্দের সঠিক বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন: (পর্ব-১)

🌹🌹বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম🌹🌹

🤔 বর্তমানে ইসলামের নামে প্রচলিত একটি বিধান সিয়াম বা সাওম (প্রচলিত পার্শিয়ান ও প্যাগান অর্চনা রোজা) এর স্বরূপ অনুধাবনের ক্ষেত্রে লেজেগোবরে অবস্থা বিরাজমান। কেউ দিনে, কেউ রাতে, কেউ একদিন আগে, কেউ একদিন পরে, কেউ 1 দিন, কেউ 10 দিন, কেউ 30 দিন, কেউ সারাবছর প্রত্যকদিন, কেউ 3 ঘন্টা, কেউ 21 ঘন্টা, কেউ বসন্তে, কেউ গ্রীষ্মে, কেউ রমাদানে, কেউ এপ্রিলে, কেউ আগস্টে, কেউ ২১ মার্চ বা ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে (কারণ পৃথিবীতে সবস্থানে দিবারাত্রি সমান) সিয়াম পালন করে বা করতে চায়। সত্যিই, কোরআন নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকা বাঘা বাঘা শিক্ষিত লোকদেরও “সিয়াম” নিয়ে এমন নানামুখী সাংঘর্ষিক ও বিপরীতমুখী উপলব্ধি সমাজে মারাত্মক বিভ্রান্তির উন্মেষ ঘটিয়েছে বলেই এই সামান্য লেখার প্রয়াস।

🔓”সাওম” (صوم) ও “সিয়াম” (صِّيَام) উভয় শব্দই একবচন। “সিয়াম” শব্দটি “সাওম” এর বহুবচন বলা হলেও, তা যে ইচ্ছাকৃত ভুল প্রচারণা, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পৃথিবীর সমস্ত অনুবাদে “সিয়াম” (2:183) এর অর্থ Fasting or Fast লেখা হয়েছে, FASTS লেখা হয় নাই, যদিও fast, fasting এই অর্থ সম্পূর্ণ ভুল।

♦️ প্রকৃতপক্ষে, “সাওম” (صوم) ও “সিয়াম” (صِّيَام) উভয় শব্দের আদি মূল (Prime Root) হচ্ছে (صم), আর ত্রিআক্ষরিক মূল (Triliteral Root) হচ্ছে (صمم) যার অর্থ “বধির করা/deafen, কারো কথা না শুনা/not listen to someone, অবিচল থাকা/remain steadfast/unwavering/persistent/firm/dedicated, সংকল্পবদ্ধ/অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া/be determined, be committed, কোন কিছুর পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়ানো/সমর্থন করা/বিরোধিতা করা stand up for or towards (support) or against (oppose) someone or something, নিয়ত করা/intend, সিদ্ধান্ত নেয়া/decide, কোন কিছু শেখানো/make something learn, মনস্থির করা/make up one’s mind ইত্যাদি

🎙️প্রসঙ্গতঃ “সাওম” (صوم) একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন শব্দ, অথচ “সাওম” শব্দের মূল (Root) হিসেবে একই “সাওম” (صوم) কে ইচ্ছাকৃত ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারণ আরবিতে মূলের ভিতরে বা শেষে কোথাও Vowel (আলিফ, ওয়াও বা ইয়া) থাকতে পারবে না। যেহেতু আরবি SEMITIC বা CONSONANTAL বা ব্যঞ্জনবর্ণবিশিষ্ট ভাষা। অথচ, “সাওম” স্বরবর্ণ “ওয়াও” সহ একটি পূর্ণাঙ্গ শব্দ।

অনুরূপভাবে, সলাতের বানোয়াট (Fabricated) মূল “সলু” প্রচার করা হয়েছে অথচ হবে “সল”, “ক্বওম” হবে “ক্বম” এভাবে… বহু বানোয়াট মূলের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।

🔶 মূলতঃ “সাওম” (صوم) হচ্ছে আদিমূল “সম” (صم) এর Product অর্থাৎ সাওম (صوم) হচ্ছে সম (صم) এর “State of Action” of verb/ কর্মে পরিণতকরণকে/বাস্তবায়নকে বোঝায়। তাহলে, এর অর্থ দাঁড়ায় “কারো কোন কথা না শুনে সংকল্পবদ্ধ থাকা/অবিচল থাকা”/Observing/Complying DETERMINATION/Being DETERMINED without listening to anyone ইত্যাদি।

🔷আর, “সিয়াম” (صِّيَام) শব্দটির মধ্যে থাকা স্বরবর্ণ “ইয়া” এটিকে আদিমূল “সম” (صم) এর gerund/an state of continuous action of verb কে বোঝায়; এক্ষেত্রে, Determining, Deafening etc. আর, “ইয়া” এর সাথে থাকা “আলিফ” সিয়ামকে active participle/an agent/a performer/a noun of continuous application of verb কে বুঝায়, এক্ষেত্রে Sb or sth Determined, Unwavering, Steadfast, Fixed etc.

🔑 যাই হোক, আরবিতে শব্দের ভিন্ন ভিন্ন রূপ (Adjective, verb, noun ইত্যাদি) পেতে এবং নতুন নতুন শব্দের প্রয়োজনে আপনাকে অবশ্যই উপরে প্রদত্ত মূলের (Root) অর্থগুলো থেকেই নিতে হবে, ঐ অর্থগুলোর সাথেই সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে।

😲 সিয়াম বা সাওম – রোজা (fast/fasting) অর্থে কোন বিধান নয় – খাওয়া, পান করা বা সেক্স থেকে বিরত থাকার। এটি তো সাবিয়ান, আরব পৌত্তলিক, এবং সাবিয়ানদের মধ্যে হাররারিয়ান নামের একটি আরবে বসবাস করা গ্রুপ এর চর্চা (যাদেরকে হানিফ বা আহনাফ বলে ডাকা হতো, উম্মুল খাদিজা নাকি(?) সেই গোত্রেরই মেয়ে), যারা মাসব্যাপী রোজা রাখত আর বাঁকা চাঁদ দেখে সেই রোজা শেষ করত এবং মাসব্যাপী রোজা শেষে উৎসব পালন করত।

🔓 মূলতঃ “সিয়াম” হচ্ছে দৃঢ়তা বা অবিচলতা (FIRMNESS/STEADFASTNESS)- হতে পারে কোন কিছু থেকে বিরত থাকা, গ্রহণ করা বা তা বাস্তবায়ন করা। “সিয়াম” মানেই “বিরত থাকা, সংযমী হওয়া” (Abstain/Restrain) এই অর্থ ধরার কারণেই এত বিপত্তি। আমি এটা করতে দৃঢ়সংকল্প/দৃঢ়প্রতিজ্ঞ/অঙ্গীকারবদ্ধ। অথবা, আমি এটা করবো না, বা এটা থেকে বিরত থাকবো – এ ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প। এখন, কোন ব্যাপারে কাউকে অবিচল/অটল থাকতে হবে – কোন কিছু গ্রহণের ব্যাপারে নাকি বিরত থাকার ব্যাপারে – তা সংশ্লিষ্ট আলোচনা/প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বুঝতে হবে।

🕋 কুরআন প্রকৃতপক্ষে ধর্মের নামে সমস্ত অর্চনার (Rituals) বিরুদ্ধে। আর, সে বিবরণ “কুরআন” শব্দটার মধ্যেই ব্যাখ্যাকৃত, যা অন্যদিন লিখব। প্রকৃতপক্ষে, কোরআন যে নিজেই নিজের ব্যাখ্যা, তা মূলতঃ কুরআনের “শব্দ, বাক্যের গঠন ও বিন্যাস (Syntax of Grammar) এবং প্রেক্ষাপটের (Context) মধ্যেই বিদ্যমান” (73:4)। বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

আল কোরআন অধ্যায়ন রীতিঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=147883064438047&id=100076490634616

🔑 এককথায়, সিয়াম হচ্ছে “কারো কোনো কথা না শুনে কোন কিছু করার জন্য অটল থাকা।” (To be DETERMINED or STEADFAST). 2:183 নম্বর আয়াতে আসা “সিয়াম” কথাটি আসলে 2:180 নম্বর আয়াতের ধারাবাহিকতা মাত্র। মনোযোগ নিবদ্ধ করলে দেখা যায় –

♥️ 2:180 নম্বর আয়াত মূলত “মৃত্যুকালীন ওসীয়াত/ইচ্ছাপত্র” (Death Bequest/Will) সংক্রান্ত নির্দেশ।

💜 2:181 নম্বর আয়াতে এই ওসীয়তনামায় কোন পরিবর্তনের (Alteration) ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ (ইছমুন/Punishable Offense).

💙 2:182 নম্বর আয়াতে উপরিউক্ত ওসীয়তকৃত সম্পত্তির অংশ (মুসী) পরিবর্তনকে সম্পূর্ণরূপে ঠিক করে (আসলহা) নিতে বলা হয়েছে।

💚 অতঃপর 2:183 নম্বর আয়াতে সম্পত্তির ব্যাপারে যে ওসিয়াত রয়েছে, তা পরিপালনে “দৃঢ়সংকল্প/অবিচল/অটল” (DETERMINED/STEADFAST) থাকার ব্যাপারটি আলোচিত হয়েছে।

💎 2:183 নম্বর আয়াতের অনুবাদ:
“ওহে, তোমরা যারা স্বীকার করেছো/আনুগত্যের শপথ নিয়েছো/বিশ্বাস করেছো, (ওসীয়াতের ব্যাপারে) তোমাদের উপরে “অবিচল/দৃঢ়প্রতিজ্ঞ/দৃঢ়সংকল্প/অটল থাকার” বিষয়টি কিতাবস্হ করা হলো, যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রেও কিতাবস্হ করা হয়েছিল তোমাদের মধ্যে যারা সাধনাকারী (যারা খাঁটি/যারা ঈমানদারদের মধ্যে পাক্কা/অন্বেষী/অনুসারী/অনুবর্তী/অধ্যবসায়ী) তাদের সঠিকতা যাচাই করতে।
(O you who have admitted/have taken oath of allegiance/have adhered/have acknowledged/have faith, (Regarding Will) Booked on you remaining Determined/Steadfast/Firm just like it was booked on those who were before you to justify the pursuants from you.

অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, রোজা (পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত থাকা) কুরআন বহির্ভূত Concept যা ওসীয়াতের আয়াতকে বিবেচনায় না নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেে রূপদান করা হয়েছে। কুরআনের প্রেক্ষাপটে যারা (ওসীয়াত সহ) আল্লাহর যেকোন বিধিবিধান পরিপালনে বদ্ধপরিকর/অবিচল/অটল/দৃঢ়চেতা/দৃঢ়সংকল্প/নাছোড়বান্দা, মূলতঃ তারাই সায়িম; তথাকথিত রোজাদার নয়। সুতরাং এ যাবৎকাল এর পক্ষে-বিপক্ষে করা সমস্ত গবেষণা-ই ZERO. আর, ইফতার সন্ধ্যায় না রাতে, এ প্রশ্ন আরো অবান্তর!!!

Sourse

Siam is not fasting bn

সিয়াম

সাধারণসিয়াম (২ঃ১৮০-১৮৪)

স্পেশালসিয়াম (২ঃ১৮৫-১৮৭)

২ঃ১৮০-২ঃ১৯১ পর্যন্ত সঠিক অনুবাদঃ পুরো কনটেক্সট পড়লে সিয়ামের বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

২ঃ১৮০ “তোমাদের জন্য আদেশপত্র জারি হয়েছে যে (কুতিবা) যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুর কাছাকাছি পর্যায়ে আসে, তখন সে যেন ভালোভাবে (খাইরান) সম্পদবন্টনের দলিল (ওয়াসিয়াত) তৈরি করে রেখে যায় তার পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়ের জন্য ন্যায্য উপায়ে (বিল মারুফি)- ইহা আল্লাহ সচেতন/সংযোগস্থাপনকারী (মু্ত্তাকি) দের জন্য একটি অবশ্য কর্তব্য।”

২ঃ১৮১ “অতঃপর যে এই সম্পদবন্টনের দলিল (ওয়াসিয়াত) পরিবর্তন করবে, তা শোনার পর- সেই পাপের ভাগীদার হবে যে তা পরিবর্তন করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন এবং জানেন।”

২ঃ১৮২ “কিন্তু কেউ যদি আশংকা করে যে দলিললেখক (মুছছি) কোনো ভুল করতে পারে এবং সে যদি দলিললেখকের ভুল সংশোধন করে ভারসাম্য করে (আসলাহা) দেয় নিজেদের মধ্যে, তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং করুণাময়।”

২ঃ১৮৩- “হে যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের জন্য সিয়ামের আদেশপত্র জারি (কুতিবা) হয়েছে যেমনটা জারি হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের প্রতি যাতে তোমরা সুরক্ষিত/সংযোগ স্থাপিত/খাঁটি মানুষ (মুত্তাকি) হতে পারো।”

২ঃ১৮৪ “সময়কালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ভ্রমণে থাকে অথবা অসুস্হ থাকে তাহলে অন্য সময়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করো। এবং কেউ যদি ফিদয়া/ক্ষতিপূরণ প্রদানের সামর্থ্য রাখে, তাহলে সে একজনকে খাদ্য প্রদান করবে। কেউ যদি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কিছু করে, তা তার জন্য ভালো। কিন্তু সিয়াম পালন সর্বোত্তম যদি তোমরা জানতে।

—————————
ব্যক্তিগত অভিমতঃ এ ধরনের সিয়াম অতীত পূর্বপুরুষদের জন্যও আদেশ হয়েছিল যখন কেউ কোনো পাপ/অপরাধ করে ফেলে। সিয়াম হলো নিজেদের ভুল সংশোধনের একটি উপায় যাতে আমরা মুত্তাকি/খাঁটি মানুষ হতে পারি যা আল্লাহর খলিফা/প্রতিনিধি হবার পূর্বশর্ত।

যেমন ২ঃ১৮৪ এর আগের আয়াতগুলোর প্রসংগে উইল পরিবর্তন এক ধরনের পাপ/অপরাধ। সেকারণে এ পাপ করলে কেউ যেন স্বেচ্ছায় কিছু সময়কালের জন্য সিয়াম পালন করে। যদি কেউ ভ্রমণে থাকে বা অসুস্হ হয়, তাহলেও সে যেন অন্য সময়ে এই সিয়াম পালন করে নেয়।

এই সিয়ামের বদলে বিকল্প হিসাবে আর্থিক ক্ষতিপূরন (ফিদয়া) এর ব্যবস্হাও আল্লাহ রেখেছেন আর তা হলো কোনো গরীবকে খাওয়ানো (২ঃ১৮০-১৮৪)

সিয়ামের পরিবর্তে এধরণের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে ৫ঃ৯৫, ৪ঃ৯২ ইত্যাদি আয়াতে বিভিন্ন পাপের জন্য (অন্য মুমিনের সাথে লড়াই করা বা শপথ ভঙ্গ করা ইত্যাদি)।

এখন প্রশ্ন হলো সিয়ামটা আসলে কি এবং কিভাবে সেটা পালন করা যায়?

এর উত্তর আছে ১৯ঃ২৬ এ যেখানে মরিয়মকে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন

“অতঃপর ভক্ষণ করো/গ্রাস করো (কুল) এবং পান করো/আত্মস্হ করো (ওয়া আশরাবু) এবং দৃষ্টি শীতল করো। এবং মানুষের সাথে যদি দেখা হয়, তাহলে বলো আমি আজ আল্লাহর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সিয়াম পালনের, অতঃপর আজকে আমি কারো সাথে কথা বলবো না।”

অর্থাৎ সিয়ামের সংজ্ঞা হলো “কথা বলা থেকে বিরত থাকা এবং নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আত্মউপলব্ধি/গবেষণা বা সংশোধন করা।”

প্রশ্ন হলো নিজেকে গুটিয়ে ফেললে বা কারো সাথে কথা না বললে তা আমাদের মুত্তাকি বা খাঁটি মানুষ কিভাবে বানায়? উত্তর হলো এটি আমাদের সময় ও সুযোগ দেয় যে পাপ করেছি সেটা নিয়ে আত্মসমালোচনা করে পরিশুদ্ধ হবার। সিয়ামটা মুমিনদের জন্য জারি হয়েছে (২ঃ১৮৩)। একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো তা সৎভাবে এবং যথাযথভাবে পূর্ণ করা। এ ধরনের সিয়াম পালনের সময় কারো সাথে দিনে রাতে কখনোই কথা বলা যাবে না।

এবার আমরা পরের আয়াতগুলো দেখবো যেখানে একটু “ভিন্ন রকম সিয়ামের” দেখা পাই।

——————————

২ঃ১৮৫ “ সুপরিচিত তীব্র উত্তপ্ত/অস্থির/খারাপ সময়ে (শাহরু রামাদান) কুরান প্রচারের আদেশ হয়েছিল (উনজিলা) যা সমগ্র মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক (হুদা) এবং সুস্পষ্ট প্রমান (বাইতুনাতিন) পথ প্রদর্শনের (মিন আল হুদা) এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী (আল ফুরকান)। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারাই প্রত্যক্ষদর্শী (ফামান শাহিদা মিনকুম) এ সুপরিচিত অস্থির সময়ের (আল-শাহর) সে যেন তা (অস্থিরতাকে) বিরত/প্রতিহত করে (ফালিয়াসমুহু) এবং কেউ যদি অসুস্থ অথবা ভ্রমণে থাকে সে যেন অন্য সময়কাল হতে (মিন আয়ামিন উখারা) প্রস্তুতি গ্রহণ করে (ফা ইদ্দাতুন)। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং কঠিন করতে চান না, যাতে তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারো (আল ইদ্দাতা) এবং যাতে তোমরা আল্লাহ মহত্ত্ব বিস্তৃত করতে পারো (তুকাব্বিরু) যে কারণে তিনি তোমাদের পথ দেখিয়েছেন এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ থাকো।

২ঃ১৮৬ “ এবং আমার বান্দারা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো নিকটেই আছি। আমি তাদের আহ্বানে (দুআ) সাড়া দেই যখন তারা আমাকে ডাকে। কাজেই তারা যেন আমার প্রতি সাড়া দেয় এবং বিশ্বাস স্থাপন করে যেন আমি তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেখাতে পারি (ইয়ারশুদুনা)।

এর পরের আয়াতে এই “ভিন্ন সিয়ামের” বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।

২ঃ১৮৭ “অনুমতি দেয়া/নির্ধারণ করা হলো (উহিল্লা), তোমাদের জন্য (লাকুম), এই অন্ধকার সময়ে (লায়লাতা) বেঁধে রাখার/বন্ধ করার/রহিত/বিরত করার (আসিয়ামা, আদেশমূলক verb) অনৈতিক আচরণ/অসদাচরণ (আররাফাসু) তোমাদের নির্ভরশীলদের (নিসাদের) প্রতি। তারা তোমাদের উপরে নির্ভরশীল/আবরণ এবং তোমরাও তাদের উপরে নির্ভরশীল/আবরণ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা অতীতে তোমাদের নফসের সাথে অন্যায়/প্রতারণা করেছিলে (তাখাতুনা নাফস) (অর্থাৎ নিসাদের সাথে অন্যায়/অসদাচরণ/misconduct করেছিলে), তবুও তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছেন এবং ক্ষমা করেছেন। অতঃপর নিশ্চয়ই তাদের সাথে অন্যায়/খারাপ কাজ করোনা (ফা লাআন বাশিরুহুন্না) এবং আল্লাহ যা আদেশপত্র (কাতাবা) জারি করেছেন তা অনুসন্ধান করো (ইবতাগু) এবং তা ভক্ষণ করো/গ্রাস করো (কুলু) এবং আত্মস্হ করো (আশরাবু) যতক্ষণ পর্যন্ত আলোর রেখা সুস্পষ্ট না হয় মন্দতা/পাপাচারের অন্ধকার রেখা থেকে (মিন আল খাইতি আল আসওয়াদি মিন আল ফাজরি)। অতএব সিয়াম সম্পূর্ণ করো অন্ধকারের প্রতি (অন্ধকার দূর করো) (ইলা আল লাইলি)। এবং তাদের সাথে (নিসাদের সাথে) অন্যায় কাজ করো না যখন তুমি সংলগ্ন/চিন্তামগ্ন/একাগ্রচিত্তে থাকো (আকিফুনা) মান্যরত অবস্থায় (ফি আল মাসজিদি)। এটাই আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, তাই সে সীমারেখার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তার নির্দেশসমূহ সুষ্পষ্ট করেন যাতে মানুষেরা খাঁটি মানুষ (মুত্তাকি) হতে পারে।

—————-

এই আয়াতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দঃ

রাফাছা শব্দের অর্থ misconduct, অসদাচরণ/অনৈতিক আচরণ। অন্ধকার যুগে (শাহরু রামাদানে) নিসাদের অধিকারবন্চিত করা হয়েছিল, তাদের সাথে অসদাচরণ/অনৈতিক আচরণ করা হয়েছিল। তাই আয়াতের শুরুতেই সেই প্র্যাক্টিস/সংস্কৃতিটা রহিত করার/বিরত করার (আসিয়ামা বা আদেশমূলক ক্রিয়া) নির্দেশ দিচ্ছেন আল্লাহ।

আল্লাহ জানেন যে অতীতে মুমিনেরা নিসাদের সাথে অসদাচরণ করার মাধ্যমে নিজেদের নফসের সাথে অন্যায়/প্রতারণা করেছিল। কুরান প্রচারের সময়কালে তিনি তাদের সে অপরাধ ক্ষমা করেছেন এবং তাদের তওবা কবুল করেছেন।

সেকারণে নিসাদের লিবাসুন বা আবরণ বলা হয়েছে। আমাদের আবরণ যেমন আমাদের সার্বক্ষনিক সংগী এবং আমরা যেভাবে আমাদের আবরণের যত্ন নিই, নিসাদেরও যত্ন নেয়া মুমিনদের দায়িত্ব। ৪ঃ১২৭ এ নিসার অন্তর্ভুক্ত কারা তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। সমাজের এই নির্ভরশীল অংশটাই হলো নিসা। নিসা মানে নারী নয়। নিসা শব্দটি এতিম, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী সবার জন্যই প্রযোজ্য তার লিঙ্গ যাই হোক না কেন।

বা’শিরু শব্দটার অর্থ কুরানে বেশিরভাগ স্থানে “সুসংবাদ দেয়া” করেছে। তবে সেটি ভিন্ন শব্দ। সেটি হলো বাশার। কিন্তু এখানে রুট হলো “শিন রা রা” যার অর্থ হলো খারাপ কিছু করা। “বা” এর পরে আলিফ যুক্ত করার কারণে শব্দটা বাশার নয়, বা’শিরু। অন্য আয়াতগুলোতে এই সুক্ষ্ম পার্থক্যটি তুলনা করেন।

আবার “ফা” এর পরে “লাম আলিফ হামজা” আছে যার অর্থ “না” বোধক। কিন্তু আরবিতে এমনভাবে লেখা হয়েছে যে তা ধরা সহজ নয়।

অর্থাৎ “ফা লাম (আলিফ) আন বা’শিরুহুন্না” শব্দযুগলের অর্থ দাঁড়ায়, “অতঃপর খারাপ/অন্যায় কিছু করোনা তাদের সাথে”

এই স্পেশাল সিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল মুমিনেরা যেন সিয়াম পালনের মাধ্যমে নিজেদের কথা বলা থেকে বিরত থেকে একাগ্রচিত্তে (আকিফুনা) মান্যরত অবস্থায় (ফি আল মাসজিদি) কুরান অধ্যয়ন ও আত্মস্থ করে যাতে মন্দতার/পাপাচারের অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে পারে।

আল-ফজর মানে সবসময় ভোর নয়। ভোরের আরবি হলো সুবাহ। ৩৮ঃ২৮ পড়লেই বুঝতে পারবেন যে মুত্তাকী শব্দের বিপরীত শব্দ হলো আল-ফুজারি। অর্থাৎ খাঁটি মানুষের বিপরীত শব্দ হলে পাপী/মন্দ মানুষ।

৩৮ঃ২৮ “আমরা কি যারা বিশ্বাসী এবং ভারসাম্যরক্ষাকারী (আমিলু আল সালিহাতি) তাদেরকে একইরকম প্রতিদান দিব তাদের মত যারা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে (মুফসিদিনা)? নাকি আমরা মুত্তাকিদের একই প্রতিদান দিব তাদের মত যারা পাপীষ্ঠ/মন্দ (আল ফুজারি)?”

১৯ঃ২৬ অনুসারে মরিয়ম আল্লাহর কাছে সিয়াম পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অতঃপর সে কারো সাথে কথা বলবে না।

অর্থাৎ কথা না বলা হলো অন্যতম একটি শর্ত। কারো সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে মানুষ কি করে একা একা?

উত্তর হলো পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করা বা পরিস্থিতিটা গ্রাস করা (কুল) এবং আত্মস্হ করা (আশরাবু) যেটা মরিয়ম করেছে।

২ঃ১৮৭ তেও কুরান প্রচারের ঘটনা/পরিস্থিতিতে কুরানের অধ্যয়ণ ও অনুসন্ধান করতে বলা হচ্ছে, আদেশগুলো (কাতাবা) কুল ও আশরাবু করতে বলা হচ্ছে।

কাজেই সিয়ামের মূল ও প্রথম শর্ত হলো “কথা না বলা”/যোগোযোগ বিচ্ছিন্ন করে একা থাকা।

এরপর একা একা পরিস্থিতি/ঘটনা/পাপকাজ নিয়ে গভীরে চিন্তামগ্ন থেকে অনুসন্ধান/আত্মসমালচোনা বা পাপের সংশোধন করতে বলা হচ্ছে। এগুলো সবই সিয়াম পালনের অংশ।

অর্থাৎ “শুধুই কথা বলা থেকে বিরত থেকে ঘোড়ার ঘাস কাটা সিয়াম নয়।”

——-——

২ঃ১৮৮ “এবং তোমরা একে অপরের সম্পদ (আমওয়ালাকুম) অন্যায়ভাবে ভক্ষণ/গ্রাস করো না (তাকুলু) অথবা প্রশাসকের নিকট পাঠিও না যাতে সম্পদের কিয়দংশ গ্রাস করতে পারো অন্যায়ভাবে এবং সচেতনভাবে।”

২ঃ১৮৯ “তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কখন আওয়াজ তোলা/প্রতিবাদ করা উচিৎ (আহিল্লা, সংযুক্ত ছবিটি দেখুন)। বলুন “প্রয়োজনের সময় (মাওয়াকিতু) মানুষের জন্য (লিন্নাসি) এবং যুক্তিতর্কের/বিরোধের (আল-হাজ্জ) সময়। এবং এটি উদারতা নয় (আল-বিরা) যে কেউ ষড়যন্ত্রের জাল বুনে (বুয়ুতু, ৪ঃ৮১,৪ঃ১০৮) পিছনে থেকে, বরং উদারতা হলো যে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করে (ইত্তাকু) এবং ষড়যন্ত্রকে (বুয়ুতু) সামনে এনে তা উন্মোচন করে দেয় (ওয়া আতু)। এবং আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করো (ইত্তাকু) যাতে তোমরা সফলকাম হও।”

২ঃ১৯০ “লড়াই করো (কুতিলা) আল্লাহর পথে যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে কিন্তু আগ্রাসন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আগ্রাসীদের পছন্দ করেন না।”

২ঃ১৯১ “এবং লড়াই করো (কাতিলু) তাদের সাথে যেখানেই তাদের অতিক্রম করা যায় এবং তাদেরকে উচ্ছেদ করো সেখান থেকে যেখান থেকে তারা উচ্ছেদ করেছিল তোমাদের। এবং অত্যাচার/নির্যাতন (ফিতনা) হলো লড়াই (কাতিল) এর চেয়েও জঘন্য পাপ। এবং নিষিদ্ধ মসজিদের ব্যাপারে তাদের সাথে লড়াই করো না যদি না তারা সে ব্যাপারে লড়াই করে তোমাদের সাথে। কিন্তু তারা যদি লড়াই করে, তাহলে তোমরাও তা প্রতিহত করো। এটাই সত্য অস্বীকারকারীদের (কাফির) প্রাপ্য কর্মফল।”

২ঃ১৮০-১৯১ এর বিষয়বস্তু হলো

১) উইল করা মুমিনের কর্তব্য যা কুতিবা বা আদেশ করা হয়েছিল।

২) যে উইল পরিবর্তন করে সে পাপ করে।

৩) সেই পাপের সংশোধন হিসাবে সাধারণ সিয়াম পালন করতে হবে (২ঃ১৮৩-১৮৪)। আর তা হলো নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত কথা বলা থেকে বিরত থেকে আত্মসংশোধন করা।

৪) এই সাধারণ সিয়াম অতীত পূর্বপুরুষ থেকে ভবিষ্যত সকলের জন্য প্রযোজ্য। এটি হলো কথা বলা থেকে বিরত থেকে/ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মসংশোধনমূলক সিয়াম।

৫) এই সাধারণ সিয়ামের বিকল্প হিসাবে গরীব খাওয়ানো, দাস মুক্ত করা ইত্যাদি ব্যবস্থা আছে পাপের মাত্রার উপরে নির্ভর করে (৫ঃ৯৫, ৪ঃ৯২ ইত্যাদি)

৬) ২ঃ১৮৫-১৮৭ হলো স্পেশাল সিয়াম যা ছিল কুরান প্রচারের সময় মুমিমদের কুরান অধ্যয়ন ও আত্মস্হ করার উদ্দেশ্যে জারিকৃত সিয়ামের আদেশ।

৭) এই সিয়াম পালন এবং কুরান প্রচারের সময়ে ২ঃ১৮৮ অনুসারে মুমিনদের উপরে আঘাত এসেছিল, তাদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

৮) সেকারণে ২ঃ১৮৯ তে প্রতিবাদের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে মুমিনরা। মানুষের প্রয়োজনে এবং বিরোধের সময়েই প্রতিবাদ করতে হবে এবং তাদের সাথে লড়াই করতে হবে যারা এই অন্যায় নির্যাতন করেছিল। তবে আগ্রাসী হওয়া যাবে না। নির্যাতনকারীদেরও তাদের দখল করা মুমিনদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। সেজন্য লড়াই করতে হবে।

৯) ২ঃ১৯১ অনুসারে কাফিরদের সাথে তাদের নিষিদ্ধ মাসজিদ (মাসজিদ আল হারাম) /তাদের শিরকী বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করার আপাতত প্রয়োজন নেই যদি না তারা এ ব্যাপারে লড়াই করে। কারণ মুমিনদের লড়াই করার মূল উপপাদ্য ছিল তাদের হারানো সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করা।

এসব বিরোধের সম্ভাবনার কারণেই শুরুতেই ২ঃ১৮০ তে দলিললেখক দ্বারা সম্পত্তি উইল করার আদেশ জারি করা হয়েছিল।

কারেকশন/সংযুক্তিঃ স্পেশাল সিয়ামটা বর্তমানেও প্রযোজ্য। যখনই সমাজে অস্থিরতা/তীব্র উত্তপ্ত /শাহরু রামাদন এর সময়কাল উপস্থিত হবে তখনই মুমিনদের কুরানের মাধ্যমে তা রহিত/বিরত করতে হবে (আসিয়ামা) যাতে সবাই অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে পারে। (২ঃ১৮৭), সেজন্য মানুষের প্রয়োজনের সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে (২ঃ১৮৮)।

fb.sourse same.as.sourse

চুল, গোফ এবং দাড়ী কর্তন করার কথা কোরআনে উল্লেখ নাই

❤চুল, গোফ এবং দাড়ী কর্তন করার কথা
কোরআনে উল্লেখ নাই কিংবা এইগুলি রাখা হারাম বা
রাখা নিষেধ এমন আয়াত কুরআনে নাই❤
নারীদের মুখমন্ডলে গোফ এবং দাড়ী নাই। অথচ পুরুষদের মুখমন্ডলে গোফ এবং দাড়ী আছে। এটা আল্লাহর বিধান বা নিয়ম। আর মানুষের শরিরের চুল ও দাড়ী এবং গোফ যত টুকু বড় হওয়া বা লম্বা হওয়ার প্রয়োজন ততটুকুই বড় বা লম্বা হবে তার বেশি হবে না। যেমন চোখের ভ্ররু যতটুকু বড় হওয়ার প্রয়োজন তার বেশি বড় হয় না। যেমন ভাবে আদম (আঃ) এর সময় চুল দাড়ী গোফ কর্তন করার জন্য কোন কাঁচি বা খুর ছিল না। কারন খুর তৈরির জন্য লোহা ও আগুন কোনটা তখন আবিস্কার হয়নি। ফলে তখন আদম (আঃ) এর মুখমন্ডলে দাড়ী গোফ এবং মাথায় চুল বড় হয়েছিল যততুকু বড় হওয়া প্রয়োজন ততটুক। সেই থেকে চুল দাড়ী গোফ রাখার নিয়ম চলে আসছে। কারন এগুলি সবই আল্লাহর দেওয়া বিধান/নিয়ম। এখন যদি কেহ চুল, দাড়ী ও গোফ কর্তন করে তাহলে আল্লার নিয়মের পরিবর্তন করল, কিন্তু আল্লাহর নিয়মের কোন পরির্বতন নেই (১৭ঃ৭৭)। আর পুরুষের মুখমন্ডলে গোফ এবং দাড়ী দেওয়ার আল্লাহর একটি উদ্দেশ্য আছে। কারন আল্লাহ কোন কিছু নিরর্থক সৃষ্টি করে নাই (৩৮ঃ২৭) (২১ঃ১৬)। তাই চুল, দাড়ী ও গোফ কর্তন করে তারা আল্লাহর উদ্দ্যেশকে ব্যর্থ করে। কিন্তু যারা আল্লাহর নির্দশনকে ব্যর্থ করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম (হজ্ব-৫১)। কাজেই চুল দাড়ী ও গোফ কর্তন করা বিধি সম্মত নহে। তা ছাড়া চুল দাড়ী ও গোফ রাখা হারাম বা নিষেধ এমন আয়াত পবিত্র কোরআনে নেই। তারপর অনেকেই বলে গোফ এবং চুল রাখা হারাম, তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করি। আদম (আঃ) যখন বেহেস্তে ছিলেন তখন তিনি শারিরিক ভাবে পূর্নাঙ্গ পুরুষ মানুষ ছিলেন, তখন তার সাথে তার স্ত্রীও ছিল (০২ঃ৩৫) তখন তার মুখে নিশ্চয় গোফ ছিল আর গোফ যদি হারাম হতো তবে হারাম বস্তু বেহেশ্তে কিভাবে ছিল। যেহেতু বেহেশ্তে কোন হারাম বা অপবিত্র বস্তুর উপস্থিত থাকতে পারেনা। কারন অপবিত্রতার কারনে ইবলিস সেখান থেকে বহিষকৃত হয়েছিল (১৫ঃ৩৪)। সেই হিসাবে আদম (আঃ) কে যখন আল্লাহ ওই মুহুর্তে তুমি ও তোমার স্ত্রী একসাথে জান্নাতে বসবাস কর (০২ঃ৩৫) আবার হাশরের দিনেও চুলের ঝুটি ধরিয়া অপরাধীদেরকে পাকড়াও করা হবে (৫৫ঃ৪১) (৯৬ঃ১৫) এই আয়াতে নাওয়াছি শব্দ এসেছে, যার অর্থ চুলের উপরের অংশ (আরবি অভিধান পৃঃ নং- ২৪৮৩)। এই আয়াতে প্রমাণ হয় হাশরের দিন মানুষের মাথায় চুল বড় থাকবে কাজেই বর্তমানেও চুল দাড়ী ও গোফ যতটুকু বড় হওয়া প্রয়োজন ততটুকু বড় হবে এতে কোন বাধা নেই সেহেতু চুল দাড়ী ও গোফ রাখা হালাল। এতে প্রমান হয় আদম (আঃ) এর মুখমন্ডলের গোফ এবং মাথার চুল নিশ্চয় হারাম ছিলনা। যেহেতু পবিত্র কোরআনে কোথাও গোফ এবং চুল রাখা হারাম বা নিষেধ এই মর্মে কোন আয়াত পবিত্র কোরআনে আসে নাই। এতে প্রমাণিত হয় যে, চুল, দাড়ী গোফ রাখা আল্লাহ হারাম করে নাই এটা নিশ্চিত। মূলতঃ ঐগুলিই হারাম যাহা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। মূলত পবিত্র কোরআনের সকল আয়াতে নবী (সঃ) এর মুখ নিঃসৃত বাণী (৬৯ঃ৪০)। তাঁর প্রতি যাহা অহি অবর্তীণ হয় শুধু তিনি তাহাই বলেন (৫৩ঃ৪)। তিনি নিজের তরফ থেকে কোন কিছুই বলেন নাই (৫৩ঃ৩)। তিনি আল্লাহর নামে কোন কিছুই বানাইয়া বলে নাই (৬৯ঃ৪৪)। আর আল্লাহ বলেন নাই এমন কথা যদি তিনি আল্লাহর নামে বানাইয়া বলিতেন তাহলে আল্লাহ তার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া ফেলিতেন (৬৯ঃ৪৫) এবং তার জীবন ধমনী কাটিয়া দিতেন (৬৯ঃ৪৬)। আর এই কোরআন নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতিত অপর কাহারো রচনা নহে (১০ঃ৩৭)। ইহা প্রভুর পক্ষথেকে নাজিলকৃত গ্রন্থ (৬৯ঃ৪৩)। কাজেই এই কোরআনে যাহা হারাম বলে উল্লেখ নেই তাহা নবী (সঃ) হারাম করেন নাই এটাও নিশ্চিত। কারণ তিনি ওহি ব্যতিত কাউকে সতর্ক করে নাই (২১ঃ৪৫)। আর নবী (সা.)-এর জন্য বিধান স্বরূপ এই কোরানই (২৮ঃ৮৫)। যেহেতু চুল, দাড়ী গোফ রাখা হারাম কোন ওহি আসে নাই বিধায় তিনি এইগুলি হারাম মর্মে কাউকে সতর্ক করে নাই। তাছাড়াও নবী (স) ওহি ব্যতিত কোনকিছু অনুসরণ করে নাই (৬ঃ৫০)। আর হারাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আমি যাহা হারাম করেছি ইতিপূর্বে কোরআনে শুধু তাহাই হারাম (১৬ঃ১১৮)। আল্লাহ আরো বলেন, আর যাহা কিছু হারাম করেছি যাহা ব্যতিত বাকী সমস্ত কিছুই হালাল (৩ঃ৯৩)। যেহেতু চুল, দাড়ী গোফ রাখা হারাম এই কোরআনে উল্লেখ নেই তাহলে এটা অবশ্যই হালাল। আর কোন হালাল বস্তুকে তোমরা হারাম বলিওনা (৫ঃ৮৭)। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকেই বলে- এই কোরআনের বাইরেও আল্লাহর কিছু ওহি আছে, যাহা কোরআন লিপিবদ্ধ করার সময় বাদ পড়েছে। তাদের কথা ঠিক নহে। কারণ এই কোরআন আল্লাহ নিজেই হেফাজত করেন (১৫ঃ৯) এবং সর্বাবস্থায় অভিসপ্ত শয়তান হইতে এই কোরআনকে হেফাজত করেন (১৫ঃ১৭)। অর্থাৎ নবী (স) এর উপর নাজিলকৃত সকল ওহি এই কোরআনের ভিতর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আর এই জন্য ওহি ব্যতিত কোন কথা এই কোরআনে নেই এটাও নিশ্চিত। কারণ নবী (স) রূপের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর কথাগুলোকে ব্যক্ত করেছেন। ফলে ইবলিশের অনুপ্রবেশ এই কোরআনের ভিতরে ঘটে নাই। এইজন্য পবিত্র কোরআনের কথাগুলো নবী (স) সুরতের মাধ্যমে আল্লাহর কথা। যদি নবী (স) রূপের বাইরে এসে আল্লাহ মানুষের সাথে কথা বলতো সেক্ষেত্রে প্রতারিত শয়তান মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চনা দিতে পারত। কারণ ইবলিশ মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চনা দিতে সক্ষম (৩১ঃ৩৩) (৩৫ঃ৫)। যখন ওহি নাজিল হয়েছে তখন নবী (সঃ) এর নিজ আকৃতিতেই আল্লাহ স্থির হয়েছে (৫৩ঃ৬)। কারণ নবী (সঃ) এর রূপ ইবলিশ ধারণ করতে পারে না, কারণ নবী (সঃ) স্বরূপে সেজদাকারী (৭ঃ২৯)। আর যেহেতু ইবলিশ আদম কাবায় সেজদা না দিয়েই কাফের (২ঃ৩৪) সেহেতু ইবলিশ আদম কাবায় সেজদার শামিল হবে না (১৫ঃ৩৩) এইজন্য নবী (স) এর সুরত ইবলিশ ধারণ করে না। এই জন্য পবিত্র কোরআনের মধ্যে ইবলিশের কথার অনুপ্রবেশ ঘটানো রোধ করার জন্য নবীর রূপের মাধ্যমে আল্লাহ কোরআন নাযিল করেছেন। আর এইভাবেই তিনি কোরআনকে ইবলিশ থেকে হেফাজত করেছেন (১৫ঃ১৭)। যেহেতু চুল, দাড়ি গোফ ও বাদ্যযন্ত্র হারামের কথা কোরআনে উল্লেখ নাই, বিধায় এইগুলি হারাম নহে। কারণ দ্বীনের সকল বিষয় ফয়সালাকারী এই কোরআন (৮৫ঃ১৩)। আর এই কোরআন মোতাবেক যারা দ্বীনের বিষয়ে বিধান দেয় না উহারাই যালেম, ফাসেক ও কাফের (৫ঃ৪৪) (৫ঃ৪৫) (৫ঃ৪৭)। যেহেতু উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণ হয় আল্লাহ যাহা হারাম করেছেন তাহা ব্যতিত সকল বস্তু হালাল (৩ঃ৯৩)। যেহেতু চুল, দাড়ি গোফ রাখা হারাম কোরআনে উল্লেখ নেই তাহলে এইগুলি রাখা হালাল। আর এইগুলি মানব শরীরে আল্লাহর দেওয়া নিদর্শন। অতএব যারা বর্তমানে চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করেন তাহারা আল্লাহর নির্দশনের পরিবর্তন ঘটায়। আল্লাহর নির্দশনের বা নিয়মের কোন পরিবর্তন করা যাবে না (১৭ঃ৭৭)। আর চুল, দাড়ি গোফ যেহেতু আল্লাহর নিদর্শন তাহলে আল্লাহর নির্দশনকে যারা কর্তন করে তাহারা আল্লাহর নিদর্শনকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। ফলে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম (২২ঃ৫১)। তাই আল্লাহর নির্দেশকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে রসূলকে রেসালাতের ভার দেওয়া হইয়াছে (৬ঃ১২৪)। আর আল্লাহ বলেন, আমার নির্দেশ মোতাবেক তোমরা রসূলের আনুগত্য কর, এইজন্য আমি তোমাদের মধ্যথেকে তোমাদের কাছে রসূল পাঠাইয়াছি (৪ঃ৬৪)। তাই মানুষ কোরআনের সমস্ত নির্দেশ পালন করবে বলে রসূলের কাছে তথা গুরুর কাছে আনুগত্যের বায়াত গ্রহণ করে, অথচ কিছু লোক গুরুর কাছে বায়াত গ্রহণ করার পর গুরুর তথা রসূলের নিষেধ থাকার পরও তারা চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করে কোরআনের পরিপন্থি তথা মুসলমানদের পরিপন্থি কাজ করে। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, যারা এই রকম ভাবে আল্লাহ ও রসূলের নিষেধকে নিষেধ মনে করে না তাদের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নত না হয় (৯ঃ২৯)। অর্থাৎ চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করা যাবে না, তারপরও রসূল তথা গুরুর নিষেধ অমান্য করে চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করে তারা রসূল তথা গুরুর অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ যে সমস্ত ভক্তগণকে রসূল তথা গুরু চুল, দাড়ি গোফ কর্তন না করা নির্দেশ দেন তারপরও সেই নির্দেশ অমান্য করে চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করে তাদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ ও রসূল (কুরআন মোতাবেক) কোন নির্দেশ দিলে কোন মমিন সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না (৩৩ঃ৩৬)। যদি সে আল্লাহ রসূলকে অমান্য করে তাহলে সে পথভ্রষ্ট (৩৩ঃ৩৬)। তারা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হয়নি। তাদের জন্য আল্লাহ বলেন, হে মোমিন তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও (২ঃ২০৮)। কাজেই চুল, দাড়ি গোফ কর্তন করা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ রসূলের আনুগত্য করে তারা গুরুর কাছে পরিপূর্ণভাবে বায়াত গ্রহণ করে। আর যারা গুরুর তথা রসুলের পরিপূর্ণভাবে আনুগত্য করে তারা সেদিন নবীর সঙ্গী হবে (৪ঃ৬৯)। এখানে উল্লেখ্য যে, এমন অনেক লোক আছে, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয় এবং স্বল্প মূল্যে তা বাজারে বিক্রয় করে (২ঃ৭৯) ঠিক তদ্রƒপ এমন কিছু লোকও আছে, যাহারা নবী (স) বলেন নাই এমন কথা নবীর হাদীস বলে চালিয়ে দেয় যেগুলি নবী (স) বলেন নাই। সেই সমস্ত বিষয়গুলি মানব রচিত গ্রন্থের উল্লেখ করে বলেÑ ইহা হারাম, ইহা হালাল ইত্যাদি। তাদেরকে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করিবার জন্য বলিওনা ইহা হালাল এবং ইহা হারাম’ (১৬ঃ১১৬)। কারণ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারী সবচেয়ে বড় যালিম (১১ঃ১৮)। আর যারা এমনটি করে তারাই অজ্ঞ বা মূর্খ। আল্লাহ বলেন ‘তোমরা অজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে পরিহার কর’ (৭ঃ১৯৯)। কারণ কোরআনই দ্বীনের বিষয়ে পরিপূর্ণ দলিল (৫ঃ৩)। কাজেই দ্বীনের বিষয়ে এজমা,কেয়াস বা মানব রচিত গ্রন্থ কিংবা হাদীসের কোন প্রয়োজন নাই। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে তাহাই আল্লাহ হারাম করেছেন যাহা কোরআনে উল্লেখ আছে, আর যেগুলি হারামের কথা কোরআনে উল্লেখ নেই সেগুলি নবী (স) হারাম করেন নাই, কারণ উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হারামের বিষয়টি কোরআনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর এই কোরআনের যাহা হারাম করে নাই এমন বিষয়টি যাহারা হারাম করিবে উহারাই সীমালংঘনকারী। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সীমালংঘন করিওনা’ (৫ঃ৮৭)। আর নবী (স) সীমালংঘনকারী ছিলেন না বিধায় কোরআনে যাহা হারাম করে নাই তাহা তিনি হারাম করে নাই এটা নিশ্চিত। কারণ আল্লাহ সীমালংঘনকারীকে পছন্দ করে না (৫ঃ৮৭)। অতবএ, চুল, দাড়ি গোফ ও বাদ্যযন্ত্র হারাম নহে।

From সত্যৰ সন্ধান fb