শবই বরাত/ লাইলাতুল নিসফে মিন শাবান-
এই রাতকে ঘিরে যা বলা হয়ে থাকে –
১| আগে বলা হতো “আল্লাহ” এই রাতে ভাগ্য নির্ধারন করেন। এই কথা পাল্টিয়ে বর্তমানে বলা হয় ভাগ্য বহু আগেই নির্ধারিত (since time immemorial) এই রাতে আগামী এক বছরের নির্ধারিত ভাগ্যের দায়িত্বসমূহ মালাইকাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য এই রজনীর প্রামান্য হিসেবে সুরা দুখানের (৪৪) আয়াত ৩-৪ পেশ করা হয়।
২| এই রাত যেহেতু ফজিলতপূর্ন কারন আল্লাহ নেমে আসেন প্রথম আসমানে, অবস্থান করেন ফজর অবধি আর বান্দাদের বলতে থাকেন তাদের প্রয়োজন পেশ করতে।
৩| এই উপলক্ষে ভাগ্য পরিবর্তনে বা অন্তত ভালো কিছু লাভের আশায় বিশেষ কিছু বন্দেগী পালিত হয় রাতভর।
উপরোক্ত বিষয়গুলো কুরআনের আলোকে খন্ডন
(ক) সুরা দুখানের (৪৪) আয়াতদ্বয় হলো সুরা কদরের (৯৭) প্রাসঙ্গিক সূত্র (referance) এবং উভয় স্থানেই এই রাতকে কুরআন নাযিলের রাত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে । কুরআন নাযিলের একটি সুনির্ধারিত কদরের রাতকে তথাকথিত শবই বরাত/ লাইলাতুল নিসফে মিন শাবানের রাত বলে আখ্যায়িত করা আল্লাহর উপর সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ। (খ) ৪৪:৪ আয়াতানুযায়ী, “সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ আদেশসমূহ স্পষ্ট (manifest) করা হয়।” এখন “প্রজ্ঞাপূর্ণ আদেশসমূহ স্পষ্ট করা” কি “ভাগ্য নির্ধারণ করা” মর্মে প্রতীয়মান হয় কিনা?
(গ) সকল সময়ে মানুষের সকল ডাকে আল্লাহ সাড়া দিয়ে থাকেন ২:১৮৬, “এবং যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।” আল্লাহ হলেন “মুহিত” (পরিবেষ্টনকারী), তিঁনি হলেন “আলিমুন হাকিম” (ওয়াকিফহাল মহাজ্ঞানী), “ইন্নাল্লাহা কানা লতিফান খবির” (নিশ্চয়ই আল্লাহ সুক্ষদর্শী খবর রাখনেওয়ালা) “ইন্নাল্লাহা বাসিরুন বিল ইবাদ” “ইন্নাল্লাহা খাবিরুন বিমা তাআমালুন”। ৫০-১৬, “আমি তার গলার শিরা থেকেও নিকটবর্তী।” তাই তাঁকে প্রথম আসমানে নেমে আসতে হবে কেন? তাকে আকাশে নামিয়ে আনার বিষয়টি সাজানো।
(ঘ) এবার এই রাতে কিছু আমলে বন্দেগী গুজার করার ব্যাপারে। কুরআনে বলা আছে,
২:১৮৪, “অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। “
২:২১৫, “আর যে কোন ভাল কাজ তোমরা কর, নিশ্চয় সে ব্যাপারে আল্লাহ সুপরিজ্ঞাত”।
তবে কি উক্ত আয়াতদ্বয় অনুযায়ী অত্র রাতে আমল ঠিক আছে? আমরা নিচের আয়াতটি দেখি যেখানে আল্লাহ তাঁর নাবী ও মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন,
১১:১১২, “অতএব তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ, দৃঢ় থাক এবং সেই লোকেরাও যারা তাওবাহ করে তোমার সাথে রয়েছে, আর (দ্বীনের) গন্ডি হতে একটুও বের হয়োনা; নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করেন।”
ইবাদতের যে গন্ডী আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে তার বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ ভয়াবহ অপরাধ
অতএব আল্লাহ তার কিতাবে অত্র রজনীর সম্পর্কে যা আমাদেরকে জানাননি এর বাইরে গিয়ে তাঁকে আমাদের নিজেদের মতো করে কল্পনা করা বা এক কথায় তাঁর উপর মিথ্যা চাপানো এবং এটিকে কেন্দ্র করে রাসুলের নাম দিয়ে মানব উদ্ভাবিত মিথ্যা আশ্বাসে আশান্বিত হয়ে বন্দেগী করার কি ফল-
১৬:১০৫, “একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী।”
১৬:১১৬, “তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।”
৩৯:৩২, “সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে। জাহান্নামেই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়?”
৬:২১, “আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে।”
৩৩:৫৭, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেছেন আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক শাস্তি।”
Source: https://www.facebook.com/share/WYBGxmZ7jcHhaYX5/?mibextid=oFDknk