💎 আল কুরআন কাদের উপর নাযিল হয়েছে:
রসূলের নামে প্রচলিত হাদীছের মহেপড়ে আর কতকাল আল কুরআনের প্রতি ঘৃণ্যতা প্রশ্ন করে প্রতিরোধের চেষ্টা করবে।
কুরআন শেখার কথা বলে মাদ্রাসাগুলো যুগের পর যুগ ধরে সাধারন ধর্মভীরু মানুষের নিকট থেকে দান-খয়রাত নিয়ে থাকে (সেই দান এখন বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে; তারা এখন আর আগের মত দরিদ্র জীবন-যাপন করে না; আমজনতাকে হুমকি-ধমকিও দেয়)। বাস্তবে তারা কুরআন পড়ে না; আর কাজেই সমাজে এসে তারা মানুষকে কুরআন না শিখিয়ে ইসলামের নামে ইতিহাসের আবর্জনা উপহার দেয়।
তাদেরই একজন আমাকে প্রশ্ন করেছে – “আপনার নিকট প্রশ্ন হাদীস ছাড়া কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে নাজিল হয়েছে প্রমাণ দিন”।
কুরআন থেকে এর প্রচুর জবাব দেয়ার আছে। আমি সংক্ষেপে লিখেছি –
الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য। -২:২
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
নিঃসন্দেহে আমরাই স্মারকগ্রন্থ (যিকর বা কুরআন) অবতারণ করেছি, আর আমরাই তো এর সংরক্ষণকারী। -১৫:৯
لَقَدْ جَاءَكَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
অবশ্যই এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তোমার প্রভুর নিকট থেকে তোমার নিকট সত্য বিষয় এসেছে। কাজেই তুমি কস্মিনকালেও সন্দেহকারী হয়ো না। -১০:৯৪
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ
এই কুরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ। -২৬:১৯২
تَنْزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ * أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ
এ কিতাবের অবতরণ বিশ্ব পালনকর্তার নিকট থেকে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা কি বলে, এটা সে মিথ্যা রচনা করেছে? বরং এটা তোমার প্রভুর তরফ থেকে সত্য। -৩২:১-৩
وَيَرَى الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ الَّذِي أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِي إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, তারা তোমার প্রভুর নিকট থেকে অবর্তীর্ণ কুরআনকে সত্য জ্ঞান করে এবং এটা মানুষকে পরাক্রমশালী, প্রশংসার্হ আল্লাহর পথ প্রদর্শন করে। -৩৪:৬
وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلَى عِلْمٍ هُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
আমরা তাদের কাছে গ্রন্থ পৌছিয়েছি, যা আমরা স্বীয় জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত। -৭:৫২
لَكِنِ اللَّهُ يَشْهَدُ بِمَا أَنْزَلَ إِلَيْكَ أَنْزَلَهُ بِعِلْمِهِ وَالْمَلَائِكَةُ يَشْهَدُونَ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا
আল্লাহ তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। -৪:১৬৬
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَهَلْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অতঃপর তারা যদি তোমাদের কথা পুরণ করতে অপারগ হয়; তবে জেনে রাখ, এটি আল্লাহর এলম দ্বারা অবতীর্ণ হয়েছে; আরও একীন করে নাও যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। অতএব, এখন কি তোমরা আত্মসমর্পন করবে? -১১:১৪
পর্ব দুই
উপরের জবাব লেখার পর, আরও একটি জাহেল সওয়াল করেছে- “এই আয়াতগুলো কি আপনার উপর নাযিল হয়েছে না কি মুহাম্মাদ সাঃ এর উপর?”
নিচে আগেই প্রস্তুতকৃত জবাব দেয়া হল।
শেষনবীর সাথে সাথে আমাদের সকলের উপরও কুরআন নাযিলকৃত (আনঝালনা ইলাইকা…. আনঝালনা ইলাইকুম)!
আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সকল আসমানী বাণী সুনির্দিষ্ট নবীগণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মানবসমাজের সকলের প্রতিই নাযিলকৃত – এ বিষয়ে কুরআনে পর্যাপ্ত দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান। এর অন্যতম উদ্দেশ্য যাতে করে উত্তরাধিকারিত্ব আর দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে সকলকে জবাবদিহিতার জায়গায় উপনীত করা যায়।
এতদ্বিষয়ে দীর্ঘ রচনা লেখার সুযোগ থাকলেও আমরা এখানে কতিপয় আয়াত উল্লেখ করে বুঝতে চেষ্টা করব যে, কুরআন কেবলমাত্র শেষ নবীর উপরই নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ নয়, তাঁর সাথে আমাদের সকলের উপর নাযিলকৃত আল্লাহর বিধানাবলী।
এক.
খাতামুন নাবিয়্যিনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে (আনঝালনা ইলাইকা/’আলাইকা …)
وَلَقَدْ أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ وَمَا يَكْفُرُ بِهَا إِلَّا الْفَاسِقُونَ
আমরা তোমার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা ব্যতীত কেউ এগুলো অস্বীকার করে না। -২:৯৯
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ
নিশ্চয়ই আমরা তোমার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করো, যা আল্লাহ তোমাকে হৃদয়ঙ্গম করান। -৪:১০৫
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ
আমরা তোমার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, তুমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করো। -৩৯:২
أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ
এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমরা তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। -২৯:৫১
إِنَّا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّ
নিঃসন্দেহে আমরা তোমার কাছে মহাগ্রন্থ অবতারণ করেছি মানবজাতির জন্য সত্যের সাথে। -৩৯:৪১
দুই.
আবার একই বক্তব্য আমাদেরকে তথা মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করেও বহুবার, বহুভাবে বলা হয়েছে (আনঝালানা ইলাইকুম …)। এখানে কতিপয় দৃষ্টান্ত পেশ করা হল।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا
হে মানবকুল! তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সনদ পৌঁছে গেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি প্রকৃষ্ট আলো অবতীর্ণ (নাযিল) করেছি। -৪:১৭৪
لَقَدْ أَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
আমরা অবশ্যই তোমাদের কাছে অবতারণ (নাযিল) করেছি এক মহাগ্রন্থ যাতে রয়েছে তোমাদের যিকর (কথা); তোমরা কি তবে বুঝবে না? -২১:১০
وَلَقَدْ أَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ آَيَاتٍ مُبَيِّنَاتٍ وَمَثَلًا مِنَ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ وَمَوْعِظَةً لِلْمُتَّقِينَ
আর আমরা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ, তোমাদের পূর্ববর্তীদের কিছু দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ ভীরুদের জন্যে দিয়েছি উপদেশ। -২৪:৩৪
এরূপ আরও আছে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের রব্বের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুমিনদের জন্য। -১০:৫৭
আর মুমিনগণ রাসূলের মাধ্যমে তাদের সবার প্রতি নাযিলকৃত সেই কিতাবে পূর্ণ বিশ্বাস পোষণ করে, তার স্বীকৃতিও কুরআনে আছে।
وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآَمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّهِمْ
আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে, আর বিশ্বাস করছে তাতে যা মুহাম্মদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছে- আর সেটিই হচ্ছে তাদের প্রভুর কাছ থেকে আগত মহাসত্য। -৪৭:২
কুরআনের প্রতি যে প্রেম – ভালোবাসা – ভক্তি থাকার কথা ছিল, তা আমরা অপাত্রে দান করে গর্হিত পরকীয়া কর্মে লিপ্ত আছি বিধায় কুরআনের এই শাশ্বত সত্যগুলো আমাদের চোখে পড়ছে না – এটা অত্যন্ত আফসোস আর পরিতাপের বিষয়।
কুরআন নাযিলের এই গৌরবের ক্ষেত্রে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’য়ালা এই যে আমাদেরকেও যুক্ত করেছেন, তা আমাদের মাথায় থাকতে হবে – তাহলে যেমন আমরা তার জন্য গর্ব ও আনন্দ অনুভব করব, তেমনি কুরআনের যথার্থ উত্তরাধিকারিত্ব গ্রহণের দায়িত্ববোধও আমাদের মাঝে তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ!